রাজনীতি তুমি কি, বড় জানতে ইচ্ছে করে…

রাজনীতি তুমি কি, বড় জানতে ইচ্ছে করে…

জবরুল আলম সুমন:ফেসবুকের পাতায় পরিচয় হয়েও ভৌগলিক দূরত্বকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে নিয়মিত যোগাযোগের মাধ্যমে যেসব বন্ধুরা আমার হৃদয়ের অন্দর মহলে ঢুকে পড়েছে তাদের মধ্যে অন্যতম একজন বিদগ্ধ বন্ধু রায়হান হোসেন। অতি সম্প্রতি রায়হানের ফেসবুক প্রোফাইলে রাজনীতির গা ঘেঁষা একটা নোট পড়ে আমার মাথায় রাজনীতি কি তা জানার ভূত চেপে বসলো। (রা)তা রাতি (জ)নপ্রিয়তার জন্য (নী)তি বিষর্জন দিয়ে (তি)লকে তাল করার নাম-ই কি রাজনীতি নাকি এর বাইরেও কিছু আছে যা সর্বসাধারণের জানার বাইরে ?

রাজনীতি, তোমাকে জানতে আমার সত্যি ইচ্ছে করে। সত্য আর মিথ্যা, সততা আর ভন্ডামির অদ্ভূত সংমিশ্রণ তোমার মধ্যে ঘটেছে। তোমার খেলা সবই লীলা। তুমি লীলাময়, তুমি রহস্যময়, তবে তুমি নর না নারী তা জানিনা বলে সম্বোধনে হয়তো ভুল করি। কি যে একখানা চিজ তুমি, শত চেষ্টা করেও তোমাকে জানতে পারিনি। তোমার চেহারা ছুরতের কোন আগা-মাথা কোনদিনই পেলাম না। বিভিন্ন সময় ভিন্ন ভিন্ন রূপে তোমাকে দেখি, কিন্তু আসল রূপটা কি যে তা দেখার সৌভাগ্য আমার আর কোন দিন হয়নি। তোমার মেজাজ মর্জি কখনো ভয়ঙ্কর, কখনো ভোরের সমীরণ, কখনোবা দুর্বোধ্য সরলে গরলে ভেজালে আর বিশুদ্ধতায় জটিল থেকে জটিলতর।

ইতিহাসের সিঁড়ি বেয়ে প্লেটো ও এরিষ্টেটলের যুগ পর্যন্ত তোমাকে খোঁজ করে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ভাবে দেখেছি। কখনো দেখেছি বিদ্যূতের ঝিলিকের মত, কিন্তু পরক্ষণেই দেখেছি নির্মম বজ্রপাতের নিষ্ঠুরতায়, আবার কখনো দেখেছি পরোপকারের সফেদ লেবাসে, কখনো দেখেছি মিষ্টি মুখে মধুবর্ষণের ব্যস্ততায়, কখনো দেখেছি নব-জাগরণের দুন্দুভি বাজিয়ে অগ্রসর হতে, কখনো দেখেছি বেদনার সাগর সৃষ্টি করে অশ্রুজলে জনতাকে ডুবিয়ে মারতে, কখনো দেখেছি শান্তি-সুখের প্রস্রবণ সৃষ্টি করে তোমার স্নেহ ধন্যদের চিত্তকে আনন্দে উদ্বেলিত করতে, আবার মিছিলের মানুষের বুককে গুলিতেও ঝাঁঝরা করতে দেখেছি।

হে রাজনীতি, তুমি এক বিস্ময়। তোমার কেতাবী চেহারা আমাদের মাঠে ময়দানে কখনো দেখিনি; বরং বাস্তবের কঠিন ময়দানে তোমার যে ছবি দেখতে পাই, তা কিন্তু পুস্তিকার কোথাও দেখি নি। কিন্তু কি অদ্ভুত তোমার খেলা, কি আজব তোমার রূপ পরিবর্তনের তামাশা। যে সংজ্ঞা দিয়ে বাঘকে বাঘ, সাপকে সাপ, পাখিকে পাখি আর মানুষকে মানুষ  হিসেবে চিহ্নিত করা যায়, যে সংজ্ঞা দিয়ে ভূগোলকে ভূগোল আর ইতিহাসকে ইতিহাস বলে পরিচয় করিয়ে দিতেও কষ্ট হয়না বিন্দু মাত্র, কিন্তু তোমাকে এরকম অভিন্ন কোন সংজ্ঞা দিয়েও পরিচয় করা যায়না। পরস্পর বিরোধী আচরণ অনুশীলনের অদ্ভূত সমন্বয় একমাত্র তোমার মধ্যেই ঘটেছে। তুমি বিশেষ্যে যেমন নেই, তেমনি বিশেষণেও অদৃশ্য, তবে গোপনে গোপনে সর্বত্রই নানা চেহারায় ক্রিয়াশীল। কখনো তুমি সমাপিকা, কখনো তুমি অসমাপিকা।

