আমার বন্ধু কবি সাযযাদ কাদির

আমার বন্ধু কবি সাযযাদ কাদির

নির্মলেন্দু গুণ: কবি সাযযাদ কাদিরের একটা অভ্যাস ছিলো, বাংলাভাষার সেরা কবি সাহিত্যিকদের জন্মদিন মৃত্যুদিনে তাঁদের স্মরণ করা। শুধু বাংলাভাষার নয়, বিশ্বের বহু ভাষার বহু মনীষীকেই তাঁদের জন্মদিন ও মৃত্যুদিনে সাযযাদ ফেইসবুকে স্মরণ করতেন। বাংলা সাহিত্য তো বটেই বিশ্ব সাহিত্যও সাযযাদের নখদর্পণে ছিলো। সারা বিশ্বের Contemporary modern poetry সম্পর্কে আমি ও আমরা ( মধ্য ষাট দশকের কবিরা) অনেক তথ্য পেতাম সাযযাদের কাছে।


আমাদের কাছে সাযয়াদ ছিল একটি চলন্ত অভিধান। আমার প্রথম কাব্যগ্রন্থ প্রেমাংশুর রক্ত চাই-এর প্রুফ দেখার দায়িত্ব নিয়েছিলো সাযযাদ কাদির।

ঐ কাজের স্বীকৃতি দিতে ঐ গ্রন্থভুক্ত “অসভ্য শয়ন” কবিতাটি আমি আমার বন্ধু কবি সাযযাদ কাদিরকে উৎসর্গ করেছিলাম।

আমার আত্মজীবনী “আমার কণ্ঠস্বর” থেকে সযযাদ কাদির সম্পর্কিত কিছু স্মৃতিতথ্য এখানে উদ্ধৃত করলাম।

মাস দুই আগে মাতৃবিয়োগের পর সাযযাদ খুব ভেঙে পড়েছিল। হার্ট অপারেশন হয়েছিল বছর দশ বারো আগে। সর্বশেষ কর্মস্থল থেকে প্রত্যাশিত সম্মান না পাওয়ার বিষাদ ছিল তাঁর মনে। সেকথা সে বলেছিল আমাকে। বাংলা একাডেমী পুরস্কার তাঁর প্রাপ্য ছিল, কিন্তু পায়নি। এবার কবিতার জন্য জাতীয় কবিতা পরিষদের পুরস্কারটি পেয়ে সাযযাদ তাই খুব খুশি হয়েছিল। কবিতা পরিষদের সম্পাদক তারিক সুজাতের বাসায় কবিতা উৎসবের সমাপনী নৈশভোজে সাযযাদ কাদির ও তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে আমার শেষবারের মতো দেখা হয়। সেদিন সাযযাদকে বেশ দুর্বল দেখেছিলাম। ওঁর মাকে স্মরণ করেছিলাম। আমি একবার সাযযাদের টাঙ্গাইলের বাড়িতে দুপুরে অন্নগ্রহণ করেছিলাম। সাযযাদের মার হাতের রান্না খেয়েছিলাম। ওরঁ মার কথা স্মরণ করাতে সাযযাদ খুশি হয়েছিল।

মার কবরের পাশে বিষণ্নমুখে দাঁড়িয়ে থাকার একটি ছবি দেখেছিলাম ফেইসবুকে। ঐ ছবিটি দেখে ৭০ বছরের সাযযাদকে ৭ বছরের শিশুর মতো অসহায় ও নিঃস্ব মনে হয়েছিলো।

প্রিয় মায়ের কবরের পাশেই সাযযাদের কবর রচিত হলো, মাত্র দুই আড়াই মাসের ব্যবধানে।

[নির্মলেন্দু গুণ: কবি]

অতিথি লেখক