বিদায় ২০১৩,স্বাগত ২০১৪

বিদায় ২০১৩,স্বাগত ২০১৪
শুভাশিস ব্যানার্জি শুভ: বাংলাদেশের জন্য একটি লজ্জাজনক বছর ২০১৩। বছরজুড়ে যত রাজনৈতিক হানাহানি-খুনাখুনির ঘটনা ঘটেছে, এতে সভ্য পৃথিবী এখন আমাদের বর্বর বলে তিরস্কার করছে। এ তিরস্কারে আমাদের অনেক অর্জন ধুলোয় মিশতে বসেছে। নিজেদের পায়ে নিজেরাই কুড়াল মারছি আমরা। দেশের অর্থনীতি আজ হুমকির সম্মুখীন। জাতির মেরুদণ্ড শিক্ষাও বিপর্যস্ত। না, সবই নিরাশাব্যঞ্জক হলে মানুষ বাঁচে না। অনেক ব্যর্থতার মধ্যেও আশায় বুক বাধি। শপথ নেই আমরা প্রিয় মাতৃভূমিকে অন্ধকারে তলিয়ে যেতে দেব না। ঘোর অমাবস্যার রাতেও আমরা তিমিরবিনাশী ভোরের স্বপ্ন জ্বেলে পথ চলতে জানি। গুডবাই ২০১৩।
বহুমাত্রিক ও আলোড়ন তোলা নানা ঘটনার জন্ম দিয়ে মহাকালের পরিক্রমায় বিদায় নিচ্ছে আরও একটি বছর। দিনপঞ্জিকার শেষ পাতাটি উল্টে যাবে। নানা কাজের ফিরিস্তি লেখা নিত্যসঙ্গী খেরোখাতাটি হয়ে পড়বে সাবেক। পরমায়ুর বৃক্ষ থেকে ঝরে যাবে একটি পাতা। মহাকাল নামের এক অন্তহীন মরুভূমির বুকে যেন এক ফোঁটা জল। মহাকাল সেভাবেই মুছে দেবে ‘২০১৩’কে। ‘যেতে নাহি দিব’- এ চিরন্তন বিলাপধ্বনির ভেতরে আবহমান সূর্য একটি পুরনো দিবসকে কালের স্রোতের ঊর্মিমালায় বিলীন করে পশ্চিম দিগন্তে মিলিয়ে যাবে। বর্ষবরণের আবাহন রেখে কুয়াশামোড়া পান্ডুর সূর্য বিদায় নেবে মহাকালের যাত্রায়। ৩১ ডিসেম্বর মঙ্গলবার রক্তিম সূর্য অস্ত যাওয়ার মধ্য দিয়ে হারিয়ে গেছে ঘটনাবহুল বছরটি। মধ্যরাতের প্রথম প্রহরে সূচিত হবে দীপ্ত আশায় উদ্ভাসিত নতুন বছর ২০১৪। অনেক ঘটন-অঘটন, প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি, চড়াই-উতরাই, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ও আনন্দ-বেদনার সাক্ষী হয়ে কালের গর্ভের হারিয়ে যাচ্ছে বছরটি। রাতটুকু পেরোলেই কাল পূর্বাকাশে উঠবে নতুন সূর্য। এ সূর্য নতুন বছরের, নতুন দিনের, নতুন স্বপ্নের। নতুন সূর্যালোকিত দিনের প্রতি অসীম প্রতীক্ষা ও প্রত্যাশা মানুষের। উৎসব-আয়োজনের মধ্য দিয়েই সারাদেশের মানুষ স্বাগত জানাবে খ্রিস্টীয় নতুন বছর ২০১৪ সালকে। বিশ্ববাসীও মেতে উঠবে নতুন বছরের আগমনী উল্লাসে। কালের অনন্তযাত্রায় নতুনের কাছে প্রত্যাশা শিশিরভেজা পত্রপল্লবের