হে রাজনীতি, তুমি যে বিশেষ একটা কিছু  তা অবশ্য জানি, কিন্তু সেটাই বা কি ? তুমি প্রাণী যেমন নও, তেমনি নও প্রাণহীন কিছু। তুমি যখন গণতন্ত্রের লেবাস পরে আবির্ভূত হও, তখনও তোমার লেবাসে আর  মেজাজে থাকে বিচিত্র রূপ-রস আর গন্ধ। কখনো কখনো আসো প্রত্যক্ষ গণতন্ত্রের পয়গাম নিয়ে আবার কখনো আসো পরোক্ষ গণতন্ত্রের আবেদন নিয়ে। গণভোট (Plebiscite) আর গণনির্দেশ (Referendum) -এর মাদুলীও থাকে তোমার গণতন্ত্রের ঝোলাতে। কখনো তুমি নিয়ন্ত্রিত গণতন্ত্র (Controlled Democracy), কখনো তুমি পরিচালিত গণতন্ত্র (Guided Democracy) রূপে।

রিপাবলিকের রূপ ধরেও আসো নতুন ব্যাখ্যা নিয়ে, স্বৈরতন্ত্র, রাজতন্ত্র, অভিজাততন্ত্র, স্বেচ্ছাচারতন্ত্র, কুলীনতন্ত্র,  দফতরতন্ত্র, গোষ্ঠীতন্ত্র, ধনিকতন্ত্র, সামন্ততন্ত্র, একনায়কতন্ত্র, এসবই হচ্ছে তোমার এক একটি রূপ। এতো বিচিত্র তোমার রূপ আছে বলেই যারা গণতন্ত্র গ্রহণ করে তারাও একনায়কতন্ত্রের মেজাজ নিয়ে জনগণকে খুশী রাখার জন্য উদারতন্ত্রের পরিবর্তে নিয়ন্ত্রিত গণতন্ত্র চালু করে থাকেন। এ জন্য বলেছিলাম যে, তোমার কোন একরূপ  কোথাও নেই। কোন কোন দেশে রাজতন্ত্রের ছত্রছায়ায় গণতন্ত্রকে লালন করে যাচ্ছো, কোন কোন দেশে পারিবারিক তন্ত্রের অপারেশন রুম থেকে গণতন্ত্র চালু রেখেছো। আবার কোন কোন দেশে ব্যক্তি বিশেষের মতলবতন্ত্রকে গণতন্ত্রের পোষাক পরিয়ে জনগণকে হরহামেশা ধোঁকা দিয়ে যাচ্ছো।

বিশ্বব্যাপী তোমার সীমাহীন প্রভাব, তুমি মহা শক্তিমান। এত বড় মহা ক্ষমতাধর হয়েও ঘরের মধ্যে ঘরোয়াভাবে পর্দানশীন মেয়েলোকের মতো কি করে যে ঘরোয়া রাজনীতি নামে বিরাজ করতে আমাদের সমাজে, তা আমি ভেবে পাইনা। পৃথিবীর কোথাও তুমি এই ভূমিকা পালন না করলেও আমাদের দেশে তো কখনো কখনো পর্দানশীন হয়ে যাও। এই রহস্যটা বুঝলাম না। ঘরের চার দেয়ালের মধ্যে সকল নারী-পুরুষকে আটকিয়ে তোমাকে নিয়ে চর্চা করার সুযোগ দেয়ার মধ্যে তোমার আসল মতলবটা যে কি, তাও বুঝতে পারিনি। জানিনা এর মধ্যেও তোমার কোন লীলা খেলা আছে কিনা।

