সাংবাদিকতায় বাড়ছে ঝুঁকি,কমছে সম্মান

সাংবাদিকতায় বাড়ছে ঝুঁকি,কমছে সম্মান

শুভাশিস ব্যানার্জি শুভ:

প্রাক কথা: ২০১৪ সালে বাংলাদেশে ১১ জনসহ গত এক দশকে সারা বিশ্বে ৭০০ সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে। অপরাধ ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবেদন করার কারণেই তাঁদের পরিকল্পনা করে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু যথাযথ তথ্য–প্রমাণের অভাবে কিংবা রাজনৈতিক সদিচ্ছা না থাকায় এসব হত্যাকাণ্ডের ৯০ ভাগেরই কোনো তদন্ত হয়নি। এ ছাড়া বাংলাদেশের চারজন সাংবাদিকের হত্যা মামলার তথ্য জানতে চাইলেও সাগর-রুনিসহ তিনজন হত্যার ব্যাপারে কোনো তথ্যই পায়নি ইউনেসকো। গত ২ নভেম্বর ‘সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অপরাধের দায়মুক্তি অবসানে আন্তর্জাতিক দিবস’ (ইন্টারন্যাশনাল ডে টু অ্যান্ড ইমপিউনিটি ফর ক্রাইমস অ্যাগেইনস্ট জার্নালিস্টস) উপলক্ষে দেয়া এক বিবৃতিতে এসব কথা জানিয়েছে জাতিসংঘের এডুকেশনাল,সায়েন্টিফিক অ্যান্ড কালচারাল অর্গানাইজেশন (ইউনেসকো)। গত ৩০ অক্টোবর এই বিবৃতি দেয়া হয়। বিবৃতিতে বলা হয়,সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনার যথাযথ বিচার না হওয়া এটাই প্রমাণ করে,সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে যেকোনো অপরাধ করেই পার পাওয়া যায়।

বিভিন্নভাবে সাংবাদিক নির্যাতন: শুধু যে রাষ্ট্রীয়ভাবে সাংবাদিকরা নির্যাতিত হচ্ছেন তাই নয়,স্বার্থান্ধ রাজনীতিবিদদের ক্যাডার ও সন্ত্রাসী চরমপন্থিদের হাতে প্রতিনিয়ত নির্যাতিত,এমনকি খুন হচ্ছেন সাংবাদিকরা। ‘সমকাল’-এর ফরিদপুর জেলা সাংবাদিক গৌতম দাস ২০০৫-এর ১৭ নভেম্বর তার কার্যালয়ে আততায়ীর হাতে নৃশংসভাবে নিহত হন। ২০০৪-এর ১৫ জানুয়ারি ‘সংবাদ’-এর খুলনা প্রতিনিধি মাণিক সাহা আততায়ীর বোমার আঘাতে নিহত হন। একই বছর ২৭ জুন খুলনা থেকে প্রকাশিত ‘দৈনিক জন্মভূমি’ সম্পাদক হুমায়ুন কবির বালু এবং ‘দৈনিক সংগ্রাম’-এর  খুলনা ব্যুরো চিফ শেখ বেলাল উদ্দিন নিহত হন। বগুড়া থেকে প্রকাশিত ‘দৈনিক দুর্জয় বাংলা’র বার্তা সম্পাদক দীপঙ্কর চক্রবর্তী বাড়ির সামনে দুবৃত্তের ছুরিকাঘাতে নির্মমভাবে নিহত হন ২০০৪-এর ৩ অক্টোবর। ‘দৈনিক আজকের কাগজ’-এর মাণিকছড়ি প্রতিনিধি কামাল হোসেন খুন হন ২০০৪-এর ২২ আগস্ট। শ্রীমঙ্গল থেকে প্রকাশিত ‘দৈনিক পূবালী বার্তা’র সম্পাদক সৈয়দ ফারুক আহমেদ ২০০২-এর ৩ আগস্ট নিহত হন। খুলনা থেকে প্রকাশিত ‘দৈনিক পূর্বাচল’ এর সাংবাদিক হারুনুর রশিদ খোকন নিহত হন ২০০২-এর ২মার্চ। একই বছর খুলনা থেকে প্রকাশিত ‘দৈনিক অনির্বাণ’-এর সাংবাদিক সরদার শুকুর হোসেন নিহত হন। ২০০১-এর ২০ জুলাই ‘দৈনিক যুগান্তর’-এর নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি আহসান আলী নিহত হন। ‘দৈনিক জনকণ্ঠ’-এর বিশেষ প্রতিনিধি শামসুর রহমান যশোরে নিজ কার্যালয়ে আততায়ীর গুলিতে নিহত হন ২০০০-এর ১৬ জুলাই। ১৯৯৯-এর ১৩ মার্চ নিহত হন খুলনা থেকে প্রকাশিত ‘দৈনিক লোকসমাজ’-এর রফিকুল ইসলাম রফিক। যশোর থেকে প্রকাশিত ‘দৈনিক রাণার’ সম্পাদক আর এম সাইফুল আলম মুকুল নিহত হন ১৯৯৮-এর ১২ জুন। একই বছর একই দিনে নিহত হন চুয়াডাঙ্গা থেকে প্রকাশিত ‘দৈনিক দিনবদল’-এর স্টাফ রিপোর্টার বজলুর রহমান এবং সাতক্ষীরা থেকে প্রকাশিত ‘দৈনিক পত্রদূত’-এর সাংবাদিক খন্দকার রেজাউল করিম।  উল্লেখ্য ‘দৈনিক পত্রদূত’-এর সম্পাদক এসএম আলাউদ্দিনও আততায়ীর হাতে নিহত হয়েছিলেন। এই তালিকা অনেক দীর্ঘ।

