১৭ এপ্রিলঃ ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস

১৭ এপ্রিলঃ ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস

নিজস্ব প্রতিনিধি,এসবিডি নিউজ24 ডট কমঃ ১৭ এপ্রিল। ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস। বাংলাদেশের ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় দিন। মহান মুক্তিযুদ্ধের এক অবিস্মরণীয় অগ্রযাত্রার অধ্যায়। বাংলাদেশের মাটিতে স্বাধীন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মপ্রকাশ করে। সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ পরিচালিত হয়েছে ইতিহাসের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নির্দেশিত পথে। ১৯৭১ সালের এই দিনে তদানীন্তন কুষ্টিয়া জেলার মেহেরপুর মহকুমার বৈদ্যনাথতলার আম্রকাননে (বর্তমানে মুজিবনগর) স্বাধীন সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রথম সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ গ্রহণ করে। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালেই এই আমবাগানকে মুজিবনগর নামকরণ করে বাংলাদেশের অস্থায়ী রাজধানী ঘোষণা করা হয়। ইতোপূর্বে ১০ এপ্রিল এমএনএ এবং এমপিদের কুষ্টিয়া জেলার সীমান্তবর্তী এলাকায় অনুষ্ঠিত অধিবেশনে সর্বসম্মতিক্রমে স্বাধীনতা যুদ্ধ পরিচালনা ও পাক হানাদার বাহিনীকে আমাদের স্বদেশ ভূমি থেকে বিতাড়িত করে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষিত এবং নির্দেশিত পথে মুক্তিযুদ্ধের বিজয় অর্জনের জন্য এই সরকার গঠন করা হয়। সেই সরকারের অন্যতম প্রাণপুরুষ ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ। সরকার গঠিত হয় ১০ এপ্রিল ১৯৭১ সালে। শপথ গ্রহণ করেন ১৭ এপ্রিল। সেদিন মুজিবনগরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি, সৈয়দ নজরুল ইসলামকে উপ-রাষ্ট্রপতি এবং তাজউদ্দীন আহমদকে প্রধানমন্ত্রী করে গঠিত হয় বাংলাদেশের প্রথম সরকার। তবে পাকিস্তানের কারাগারে বন্দী বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে উপ-রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামকে করা হয় অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি। এই সরকার গঠনের ফলে বিশ্ববাসী স্বাধীনতার জন্য সশস্ত্র সংগ্রামরত বাঙালিদের প্রতি সমর্থন ও সহযোগিতার হাত প্রসারিত করে। স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের প্রথম সরকার মুজিবনগর সরকার গঠন বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে এক অনন্য গৌরবগাথা সাফল্যের সাক্ষর। দিবসটি আজ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় উদযাপিত হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী আওয়ামী লীগসহ মহাজোট ক্ষমতাসীন হওয়ার পর মন্ত্রিসভার বৈঠকের সিদ্ধান্ত নিয়ে ২০১০ সাল থেকে দিনটি রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় উদযাপিত হয়ে আসছে।

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণীতে দেশবাসীকে আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে দেশের তরুণ প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানার পাশাপাশি দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে জাতিগঠনমূলক কাজে অবদান রাখবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠ অর্জন মহান স্বাধীনতা। স্বাধীনতা সংগ্রামের গৌরবময় ইতিহাস তরুণ প্রজন্মের কাছে সঠিকভাবে তুলে ধরা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। প্রধানমন্ত্রী তার বাণীতে ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবসের প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশবাসীকে বঙ্গবন্ধুর কাঙ্ক্ষিত ক্ষুধা, দারিদ্র্য, নিরক্ষরতামুক্ত, শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ার কাজে আত্মনিয়োগ করার উদাত্ত আহ্বান জানান। তিনি বলেন, জাতির চরম দুর্দিনেও যে গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক ধারা ঊধর্ে্ব তুলে এগিয়ে চলা যায়, ১৭ এপ্রিল জাতীয় ইতিহাসে তার এক অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে আছে।

আওয়ামী লীগ যথাযোগ্য মর্যাদায় মুজিবনগর দিবস উদযাপনের জন্য ঢাকায় ও মুজিবনগরে দু’দিনব্যাপী ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। জেলায় জেলায় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, কৃষক লীগের পক্ষ থেকে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হবে। এ ছাড়াও রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অনন্য রাজনৈতিক দল, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন যথাযথ মর্যাদায় দিবসটি উদযাপন করবে।

আওয়ামী লীগের কর্মসূচি অনুযায়ী কাল ভোর ৬টায় বঙ্গবন্ধু ভবন এবং দেশের সকল জেলা কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, সকাল ৭টায় বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে জাতির জনকের প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ এবং সকাল ৭টা ৩০ মিনিটে বনানী কবরস্থানে ও রাজশাহীতে শহীদ জাতীয় নেতাদের মাজারে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করা হবে। মুজিবনগরে ভোর ৬টায় জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, সকাল ১১টায় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ, ১১টা ১৫ মিনিটে গার্ড অফ অনার প্রদান ও সাড়ে ১১টায় মুজিবনগর দিবসের তাৎপর্য ব্যাখ্যা করে শেখ হাসিনা মঞ্চে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ও মুজিবনগর দিবস উদযাপন কমিটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নাসিম ও প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখবেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু। এছাড়াও মেহেরপুরের অনুষ্ঠানমালায় কেন্দ্রীয় নেতারা অংশগ্রহণ করবেন।

নিজস্ব প্রতিনিধি