পাল্লা দিয়ে বাড়তে শুরু করেছে নিত্যপণ্যের দাম

পাল্লা দিয়ে বাড়তে শুরু করেছে নিত্যপণ্যের দাম

জাহিদ হোসেন,এসবিডি নিউজ24 ডট কমঃ পবিত্র রমজান মাস আসার অনেক আগেই পাল্লা দিয়ে বাড়তে শুরু করেছে নিত্যপণ্যের দাম। রাজধানীর পাইকারি ও খুচরা বাজারে শনিবার দেখা গেছে অধিকাংশ নিত্যপণ্যের দামই ঊর্ধ্বমুখী। রমজান মাসের বাকি আর মাত্র ২৪ থেকে ২৫ দিন। অথচ বাজারে সব ধরনের মাছ ও মাংসের দামের সঙ্গে বাড়তে শুরু করেছে বেগুন, টমেটো, কাকরোল, শশা, বরবটি ও কাঁচামরিচের দাম। পাশাপাশি লুজ সয়াবিন তেল, লুজ পাম অয়েল, লুজ সুপার পাম অয়েল, চিনি, ছোলা, ডিম (ফার্ম), মুরগির (ব্রয়লার) দামও বেড়েছে। তবে গত এক সপ্তাহের চেয়ে দাম কমেছে পটল, ধুন্দল, পেঁপের দাম। এক মাস আগে এসব পণ্যের দাম কেজিতে ৫ থেকে ৭ টাকা কম ছিল বলে খুচরা ব্যবসায়ীরা জানান। এছাড়া অন্যান্য পণ্যের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

রাজধানীর খুচরা বাজারগুলোতে এক কেজি আলুর দাম ১৬ টাকা, টমেটো, চিচিঙ্গা, করলা, কাকরল, ধুন্দল, গাঁজর, কচু লতির কেজি ৪০ টাকা, পটল ও শশা ৩০ টাকা, পেঁপে ৩৫ টাকা, কাঁচকলা হালি প্রতি ৩০ থেকে ৪০ টাকা, লেবুর হালি ২০ থেকে ২৫ টাকা, কাঁচামরিচ ও ঝিঙ্গার কেজি ৫০ টাকা এবং বেগুন ৬০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা যায়। চালের দাম কেজিতে ৩ থেকে ৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। তবে মাছ ও ডিমের দাম কিছুটা কমেছে। শান্তিনগর ও যাত্রাবাড়ী বাজার ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে। বাজারে চালের মান ভেদে কেজিতে দাম বেড়েছে ২ থেকে ৩ টাকা। তবে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) মূল্য তালিকায় দাম না বাড়ার চিত্র দেখানো হয়েছে। টিসিবির মূল্য তালিকায় এক কেজি নাজির শাইল চাল ৩৪ থেকে ৪৫ টাকা দেখানো হলেও বাজারে তা বিক্রি হচ্ছে ৪৮ টাকা, মিনিকেট (ভালো মানের) প্রতি কেজি ৪৬ থেকে ৪৯ টাকা, লতা চাল (সাধারণ মানের) কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩৬ থেকে ৩৮ টাকা পর্যন্ত। মোটা চাল কেজিতে বাজার/মহল্লাতে দাম বেড়েছে ২ টাকা। বর্তমানে বাজারে প্রতি কেজি মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৩২ থেকে ৩৪ টাকায়। ৮শ’ গ্রামের ইলিশ প্রতি পিস সাড়ে ৭শ’ থেকে ৮শ’ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বড় সাইজের রুই প্রতি কেজি ১৮০ থেকে ২২০ টাকায়। পাঙ্গাস প্রতি কেজি ১০০-১৪০ টাকা, কৈ ২০০-৩০০ টাকা, শিং ৪৫০ থেকে ১ হাজার টাকা, কাতল ২০০-২৮০ টাকা ও চিংড়ি আকারভেদে ৫০০-১২শ’ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ফার্মের ডিম ২৮ থেকে ৩০ টাকা, দেশি হাঁসের ৪০ থেকে ৪২ টাকা, দেশি মুরগি ৪২ থেকে ৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাজারে গরুর মাংসের দর কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে ৩০০ টাকা, খাশি ৫০ টাকা বেড়ে ৪৫০ টাকা, ব্রয়লার মুরগি ১০ টাকা বেড়ে ১৬০ টাকায় দাঁড়িয়েছে। দেশি মুরগি প্রতি হালি (বড়) ১৬শ’ টাকা যা আগে ১২ থেকে ১৪শ’ টাকায় বিক্রি হতো। বাচ্চা মুরগির হালি ১২শ’ টাকা বিক্রি হচ্ছে। মুদি দোকান ও কাঁচামালের ব্যবসায়ীরা জানান, প্রতি বছর রমজানের আগে ব্যবসায়ী সংগঠন ও সরকারকে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ নিতে দেখা যায়। তবে সেসব উদ্যোগ কাগজ-কলমে আর মিডিয়াকে দেখানোর জন্য করে থাকে বলে সাধারণ মানুষের অভিযোগ। যার ফল সাধারণ মানুষ ভোগ করতে পারেন না। আর এজন্য অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট দায়ী বলে মনে করেন ব্যবসায়ীক নেতা ও বিশ্লেষকরা। ক্রেতারা বলছেন, বাজেটের পরদিনই বিক্রেতারা বাড়িয়ে দিয়েছেন সব ধরনের কাঁচা পণ্যের দাম। তবে বিক্রেতাদের যুক্তি হচ্ছে বাজেটের প্রভাব নয়, বর্ষায় বিভিন্ন সবজির ক্ষেত ডুবে যাওয়ায় সবজির দাম ঊর্ধ্বমুখী। এদিকে বাজেটে হিমায়িত মাছ আমদানির ওপর কর আরোপ করায় এর প্রভাব পড়েছে মাছের বাজারে। বাজার সংশ্লিষ্টরা বলেন, প্রতি বছর রমজান আসার আগেই একশ্রেণির ব্যবসায়ী অতি মুনাফার লোভে মরিয়া হয়ে ওঠেন। তবে অন্য বছরগুলোর চেয়ে এ বছরের কিছুটা পার্থক্য রয়েছে। কারণ আমাদের দেশে সব কিছুতেই রাজনীতি চলে আশে। এ বছর সরকারের শেষ বছর অন্যদিকে রাজনীতি উত্তাপ থাকায় প্রশাসন বাজারমুখী হতে পারছে না। এই সুযোগ নিয়ে অসাধু ব্যবসায়ীরা বাজার অস্থিতিশীল করার পরিকল্পনা করছেন। তাই সঠিক করে বলা যাচ্ছে না রমাজানে ভোগ্যপণ্যের বাজার দর কী হবে। তবে সরকার ও সংশ্লিষ্টদের আগ্রহের ওপর এবং বাজার মনিটরিংয়ের ওপর নির্ভর করবে বাজার দর নিয়ন্ত্রণে থাকবে নাকি পাগলা ঘোড়া হবে। তাদের মতে সাধারণ মানুষের স্বার্থে প্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ বৃদ্ধি ও দাম কমানো উচিত। পাশাপাশি অসাধু চক্রের সদস্যদের চিহ্নিত করে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।

নিজস্ব প্রতিনিধি

Related articles