১০ বছরে সাংবাদিক নির্যাতন: বিগত ১০ বছরের মধ্যে প্রতিবছরই বাংলাদেশে সাংবাদিক হত্যার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৩২৬৬ জন। সাংবাদিকরা পেশাগত দায়িত্ব পালন করেন বস্তুনিষ্ঠতার শপথ নিয়েই। রাজনীতিবিদদের নষ্ট মানসিকতা ও আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের সম্প্রসারণ সাংবাদিক পেশাকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় বিবিসি’র সাংবাদিক উইলিয়াম ক্রলি ও মার্ক টালিকে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার কর্তৃক বহিষ্কার করা হয়েছিল। যে সব দেশে গণতন্ত্র নেই যেমন মধ্যপ্রাচ্য, চীন, লিবিয়া,মিয়ানমার,পাকিস্তান, উত্তর কোরিয়া প্রভৃতি দেশে সাংবাদিকদের স্বাধীনতা নেই। গণমাধ্যমগুলো জনগণের চাহিদানুযায়ী খবর পরিবেশন করতে পারে না। আবার কিছু দেশে গণতন্ত্র থাকলেও স্বাধীন সাংবাদিকতা মেনে নিতে পারেন না সে সব দেশের নোংরা রাজনীতিবিদরা। অবস্থাটা এমন যে তথ্য গোপন করে তারা যুগের পর যুগ ক্ষমতা আকড়ে থাকবেন। একুশ শতকের এই তথ্যপ্রযুক্তির যুগে,বিজ্ঞানের চরম উৎকর্ষতার এই সময়ে তথ্য গোপন রাখার কোনো সুযোগ যে নেই সেটা তারা বুঝতে চান না। তারপরও যখন তারা সে চেষ্টা করেন এবং সাংবাদিকরা সেই অপচেষ্টা রোধ করে তখন তাদের আক্রোশ গিয়ে পড়ে সাংবাদিকদের ওপর।

সাংবাদিকের পরিবার অর্থ সংকটে: স্বাধীন সাংবাদিকতা খুবই জটিল বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সব কিছুতেই ব্যবসার মানসিকতা। সংবাদপত্র, টেলিভিশন, রেডিও অথবা ইলেকট্রনিক্স সংবাদপত্রের মালিকদের বাণিজ্যিক স্বার্থজনিত কারণে স্বাধীন সাংবাদিকতা বিঘ্নিত হচ্ছে। তবে প্রতিযোগিতার এই যুগে গণমাধ্যমগুলোর কোনো খবর গোপন করার সুযোগ নেই বললেই চলে। কোনো প্রচার মাধ্যম তথ্য গোপন করলে অন্যরা তা প্রকাশ করে এগিয়ে যাবে। বাংলাদেশেও গণমাধ্যমগুলোর মধ্যে পেশাগত প্রতিযোগিতা রয়েছে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল তাদের বার্ষিক রিপোর্টে জানিয়েছে, ২০১৩ সালে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সাংবাদিকরা রোষানলের শিকার হয়েছেন। নিহত ও আহত বেশির ভাগ সাংবাদিকের পরিবার অর্থ সংকটে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্থ সাংবাদিকদের পরিবার-পরিজন রাষ্ট্রীয় সহায়তা কমই পেয়েছেন। অনেক ক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত সাংবাদিকদের পোষ্যরা নির্যাতনের ভয়ে প্রতিকার চান না। অনেকে আবার মামলা করে চরম আতঙ্কে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিপদে আছেন। তবুও এত কিছুর পর সৎ সংবাদকর্মীর বিশ্বাস অটুট থেকে যায়। বন্দুকের নল কিংবা কামানের গোলার চেয়েও শক্তিশালী হচ্ছে কলম। সব নির্যাতন-নিপীড়ন উপেক্ষা করে সাংবাদিকরা তাদের মহান পেশার পবিত্র কলম চালিয়ে যাবেন।