‘ঘরোয়া রাজনীতিতে’ তো তোমাকে পেয়েছি অবগুন্ঠিত মহিলা রূপে। মধ্যাকর্ষণের আকর্ষণের চেয়েও তোমার আকর্ষণ  ক্ষমতা অনেক অনেক বেশী। মহাশূণ্যের একটা স্তর অতিক্রম করলে মধ্যাকর্ষণের আর আকর্ষণ থাকেন বলেই জানি, কিন্তু তোমার আকর্ষণ সেই স্তরেরও উর্ধ্বে। শক্তিধরের  তোমাকে সেখানে নিয়ে প্রতিযোগীতা শুরু করে দিয়েছে। নারীর প্রেম আর রাজনীতির প্রেম এই দুইটির মধ্যে কোনটির ক্ষমতা বেশী এ প্রশ্নেরও ফয়সালা হয়ে  গেছে। এক্ষেত্রে তুমিই বিজয়ী। তোমাকে যে পেয়েছে সে সবকিছু ছেড়ে তোমাকে আঁকড়ে ধরে রেখেছে। কি যে এক নেশা তোমার মধ্যে রয়েছে, তা কেউ বলতে পারবে  না। আফিম খোররাও তোমাকে পেয়ে আফিমের নেশা ছেড়ে দিয়েছে এমন নজিরও আছে। জনতার ধাওয়া খেয়েও তোমার মায়া ছাড়তে পারেনি এরকম উদারণ শুধু তোমাকে ভালোবেসেই ঘটেছে।

হে রাজনীতি, তুমি যখন কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর মাথায় চেপে বসো, তখন সারা দেশে কি যে হৈ হৈ, রৈ রৈ কান্ড ঘটাও, তা বর্ণনারও  অতীত। তখন সভা সমিতি একটিও অক্ষত থাকেনা, বোমা ফাটে, লাঠির আঘাত পড়ে, অজস্র ইট পাথর বর্ষিত হয় এবং আগুনের লেলিহান শিখাও জ্বলে। আহত হতে হতে নিহত হওয়াও বাদ যায়না। খুন, গুম, অপহরণ চলে যতি বা বিরাম চিহ্ন ছাড়া। তুমি যখন ছাত্রের মাথায় আশ্রয় নাও, তখন এক শ্রেণীর ছাত্রকে তুমি যুদ্ধের ময়দানে ক্ষিপ্ত  সৈন্যদের মতো উম্মাদ করে তোল। তখন তারা ভুলে যায় যে তারা ছাত্র, তারা আগামী রাষ্ট্রের ভবিষ্যত। তুমি কখনো ছাত্রী হল আক্রমণ করাও, কখনো অন্য কোন দলের  ভাড়াটিয়া হিসাবে তাদের ব্যবহার করে হাতের কলম কেড়ে নিয়ে পরিবর্তে বোমা আর পিস্তল তোলে দাও। তুমি তাদের বিপ্লবী হওয়ার প্রশিক্ষণও দিয়ে থাকো। লেখা-পড়া তখন লাটে উঠে। এই জঙ্গী বাহিনীর ভয়ে সারাদেশ তখন সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। এক শ্রেণীর শিক্ষকের মাথাও তুমি বিগড়ে দিয়ে থাকো, তারাও কখনো স্বরূপে,  কখনো নেপথ্যে থেকে ছাত্রদের উস্কিয়ে দিয়ে থাকে। এই গুরুজনদের গুরুপাক ব্যঞ্জন খেয়ে গোটা জাতির পেট খারাপ হয়ে গেছে।

