মৃত্যুদন্ড বনাম আমৃত্যু কারাদন্ড!

মৃত্যুদন্ড বনাম আমৃত্যু কারাদন্ড!

সৈকত রুশদী:আপীল আদালতের ভাষার মারপ্যাঁচ দেখে মনে হয় যে ট্রাইব্যুনালের দেওয়া মৃত্যুদন্ডে তেমন কোন পরিবর্তন হয়নি | বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত রাজনীতি ও প্রশাসনের সম্পূর্ণ প্রভাবমুক্ত | স্বাধীন | কিন্তু যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দন্ডিত আবদুল কাদের মোল্লাকে ‘জনমতের চাপে’ (!) ফাঁসিতে ঝোলানোর জন্য আইন পরিবর্তনের মাধ্যমে সরকারের জন্য আপীলের সুযোগ তৈরী করার পর যেমন আপীল আদালতে নতুন রায়ে ফাঁসির দন্ডাদেশ হয়, তেমনি বদলে যায় দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর দন্ডাদেশ রাজনৈতিক কারণেই | কোণঠাসা করে রাখা প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপি’র শক্তি আরও খর্ব করার জন্য তাদের প্রধান মিত্র জামায়াতে ইসলামীকে নিজ পক্ষপুটে নিয়ে আসার জন্য এর চেয়ে বড় রাজনৈতিক চাল তো আর হয়না | এযেন আমৃত্যু কারাদন্ডে সাপও মরলো, লাঠিও ভাঙ্গলো না |

মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ফেরি করে বেড়ানো সাম্প্রতিক কালের আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল যুদ্ধাপরাধী ও একাত্তরে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ সংঘটনের জন্য দায়ীদের বিচার করা | মানুষের ভাত ও ভোটের অধিকার এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা | বিচার তাঁরা করেছেন | সময়ে সময়ে রাজনৈতিক প্রয়োজনে রায় বদলাবেনা এমন কোন প্রতিশ্রুতি তো তাঁরা দেননি | ফলে বিচারকদের অভিশংসন বা অপসারণের ক্ষমতা জাতীয় সংসদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার আইন প্রবর্তনের আগেই থরহরি কম্প আদালত | প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলের অকৃপণ দানে কৃপাধন্য বিচারকরা আর কী করতে পারেন! কিছু শব্দের স্থান বদলে দেন | প্রতিষ্ঠিত হয় আইনের শাসন! প্রাণে বেঁচে যায় মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত ‘অপরাধী’ | বেঁচে যায় ভোটারবিহীন প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতাসীন শেখ হাসিনার সরকার | জীবন রক্ষাকারী যন্ত্রের সাহায্যে যেভাবে মরণাপন্ন মানুষকে যেভাবে বাঁচিয়ে রাখা হয় শেষ নি:শ্বাস ত্যাগের আগে, সেভাবেই বেঁচে থাকে আওয়ামী লীগ সরকার | বাঁচার শেষ প্রচেষ্টা হিসেবে কোরামিন ইনজেকশনের মতো এখন যদি মহাজোট সরকার তাঁদের মন্ত্রীসভায় ও সরকারে জামায়াতকে অংশীদার করে নেয়, তাতেও বিস্মিত হবোনা আর | মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ সংঘটনকারীদের বিচারের জন্য গঠিত ট্রাইব্যুনালের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে ওঠা প্রশ্ন আবারও জীবন্ত হয়ে ওঠে |

শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মহাজোট বা আওয়ামী লীগের এই মৌ-লোভী রাজনীতি রাজনীতি খেলায় তাঁদের অনৈতিক ও লুটেরা সরকার বেঁচে যায় সাময়িকভাবে | কিন্তু মৃত্যু হয় গণতন্ত্রের | জবাবদিহিতার। বাংলাদেশের গরিষ্ঠ মানুষের আশা-আকাঙ্খার | অপমান করা হয় বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদ ও অংশগ্রহণকারী প্রতিটি মুক্তিযোদ্ধাকে | দেশপ্রেমিক জনসাধারণকে | বাংলাদেশের মাটিকে |

[লেখক: প্রবাসী সাংবাদিক।]
টরন্টো,কানাডা।
১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৪

অতিথি লেখক