বিশ্বে ৯০ শতাংশ সাংবাদিক হত্যার কোনো বিচার হয়নি: বিশ্বে ৯০ শতাংশ সাংবাদিক হত্যার কোনো বিচার হয়নি বলে জানিয়েছে কমিটি ফর প্রোটেক্ট জার্নালিস্টস নামক একটি আন্তর্জাতিক সংগঠন। সম্প্রতি সংগঠনটি সাংবাদিক হত্যা বিষয়ক একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে। যুক্তরাষ্ট্রের টুইন টাওয়ার হামলার পর গোটা বিশ্বেই যুদ্ধ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। আর এই যুদ্ধ পরিস্থিতিতে বিভিন্ন দেশের সাংবাদিকরা সহিংসতার শিকার হচ্ছেন। হত্যাকাণ্ডের শিকার সাংবাদিকদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের জেমস ফলি এবং স্টিভেন স্টলফের নাম উল্লেখযোগ্য। কয়েক মাস আগে ইরাকে ইসলামিক স্টেট যোদ্ধাদের হাতে তারা নিহত হন। সংগঠনটির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে,সাংবাদিকরা হত্যার শিকার হচ্ছেন এটা যেমন সত্যি তেমনি সাংবাদিক হত্যার জন্য কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি এটাও সত্যি। আর অপরাধীরা বিচারের আওতার বাইরে থাকার কারণে সংবাদিকদের হত্যা থেকে পিছু হটছে না বিভিন্ন সশস্ত্র সংগঠনগুলো। এক লিখিত বক্তব্যে সংগঠনটি আরো জানায়,‘গত দশক থেকে সাংবাদিকদের উপর চড়াও হওয়ার প্রবনতা বেড়েছে। রাষ্ট্রগুলোর সাংবাদিকদের নিরাপত্তা দেয়ার বিষয়টি পুনরায় খতিয়ে দেখা উচিত। কারণ যুদ্ধ হোক আর বন্যাই হোক সাংবাদিকদের ঘটনাস্থলে যেতে হয়। আর ঘটনাস্থলে গিয়ে যদি সাংবাদিকদের মৃত্যুর মুখোমুখি হতে হয় তাহলে ভবিষ্যতে সাংবাদিকতা হুমকির মধ্যে পরবে।’

সাংবাদিক নির্যাতন ও হত্যা বেড়েছে: সম্প্রতি বাংলাদেশে সাংবাদিক নির্যাতন ও হত্যা বেড়ে গেছে। কিন্তু জাতির বিবেক গণমাধ্যম কর্মীদের দুর্ভাগ্য যে,এসব হত্যাকান্ডের কোনোটিরই সুষ্ঠু তদন্ত ও ন্যায় বিচার হচ্ছে না।  গত এক দশকে ঘটে যাওয়া সাংবাদিক হত্যাকান্ডের বিচার কাজ এখনো ঝুলে রয়েছে। কয়েকটি মামলার ক্ষেত্রে বছরের পর বছর সময় নিয়েও তদন্ত শেষ করতে পারেনি পুলিশ। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করা,মূল অপরাধীদের পাশ কাটিয়ে চার্জশিট দেয়া,দুর্বল অভিযোগ উত্থাপন এবং চার্জশিটভুক্ত আসামিদের গ্রেফতার না করার অভিযোগ আছে। এমনকি প্রভাবশালী খুনিদের পক্ষ নিয়ে নিহত সাংবাদিকের পরিবারের সদস্যদের ভয়ভীতি দেখানোরও অভিযোগ রয়েছে পুলিশের বিরুদ্ধে। প্রশ্ন উঠেছে নিম্ন আদালতে বিচারের দীর্ঘসূত্রতা নিয়েও। এক দশকের পরিসংখ্যানে দেখা যায়,দেশের বিভিন্ন স্থানে ২৩ জন সাংবাদিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছেন। সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনী হত্যাকান্ডের মধ্য দিয়ে এ সংখ্যা ২৫-এ দাঁড়িয়েছিলো। সরকারের শীর্ষ মহল থেকে এসব বিচারের জন্য বার বার আশ্বাস দেয়া হলেও তার হয় নি। বিরেধীদলের থাকা নেতারা সভা সেমিনারে বক্তব্য ববৃতি দিলেও তারা যখন ক্ষমতায় থাকে তারা বিচার করে নি। অবস্থা এমন হয়েছে ‘‘বিচার পায় না,তাই বিচার চায় না’’। ২০১১ সালের ২৭ জানুয়ারি নিজ বাসায় স্ত্রীসহ খুন হন সাংবাদিক ফরহাদ খাঁ। এর আগে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে খুন হন আরও ১৪ সাংবাদিক।

রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্সের বার্ষিক প্রতিবেদন: বিশ্বব্যাপী সাংবাদিকদের ওপর বর্বর হামলা ও তাদেরকে অপহরণের ঘটনা আরো অনেক বেড়ে গেছে। মিডিয়া কর্মীদের ওপর এসব হামলার ঘটনায় এক বছরে ৬৬ জন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। ইসলামিক স্টেট গ্রুপের হাতে জেমস ফলি ও স্টিফেন সটলফের শিরশ্ছেদ ঘটনার মধ্যদিয়ে আধুনিক যুগের সংঘাত কভার করতে আসা সাংবাদিকদের কি ভয়াবহ ঝুঁকির মুখে পড়তে হচ্ছে তা তুলে ধরা হয়েছে। রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্সের বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়,‘এভাবে সাংবাদিকদের হত্যার ঘটনা পৃথিবীতে বিরল। এ দুই ঘটনা সারাবিশ্বকে স্তম্ভিত করেছে।’ তবে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়,আগের বছরের তুলনায় এ বছর বিশ্বে সাংবাদিক হত্যার ঘটনা সামান্য কমেছে। আগের বছর সারাবিশ্বে ৭১ জন সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছিল। উল্লেখ্য,২০০৫ সাল থেকে বিশ্বে মোট ৭২০ জন সাংবাদিককে হত্যা করা হয়। এদিকে আগের বছরের তুলনায় এ বছর সাংবাদিকদের অপহরণের ঘটনা ৩৭ শতাংশ বেড়েছে। এ বছর মোট ১১৯ জন সাংবাদিককে অপহরণ করা হয়। ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে বিচ্ছিন্নতাবাদী ও মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকায় জঙ্গিদের কারণে এ সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। এদের মধ্যে ইউক্রেন থেকে ৩৩ জন,লিবিয়া থেকে ২৯ জন ও সিরিয়া থেকে ২৭ জন সাংবাদিককে অপহরণ করা হয়। তারা এখনো জিম্মি রয়েছে।

মুক্ত সাংবাদিকতার ঝুঁকি বাড়ছে: নিউইয়র্কভিত্তিক সংস্থা কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে) এর দেয়া তথ্য মতে সারা বিশ্বে মুক্ত সাংবাদিকতার ঝুঁকি বাড়ছে। সারাবিশ্বে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে একটি জরিপের ভিত্তিতে  ‘এ্যাটাকস অন দি প্রেস’ শীর্ষক এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। তারা মনে করছে সরকার এবং বিভিন্ন জঙ্গী ও অপরাধী সংগঠনের নানামুখী চাপে সারাবিশ্বে মুক্ত সাংবাদিকতায় এই ঝুঁকি বাড়ছে। জরিপের তথ্য তুলে ধরে প্রতিবেদনে বলা হয়,২০১১ সালে সারাবিশ্বে অন্তত ৪৬ জন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। কারাবন্দী হয়েছেন অন্তত ১৭৯ জন। শতাধিক দেশ ও আঞ্চলের তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে এই প্রতিবেদন তৈরি হয়েছে জানিয়ে সিপিজে বলেছে,১৯৯২ সাল থেকে এ পর্যন্ত বিভিন্ন দেশে অন্তত ১৫৬ জন সাংবাদিক হত্যার মামলা এখনও অমীমাংসিত রয়েছে।

