আর কত দুর্ঘটনা!

আর কত দুর্ঘটনা!

মীর আব্দুল আলীম: আমাদের সড়ক-মহাসড়ক গুলো প্রতিনিয়তই দিচ্ছে লাশের হাতছানি। চোখের সামনে প্রতিদিনই তরতাজা মানুষগুলো লাশ হয়ে যাচ্ছে। রক্তাক্ত হচ্ছে পিচঢালা পথ, এত লাশ বহনে অপারগ হয়ে পড়েছে যে আমাদের সড়ক মহাসড়ক। কোথায় নেই লাশ? সর্বশেষ হৃদয়বিদারক ঘটনাটি ঘটেছে নাটোর বড়াইগ্রামের রেজুর মোড়ে। ২০ অক্টোবর কেয়া পরিবহন একটি ট্রাককে ওভারটেক করতে গিয়ে অথৈ পরিবহনের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষে ঘটনাস্থলেই ৩৩ জন মারা গেছেন। এক লাশের ওপর পড়ে আছে আরেক লাশ। এক সঙ্গে এত লাশ কখনও দেখেনি বড়াইগ্রামের মানুষ। এক সঙ্গে এত মানুষের মৃত্যুতে শোকে কাঁদছে গোটা এলাকা। এলাকা জুড়ে শোকের আবহ আর কানফাটা মাতম। বাংলাদেশের ইতিহাসে বোধহয় এটাই দ্বিতীয় বড় বাস দুর্ঘটনা। এর আগে চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে ট্রাক উল্টে ৪৪ ছাত্র প্রাণ হারিয়েছিল। প্রশ্ন জাগে, জীবন কি এমনই? এতটাই তুচ্ছ? মানুষের জীবনের কি একদন্ডও নিরাপত্তা নেই? সবই কি মূল্যহীন? তাই যদি হয় তবে সড়কে এত লাশ কেন?
আমি এগুলেকে স্রেফ দুর্ঘটনা বলব না। নিয়ম নীতি মেনে চললে, সঠিক ভাবে দায়িত্ব পালন করলেই যে দুর্ঘটনা এড়ানো যেত তাকে দুর্ঘটনা বলি কী করে? কী নৃশংসই না এসব হত্যাকান্ড! জানি দুর্ঘটনা আচানকই ঘটে, কিন্তু নিয়ন্ত্রণ করে কে? মানুষই তো? মানুষ যাদের হাতে জীবনের দায়িত্ব সঁপে দেয় তারা কেন সতর্ক হয়ে চলে না? কেন অর্থলোভ সংবরণ করতে পারে না? দুর্ঘটনায় প্রতিদিন যে এত প্রাণ বলি হচ্ছে, তার ‘স্রষ্টা’ কে? বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো; আর সড়ক পথের দায়িত্বপ্রাপ্তদের দায়িত্বে অবহেলা। চলাচলে অনুপযুক্ত পরিবহনে যাত্রী পরিবহন আর অদক্ষ গাড়ি চালক এসব দুর্ঘটনার মূল কারণ। এসব নিয়ন্ত্রণ করে কে? মানুষই তো? তবে মানুষ কেন সচেতন, নিয়ন্ত্রিত হতে পারে না? নিশ্চয়ই অসতর্কতা, অন্যমনস্কতা, দায়িত্বহীনতা কিংবা বাহনের কোন যান্ত্রিক ত্রুটি এসব দুর্ঘটনা ঘটায়। এগুলো তো মানুষই সমাধান করতে পারে। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই যার যার দায়িত্বটা সে পালন করেন না। তাই ঝরে যাচ্ছে অসংখ্য মানুষের প্রাণ, নষ্ট হচ্ছে কোটি কোটি টাকার সম্পদ। দুর্ঘটনায় মানুষ মরছে অস্বাভাবিক গতিতে। মৃত্যুর মিছিলে কেবল লাশ বাড়ছে তো বাড়ছেই। নির্বিচারে চলছে এ জাতীয় হত্যাকান্ড! আর তা চালিয়ে দেয়া হচ্ছে নিছক দুর্ঘটনা বলে। এ হত্যাকান্ডের যেন কোনই বিচার নেই। মানুষ মরবে আর এর কোনই বিচার হবে না; তা কি করে হয়? এদেশে দুর্ঘটনার জন্য চালকের শাস্তি নগণ্য। একের পর এক মানুষ মরছে কিন্তু শাস্তি হচ্ছে ক’জনের? পাঠক দুর্ঘটনার জন্য কারো শাস্তি হয়েছে আপনাদেও জানা আছে কিনা জানি না তবে আমি কখনও এমন শাস্তির কথা শুনিনি কখনো। সাধারনত দুর্ঘটনার পর থানা পুৃলিশ আর ক্ষতিগ্রস্তদের দশ বিশ হাজার টাকা দিলেই সব খালাশ হয়ে যায়। ঐদিনই ঘাতক ড্রাইভার ঘাতক পরিবহন নিয়ে রাস্তয় নেমে আসে। তাহলে দুর্ঘটনা রোধ হবে কি করে?
