সমস্যা-সংকট কাটানোর রাজনীতি

সমস্যা-সংকট কাটানোর রাজনীতি

মোমিন মেহেদী:
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআইবি)-এর রিপোর্ট নিয়ে দেশজুড়ে যখন চলছে তোলপাড়। সরকারের পক্ষ থেকে যখন আনুষ্ঠানিক কোন প্রতিক্রিয়া জানানো হচ্ছে না। যখন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা বলছেন, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের চরিত্র হনন ও বিচার বিভাগকে বিতর্কিত করতেই এই প্রতিবেদন। অপরদিকে বিরোধী দলের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, টিআইবি’র (ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ) প্রতিবেদনে বিএনপি’র এতোদিনের অভিযোগেরই প্রতিফলন ঘটেছে। ঠিক তখনই আগের অসংখ্য ঘঁনার মত আরেকটি ঘঁনার জন্ম দিলেন বিকল্পধারা বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী ও কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী। তারা ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য তৃতীয় শক্তি নয় বরং প্রধান বিকল্প শক্তি তৈরির ঘোষণা দিলেন। সিলভার টাওয়ারে বৈঠক শেষে যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনে এ ঘোষণা দিয়েছেন এ দুই বর্ষীয়ান নেতা। বিকল্পধারা বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চেšধুরী আগের অসংখ্য নাটকিয়তার মত করে এবারও বঙ্গবীরের সাথে মিলেমিশে একাকার হয়ে বলেছেন, দেশের বর্তমান পরিস্থিতি আমাদের ভালো লাগে না। প্রধানমন্ত্রী মাঝে মাঝেই অগণতান্ত্রিক ভাষায় কথা বলেন। দেশে যে আবার কী হয়, আমরা আতঙ্কিত। একই অনুষ্ঠানে একই সুরে সুর দিয়ে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বলেছেন, মানুষ যে কোন প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় প্রথম হওয়ার জন্য। আমার তৃতীয় হওয়ার জন্য তৃতীয় শক্তি সৃষ্টি করতে চাই না। আমরা দেশের প্রধান বিকল্প শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হতে চাই। এদিকে, হঠাৎ করেই দেশের রাজনীতিবিদদের কাছে বেশ প্রিয় হয়ে উঠেছেন নোবেলবিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস। রাজনীতিকদের যাতায়াত বেড়ে গেছে তার বাড়িতে। গ্রামীণ ব্যাংক ইস্যুতে রাজনীতিকরা তার সাথে দেখা করলেও সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন তাকে ঘিরে ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে নতুন রাজনৈতিক মেরুকরণ। যদিও ওয়ান ইলেভেনের সরকারের সময় রাজনৈতিক দল করতে নেমেছিলেন ড. ইউনূস। সে সময় রাজনীতিবিদদেরই কড়া সমালোচনার মুখে মাসখানেকের মধ্যে হালে পানি না পেয়ে সব গুটিয়ে বলেছিলেন-রাজনীতি তার জন্য নয়।