ঝুঁকির মুখে সাংবাদিকতা: সিপিজে বলছে,অপরাধ,মতানৈক্য ও দমন-পীড়নের খবর চাপা দেয়ার জন্য সরকার ও অপরাধীদের পুরনো কৌশলের পাশাপাশি নতুন নতুন সব হুমকির মোকাবিলা করতে হচ্ছে সাংবাদিকদের। তাছাড়া যুক্তরাষ্ট্র সরকার গত বছর স্টপ অনলাইন পাইরেসি অ্যাক্ট (সোপা) ও প্রোটেক্ট ইন্টারনেট প্রোভাইডার অ্যাক্ট (পিপা) নামে দুটি আইন করার উদ্যোগ নেয়ায় ‘মুক্ত সাংবাদিকতার’ চর্চাও ঝুঁকির মুখে পড়েছে। সিপিজের নির্বাহী পরিচালক জোয়েল সিমন্স বলেন,“তথ্য অপ্রকাশিত থাকলে রাজনৈতিক অস্থিরতা,প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা যে কোন অনিয়মের ঘটনাও চাপা পড়ে যায়। তথ্যপ্রযুক্তির এ যুগে সেন্সরশিপ বিশ্বের যে কোন জাতিগোষ্ঠীর জন্যই এক ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘন। আমাদের জোরালভাবে এর মোকাবেলা করতে হবে।”

৮ বছরে এশিয়া মহাসাগরীয় অঞ্চলে ১৭৯ সাংবাদিক হত্যা: সাংবাদিক হত্যার তদন্তের বিষয়ে বিস্তারিত একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করছেন ইডনেসকোর মহাপরিচালক ইরিনা বোকোভা।  তিনি সাংবাদিকদের নিরাপত্তা ও দায়মুক্তির বিপদের বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরছেন। তাতে বলা হয়েছে,২০০৬ থেকে ২০১৩ সাল—এই আট বছরে সারা বিশ্বে ৫৯৩ জন সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে। এর মধ্যে আরব দেশগুলোতে ১৯০ জন,এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ১৭৯,লাতিন আমেরিকা ও ক্যারিবিয়ান এলাকায় ১২৩,আফ্রিকায় ৭৬ এবং ইউরোপ-আমেরিকা অঞ্চলে ২৫ জন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। নিহত ৫৯৩ জনের মধ্যে ২৪৪ জনই পত্রিকার সাংবাদিক। এ ছাড়া ১৫৪ জন টেলিভিশনের,১২৩ জন রেডিওর,৪১ জন বিভিন্ন অনলাইনের এবং বাকিরা অন্যান্য মাধ্যমের সাংবাদিক। প্রতিবেদনে বলা হয়, ইউনেসকো বাংলাদেশে নিহত চারজন সাংবাদিকের মামলার সর্বশেষ অবস্থা জানতে তথ্য চেয়েছিল। বাংলাদেশ থেকে জানানো হয়েছে,২০০৬ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর নিহত বেলাল হোসেন দফাদারের মামলাটির তদন্ত চলছে। তবে ২০১২ সালের ১৫ জুন নিহত গ্রামের কাগজ-এর সাংবাদিক জামালউদ্দিন,১১ ফেব্রুয়ারি নিহত এটিএন বাংলার মেহেরুন রুনি ও মাছরাঙার সাগর সরওয়ারের মামলার বিষয়ে কোনো তথ্য দেয়া হয়নি। বিবৃতিতে বলা হয়,প্রতিষ্ঠার পর থেকেই মতপ্রকাশ ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ইউনেসকোর অঙ্গীকার। পৃথিবীর যেখানেই কোনো সাংবাদিক নিহত হয়েছেন,সেটি নজরে আসামাত্রই ইউনেসকোর মহাপরিচালক বিবৃতি দিয়েছেন।

শেষ কথা: সাংবাদিকরা সমাজের দর্পন। জাতির বিবেক। প্রতিদিন সংবাদ পিপাসু মানুষের দ্বারে নতুন নতুন খবর নিয়ে হাজির হয় সাংবাদিকরা। তাদের লেখনি বা সংবাদ উপস্থাপনের মাধ্যমে সকালে চায়ের কাপে ঝড় থেকে শুরু করে মানুষ সুফল পেতে শুরু করে। নির্যাতিত মানুষ শেষ আশ্রয়স্থল হিসাবে সাংবাদিকদের দারস্থ হয়। আর সাংবাদিকরা জাতির সামনে তুলে ধরে সুবিধা বঞ্চিত মানুষের সুখ,দুঃখ,হাসি কন্না,সাফল্য ব্যার্থতার কথা। কিন্তু সেই সাংবাদিক যখন নির্যাতিত হয় তখন সাধারণ মানুষ কোথায় যাবে?

[শুভাশিস ব্যানার্জি শুভ: প্রধান সম্পাদক,এসবিডি নিউজ24 ডট কম]

jsb.shuvo@gmail.com

প্রধান সম্পাদক

Related articles