একজন সুনীল ব্যানার্জিঃ কিছু ব্যথা কিছু প্রশ্ন!

একজন সুনীল ব্যানার্জিঃ কিছু ব্যথা কিছু প্রশ্ন!

ফারহানা খানম: সুনীল ব্যানার্জি একজন গুণী ব্যাক্তি। তাঁর জন্ম সাতক্ষীরার এক বনেদী পরিবারে। ১৯৪৭ সালের ২০ এপ্রিল সেখানে জন্ম এবং বেড়ে ওঠা। তিনি মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছিলেন। সাতক্ষীরা থেকেই,প্রাণের মায়া ত্যাগ করে দেশের স্বাধীনতা রক্ষায় হাতে অস্ত্র তুলে নিতে দ্বিধা করেন নি। তিনি স্বাধীন বাংলাদেশে সাংবাদিকতার পথিকৃতদের একজন। যিনি মেধা ও মনন দিয়ে সম্রদ্ধ করেছেন এই পেশাকে। সুনীল ব্যানার্জি ১৯৬৯ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাষ্টার্স পাশ করেন। এর আগে তিনি এলএলবি ডিগ্রী অর্জন করেন। স্বাধীনতা পরবর্ত্তী সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দ্বিতীয়বার মার্ষ্টাস পাশ করেন। ১৯৭৩ সালে বিবিএস পাশ করে পুলিশের চাকরি পান। কিন্তু তাঁর পিতার তীব্র আপত্তির মুখে পুলিশের চাকরিতে যোগ দেননি। নিজেকে কোন গণ্ডিতে বেঁধে রাখতে চান নি। তাই আয়েশি জীবনের স্বস্তি নয়,ঝুঁকিপুর্ণ সাংবাদিকতাকেই পেশা হিসেবে বেছে নেন। তিনি দেশের অবহেলিত মানুষদের কথা লিখে গেছেন,তিনি তুলে এনেছেন অন্তরালে ঘটে যাওয়া নানান অঘটন,সুন্দর এক বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য ছিল বলেই তিনি তুলে এনেছেন খবরের পেছনের খবর। কোন হুমকি তাঁকে ঘরে বেঁধে রাখতে পারেনি। সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে তাকে বারংবার বিভিন্ন মহলের রোষানলে পরতে হয়েছে তবুও সত্যান্বেষণে ও সঠিক খবর পরিবেশনে তিনি ছিলেন আপোষহীন। অমায়িক এই মানুষটির বড় গুণ ছিল সত্যান্বেষণ ও দেশ মানুষের প্রতি প্রগাঢ় মমত্ববোধ। তিনি আজীবন তাঁর পেশার প্রতি ছিলেন সৎ ও নিবেদিতপ্রাণ। ২০০৬ সালের ২৮ আগস্ট সুনীল ব্যানার্জি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ভোরে নিজ বাসায় মারা যান । তাঁর মৃত্যুর সাথে সাথে তাঁর পরিবারের ওপর নেমে আসে দুঃখের যবনিকা। একমাত্র পুত্র শুভাশিস ব্যানার্জি কে ডাক্তারি পড়া ছেড়ে দিতে হয়, কারণ তার মা শিখা ব্যানার্জি অসুস্থ। মায়ের সুস্থতার জন্য অনেক টাকার প্রয়োজন তাই বাবার বন্ধু মহল সহকর্মী ও পরিচিত,আত্মীয় স্বজন, বিভিন্ন দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন কিন্তু আশ্বাস মিল্লেও কেউ সাহায্য করেন নি!

এবারে মুল কথায় আসি। মৃত্যু,অসুস্থতা,আর্থিক অনটন,পারিবারিক বিপর্যয় এসব আকস্মিক কোন ঘটনা নয়,জীবনে সবাইকেই এর সম্মুখীন হতে হয়। কিন্তু কথা হচ্ছে আমরা কি এতোটাই অমানবিক হয়ে গেছি একদিন যার সাথে কাজ করেছি,আনন্দে দুঃখে একসাথে থেকেছি,তিনি নেই বলে সব ভুলে যেতে হবে? তাঁর পরিবারের পাশে দাঁড়াতে এত কার্পন্য কেন আমাদের? কেন শিখা ব্যানার্জির পাশে দাঁড়ানোর মত কেউ নেই? কেন শুভাশিসের জীবনে স্বস্তি নেই ? কেন পারিনি শিখা ব্যানার্জিকে সুস্থ জীবন ফিরিয়ে দিতে? যে মানুষটি দেশের জন্যে জীবন বাজী রেখে যুদ্ধ করেছেন,যে কয়জন প্রথিযশা সাংবাদিক নিজেদের মেধা ও মনন দিয়ে সমৃদ্ধ করে গেছেন এই পেশা কে তিনিত তাঁদেরই একজন,বলা যায় জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান্দের একজন আজ তিনি যদি যুদ্ধ ক্ষেত্রে মারা যেতেন তাহলে হয়ত তাকে মরণোত্তর সম্মাননা দেয়া হত। অথচ বেঁচে থেকে তিনি যে দেশের জন্য জাতির বিবেক হয়ে কাজ করেছেন তাঁর পেশায় এনেছেন নতুন মাত্রা তা আমরা ভুলে গেছি। আমরা এতদিনেও তাঁর অবদানের সঠিক মূল্যায়ন করতে পারিনি! আমরা কি এতোটাই অকৃতজ্ঞ হব? ২০০৬ থেকে ২০১৪ এই আট বছর কম সময় নয়। এই আট বছরে ধীরে ধীরে দূরে সরে গেছেন তাঁর আত্মীয় -স্বজন সহকর্মিবৃন্দ এবং দেশ ও জাতি । এখন নিঃসঙ্গ শিখা ব্যানার্জি নিঃসঙ্গ শুভাশিস ব্যানার্জি…

[ফারহানা খানম: কবি ও প্রাবন্ধিক।।]

অতিথি লেখক