এত কথার ভীড়েও এশটি কথা কেন যেন খুবই সত্য সত্য মনে হচ্ছে। আর সেই কথাটি হলো, পটপরিবর্তন ও নানা ইস্যুতে বর্তমান সময়েই সেই রাজনীতিকরাই ছুটছেন ড. ইউনূসের পেছনে। সহমর্মিতা জানানোর নামে প্রতিদিন প্রায় প্রতিযোগিতা চলছে তার সাথে বৈঠকের। অথচ গ্রামীণ ব্যাংক থেকে যখন ইউনূস পদত্যাগ করেন তখনও কোন রাজনীতিক তাকে সহমর্মিতা জানাননি। ছুটে যাননি তার বাড়িতে। এরই মধ্যে বিএনপি ঘোষণা দিয়েছে ড. ইউনূসের পাশে তারা রয়েছে। গত ২৭ জুন সকালে ইউনূস সেন্টারে গিয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে সাক্ষাৎ করেছেন বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।  বৈঠকে সামগ্রিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং বিএনপি’র এ মুহূর্তে করণীয় নিয়ে ফখরুল আলোচনা করেন ইউনূসের সাথে। এ সময় বিএনপি’র চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবিহ উদ্দিন আহমেদও ছিলেন। তবে এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ বেসামরিক পদকে ভূষিত হওয়ায় ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে অভিনন্দনপত্র দিয়ে সম্মাননা জানান বিএনপি’র চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এর আগে গত ২৩ জুন বিএনপি’র কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শমসের মবিন চৌধুরী বীরবিক্রম ও সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ড. ওসমান ফারুক ড. ইউনূসের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। সেই সাক্ষাতের তালিকায় আমিও ছিলাম। ছিলো নতুনধারা বাংলাদেশ(এনডিবি)। আমাদের রাজনৈতিক কর্মকান্ডের বয়স একবছরও পূর্ণ হয়নি। কিন্তু আমরা গড়ে তুলতে চেষ্টা করেছি তৃণমূল নেতৃত্ব থেকে জাতীয় নেতৃত্ব। যে কারনে সবার আগে আমরা জেলা-উপজেলা কমিটি করার জন্য নিবেদিত থেকেছি। আর তা অবশ্যই স্বাধীনতার পক্ষের রাজনীতি সচেতন নতুন প্রজন্মকে সাথে নিয়ে। এভাবেই আমরা যখন গড়ে তুলেছি এনডিবির ২৩ জেলা, ২৭ উপজেলা এবং ৩ টি মহানগর কমিটি, ঠিক তখনই প্রস্তাব আসে স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি হিসেবে বাংলাদেশে অন্যতম প্রধান দল আওয়ামী লীগের একজন উচ্চ পদস্থ নেতার কাছ থেকে। তিনি এক অনুষ্ঠানে আমাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘সারাদেশে স্বাধীনতার পক্ষের রাজনীতি সচেতন নতুন প্রজন্মকে তুমি যেভাবে জাগিয়ে তুলছো, সেভাবে এগিয়ে যাও, আগামীতে মহাজোট আরো বর্ধিত করার সময় আমরা তোমাদেরকেও আমাদের সাথে রাখতে চাই।’
উত্তরে আমি মুচকি হাসি দিয়ে বলি, ‘আমরাও থাকতে চাই। তবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে হতে হবে আরো দৃঢ় আর কঠোর। যদি আওয়ামী লীগ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বাস্তবায়নের জন্য, জামায়তে ইসলাম, ছাত্রশিবির, ইসলামী ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল, ইবনে সিনা হাসপাতালসহ সকল ধর্ম ভিত্তিক রাজনীতি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধের জন্য নিবেদিত থাকে তাহলে আমরাও নিবেদিত থাকবো বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাথে একাত্ম হয়ে সত্যিকারের সোনার বাংলাদেশ নির্মাণের জন্য।’
অবশ্য আমার কথা শুনে তিনি কিছুক্ষণ চুপ করে ছিলেন। পরে তিনি বলেছিলেন, ‘মেহেদী, তুমিতো তরুণ। বয়সের রাস্তায় হাঁটতে থাকো, বুঝবে বাংলাদেশে স্বাধীনতার স্বপক্ষে কাজ করাটাই কতটা কষ্টসাধ্য ব্যাপার। তার উপর দৃঢ়ভাবে বাংলাদেশ থেকে জামায়াত-যুদ্ধাপরাধীদেরকে নিষিদ্ধ করার বিষয়টি অনেক কঠিন।’
