এ পথ চলা কতদিন?

এ পথ চলা কতদিন?

মোঃ ফরিদ আহম্মেদ: একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ – আমার প্রিয় মাতৃভূমিতে জন্ম নিয়েছি পঁচাত্তরের নভেম্বরে। নদী মাতৃকা এ জননীর একটি নদী সন্ধ্যার তীরে কুনিয়ারী গ্রামে মেহেরুন্নেসা পরিবারে জন্ম আমার। জন্ম থেকে অদ্যবধি ৪৪টি বিজয়ের মাস অতিক্রম করতেছি। কিন্তু বাস্তবতার নিরিখে চড়াই উতরাই পাড়ি দিয়ে আমার পথচলা। এ চলায় আমি একজন সাধারন শিক্ষক। শিক্ষাগত যোগ্যতা ভাল এবং সরকারি চাকুরী নেওয়ার পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করেও মামা-খালুর সুপারিশ না থাকায় বড় অঙ্কের বাম হাতের (ঘুষ) কাজটি না দিতে পারায় একটি বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত ছিলাম ১৯৯৮ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত। দূর্ভাগ্য তৎকালীন হাসিনা সরকারের হস্তক্ষেপে সংস্থাটির কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মিলেনিয়াম বছরে শিক্ষকতা পেশা বেছে নেই। একজন শিক্ষক হিসেবে এ বাংলার রূপ যতটা দেখেছি মানুষ হিসেবে মানবতার রূপ বড়ই কষ্টের এবং বোঝাই মুশকিল। কখনও মানুষ অর্থ, যশ, খ্যাতি, জমি দখল, বাড়ি-গাড়ির লোভে অন্ধ হয়ে যায়। আবার দুর্নীতির ছোঁয়ায় ও রক্ত চোষকদের কালো গ্রাস নেই এমন কোন সরকারের খাত নেই। সাধারন শ্রেণির লোকের ঘামের মূল্য যেমন আস্তে আস্তে বিলীন হতে যাচ্ছে তেমনি একজন শিক্ষকের বেঁচে থাকার স্বাধীনতা অবমূল্যায়িত হচ্ছে। একদল স্বার্থবাদী এবং আমি মনে করি দেশবিরোধী লোকের দ্বারা লাঞ্চনা ও মারধর খাওয়ার সুবিচার ঝুলে আছে সরকারের তহবিলে। একটি কলমের একটি দাগের মূল্য যে জাতি দিতে পারে না সে জাতি কিভাবে লাখো শহীদের রক্তের মূল্য দিবে। আসলে আমরা মুখে বলি আমরা স্বাধীন বাঙালী অথচ অন্তরে স্বাধীনতার ভাষ্কর্যে মরীচা লেপন করতে দ্বিধাবোধ করি না। ইতিহাস আজ যেন এক শ্রেণির অর্থলোভীদের অট্টালীকার কংক্রিটে চাপা পড়ে আছেন। ধর্ম, বর্ণ, শ্রেণি বৈষম্যতা যেন মৌলবাদী ও জঙ্গীদের থাবায় মুষ্টিগতঅ মুখে গাই স্বাধীনতার গান আর দেশপ্রেমের বস্ত্র পড়ে দেশ ধ্বংসের সুর বাজাই। সত্যিকার অর্থে আমাকে এখনও একটি সুন্দর স্বাধীন বাংলাদেশ অজর্ন করতে ও তা রক্ষা করতে পারছি? ঘরে বড় ইদুর রেখে বাজারে গিয়ে যদি বিড়াল কিনতে যাই তাহলে বিড়ালের খোঁজ পাওয়া যায় না। কারন যারা কুকুর পোষতে অফনেক টাকা ব্যয় করে এবং সমপরিমান টাকা দিয়ে কয়েকজন মানুষের বেঁচে থাকা সম্ভব। তারাই তো বড় বড় বিড়াল বাজার থেকে কিনে পোষ মানাচ্ছে। তাই ঘরের ইঁদুর যদি বান (দড়ি) কাটে তাহলে করবেন কি বলুন। সবুজ বাংলার উদীয়মান সূর্যটা নিয়ম মাফিক ঊদিত হয় এবং অস্ত যায়, কারো জন্য বসে থাকে না। ঠিক তেমনি যারা ভদ্রতার লেবাস সেজে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে, সরকারি জমি দখল করে নিচ্ছ তাদের নিকট দেশপ্রেম বড় নয়। তাদের নিকট থেকে মানুষের মৌলিক চাহিদা এমনকি বর্তমানে পৌষের প্রচন্ড শীতে বস্ত্র, চিকিৎসা এমনকি, বেঁচে থাকার নূন্যতম প্রত্যাশাটা পাওয়া মুশকিল। কারন এদেশে এখন এক শ্রেণির মানুষ আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হচ্ছে, অন্যদিকে আরেক শ্রেণির মানুষ দারিদ্র সীমার নিচে চলে যাচ্ছে।

ছবি: মোঃ ফরিদ আহম্মেদ।

এহেন বৈষম্যতা কেন? প্রশ্নটির উত্তর খুজতে গেলে এমন হতে পারে যেন কেঁচো খুড়লে সাপ বেরিয়ে আসে। অমৃত রস খেয়ে কিছু স্বার্থ লোভী কাপুরুষেরা মানবতার অস্তিত্ব ক্ষুন্ন করছে। হয়ত তারা ভাবছে আজীবন বেঁচে থাকবে তারা! তথ্য প্রযুক্তির আধুনিক এ যুগে একজন বোকাও বুঝতে পারে আত্বকষ্ট কি! যা চলে যায় তার জন্য দুঃখের কিছুই নেই সত্য, তাই বলে কি শিক্ষারও কিছু নেই? প্রতিহিংসা, লোভ মানুষকে যেন আমার মত আর গ্রাস করতে না পারে। কারন আমি ভুক্তভোগী একজন নিপীড়িত শিক্ষক, একজন সাধারণ বাঙালি। বাঙালি পরিচয় দিতে আমার ভয় নেই। একবার যখন স্বাধীন মাতৃকায় এসেছি, আমাকে যেতেই হবে এটাই সত্য। অমৃত ফল ও তার রস আমার খাওয়া হয় নি স্বার্থলোভী বাঙালিদের মত। এটা অস্বীকার করার কোন প্রয়াস নেই। কারন বাস্তবতার শিকারে আমার পথচলা। এ পথ চলা কতদিন…

[লেখক: মোঃ ফরিদ আহম্মেদ]
প্রধান শিক্ষক,অঙ্কুর মডেল স্কুল
   

অতিথি লেখক