চলতি অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে ৪ হাজার ৯৭১ কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার

চলতি অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে ৪ হাজার ৯৭১ কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার

নিজস্ব প্রতিনিধি,এসবিডি নিউজ24 ডট কমঃ চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) ২ হাজার ৬৯৯ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে, যা গত অর্থবছরের পুরো সময়ের (১২ মাস) তিন গুণেরও বেশি। জাতীয় সঞ্চয় পরিদপ্তরের হালনাগাদ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি ২০১৩-১৪ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) বিভিন্ন ধরনের সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৬৯৮ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। সংশ্লিষ্টদের মতে, বিনিয়োগ কমে যাওয়ায় ব্যাংকগুলোতে জমছে অলস টাকার পাহাড়। আর এজন্য ব্যাংকগুলো আমানতের ওপর সুদের হার কমিয়েছে। ফলে নিরাপদ বিনিয়োগের মাধ্যম হিসেবে সঞ্চয়পত্রের বিক্রি বাড়ছে। সূত্র জানায়, চলতি ২০১৩-১৪ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে ৪ হাজার ৯৭১ কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার।

গত ২০১২-১৩ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রির পরিমাণ ছিল ৭৭২ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। জাতীয় সঞ্চয় পরিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বাজেট ঘাটতি মেটাতে গত অর্থবছর সরকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে ৭ হাজার ৪০০ কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরেছিল। বিক্রি কম হওয়ায় পরে সেই লক্ষ্যমাত্রা ১ হাজার ৯৭৩ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়। তবে সে লক্ষ্যও পূরণ হয়নি। এর আগের অর্থবছরে (২০১১-১২) ৪৭৯ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছিল। জাতীয় সঞ্চয় পরিদপ্তরের হালনাগাদ পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা গেছে, জুলাই-অক্টোবর সময়ে যেসব সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে, তার ৮০ শতাংশই পরিবার সঞ্চয়পত্র। ১৫ শতাংশ পেনশনার সঞ্চয়পত্র। বাকি ৫ শতাংশ অন্যান্য সঞ্চয়পত্র। সূত্রমতে, পরিবার সঞ্চয়পত্রের সুদের হারই সবচেয়ে বেশি, সাড়ে ১৩ শতাংশের মতো। নারীদের জন্য বিশেষ সুবিধার অংশ হিসেবে এই সঞ্চয়পত্র চালু করে অর্থ মন্ত্রণালয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত ব্যাংকিং খাতে স্থায়ী আমানত দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৯৮ হাজার ৬১ কোটি ৮১ হাজার টাকা। যা গত বছরের জুন শেষেও ছিল ২ লাখ ৪০ হাজার ২৭৯ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। অর্থাৎ মাত্র এক বছরের ব্যবধানে ব্যাংকিং খাতে স্থায়ী আমানত বেড়েছে প্রায় ৫৮ হাজার কোটি টাকা। আর চলতি বছরের জুলাই শেষে সামগ্রিক ব্যাংক খাতে আমানত বেড়েছে প্রায় ১৭ শতাংশ। অথচ ঋণ বেড়েছে ৮ শতাংশের চেয়ে সামান্য বেশি। প্রতিবেদনে আরো দেখা যায়, জুলাই শেষে ব্যাংকগুলোর কাছে সামগ্রিকভাবে ৫ লাখ ৮১ হাজার ৪৫৯ কোটি টাকা রয়েছে। এর মধ্যে নগদ রয়েছে এক লাখ ৭৯ হাজার ৫২২ কোটি টাকা। সে হিসেবে ব্যাংকিং খাতে মোট অর্থের ৩০ দশমিক ৮৮ শতাংশই তারল্য। এতে করে ব্যাংকগুলোর কাছে উদ্বৃত্ত তারল্য বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৯ হাজার ৬৬৩ কোটি ৭৭ লাখ টাকায়। এদিকে, ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বর শেষে বেসরকারি খাতে ঋণের পরিমাণ নেমেছে ১১ দমশিক শূন্য ৭ শতাংশে, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৮ দশমিক ১১ কম। আর এটা পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। এর আগে ২০০৮ সালের সেপ্টেম্বর শেষে বেসরকারি খাতে ঋণের পরিমাণ ছিল ১১ শতাংশের ঘরে। কেন্দ্রীয় বাংক সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে সাধারণত পাঁচ ধরনের স্থায়ী আমানত-সুবিধা (এফডিআর) দেয়া হচ্ছে। যেখানে মাসিক আমানতের সুদহার  নয় শতাংশ, দুই মাসের জন্য ১০ শতাংশ এবং তিন, ছয় ও এক বছরের জন্য রাখলে সর্বোচ্চ সাড়ে ১১ শতাংশ সুদ দিচ্ছে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ জানান, অনেক দিন থেকেই দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি খারাপ। তাই বিনিয়োগকারীরা নতুন বিনিয়োগে যাচ্ছেন না। তাই ব্যাংকগুলোতে নগদ টাকার পরিমাণ বেড়ে গেছে। আর এ কারণে তারা আমানতের সুদহার কমিয়ে দিয়েছে। তাই সাধারণ মানুষ টাকা ব্যাংকে না রেখে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করছে। তিনি আরো বলেন, সঞ্চয়পত্রের বিনিয়োগের কোনো ঝুঁকি নেই। তাই স্বল্প ও মধ্যম আয়ের লোকেরা এ খাতে বিনিয়োগ বেশি করে থাকে।

নিজস্ব প্রতিনিধি