কৃষিকে বাণিজ্যিকরণ করা গেলে আরো অগ্রগতি হতঃ জি এম কাদের

কৃষিকে বাণিজ্যিকরণ করা গেলে আরো অগ্রগতি হতঃ জি এম কাদের

নিজস্ব প্রতিবেদক,এসবিডি নিউজ 24 ডট কমঃ

বাণিজ্যমন্ত্রী জি এম কাদের বলেছেন, পণ্য পরিবহনে বিভিন্ন জায়গায় চাঁদাবাজি হয়। এর ফলে দাম বাড়ে। রাজনৈতিক দলগুলোর লাঠিয়ালরা এসব করে। ভোট সংগ্রহে রাজনৈতিক দলগুলোর তাদের দরকার হয়। দলগুলো অনেক ক্ষেত্রে এসব কার্যক্রমে উৎসাহিত করে। এসব কারণে জনসাধারণের যে ক্ষতি হয় তা ‘গণতন্ত্রের মূল্য’।
‘কৃষি ও কৃষি খাতের আধুনিকায়ন, অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণ এবং রফতানি বাণিজ্য সম্প্র্রসারণবিষয়ক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে গতকাল শনিবার এসব কথা বলেন। রাজধানীর মতিঝিলে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই মিলনায়তনে বাংলাদেশ কৃষিভিত্তিক পণ্য উৎপাদক ও ব্যবসায়ী সমিতি এ সেমিনারের আয়োজন করে।
চালের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে খাদ্যাভাস পরিবর্তন করা সম্ভব হলে বাংলাদেশ দ্রুতই খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী জি এম কাদের। তিনি বলেন, দেশে কিছুটা খাদ্য ঘাটতি রয়েছে। তবে ধান, আলু ও অন্যান্য খাদ্যপণ্য মিলিয়ে বাংলাদেশ এখনই খাদ্যে স্বয়ংসম্পন্ন। তাই খাদ্যাভাস পরিবর্তনের মাধ্যমে আমরা নিজেদের খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ বলতে পারি। তিনি আরো বলেন, কৃষিকে বাণিজ্যিকরণ করা গেলে আরো অগ্রগতি হত। প্রক্রিয়াজাতকরণ কোম্পানি না হওয়ায় তা হচ্ছে না। বিদু্যুতের অভাব, মান ইত্যাদি এ শিল্পের প্রতিবন্ধকতা। তিনি আরো বলেন, অনেকেরই নগদ সহায়তা পাওয়ার কথা তবে পাচ্ছে না, আবার যাদের পাওয়ার কথা না তারা পাচ্ছে। এসব বিষয় খতিয়ে দেখা হবে। বীমা খাতে হঠাৎ করে নানা বাধ্যবাধকতা আরোপ যৌক্তিক নয় বলে তিনি মনে করেন।
জি এম কাদের বলেন, পণ্য পরিবহনে জায়গায় জায়গায় চাঁদাবাজি হয় এটা সত্য। রাজনৈতিক দলগুলোর লাঠিয়ালরা এসব করে। ভোট সংগ্রহে রাজনৈতিক দলগুলোর তাদের দরকার হয়। দলগুলো অনেক ক্ষেত্রে এসব কার্যক্রম উৎসাহিত করে। এ ধরনের চাঁদাবাজিসহ সিন্ডিকেট ও সুশাসনের অভাব সবই গণতন্ত্রের মূল্য।
সমিতির সভাপতি ম. রুহুল আমীনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি ছিলন এফবিসিসিআইর সভাপতি এ কে আজাদ। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ড. মো. সালেহ আহমেদ। অন্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন এফবিসিসিআইর প্রথম সহ-সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন, সহ-সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের চেয়ারম্যান কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ। নির্ধারিত আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন এনএটিপি হার্টেক্স ফাউন্ডেশনের ড. শ্রীকান্ত শীল, উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের ফুল বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. কবিতা আনজু মান আরা।
এ কে আজাদ বলেন, কৃষক অনেক সময় নায্যমূল্য পায় না। আবার শহরের মানুষ অতিরিক্ত মূল্যে পণ্য কিনতে বাধ্য হয়। মধ্যস্বত্বভোগী, চাঁদাবাজি, পরিবহন খরচ, পণ্য নষ্ট হয়ে যাওয়া, ব্যাংকের উচ্চ সুদের কারণে উৎপাদন ও ভোক্তা পর্যায়ের মূল্যের মধ্যে ব্যাপক পার্থক্য তৈরি হয়। পচন রোধে শাকসবজির হিমাগার ও হিমাগার পরিবহন ব্যবস্থা করা যায় কি না তা গবেষণা করে দেখা দরকার।
তিনি বলেন, বাজার নিয়ন্ত্রণে টিসিবি রাখার দরকার হলে প্রতিষ্ঠানটিকে শক্তিশালী করতে হবে। নতুবা পিপিপির মাধ্যমে বেসরকারি ব্যবস্থায় ছেড়ে দেওয়া উচিত। কৃষি পণ্যের প্রক্রিয়াজাতকরণ বাড়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে।
তিনি বলেন, ঋণের স্বল্পতার কারণে কৃষিভিত্তিক শিল্প এগোচ্ছে না। ব্যাংকগুলো এ ধরনের উদ্যোক্তাদের গুরুত্ব দেয় না। মাত্র ১০০ জন উদ্যোক্তা ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ৪০ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন। আবার সরকার ঋণ নিচ্ছে। তাহলে ছোট উদ্যোক্তারা ঋণ পাবে কোথায়। এ ছাড়া যে ঋণ পাওয়া যাচ্ছে তার সুদ হার ১৭ থেকে ২১ শতাংশ। ব্যাংকগুলো সুদ হার কমিয়ে আনার ঘোষণা দিলেও তা কার্যকর হচ্ছে না।
মূল প্রবন্ধকার ড. মো. সালেহ আহমেদ বলেন, কৃষি পণ্যে বাংলাদেশে মূল্য সংযোজন সবচেয়ে কম। ক্ষেতে যেভাবে উৎপাদন হয় ওই অবস্থায়ই খাওয়া হয় ৯৯ শতাংশ পণ্য। বাকি মাত্র এক শতাংশ পণ্যে মূল্য সংযোজন হয়। মালয়েশিয়াতে এক আনারস থেকে ৮০ প্রকারের পণ্য উৎপাদন হয়। বাংলাদেশকে প্রক্রিয়াজাতকরণে যেতে হবে। এজন্য উৎপাদন বাড়ানো, পণ্যের বহুমুখীকরণ ও বাজার সম্প্রসারণের পরামর্শ দেন তিনি।

নিজস্ব প্রতিনিধি

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না।