আমি আর কথা না বাড়িয়ে শুধু বলেছিলাম, ইচ্ছে থাকলেই উপায় হয়।
এখনো আমি  এই কথাটি-ই দৃঢ়তার সাথে বলতে চাই যে ইচ্ছে থাকলেই উপায় হয়। আমি মনে করি বাংলাদেশের রাজনীতিতে তরুণরা এশটি ফ্যাক্টর। আর আমি সেই প্রকৃত তরুণদের রাজনীতি সচেতন করে গড়ে তুলবো। তারা যেন নতুন করে ভাবতে পারে রাজনীতিতে তাদের গুরুত্ব কতটা। তাদের সেই গুরুত্বকে কাজে লাগিয়ে আমরা এগিয়ে যেতে চাই সাহসের সাথে। সেই এগিয়ে যাওয়ার কাফেলায় আমরা রাজনীতিই শুধু করবো না। ভাববো দেশের সামাজিক-অর্থনৈতিক এবং কূটনৈতিক পরিবর্তনের কথাও। যে কারনে ইউনূস সেন্টার যখন মিডিয়াকে জানায়, ‘বৈঠকে রাজনৈতিক কোনো বিষয়ে আলোচনা না হলেও ইউনূসের যে কোনো কার্যক্রমে পাশে থাকার অঙ্গীকার করেন তারা। ইউনূসকে খালেদার গুরুত্বপূর্ণ বার্তা পৌঁছে দিয়েছেন তারা। সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর আহম্মদ এবং ঐদিন বিকেলে এলডিপি’র সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদ ও কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী সাক্ষাৎ করেন। কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের একজন কেন্দ্রীয় নেতা জানান, বৈঠকে জাতীয় রাজনৈতিক ইস্যু, সরকারের ব্যর্থতা-সফলতা এবং গ্রামীণ ব্যাংকের সফলতা নিয়ে আলোচনা করা হয়।’ তখন আমরা পুলকিত না হয়ে আন্দোলিত হই। কেননা, এই দেশ যেমন আমাদের-নতুন প্রজন্মের। ঠিক তেমনি এই গ্রামীণ ব্যাংকও আমাদের-ড ইউনূসও আমাদের। সেই আমাদের সম্পদকে কোন রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহারের পক্ষে আমি নেই। অরাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান, অরাজনৈতিক ব্যাক্তিত্বকে অরাজনৈতিক-ই থাকার রাস্তা করে দেয়াটা যেমন সরকারের দায়িত্ব, তেমন দায়িত্ব বিরোধী দলগুলোরও।
যদিও এই দায়িত্ব পালন থেকে অনেক দূরে রাজনৈতিক দলগুলো। যে কারনে নতুন প্রজন্মের রাজনীতিক হিসেবে বাংলাদেশের রাজনীতিতে যেমন ভূমিকা রাখার চেষ্টা করছি, চেষ্টা করছি লেখনির মাধ্যমে আমূল পরিবর্তন না হলেও যেন কিছুটা পরিবর্তন করতে পারি, সেই চেষ্টা। এই চেষ্টার রাস্তায় আমার অগ্রযাত্রা অব্যহত রাখার লক্ষ্যে গণমাধ্যমের প্রতিটি মানুষের সহায়তা কামনা করছি।
পরিশেষে সাহসের সাথে বলতে চাই, বাংলাদেশের রাজনীতিতে তৈরি হয়েছি আওয়ামী লীগ-বিএনপি এবং জামায়াত-শিবিরের রাজনীতির নামে অপরাজনীতি দেখে দেখে। আমরা আর সেই অপরাজনীতিতে আবদ্ধ হতে চাই না। যে কারনে নতুন প্রজন্ম নতুন জোট, নতুন হাতে নতুন ভোট দিতে বদ্ধ পরিকর। সেই স্বপ্নকে আলোর মুখ দেখানোর জন্য নিবেদিত থাকতে হবে বাংলাদেশের রাজনীতি সচেতন নতুন প্রজন্মকে, গণমাধ্যমকে, রাজনৈতিক বোদ্ধাদেরকে এবং সর্বোপরী রাজনীতিতে যারা স্বচ্ছতা প্রত্যাশা করেন সেই সাহসী প্রবীণদেরকে। তাহলেই আমি মনে করি সকল সমস্যা সমাধান হবে, দূর হবে বাংলাদেশের সকল সংকটও। সেই সমস্যা গস্খামীণ ব্যাংক-ই হোক আর সেই সংকট ড. ইউনূস-ই হোক অথবা শেয়ার বাজার…
[মোমিন মেহেদী : কলামিস্ট ও আহবায়ক, নতুনধারা বাংলাদেশ(এনডিবি)]

Website: www.mominmahadi.com

অতিথি লেখক