‘মৃত্যু বারবার আমার পিছু ছুটেছে’

‘মৃত্যু বারবার আমার পিছু ছুটেছে’

নিজস্ব প্রতিবেদক, এসবিডি নিউজ24 ডট কম: ‘আমি টের পাচ্ছিলাম যে সব স্প্লিন্টারগুলো হানিফ ভাইয়ের মাথায় এসে পড়ছে, আর তার রক্তগুলো আমার শরীর বেয়ে পড়ছে। ১৩টা গ্রেনেড তারা ছুঁড়েছিল, তার মধ্যে ১২টাই বিস্ফোরিত হয়েছিল। ওই অবস্থা দেখে মনে হয়েছিল কেয়ামত এসে গেছে।’ এভাবেই ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ভয়াবহ স্মৃতি সকলের সামনে তুলে ধরলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।


তিনি বলেন, জানিনা আমার ভাগ্যে কি আছে, গ্রেনেড ট্রাকের ভেতরেই পড়ার কথা কিন্তু সেখানে না পড়ে ডালায় লেগে বাইরে পড়ে যায়। আমাকে সাবেক মেয়র হানিফ ভাইসহ অন্যান্যরা ঘিরে ফেলে। আমি টের পাচ্ছিলাম স্প্লিন্টারগুলো হানিফ ভাইয়ের মাথায় এসে পড়ছে, আর তার রক্তগুলো আমার শরীর বেয়ে পড়ছে।


রোববার বিকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে ২১ আগস্টের আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।


শেখ হাসিনা বলেন, আমার চোখের চশমা ছিটে দূরে পড়ে যায়, কিছু দেখা যাচ্ছিল না। যখন কিছুটা থামলো আমার সাথের নিরাপত্তাকর্মীরা আমাকে নিয়ে বেড়িয়ে যায়। তখন আমার শরীরের রক্ত দেখে অনেকেই মনে করেছিলেন আমি আহত, অথচ আমার শরীরে একটি স্প্লিন্টারও লাগেনি।


তিনি বলেন, প্রকাশ্য দিবালোকে কোনো জনসভায় এভাবে গ্রেনেড মেরে মানুষ হত্যা করা কেউ কল্পনাও করতে পারবে না। আমি তখন জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা। ওই ট্রাকে আমাদের সকল নেতারা ছিলেন। হাজার হাজার নেতাকর্মী ওই সমাবেশে সমবেত ছিলেন। আমাদের অনেক নেতাকর্মী এখনো শরীরে স্প্লিন্টার বয়ে বেড়াচ্ছেন। তারা স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেননি।


আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, এ ধরনের ঘটনা বাংলাদেশে আর না ঘটুক। আমরা সন্ত্রাস চাই না, জঙ্গিবাদ চাই না। দেশকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। সন্ত্রাস জঙ্গিবাদ শুধু বাংলাদেশের সমস্যা নয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে একের পর এক ঘটনা ঘটে চলেছে। তাই বাংলাদেশের জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সন্ত্রাস জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।


তিনি বলেন, বাংলার মাটিতে পা রাখার পর থেকে বার বার মৃত্যুর মুখোমুখি হতে হয়েছে। সরাসরি গুলি, চট্টগ্রামে ৩০ জন মানুষ হত্যা করা হলো। যখন যেখানে গেছি বাধার সম্মুখিন হয়েছি। গুলি বোমা নানা ধরনের অবস্থায় পড়তে হয়েছে। ১৯৯৬ সালে কোটালীপাড়ায় ৮৪ কেজি বোমা মাটির নিচে পুতে রেখে হত্যাচেষ্টা চালানো হয়। একজন চায়ের দোকানদার এটা আবিস্কার করতে পেরেছিল, আর কেউ পারেনি। সে যাত্রায় বেঁচে গিয়েছিলাম। কিন্তু মৃত্যু বারবার আমার পিছু পিছু ছুটেছে। তবে আমি ভীত ছিলাম না। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ পরিচালনা করবো, মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করবো এটাই ছিল একমাত্র লক্ষ্য।


প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগস্ট মাস আমাদের জন্য এমনিতেই শোকের মাস। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে স্বপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। সেদিন তারা শুধু জাতির পিতাকেই হত্যা করেনি, আমার মা, ৩ ভাইসহ আমাদের পরিবারের সদস্যদের নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। ১৫ আগস্টের পর ৩ নভেম্বর কেন্দ্রীয় কারাগারে চারনেতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।


‘যারা আমাদের বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিশ্বাস করেনি, বাঙালির বিজয় মেনে নিতে পারেনি। যারা হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর দোসর ছিল, যারা যুদ্ধাপরাধী, যারা মা বোনকে হানাদার পাক বাহিনীর হাতে তুলে দিয়েছিল, গণহত্যা চালিয়েছিল, অগ্নিসংযোগ করেছিল, লুটপাট করেছিল তাদেরই দোসর, এজেন্ট ১৫ আগস্টে ওই ঘটনা ঘটিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকে চিরতরে শেষ করে দিতে চেয়েছিল।’


আমরা যে মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করেছি সে বিজয়ের চিহ্ন মুছে ফেলতে চেয়েছিল। হত্যা, ক্যু, ষড়যন্ত্রের মধ্য দিয়ে অবৈধ ক্ষমতা দখলের প্রহসন হয়েছিল, তখন ১৯টা ক্যু হয়েছিল। এই মাটিতে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার করা হবে না বলে অর্ডিন্যান্স জারি করে তাদের শুধু বিচারের হাত থেকেই মুক্তি দেয়া হয়নি, বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরিও দেয়া হয়েছে। একটি দেশে যদি খুনিদের এভাবে পুরস্কৃত করা হয়, সে দেশে রক্তাক্ত ঘটনা ঘটে এটা খুবই স্বাভাবিক। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের হাত থেকে রেহাই দিয়ে মন্ত্রী উপদেষ্টা বিভিন্ন পদে বসানো হয়েছিল। অর্থাৎ বাংলাদেশকে সম্পূর্ণ ভিন্ন পথে নিয়ে যাওয়ার একটা প্রচেষ্টা অব্যাহত ছিল

নিজস্ব প্রতিনিধি