সড়ক দুর্ঘটনাকে নরহত্যা হিসেবে গণ্য করে দায়ী চালকদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়ার আইন করা হয়েছিল ১৯৮৫ সালে। শ্রমিক সংগঠনগুলোর চাপে সরকার সে আইন সংশোধন করে। এখন চালকের ভুলে দুর্ঘটনা হলে এক থেকে তিন বছর কারাদণ্ডের বিধান আছে। এ আইনটি খুবই দুর্বল। দীর্ঘদিনের নাগরিক দাবি আইন সংশোধন করে শাস্তি বাড়ানোর। এবং তা ক্ষেত্র বিশেষ মোবাইল কোর্টে বসিয়ে শাস্তির ব্যবস্থা করা। কিন্তু সরকার তা আমলে নিচ্ছে না। আইনটি যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে ২০০৭ সালে একটি কমিটি করেছিল যোগাযোগ মন্ত্রণালয়। খসড়াও হয়। কিন্তু এখনো খসড়াটি গত ৭ বছরেও আইনে পরিণত হয়নি। প্রশ্ন হলো আইন না হলে, শাস্তির ব্যবস্থা না থাকলে দুর্ঘটনা রোধ হবে না কখনো।
এতসব মৃত্যু; আর দুর্ঘটনার নামে হত্যার এই নিরন্তর ঘটনাকে আমরা রোধ করতে পারছি না আজও। কেন পারছি না জানি না। কিন্তু ঘরের কোণে বসে আহ্, ইস্ করতে থাকি নিত্য। নিঃশঙ্ক পথচলাকে নিশ্চিত করতে আমরাই বা কেন সচেতন হচ্ছি না? আমরা কি দেশব্যাপী দুর্বার আন্দোলনের মাধ্যমে সত্যি সত্যিই পথচলাকে ভীতিমুক্ত করতে পারি না? খুন হচ্ছে। চোখের সামনে কেড়ে নেয়া হচ্ছে তাজা তাজা প্রাণ। বিশেষ কারও মৃত্যু হলে, বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটলে ক’দিন হৈচৈ হয়। রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে সব রাষ্ট্রযন্ত্র সচল হয়। সবাই আইনের কথা বলেন। তদন্ত কমিটি গঠন করেন। নতুন নতুন আইন তৈরি হয়। কিন্তু কিছুই হয় না। যা হওয়ার তাই হয়।
পত্রিকান্তে জেনেছি, কেবল সড়ক দুর্ঘটনায়ই দেশে গড়ে প্রতিদিন ৩০ জনের প্রাণহানি ঘটছে। এ হিসাবে মাসে ৯০০ এবং বছরে ১০ হাজার ৮০০ জন মারা যাচ্ছেন। তবে বিআরটিএর পরিসংখ্যান মতে, এ সংখ্যা দিনে ১৬ এবং বছরে পাঁচ হাজার ৭৬০ জন। আইন না মানাই হচ্ছে সড়ক দুর্ঘটনার মূল কারণ। এক্ষেত্রে সবাইকে আইন মানতে বাধ্য করতে হবে। ট্রাফিক পুলিশসহ চলমান প্রশাসন এ আইন প্রয়োগে ব্যর্থ হলে প্রয়োজনে তাদের ঢেলে সাজাতে হবে, অন্যথায় দুর্ঘটনা রোধে নতুন করে র‌্যাবের মতো বিশেষ বাহিনী গঠন করতে হবে। দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ হলোথ ১. ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন চলাচল, ২. মোবাইল ফোন ব্যবহার, ৩. অতিরিক্ত যাত্রী ও পণ্য পরিবহন, ৪. ট্রাফিক আইন না মানা, ৫. ট্রাফিকদের দায়িত্বে অবহেলা, ৬. চালকদের বেপরোয়া মনোভাব, অদক্ষতা ও অসতর্কতা, ৭. অদক্ষ চালক । আর এসব কারণে প্রতিদিনই ঘটছে হতাহতের ঘটনা। সড়ক দুর্ঘটনার মূল কারন ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন আর চালকের অদক্ষতা। এজন্য আমাদের রোড ট্রন্সপোর্ট অথরিটিকে দায়িত্বপূর্ণ ভুমিকায় আসতে হবে। রাস্তায় চলাচল করা পরিবহন গুলোতে দায়াত্বহীন মালিকরা ব্যবহার অনুপযুগী টায়ার ব্যবহার, পুরাতন এবং নির্ন্মমানের ব্রেক ব্যবহারসহ ত্রুটিপূর্ণ পরিবহন সড়কে নামান। যা সহসাই বন্ধ করতে হবে।