হে রাজনীতি কথা আর না বাড়িয়ে  তোমার কাছে একটি অনুরোধই করি, তুমি পুস্তকে যেমন আছো, বাস্তবেও তোমাকে তাই দেখতে চাই। গণতন্ত্রের আলখেল্লা পরে যখন আসো তখন পূর্ণ গণতন্ত্রের রূপেই যেন আমাদের এই দুঃখী দেশে আসো। তোমার মধ্যে যেন দুটো গুণ দেখতে পাই, একটি উদারতা অন্যটি সহনশীলতা। তুমি আমাদের অনেক কিছুই উপহার দিয়েছো  যেমন- খুন, গুম, হাইজ্যাক, ঘুষ, দুর্নীতি, কিলা-কিলি, গালা-গালি, লাঠা-লাঠি, এসবই তো তোমার অবদান। তোমার এসব দানে তুমি ধন্য হলেও আমাদের দুঃখ-দৈন্য সীমাহীনভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। তোমার ত্রাসের ভয়ে কলিজাটা সংকুচিত হতে হতে এখন জ্যামিতির বিন্দুতে পরিণত হওয়ার পর্যায়ে পৌছেছে। মুক্ত মনে স্বীকার করি আমরাও সংকীর্ণ হয়ে পড়েছি। বিশেষ শ্রেণীর বিশেষ মানুষের জন্য সহনশীলতার মতো গুণের কোন প্রয়োজন না থাকলেও আঘাতে আঘাতে জর্জরিত, গণতন্ত্রের বিভ্রান্তির  বেড়ায় বন্দী জনতার বাচাঁর জন্য এই গুণের বিশেষ প্রয়োজন। মহা সাগরের বিশালতাও যাদের মনের উদারতার কাছে ছিলো সংকীর্ণ, আজ তারা তোমার কারণে  কুয়াকেই দুনিয়া মনে করে বসে আছে। হে রাজনীতি, রাজপথে তোমাকে বুঝার সাধ্য আমার নেই, কোন কালেও ছিলোনা। পুস্তকের পাতা গিলে তোমাকে যেভাবে বুঝেছি,  ব্যবহারিক জীবনে তোমাকে ভিন্ন রূপে দেখে নিজেই তালগুল পাকিয়ে ফেলেছি। তবুও তোমাকে বুঝার অদম্য চেষ্টা থেকে নিজেকে বিরত রাখতে পারিনি।

ইন্টারনেটের পাতায় তোমায় নিয়ে ফাঁদা একটা ছোট্ট গল্পে পড়ে তোমার জানার আগ্রহ খানিকের জন্য বিরতি দিলাম। তা এখানে নিজের মতো করে পরিবেশন করে  আমি এই ইতি টানবো। চিন্তিত মনে ছোট্ট রবিন রাতের খাবারের জন্য বাবার সাথে একই টেবিলে বসেছে কিন্তু কোন খাবার মুখে না দিয়ে কাঁটা চামচ দিয়ে প্লেটে টুংটাং শব্দ করে চলেছে। রবিনের রাজনীতিবিদ বাবা চরম বিরক্তি নিয়ে রবিনকে কিছু বলার প্রক্কালেই রবিন চোখে মুখে জানার তীব্র ক্ষুধা নিয়ে বাবাকে প্রশ্ন করলো “বাবা  রাজনীতিই মানে কি ?” বাবা দ্বিগুন বিরক্তিতে উত্তর এড়িয়ে বরিনকে খাবার জন্য তাড়া দিলেন। কিন্তু রবিনের মুখে কিছুই রুচছে না, বাবা বিষয়টা আঁচ করতে পেরে ছোট্ট  রবিনকে কাছে টেনে নিয়ে মমতা মাখা কন্ঠে বললেন “তুমি এখনো অনেক ছোট, মাত্র ক্লাস টু-তে পড়ছো; তুমি এসব বুঝবে না, তারচে বরং তুমি মনযোগ দিয়ে  তোমার লেখা পড়া চালিয়ে যাও বড় হলে তুমি এমনিতেই তা বুঝতে পারবে” রবিন যেন কিছুটা প্রশ্রয় পেলো নাকি সুরে আবারো বললো, বলোনা বাবা, রাজনীতি মানে কি?

