নতুনধারা’র সরকার ও অন্যান্য প্রসঙ্গ

নতুনধারা’র সরকার ও অন্যান্য প্রসঙ্গ

মোমিন মেহেদীঃ  একসময় আমার রাতদিন কেটেছে পত্রিকার অফিসে। রিপোর্ট লিখে, প্রুফ দেখে পার করতে হয়েছে দীর্ঘ সময়। এখন অবশ্য আর সেই সময়টা নেই। এখন সময় রাতদিন শ্লোগানে শ্লোগানে-মিছিলে আন্দোলনে নিজেকে ব্যস্ত রাখতে হয়। নতুন প্রজন্মের রাজনীতিক হিসেবে বাংলাদেশের ২৩ জেলা, ১৬ উপজেলা এবং ৩ টি মহানগরে রাজনৈতিক সফর করেছি। পাশাপাশি সহিংসতার রাজনীতি বন্ধের দাবীতে তরুণ প্রজন্মের রাজনৈতিক কর্মকান্ডের মাধ্যমে সত্যিকারের সোনার বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য নিজেকে, দলকে এবং দলের নেতাকর্মীদেরকে নিবেদিত রাখার সাথে সাথে তৈরি হচ্ছি আওয়ামী লীগ-বিএনপি-জামায়াত-শিবিরের রাজনীতির নামে অপরাজনীতি বন্ধ করার জন্য। জানি না কতটুকু সফল হবো, আর কতটুকু ব্যার্থ। তবুও বাংলাদেশের জন্য নিবেদিত থাকবো বলে শপথ করেছি। এগিয়ে চলেছি নিরন্তর রাজনৈতিক পরিবর্তনের জন্য।
নতুনধারা বাংলাদেশ(এনডিবি) আত্মপ্রকাশ করেছিলো ২০১২ সালের ৩০ ডিসেম্বর। বিজয়ের মাসে শুরু করেছিলাম আমাদের রাজনৈতিক যাত্রা। সেই যাত্রা অব্যহত থেকেছে ছাত্র-যুবকদের রাজনৈতিক আন্তরিকতার কারনে। আগামীতেও আমরা রাজনৈতিক পরিবর্তন, দেশের উন্নয়ন এবং মানুষের কল্যাণের জন্য নিবেদিত থাকবো। কেননা, নতুন প্রজন্মের রাজনৈতিক চেতনা নতুন করে দেশকে গড়ার জন্য। আর তাই আহামরি কোন লোভ- মোহ নেই। যা আছে তা কেবল খেয়ে পড়ে নিজেদেরকে যতটুকু ভালো রাখবো, ততটুকু যেন দেশের মানুষকে ভালো রাখতে পারি, এই হলো লক্ষ্য। যদি লক্ষ্য থাকে অুঁট/ বিশ্বাস হৃদয়ে/ দেখা হবেই হবে বিজয়ে…
আমাদের এগিয়ে চলা যখন নিরন্তর। তখন ১৮ দলীয় জোট, ১৪ দলীয় মহাজোটসহ বিভিন্ন নতুন জোটের পক্ষ থেকে প্রস্তাব আসতে থাকে জোটভূক্ত হওয়ার জন্য। ‘আমরা আমাদের রাজনৈতিক কর্মকান্ডকে আরো গতিশীল করার পর ভাববো বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে আমরা কতটুকু গস্খহণযোগ্য; তারপর জোটে যাওয়ার কথা ভাববো’ বলে জানিয়ে দিয়েছি প্রায় সবাইকেই। তবে বাংলাদেশের রাজনীতিতে স্বচ্ছতা-দক্ষতা এবং সততার রাজনীতিক সাবেক প্রেসিডেন্ট এরশাদের জন্য খুলে রেখেছি নতুন প্রজন্মের রাজনৈতিক দরজা। তিনি চাইলেই নির্বিঘেœ নিবেদিত হবো বাংলাদেশের সাবেক এই প্রেসিডেন্টের সাথে। এমন চেতনা থেকে যখন এগিয়ে চলা, ঠিক তখন হঠাৎ করেই