মতো চিরদিন মানব হৃদয়ে জেগে থাকে বলেই জীবন নিরন্তর বহমান। এ স্রোতে এগিয়ে যেতে যেতেও পেছন ফিরে বিষন্ন বেদনায় দেখে নিতে ইচ্ছা করে চলে গেল যে, তাকে। বিদায় বছরটি প্রাপ্তি আর অপ্রাপ্তির দোলাচলে নিয়েছে অনেক কিছু। চিরবিদায় নিয়েছেন দেশের অনেক কৃতী সন্তান। কিন্তু দিয়েছেও কি কম? তবে বিদায়ী বছর ইতিহাসের অনেক বাঁক ঘুরিয়ে দিলেও মানুষের মনে নেই শান্তি। গোটা বিশ্ববাসী বর্ষবরণে উম্মাতাল থাকার নানা প্রস্তুতি নিলেও বাংলাদেশের মানুষের মনে আনন্দের বদলে শঙ্কা-উৎকণ্ঠা। দেখতে দেখতে চলে গেল আরেকটি বছর। রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশে বিদায়ী বছরটি কেমন গেল? দেশের সব মানুষের এমন প্রশ্নের অভিন্ন জবাব-অসম্ভব এক ক্রান্তিকাল ও বন্ধুর পথ পাড়ি দিয়েছে বিদায়ী বছর ২০১৩। সংঘাতেই কেটে গেছে রাজনীতির এই বছরটি। স্বাধীনতার ৪২ বছরে এমন হিংসাত্মক নৃশংস এবং ধ্বংসাত্মক রাজনীতি দেখেনি দেশবাসী। যা বিদায়ী বছরের শেষভাগে শুরু হয়ে এখনও চলছে। সমঝোতার পরিবর্তে শুরু হওয়া সংঘাতের রাজনীতি শেষ পর্যায়ে এসে রীতিমত প্রতিহিংসার আগুনে জ্বলছে দেশ। আর এই প্রতিহিংসার আগুন নিভিয়ে দেশবাসী কবে যে শান্তি ও স্বস্তির দেখা পাবে- তা নিশ্চিত করে বলতে পারছে না কেউ-ই। দীর্ঘ সামরিকতন্ত্রের পরিবর্তে আসা কষ্টার্জিত গণতন্ত্রও যেন আজ শঙ্কার মুখে। মহাজোট সরকারের শেষ বছর হিসেবে দেশবাসীর প্রত্যাশা ছিল বিদায়ী বছর হবে নির্বাচনমুখর। সংসদ নির্বাচন নিয়ে রাজপথে চাঙ্গা থাকবে রাজনৈতিক দলগুলো। ঐক্য, সমঝোতা আর গণতন্ত্রের চর্চায় রাজনীতি হবে জনকল্যাণমুখী। কিন্তু ক্ষমতাসীনদের কঠোর অবস্থান আর বিরোধী দলের হিংসাশ্রয়ী নৃশংস ধ্বংসযজ্ঞ কর্মকান্ড শেষ সময়ে রক্তাক্ত হয়েছে রাজপথ। বিজয়ের মাসে বিষাক্ত ফোনা তুলে একাত্তরের কায়দায় মানুষকে হত্যা করছে স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত-শিবির। বিদায়ী বছরের শেষ দিন পর্যন্ত জ্বলছে দেশ, পুড়ছে নিরীহ মানুষ। পূর্বদিগন্তে কোন আলো, স্বস্তি বা সমঝোতার আভাস ছাড়াই চলে গেল ২০১৩। রেখে গেল আতঙ্ক, উৎকণ্ঠা আর সংঘাত-সংঘর্ষপূর্ণ অনিশ্চয়তার রাজনীতি।
শুভাশিস ব্যানার্জি শুভ: প্রধান সম্পাদক,এসবিডি নিউজ24 ডট কম।।

প্রধান সম্পাদক