দুর্ঘটনার অন্যতম প্রধান কারন অদক্ষ গাড়ি চালক। এ জায়গাটিতে সরকারের দক্ষতা আর নজরদারির বড্ড অভাব আছে বলে মনে করি। চালকের পেশাকে এখনও আমাদের দেশে মর্যাদাপূর্ণ পেশায় রূপ দেয়া যায়নি। সবা আগে দক্ষ চালকের সংখ্যা বাড়াতে চালকের পেশাকে মর্যাদাপূর্ণ করতে হবে। পরিবহন চালকদের আয় রোজগার ভালো হলেও এ পেশার শিক্ষত লোকজন আসতে চায় না। কারণ এ পেশার লোকদের অন্য দৃষ্টিতে দেখা হয়। বিয়ে সাদি থেকে শুরু করে সবক্ষেত্রে ড্রাইভারদের মর্যাদা এ সমাজে একটু কমই আছে। তাই এ পেশায় শিক্ষিত লোকজন আসতে চায় না। কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, শিল্পকারখানা, অফিসের পিয়ন, কেরানীর চেয়েও ওরা কম মর্যাদা পূর্ণ। ড্রাইভারি পেশায় ভালো অর্থ উপার্যন করা গেলেও মর্যাদা না থাকায় শিক্ষত লোকজন কম বেতনে অফিসের চাকুরি করতে আগ্রহ দেখায়। তাই সরকারকে আগে ড্রাইভারি পেশাকে মর্যাদাপূর্ণ করতে সকল ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে। ড্রাইভারি পেশা মর্যাদাপূর্ণ হলে দক্ষ এবং শিক্ষিত চালকের সংখ্যা বাড়বে। তাতে সড়ক দুর্ঘটনা অনেকটা রোধ হবে বলে আমরা মনে করি।
দিন যত যাচ্ছে মৃুত্যুর মিছিলে কেবলই লাশ বাড়ছে। সারি সারি লাশ দেখতে দেখতে এসব দুর্ঘটন আমাদের গা সওয়া হয়ে গেছে। দেশজুড়ে অবাধে চলে ফিটনেসবিহীন গাড়ি। দাপুটে অনুমোদনহীন গাড়িতে যাত্রী ভরা। এমন সংবাদ ছাপা হয় পত্রিকার পাতায়। কই কিছুইতো হয় না? হবেও না। আনাড়ি চালকরা চালায় গাড়ি। ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই ৯৫ ভাগ ড্রাইভারের। আনাড়ি হেলপারের হাতে গাড়ি। ওরা রিকশা ছেড়ে স্টিয়ারিং ধরে মোটরযানের। এজন্য ন্যূনতম ট্রেনিংয়ের প্রয়োজন পড়ে না। দুর্ভাগ্য এ দেশে ২শ’ টাকায় মেলে ভুয়া ড্রাইভিং লাইসেন্স। লাইসেন্স না থাকলেও কোন সমস্যা নেই। পুলিশের হাতে দু-চারশ’ টাকা গুঁজে দিলেই হয়। আর বিআরটিএ? সেটাতো দুর্নীতির চরম আখড়া। ভুয়া লাইসেন্স থেকে শুরু করে হেন কাজ নেই যা বিআরটিএ করে না। এদের সুবাদেই যে কেউ ভুয়া লাইসেন্স পেয়ে যাচ্ছে সহজেই। আর এমন সব চালকের হাতেই প্রতিদিন মানুষ মরছে। তাতে কী? এক্ষেত্রেও ৫ হাজার বড়জোর ১০ হাজার দিলেই মামলা খালাস। এমন ঘটনায় কারও কখনো জেল জরিমানা হয়েছে বোধকরি কারও জানা নেই। অথচ ড্রাইভিং লাইসেন্স