বিড়ম্বনার আরেক নাম স্মার্ট কার্ড!

বিড়ম্বনার আরেক নাম স্মার্ট কার্ড!

নিজস্ব প্রতিনিধি, এসবিডি নিউজ24 ডট কম: স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র (স্মার্ট কার্ড) বিতরণে বহুমুখী সমস্যায় পড়েছে নির্বাচন কমিশন। চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে ৯ কোটি ভোটারকে স্মার্ট কার্ড দেয়ার কথা থাকলেও বিতরণ শুরুর পর গত সাড়ে ৭ মাসে মাত্র ১৮ লাখ নাগরিককে স্মার্ট কার্ড দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ মাত্র ২ শতাংশ কার্ড বণ্টন হয়েছে। এখন বাকি ৭ মাসে ৮ কোটি ৮২ লাখের বেশি নাগরিককে কার্ড দিতে হবে। এই প্রকল্পের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলছেন, ডিসেম্বরের মধ্য কাজ শেষ করা প্রায় অসম্ভব।


এরই মধ্যে তালিকায় যুক্ত হয়েছে আরও প্রায় সোয়া কোটি নতুন ভোটার। এই ভোটাররা কবে নাগাদ স্মার্ট কার্ড পাবেন, সে ব্যাপারে দায়িত্বশীল কেউই কোনো তথ্য দিতে পারেননি।


২০০৭ সালে ছবিসহ ভোটার তালিকা তৈরির সময় অতিরিক্ত (বাই প্রডাক্ট) হিসেবে কাগজে ছাপানো একটি পরিচয়পত্র দেয়া শুরু হয়। কিন্তু এই পরিচয়পত্রটি মেশিন রিডেবল নয়। স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র প্লাস্টিক কার্ডে তৈরি। মেশিন রিডাবল। এর সঙ্গে একটি চিপ আছে। এই কার্ডধারীদের দুটি অতিরিক্ত তথ্য সরকারের ডেটাবেইসে আছে। বিভিন্ন নাগরিক সেবার নিবন্ধনের ক্ষেত্রে এই কার্ড ব্যবহার হবে বলে জানানো হয়েছে।


কার্ড বিতরণের সঙ্গে যুক্ত নির্বাচন কর্মকর্তারা বলছেন, গত বছরের ৩ অক্টোবর থেকে ঢাকায় স্মার্ট কার্ড বিতরণ শুরুর সময় একবার নির্ধারিত কেন্দ্রে গিয়ে নাগরিকেরা কার্ড নিতে পারতেন। কিন্তু সেখানে গিয়ে লম্বা লাইন, অনেকে গিয়েও কার্ড না পাওয়ার কারণে প্রথমেই বিতরণ নিয়ে বিশৃঙ্খলা শুরু হয়। এরপর সমস্যার কিছুটা সমাধান হলেও মানুষের আগ্রহ কমতে থাকে। কার্ড বিতরণে লোকবল-সংকটের কারণে এখন একজন নাগরিককে ২ দিন কেন্দ্রে যেতে হচ্ছে। এক দিন আঙুলের ছাপ দিয়ে আরেক দিন কার্ড আনতে হচ্ছে। এখন হাতে থাকা জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে কাজ চলে যাওয়ায় অনেকেই কেন্দ্রে যাচ্ছেন না।


সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, সরবরাহকারী ফরাসি প্রতিষ্ঠান থেকে যথেষ্ট ব্ল্যাঙ্ক (ফাঁকা) কার্ড না আসা, কার্ড ছাপানোর জন্য মেশিনের অপ্রতুলতা, কার্ড সংগ্রহের ক্ষেত্রে গ্রাহকের ভোগান্তি, প্রায় দেড় কোটি ভোটারের তথ্য ভুলসহ নানা কারণে পরিস্থিতি জটিল হয়ে পড়েছে।


স্মার্ট কার্ড প্রস্তুত ও বিতরণের জন্য ফ্রান্সের অবার্থুর টেকনোলজিসের সঙ্গে ২০১৪ সালে ৮০০ কোটি টাকার চুক্তি করে ইসি। তাদের সঙ্গে চুক্তি ছিল ৯ কোটি কার্ডের। দফায় দফায় পিছিয়ে সেই কার্ড বিতরণ শুরু হয় ২০১৬ সালে। ইতিমধ্যে এই প্রকল্পের মেয়াদ দেড় বছর বাড়ানো হয়েছে। এ ছাড়া এই কার্ড নাগরিকদের মধ্যে বিতরণের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৮০ কোটি টাকা। সময়মতো কার্ড বিতরণ না হলে সেগুলো বিতরণের জন্য নতুন করে আরও অর্থ ব্যয় করতে হবে কমিশনকে।


ভোটার তালিকা তৈরি ও জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগ এবং নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারাও স্বীকার করেছেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে স্মার্ট কার্ড দেওয়া নিয়ে সমস্যা তৈরি হয়েছে। তাঁরা বলছেন, কার্ড নিতে ভোটারের ১০ আঙুলের ছাপ ও চোখের আইরিশ নেওয়া বাধ্যতামূলক না থাকলে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এটি দেওয়ার চেষ্টা করা যেত। কিন্তু এখন কার্ড বিতরণ ও প্রস্তুতকাজ যে পর্যায়ে আছে, তাতে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে এটি শেষ করা প্রায় অসম্ভব। জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগ পরিচালনা করে নির্বাচন কমিশন। এই অনুবিভাগের তথ্য অনুযায়ী, তাদের তথ্যভান্ডারে ১০ কোটি ১৭ লাখেরও বেশি ভোটারের তথ্য আছে। এখন ২০১৪ সালের ৩১ জানুয়ারির মধ্যে যাঁরা ভোটার হয়েছেন, তাঁদের কার্ড দেয়া হচ্ছে। যারা ২০১৪ সালের ৩১ জানুয়ারির পর ভোটার হয়েছেন, তাদের এখনই স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র দেয়া হচ্ছে না। তারা আপাতত কাগজে লেখা লেমিনেটেড পরিচয়পত্র পাবেন।

নিজস্ব প্রতিনিধি