এক ইফতারের আয়োজনে নিমন্ত্রণ পেলাম। অনেক অনুরোধের কারনে নতুনধারা বাংলাদেশ(এননডিবি)র যুগ্ম আহবায়ক সাবেক ছাত্রনেতা চন্দন চন্দ্র দাসকে সাথে নিয়ে গিয়েছিলাম সেই ইফতারের আয়োজনে। সেখানে গিয়ে অনেকের সাথেই কুশল বিনিময় হয়। তারপর বক্তব্যর পালা। আমাকে অনুরোধ করা হলেও আমি যেহেতু স্বাধীনতার পক্ষের রাজনীতিতে বিশ্বাসী, সেই সূত্র ধরে যে আয়োজনে জামায়াত-শিবির আছে সেখানে বক্তব্য দেয়া সমীচিন মনে না করায়; না করে দেই। অনেকের কথাই শুনলাম। শুনলাম আলতু-ফালতু-টালতুদের বক্তব্যও। এক পর্যায়ে আমাদের রাজনীতিতে এখন বিরোধী দল হিসেবে ব্যাপক দাপটের রাজনীতি করা বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া আসলেন এবং বক্তব্য দিলেন। তিনি একপর্যায়ে বললেন, ‘নতুনধারার সরকার গঠন করবে বিএনপি।’ ক্ষমতায় আসার জন্য বিএনপি অনেক কথাই বলতে পারে জানতাম, কিন্তু এক্কেবারে নতুনধারার সরকার করবে, এই কথা বলবে বিশ্বাসতো দূরের কথা স্বপ্নেও ভাবিনি। যারা রাজনীতিকে নিজেদের সম্পদ মনে করে রাজনীতি করে, তারা কিভাবে বাংলাদেশকে নতুনধারা’র সরকার উপহার দেবে বিষয়টি আমার বুঝে আসে না। সে যাইহোক কখনো কখনো নতুন প্রজন্মের বিরোধীতা করলেও, নষ্ট-ফষ্ট বললেও অবশেষে সেই নতুন প্রজন্মের রাজনীতিতে তিনি নিজেকে বিলিন করে দেয়ার ঘোষণা দেয়ায় অন্তত ভালোটুকু ঠিকই লেগেছে।
এই ভালোর স্বাদ মনে রেখে বাসায় ফিরে আসি। বাসায় ফিরে রাজনীতির মাঠে থাকতে থাকতে ক্লান্ত চোখ দু’টি ফেসবুকের হোম-এ রাখতেই ভেসে ওঠে মাহামুদুর রহমান মান্না’র গঠিত সংগঠন নাগরিক ঐক্যের ছাত্র সংগঠন নাগরিক ছাত্র ঐক্যের এক কর্মীও স্ট্যাটাস। সেখানে লেখা- ‘নৌকাতে ফুটা হয়েছে,ধানের শীষে পোকা,লাঙলেতে জং ধরেছে,পাল্লা যে দেয় ধোঁকা।  কোন পথে আছি আমরা? যেটার জন্যে যুদ্ধ করলাম ৭১ এ  সেই স্বাধীনতা কি পেয়েছি আমরা? যেই  স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করলাম গনতন্ত্রের জন্যে সেই গনতন্ত্র কি আদৌ পেয়েছি আমরা? একজন আসেন,৫ বছর দূর্নীতি,লুটপাট,সন্ত্রাস,খুন,ধর্ষন,শেয়ার কেলেন্কারী,গুম ইত্যাদি করে বিদায় নেন। আরেকজন আসেন, জঙ্গিবাদ, মৌলবাদ, দূর্নীতি, সন্ত্রাস, দখল, চাঁদাবাজী, টেন্ডারবাজী ইত্যাদি করে চলে যায়।  স্বৈরাচার আর জামাতের কথা কি বলব? স্বৈরাচার  তো এখন “আবুক্কা ডিলা মগা” আর জামাতের আমিরগো যতদিন কুমিরে না খাইবো ততদিন শান্তি নাই।