নেইথ এমন লোক গাড়ি চালালে কারও জানমালের ক্ষতি হলে তা হয় মৃত্যুর শামিল। এজন্য আদালতে মৃত্যুদ- দেয়ারও বিধান আছে। কিন্তু ওসব হয় না এদেশে। তাই প্রিয়, অতি চেনা মুখগুলো অকাতরে ঝরে যাচ্ছে। আরও ঝরবে। এসবই নীরবে সইছি আমরা। কিছুই করা যাচ্ছে না। মাঝে মধ্যেই মনে হয় অন্ধ হয়ে যাই। চিৎকার করে বলি ‘আমায় অন্ধ করে দাও বন্ধ করে দুটি চোখ।’ অন্ধ হলে হয়তো এমন দৃশ্য দেখতে হতো না আমায়। আইনের কথা বলছি ঠিকই। দেশের আমজনতা থেকে শুরু করে দায়িত্বশীলরা সবার মাঝেই কেমন যেন গা-ছাড়া ভাব। প্রতিবাদী নন কেউই। ভাবটা এমন হচ্ছে হোক আমার কী? মনে আছে এরশাদ সরকার দুর্ঘটনার ব্যাপারে কঠোর আইন করতে গিয়ে বেকায়দায় পড়েছিলেন। তাহলে সবার ভয়টা কি এখানেই? হত্যা নিয়ে, মৃত্যু নিয়ে আন্দোলন হবে। গাড়ির চাকা বন্ধ হয়ে যাবে। নড়বড় করবে ক্ষমতার গদি। এতেই তো সব শেষ হওয়ার কথা নয়। প্রতিদিনই অতি চেনা মুখগুলো অজ্ঞ, নেশাগ্রস্ত চালকদের হাতে নির্বিচারে প্রাণ দিচ্ছে; আর তা কেবলই চেয়ে চেয়ে দেখছি আমরা। সঠিক আইন হচ্ছে না। যতটুকুই আছে তারও প্রয়োগ নেই। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আইনের আওতায় আনা হচ্ছে না অপরাধীদের। লাইসেন্সবিহীন নেশাগ্রস্ত অনেকেই অকপটে গাড়ির স্টিয়ারিং ধরে বধ করে চলেছে মানবপ্রাণ।
প্রায় প্রতি ক্ষেত্রেই থানা পুলিশ পয়সা পেয়ে মীমাংসা করে দিচ্ছে এসব হত্যাকা-ের ঘটনাগুলো। কতটাই না অসভ্য আমরা। মানুষ মরবে আর ১০/২০ হাজার টাকার বিনিময়ে সব মীমাংসা হবে; হবে সব স্বাভাবিক। একি ভাবা যায়? সরকারি হিসাব মতে, ১৯৯৯ সালে ৪ হাজার ৯১৬ জন, ২০০০ সালে ৪ হাজার ৩৫৭ জন, ২০০১ সালে ৪ হাজার ৯১ জন, ২০০২ সালে ৪ হাজার ৯১৮ জন, ২০০৩ সালে ৪ হাজার ৭ ৪৯ জন, ২০০৪ সালে ৩ হাজার ৮২৮ জন, ২০০৫ সালে ৩ হাজার ৯৫৪ জন, ২০০৬ সালে ৩ হাজার ৭৯৪ জন, ২০০৭ সালে ৪ হাজার ৮৬৯ জন, ২০০৮ সালে ৪ হাজার ৪২৬ জন, ২০০৯ সালে ৪ হাজার ২৯৭ জন, ২০১০ সালে ৫ হাজার ৮০৩ জন, ২০১১ সালে ৩ হাজার ৬৮৮ জন, ২০১২ সালে ৫ হাজার ৯১১ জন, ২০১৩ সালে ৪ হাজার ৮৬৫ জন এবং চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত আনুমানিক ২ হাজারেরও বেশি মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে। প্রতিবছরই রেল, নৌ এবং সড়ক দুর্ঘটনায় মানুষ মরছে আর তা রোধ করা যাচ্ছে না।
