আত্মকথন…

আত্মকথন…

জুলফিকার আলী মাণিক: আমি যখন ১৯৯০ সালে সাংবাদিকতা শুরু করি, আমার মনে আছে, প্রথম প্রথম যখন নাম ছাপা হতো কোন প্রতিবেদনে আনন্দ-উত্তেজনা, সফলতায়, মুগ্ধতায় বারবার দেখতাম নিজের নাম, বার বার পড়তাম নিজের কাজ, নতুন গোঁফ গজালে যেমন হয়। সাপ্তাহিক দিয়ে যেহেতু শুরু করেছিলাম, স্বপ্ন ছিল দৈনিকে যাব। গেলাম, সেখানে নামে প্রতিবেদন ছাপা হলে বার বার দেখতাম। যখন আমার নামে কোন রিপোর্ট প্রধান খবর হল প্রথম পাতায় তখনো দেখতাম মুগ্ধ চোখে। এমনি কত পর্বে যে নিজের নামে প্রকাশিত রিপোর্ট মুগ্ধতায় দেখেছি তার হয়তো দীর্ঘ তালিকা করতে পারবো সময় নিয়ে।


সেই সব মুগ্ধতার দিন বহু বহু আগে উড়ে গিয়েছে, এখন কত ভাল রিপোর্ট করা যায় সেই চাপে আর নিজের নাম ছাপা নিয়ে মুগ্ধতাতো দুরের কথা কোন অনুভূতি কাজ করে না। কিন্তু আবার যেন আমি পুরনো আমাকে খুঁজে পেলাম গতকাল, জানুয়ারির ২৬ তারিখ। স্বাধীন সাংবাদিকতাকে ঘিরে নানা বিষয় বস্তুর ওপর জাকার্তা ও নরওয়ে বিশ্ব বিদ্যালয়ের এক কনফারেন্স শেষে ২৬ জানুয়ারি জাকার্তা এয়ারপোর্ট থেকে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের প্লেনে উঠছি। প্লেনে প্রবেশ ফটকের মুখে যাত্রীদের পছন্দ মত নেবার জন্য বেশ কয়েক রকমের পত্রিকা সাজানো থাকে। আমি স্বাভাবসুলভ ভাবে নিলাম একাধিক পত্রিকা– স্ট্রেইট টাইমস, নিউইয়র্ক টাইমস এবং ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল। প্লেনের আসনে বসে নিউইয়র্ক টাইমস খুলে দেখি প্রথম পাতায় সবচে বড় করে যে রিপোর্টটি ছাপা হয়েছে সেটা বাংলাদেশ নিয়ে এবং সেটা আমার ও আরেক সহকর্মীর নামে প্রকাশিত প্রতিবেদন। এই রিপোর্ট নিউইয়র্ক টাইমসের আমেরিকান সংস্করণে ছাপা হয়েছে ২৩ জানুয়ারি, অনলাইনে ছিল ২২ জানুয়ারি থেকে, ফলে ২৬ জানুয়ারি নিউইয়র্ক টাইমসের আন্তর্জাতিক সংস্করণে ছাপা হবে এই প্রতিবেদন তা আমি কল্পনাও করি নাই। ফলে পত্রিকাটি হাতে নিয়ে বিস্ময়াভিভূত আমি হতভম্বের মত বসে রইলাম। অনুভব করলাম সেই পুরনো আনন্দ উত্তেজনা, সাংবাদিকতার ২৬ বছর পেরিয়েও। তারপর সিঙ্গাপুর এয়ারপোর্টেও ঢাকার প্লেন ধরবার সময় একই পত্রিকা পেলাম, ভালো লাগায় বাড়তি যোগ।


নিউইয়র্ক টাইমসের সাথে গত ১৩ বছরের সম্পর্ক আমার। নামে বহু প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে আন্তর্জান্তিক পাতায়, প্রথম পাতায়ও ছাপা হয়েছে বেশ ক’টি প্রতিবেদন। কিন্তু বাইরের কোন দেশ ঘুরবার সময় এমনি করে নিজের নামে প্রকাশিত রিপোর্ট সমেত বিদেশি পত্রিকা নিজের হাতে উঠে আসবে তা তো কোনদিন আসলেই কল্পনা করিনি। এই ভাল লাগার অনুভূতিটা সেই সাংবাদিকতার শুরুর দিককার অনুভূতির মত মনে হল। আরও মনে হল রিপোর্টার হিসেবে আজও জীবত আছি। আজও সাংবাদিকতাই একমাত্র আমাকে টানে।

[জুলফিকার আলী মাণিক: সাংবাদিক।।]

অতিথি লেখক