কোটিপতি গ্রাহকদের ক্ষেত্রে সঞ্চয়ের চেয়ে ঋণ গ্রহণের প্রবণতাই বেশি

কোটিপতি গ্রাহকদের ক্ষেত্রে সঞ্চয়ের চেয়ে ঋণ গ্রহণের প্রবণতাই বেশি

আব্দুল আরেফিন,এসবিডি নিউজ24 ডট কমঃ দেশের ব্যাংকিং খাতের প্রায় ৭০ ভাগ ঋণ কোটিপতিদের দখলে। ব্যাংকিং খাতে কোটিপতি আমানতকারীদের চেয়ে কোটি টাকার ঋণগ্রহীতার সংখ্যা ও ঋণের পরিমাণ বেশি। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, গত বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত ব্যাংকিং খাতে মোট ঋণগ্রহীতার সংখ্যা ৯৬ লাখ ৬২ হাজার ৯৫৮ জন। আর তাদের মোট গৃহীত ঋণের পরিমাণ ৪ লাখ ২৪ হাজার ৮০৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে কোটি টাকার ঋণ গ্রহীতার সংখ্যা ৪৭ হাজার ২১০ জন (মোট ঋণ গ্রহীতার মাত্র দশমিক ৫ শতাংশ) এবং তাদের গৃহীত ঋণের পরিমাণ হচ্ছে ২ লাখ ৯২ হাজার ৪৫৪ কোটি টাকা। এটা ব্যাংকিং খাতে মোট ঋণ প্রবাহের ৬৮ দশমিক ৮৬ শতাংশ। ব্যাংকিং খাতে কোটি টাকার আমানতকারী ও ঋণগ্রহীতার তুলনামূলক চিত্র পর্যালোচনায় দেখা যায়, কোটিপতি আমানতকারীর সংখ্যার চেয়ে কোটি টাকা ঋণগ্রহীতার সংখ্যাই বেশি। কোটিপতি আমানতকারীদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে কোটি টাকা ঋণ গ্রহীতার সংখ্যা।

ব্যাংকিং খাত সংশ্লিষ্টদের মতে, সাধারণ আমানতকারীদের অধিকাংশই ব্যাংকে টাকা রাখেন সঞ্চয়ের জন্য। অন্যদিকে কোটিপতি গ্রাহকদের ক্ষেত্রে সঞ্চয়ের চেয়ে ঋণ গ্রহণের প্রবণতাই বেশি। ব্যাংকিং খাতের সিংহভাগ ঋণ কোটিপতিদের দখলে থাকার বিষয়ে সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশে যা হয়, এখানেও তা-ই হয়েছে। তবে এটা ভাল লক্ষণ নয়। এর ফলে সুষম উন্নয়ন ব্যাহত হবে।’ বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খন্দকার ইব্রাহীম খালেদ এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘আসলে ডিস্ট্রিবিউশন বলতে যা বোঝায়, আমাদের এখানে তা হয় না। এখানে যেটা হয় সেটা হচ্ছে অ্যাকোমোডেশন। আর যাদের অর্থ আছে তারাই অধিক সুবিধা পেয়ে থাকেন এবং রাষ্ট্রের ক্ষমতাটাও তাদের হাতে। আগে শিক্ষক, উকিল, মোক্তাররা সংসদ সদস্য হতে পারতেন; আর এখন যাদের অর্থ আছে তারাই সংসদে যাচ্ছেন এবং আগামীতে তারাই রাষ্ট্রের ক্ষমতা গ্রহণ করবেন।’

সূত্র : বাংলাদেশ ব্যাংক

পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ১৯৭৫ সালে দেশে ১ কোটি টাকার অধিক ঋণগ্রহীতার সংখ্যা ছিল ২১২ জন। ১৯৯০ সালে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ২ হাজার ১২৫ জনে এবং গৃহীত ঋণের পরিমাণ ছিল মোট ঋণ প্রবাহের ৩৮ শতাংশ। জুন ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের শেষে কোটি টাকা ঋণ গ্রহীতার সংখ্যা দাঁড়ায় যথাক্রমে ৪ হাজার ৫২৬ জন এবং ৮ হাজার ৮৪৪ জনে। আর আলোচ্য দুই বছরে গৃহীত ঋণের পরিমাণ ছিল মোট ঋণ প্রবাহের যথাক্রমে ৪৪ শতাংশ এবং প্রায় ৫২ শতাংশ। বর্তমান মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার প্রাক্কালে ২০০৮ সালের ডিসেম্বর শেষে কোটি টাকা ঋণগ্রহীতার সংখ্যা ছিল ২৫ হাজার ২০৬ জন এবং তাদের গৃহীত ঋণের পরিমাণ ছিল মোট ঋণ প্রবাহের সাড়ে ৬২ শতাংশ।

নিজস্ব প্রতিনিধি