লাইসেন্স পাওয়ার অপেক্ষায় নতুন ১৩টি টিভি চ্যানেল এবং ১৪টি রেডিও স্টেশন

লাইসেন্স পাওয়ার অপেক্ষায় নতুন ১৩টি টিভি চ্যানেল এবং ১৪টি রেডিও স্টেশন

নিজস্ব প্রতিনিধি,এসবিডি নিউজ24 ডট কমঃ নির্বাচনকালীন সরকারের মেয়াদে আরো ১৩টি টেলিভিশন প্রতিষ্ঠান এবং ১৪টি রেডিও প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স দিতে যাচ্ছে সরকার। প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধানের তালিকায় একজন বর্তমান মন্ত্রী, মহাজোট সরকারের সাবেক এক প্রতিমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ও একজন সংসদ সদস্যের নাম রয়েছে। তথ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, চ্যানেলগুলোকে শিগগিরই ছাড়পত্র দিতে যাচ্ছে সরকার। নির্বাচনকালীন সরকার চ্যানেলের অনুমতি দিলে পরবর্তীতে তা কোনো সমস্যায় পড়বে কিনা, তা এখন যাচাই-বাচাই করা হচ্ছে। আর রেডিও স্টেশনগুলোকে ইতোমধ্যে তথ্য মন্ত্রণালয় অনুমতি দিয়েছে। এখন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে নিরাপত্তা বিষয়ে ক্লিয়ার্নেস পেলেই সম্প্রচারে যেতে পারবে তারা।
সূত্র জানায়, নতুন টেলিভিশন চ্যানেলের লাইসেন্স পাওয়ার জন্য প্রক্রিয়াধীন ১৩টি প্রতিষ্ঠান হচ্ছে-গ্রিন মাল্টিমিডিয়া লিমিটেডের গ্রিন টিভি (চেয়ারম্যান গাজী গোলাম দস্তগীর; বন ও পরিবেশমন্ত্রী হাছান মাহমুদের নাম সুপারিশকারী হিসেবে উল্লেখ আছে), ইস্ট-ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের নিউজ টোয়েন্টিফোর (ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান), মিলেনিয়াম মিডিয়া লিমিটেডের তিতাস টিভি (ব্যবস্থাপনা পরিচালক ধানাদ ইসলাম দীপ্ত; সুপারিশকারী প্রতিমন্ত্রী ক্যাপ্টেন তাজ), ঢাকা বাংলা মিডিয়া অ্যান্ড কমিউনিকেশন লিমিডেটের ঢাকা বাংলা টেলিভিশন (ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী), মিলেনিয়াম মাল্টিমিডিয়া প্রাইভেট লিমিটেডের মিলেনিয়াম টিভি (ব্যবস্থাপনা পরিচালক নূর মোহাম্মদ; সুপারিশকারী মমতাজ বেগম এমপি), নিউজ অ্যান্ড ইমেজের নিউ ভিশন টিভি (প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ আলমগীর; সুপারিশকারী সুকুমার রঞ্জন এমপি), বারিন্দ মিডিয়া লিমিটেডের রেনেসাঁ টিভি (চেয়ারম্যান শাহরিয়ার আলম এমপি), রংধনু মিডিয়া লিমিটেডের রংধনু টিভি (ব্যবস্থাপনা পরিচালক এইচ এম ইব্রাহিম; সুপারিশকারী খালিদ মাহমুদ এমপি), বিএসবি ফাউন্ডেশনের ক্যামব্রিয়ান টেলিভিশন (চেয়ারম্যান লায়ন এম কে বাশার), জাদুমিডিয়া লিমিটেডের জাদুমিডিয়া টিভি (চেয়ারম্যান আনিসুল হক), মিডিয়া বাংলাদেশ লিমিটেডের আমার গান টিভি (চেয়ারম্যান তরুণ দে), ব্রডকাস্ট ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ লিমিটেডের চ্যানেল টোয়েন্টি ওয়ান (ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল্লাহ আল মামুন কৌশিক) এবং এটিভি লিমিটেডের এটিভি (চেয়ারম্যান আব্বাস উল্লাহ)। এদের মধ্যে একমাত্র চ্যানেল টোয়েন্টি ওয়ানের নামের পাশে কোনো সুপারিশকারীর নাম নেই এবং এটিভির নামের পাশে শুধু ‘চেয়ারম্যান বাড়ি’ শব্দটি লেখা রয়েছে।