নিরাপদ সড়কের জন্য প্রথমত, গাড়ির ফিটনেস থাকতে হবে ১০০%। ফিটনেসহীন যানবাহন রাস্তায় নামানো মানেই মানুষের রক্তক্ষয় আর জীবননাশের কারণ। দ্বিতীয় উপাদান-গাড়ির চালকের অজ্ঞতা, মাদকাসক্ত, ট্রাফিক আইন লঙ্ঘন করা এবং বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো। চালকের অশিক্ষা, মূর্খতা এবং হেলপার দিয়ে গাড়ি চালানো অঘটনের মূল উৎস। তৃতীয় উপাদান হলো- সড়কপথ। কিন্তু আমাদের দেশের ৭০% সড়কই সড়ক হওয়ার যোগ্য নয়। এ দেশের এমন সব হাইওয়ে আছে যেখানে বিপরীতমুখী দুটি গাড়ি স্বচ্ছন্দ্যে যাতায়াত করতে পারে না। যা দুর্ঘটনাকে ত্বরান্বিত করে। এদিকে দক্ষ চালক সৃষ্টিতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে হলে প্রতিটি ড্রাইভারকে ন্যূনতম এসএসসি পাসসহ পাঁচ বছরের ড্রাইভিং অভিজ্ঞতার সার্টিফিকেট থাকা বাধ্যতামূলক করতে হবে। যারা ফিটনেস দেখেন, যারা সড়ক মেরামত করেন, সড়ক ও নৌপথের যানবাহন যাদের দেখভালের দায়িত্ব তারা তাদের দায়িত্ব মোটেও পালন করেননা। আর যারা পরিবহনের মালিক, যারা পরিবহন চালান তাদের চরম দায়িত্বহীনতার কারণেই এসব দুর্ঘটনা ঘটছে। এমন দুর্ঘটনা অনায়াসেই এড়ানো যায় যদি সংশ্লিষ্ট বিভাগ, যানবাহন চালকরা, যাত্রীরা আরেকটু সজাগ হন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে চালকদের অসতর্কতা এবং ওভারটেক করার কারণেই সড়ক-মহাসড়কে দুর্ঘটনা ঘটে। যাকে তাকে চালকদের যান চালানোর লাইসেন্স দেয়া হলেতো দুর্ঘটনা এড়ানো অসম্ভব হয়ে পড়ে। আর টাকা হলে সহজেই ফিটনেস মিলে। পরিবহন রাস্তায় চলাচলের অযোগ্য হলেও সমস্যা নেই। তা সংশ্লি¬ষ্টদের ম্যানেজ করে চলতে পারে নিদ্বির্ধায়। শত-সহস্র প্রতিবাদ, সমালোচনা, ক্ষোভ-বিক্ষোভ সত্ত্বেও দেশে দুর্ঘটনা বেড়েই চলেছে। কখনো দুর্ঘটনারস্থল প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল, কখনো বড় শহর। দুর্ঘটনার হাত থেকে যেন রেহাই নেই কারও।
এ কথা সবাই স্বীকার করেন যে, অপরাধ কমাতে হলে অপরাধীর শাস্তির বিকল্প নেই। কিন্তু সড়ক-সন্ত্রাসী বেপরোয়া চালকদের ব্যাপারে কার্যত নরম নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। সরকারের কোন কোন পর্যায় থেকে তাদের উৎসাহিত করার অভিযোগও উঠেছে। তাদের শাস্তি নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে উপযুক্ত আইনের অভাবও রয়েছে। কঠোর আইন প্রণয়নের উদ্যোগ থমকে আছে। এমন পরিস্থিতি বহাল থাকলে সড়ক দুর্ঘটনা যে কমবে না তা নিশ্চিত। আমরা মনে করি, সমস্যাটি নিয়ে দ্রুত সরকারি উদ্যোগ হওয়া দরকার। সামান্য দায়িত্বশীলতা তৈরি হলেই যেখানে শত প্রাণ রক্ষা করা সম্ভব, সেখানে নির্বিকার বসে থাকা কার স্বার্থে? সড়ক দুর্ঘটনা রোধে সময় এসেছে। আর দেরি নয়। এ ব্যাপারে কঠোর আইন প্রণয়ন এবং সড়ক পথে যানবাহন চলাচলের সব সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে সরকার পিছপা হবেন না এটাই সবার প্রত্যাশা।
[লেখক- মীর আব্দুল আলীম, সাংবাদিক, গবেষক ও কলামিষ্ট।]

অতিথি লেখক