আসুন দেশের এই দুর্যোগময় মূহুর্তে সকলে মিলে এই অপশক্তির বিরুদ্ধে গনতান্ত্রিক প্রগতিশীল ঐক্য গড়ে তুলি।’ যারা রাজনীতির নাম দল বদলের খেলায় আজীবন নিবেদিত ছিলো, তাদের-ই অন্যতম প্রধান হলেন মাহামুদুর রহমান মান্না। সেই মান্নার গঠিত ছাত্র সংগঠনের একজন কর্মীর স্ট্যাটাস, না কি ডাকসুর সাবেক ভিপি মাহামুদুর রহমান মান্নার স্ট্যাটাস? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে খুঁজতে ক্লান্ত হওয়া ছাড়া আর কোন গতি পাইনি আমি। কেননা, এর নাম রাজনীতি নয় গীবতনীতি। অতএব, বাংলাদেশের রাজনীতিতে গীবত বা পরচর্চা নয়; কাজের মাধ্যমে প্রমাণ করতে কে কতটা যোগ্য।
অন্যদিকে খুবই শুভাকাঙ্খি। খুবই আন্তরিক একজন সাংবাদিক বন্ধু খালেদ সাইফুল্লাহ স্ট্যাটাস দিলেন ‘নতুনধারার সরকার গঠন করবো’ বলে দেয়া বেগম খালেদা জিয়ার বক্তব্য প্রসঙ্গে। সেখানে তিনি লিখলেন, ‘আমাদের দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি চরম একটা খারাপ পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে। প্রধানমন্ত্রী একটা কথা বললে সেটা বিরোধীদলীয় নেত্রীর সহ্য হয় না। ঠিক একই ভাবে বিরোধীদলীয় নেত্রী একটি কথা বললে সেটা প্রধানমন্ত্রীর সহ্য হয় না। সম্প্রতি বিরোধীদলীয় নেত্রী ক্ষমতায় আসলে নতুন ধারার সরকার গঠনের ঘোষণা দিয়েছেন। এটা এমন কি অপরাধ হয়েছে যে ঠিক একদিন পরে প্রধানমন্ত্রী কড়া ভাষায় এর সমালোচনা করলেন। কিন্তু কেন? আমরা একে অপরের চিন্তাভাবনাকে ইতিবাচকভাবে না দেখে সবসময় নেতিবাচকভাবে দেখি কেন? আমরা কি রাজনীতির খারাপ সংস্কৃতি থেকে কখনো বের হতে পারবো না? আমাদের নেতৃদ্বয়ের একে অপরের সমালোচনা করা ছাড়া আর কি কোন কথা নেই?’ এই বন্ধুটিই আমাকে প্রশ্ন করেছিলেন ‘নতুনধারার সরকার গঠন করবো’ বলে দেয়া বেগম খালেদা জিয়ার বক্তব্য প্রসঙ্গে’। আমি বলেছিলাম, তিনি নতুনধারা বাংলাদেশ(এনডিবি) কে তাঁর জোটে ভেড়াতে চাইছেন বলে এমন কথা বলেছেন। কথাটি শুনে সাংবাদিক সাইফুল্লাহর উত্তর ছিলো,‘ভালো তো’। হ্যাঁ, আমিও বলছি ভালোতো। তবে বিএনপিকে এর আগে যা করতে হবে তা হলো, জামায়াতকে ঝেটিয়ে জোট থেকে বিদায় করতে হবে। তা  না হলে নতুনধারা’র সরকার গঠনের এই স্বপ্ন, স্বপ্নই থেকে যাবে; বাস্তবতার আলো আর দেখবে না। যেমন বাস্তবতার আলো দেখেনি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক কন্যা শেখ হাসিনার ‘মদীনা সনদ অনুযায়ী দেশ চালাবো’র অঙ্গীকার। আর সেই অঙ্গীকার আলোর মুখ দেখেনি বলেই কিন্তু তৈরি হচ্ছে একের পর এক শাপলা চত্বর, মতিঝিল ট্রাজেডি, তেঁতুল থিউরি, শফী মেথডসহ বিভিন্ন সমস্যা। এই সমস্যা সমাধানের জন্য নিবেদিত থাকলেই কেবল আসতে পারে প্রকৃত মুক্তি। যেই মুক্তির লক্ষ্যে একাত্তর থেকে আজো জীবনের সাথে লড়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের শান্তিপ্রিয়-স্বাধীনতাকামী মানুষেরা। এর সাথে নতুন করে যোগ হয়েছে ছাত্র-যুবদের রাজনৈতিক চেতনা। যেখানে নতুনধারা বাংলাদেশ(এনডিবি)ও রয়েছে যথাযথ প্রতিনিধিত্ব করার জন্য।
শেখ হাসিনা; সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা আর খালেদা জিয়া; শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের স্ত্রী। তাদের দুজনের মধ্যে বাংলাদেশকে  কে কতটা ভালোবাসে-বাংলাদেশের ষোল কোটি মানুষকে ভালোবাসে যদি কেউ জানতে চায়, তাহলে হয়তো উত্তর খোঁজার পর সঠিক উত্তর হবে ‘জিরো পার্সেন্ট’। যদি তাই না হবে, তাহলে কেন একজন ক্ষমতায় আসার জন্য করছে অরাজকতা-খুন-হামলা; আরেকজন ক্ষমতায় থাকার জন্য করতে দিচ্ছে খুন-হামলা-অরাজকতা? এই প্রশ্নই থাকলো আজ নতুন প্রজন্মের পক্ষ থেকে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পথ ধরে রাজনীতিতে আগুয়ান শেখ হাসিনা ও শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের পথ ধরে রাজনীতিতে তৈরি বেগম জিয়ার কোটি কোটি ভোটার-ভক্ত আর সমর্থকদের কাছে…
[মোমিন মেহেদী : কলামিস্ট ও আহবায়ক, নতুনধারা বাংলাদেশ(এনডিবি)]

Website: www.mominmahadi.com

অতিথি লেখক