এবার বাবা মুখ খুললেন, বললেন ঐভাবে বললেতো তুমি বুঝবেনা, আমাদের পরিবার দিয়েই তোমাকে বুঝাই। এই ধরো, আমি সারাদিন বাইরে কাজ করে  সংসারের যা যা খরচ লাগে তা মাসের প্রথম দিনেই আমি তোমার মায়ের হাতে তুলে দিই। এই সংসারে আমিই এক মাত্র পুজি, তাই আমাকে ধরো একজন পুজিবাদী।  তোমার মা সংসারের কোথায় কখন কি লাগে, তোমার স্কুলের বেতন দেয়া, কাপড় চোপড় কিনে দেয়া, তোমার ছোট ভাইয়ের জন্য গুড়ো দুধ, কাঁচা বাজার করা থেকে  শুরু করে সব দেখভাল করে। তাই তোমার মা হলেন সরকার। আর ঐযে আমাদের কাজের মেয়ে, যে তোমার স্কুলের টিফিন বানিয়ে দেয়, তোমার কাপড় চোপড় ধুয়ে  দেয়, বাসার ফ্লোর মুছে পরিস্কার রাখে, রান্না ঘরের যাবতীয় কাজ করে। তার এই শ্রমের বিনীময়ে মাস শেষে একটা বেতন পায়, তাই ও হচ্ছে শ্রমজীবি। আর তুমি এখন  স্কুলে পড়ো, কোন কাজ করছো না, তোমার সব চাহিদা তোমার মা পূরণ করে দেয়। তাই তুমি হচ্ছো নীরিহ জনগণ। আর সব শেষে তোমার ছোট্ট দেড় বছরের যে ভাইটা  আছে, ও হচ্ছে আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম। এই সব কিছু মিলিয়ে হচ্ছে রাজনীতি। এবার বুঝেছো ?

ছোট্ট রবিন হ্যাঁ বা না কিছুই না বলে নিজ আসনে ফের বসে  পড়লো। খাবার শেষ করে নিজের শোবার ঘরে ঘুমুতে গেলো কিন্তু ঘুমের কোন গন্ধ নেই। মধ্যরাতে রবিন তার ছোট্ট ভাইয়ের কান্নার শব্দ শুনে খাট থেকে নামলো,  ভাবলো ছোট্ট ভাইটি হয়তো কাপড় নষ্ট করে ফেলেছে তাই মা’কে ডেকে তোলে দিবে। খুব সাবধানে রবিন বাবা-মায়ের রুমে ঢুকলো, অর্ধেক খাট জুড়ে মা গভীর ঘুমে  অচেতন কিন্তু পাশে বাবা নেই। জানালার ফাঁক গলে জোৎস্নার আলো মায়ের মুখে ফর্সা করে রেখেছে। বাবা যেহেতু পাশে নেই নিশ্চয় বাথারুমে গেছেন তিনি ফিরে এলেই ছোট্ট ভাইটাকে নতুন কাপড় পরিয়ে দেবেন এর জন্য আর মা’য়ের ঘুম ভাঙ্গানোর দরকার নেই। কিন্তু বাবার আসতে দেরি হচ্ছে দেখে রবিন ভাবলো কাজের মেয়েটাকে দিয়ে এই কাজটা করানো যেতে পারে। কাজের মেয়েটি রান্না ঘরের এক পাশে ঘুমোয় বলে রবিন রান্না ঘরের দিকে গেলো। রবিন রান্না ঘরে ঢোকার আগেই আবছা  আলোয় দেখতে পেলো, তার বাবা কাজের মেয়েটিকে শারীরিক অত্যাচার করছেন। মেয়েটি ভয়ে কুঁকড়ে আছে, বোবার মতো এদিক ওদিক তাকাচ্ছে কিন্তু কোন শব্দ করতে পারছেনা। রবিন এই অনাকাংখিত দৃশ্যটি দেখে কোন কথা না বলে নিজের রুমে ফিরে গেলো। এক ঘুমে রাত পার করে দিয়ে সকালে ফের বাবার সাথে নাস্তার টেবিলে বসলো রবিন। মুখে তার এখন আর জানার আগ্রহ নেই, যেন সে-ই এখন সব জান্তা, মাখন লাগানো পাউরুটি মুখে দিতে দিতে আচমকা বাবাকে বলে উঠলো  “বাবা আমি রাজনীতির মানে বুঝে গেছি” বাবা দ্বিগুণ আগ্রহ নিয়ে জানতে চাইলেন কি বুঝলে ? ছোট্ট রবিন এক নিঃশ্বাসে বলতে লাগলো, “পুজিবাদীরা যখন শ্রমজীবির  উপর নির্যাতন করে তখন সরকার থাকে ঘুমিয়ে, নিরীহ জনগণ সবই দেখে কিন্তু কিছুই করতে পারেনা, আর ঠিক ঐ সময় আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মেরা থাকে নোংরা আবর্জনার মধ্যে…

[জবরুল আলম সুমন: প্রাবন্ধিক ও গবেষক।।]

অতিথি লেখক