উল্লেখ্য, ১৩টি প্রতিষ্ঠান ছাড়াও আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের বিগত প্রায় ৫ বছরে ১৮টি টিভি চ্যানেলের অনুমতি দেয়া হয়েছে। ২০০৯ সালের অক্টোবরে ১০টি চ্যানেলের লাইসেন্স দেয় সরকার। সেগুলো হচ্ছে-৭১ টিভি, মোহনা টিভি, চ্যানেল ৯, সময় টিভি, জিটিভি, ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভি, মাছরাঙা টিভি, এটিএন নিউজ, মাইটিভি ও বিজয় টিভি। ২০১০ থেকে ২০১৩ সালে লাইসেন্স পায় ৮টি চ্যানেল। ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারিতে চ্যানেল টোয়েন্টিফোর, ২০১০ সালের এপ্রিলে এসএ টিভি, ২০১১ সালের জুনে এশিয়ান টিভি, ২০১১ সালের অক্টোবরে গান বাংলা টিভি, ডিসেম্বরে দীপ্তবাংলা টিভি এবং ২০১৩ সালে চ্যানেল ৫২, যমুনা টিভি ও বাংলা টিভির লাইসেন্স দেয়া হয়। এর বাইরে ‘চ্যানেল সিক্সটিন’ নামে একটি চ্যানেল অবৈধভাবে চালিয়ে আসছেন আওয়ামী লীগের সাভার অঞ্চলের নেত্রী হাসিনা দৌলা। সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী নাজমুল হুদা যেভাবে চালাতেন ‘ফাল্গুন মিউজিক’ নামের একই ধরনের চ্যানেল। বিগত বিএনপি-জামায়াত সরকারের সময় দেয়া হয়েছিল ১০টি টিভি লাইসেন্স। ১৯৯৬ সালের আওয়ামী লীগ সরকার আমলে অনুমতি পায় একুশে টিভি, এটিএন বাংলা ও চ্যানেল আই নামের তিনটি চ্যানেল। অনুমতির অপেক্ষা থাকা ১৩টি টিভি চ্যানেল ছাড়াই বাংলাদেশ বর্তমানে বেসরকারি স্যাটেলাইট চ্যানেল সংখ্যা ৩১টি। যদিও তার মধ্যে সিএসবি, চ্যানেল ওয়ান, দিগন্ত টিভি ও ইসলামিক টিভি নামের চারটি চ্যানেলের সম্প্রচারের ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।

এদিকে, স্যাটেলাইট চ্যানেলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ক্রমেই বেড়ে চলছে বাণিজ্যিক রেডিও স্টেশন। ২০০৬ সালে রেডিও টুডের হাত ধরে এফএম জগতে প্রবেশ করে বাংলাদেশ। বর্তমান দেশে চালু ১০টি বাণিজ্যিক রেডিওর চালু রয়েছে। সেগুলো হচ্ছে- এবিসি রেডিও, রেডিও টুডে, রেডিও ফূর্তি, রেডিও আমার, ঢাকা এফএম, পিপলস রেডিও, রেডিও স্বাধীন, রেডিও ভূমি, সিটি এফএম এবং এশিয়ান রেডিও। আরো একটি সম্প্রচারের অপেক্ষা রয়েছে। এরপরেও আরো ১৪টি বেসরকারি বাণিজ্যিক রেডিও স্টেশনের অনুমতি দিয়েছে সরকার। তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে ১৪টি রেডিওর প্রাথমিক অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এখন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিরাপত্তা বিষয়ে ছাড়পত্র পেলেই সম্প্রচারের অনুমোদন পাবে বেসরকারি এই বাণিজ্যিক রেডিওগুলো। তবে নতুন এই রেডিওগুলোর অধিকাংশই বিনোদননির্ভর হবে বলে জানা গেছে। স্কয়ার ও বসুন্ধরা গ্রুপের রেডিও বিনোদনের সঙ্গে তথ্য ও সংবাদ রাখবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। অনুমতি পাওয়া রেডিও স্টেশনগুলো হচ্ছে- রেডিও মাসালা। এর উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান রেডিও মাসালা লিমিটেড। এর চেয়ারম্যান শিলা ইসলাম। রেডিও নেক্সট আনছে এনরিচ নেট প্রাইভেট লিমিটেড। এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোসাব্বির আহমদ। আ ক ম সাহিদ রেজার নামের একজনকে দেয়া হয়েছে বাংলা রেডিও অনুমতি। স্কয়ার গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অঞ্জন চৌধুরীর নামে দেয়া হচ্ছে রেডিও দিনরাত। জাগো এফএম নামে রেডিও আনছে একেসি প্রাইভেট লিমিটেড। এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহসান খান চৌধুরী। আর বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনছেন রেডিও ক্যাপিটাল। নাট্য ব্যক্তিত্ব নাদের চৌধুরী রাতুল মিডিয়া অ্যান্ড কমিউনিকেশন লিমিটেডের ব্যানারে আনছেন দেশ রেডিও। রাশেদুল হাসান চৌধুরী আনছেন রেডিও ধ্বনি। নাট্য ব্যক্তিত্ব শমী কায়সার তার ধানসিঁড়ি কমিউনিকেশন লিমিটেডের ব্যানারে আনছে রেডিও অ্যাকটিভ। সিআইইউএস প্রাইভেট লিমিটেড আনছে রেডিও সিআইইউএস। এর চেয়ারম্যান জহিরুল ইসলাম। কাজী মাহফুজুর রহমান মিডিয়া টুডের ব্যানারে আনছেন রেডিও সিটি। ইনোভিশনের ম্যানেজিং পার্টনার শাফকাত সামিউর রহমান আনছেন রেডিও এইজ। ব্রডকাস্ট ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ লিমিটেড আনছে টাইমস রেডিও। আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য শাহরিয়ার আলম আনছেন রেডিও ঢোল।

নিজস্ব প্রতিনিধি

Related articles