‘অর্থমন্ত্রীর বাজেট’…?

‘অর্থমন্ত্রীর বাজেট’…?

আলী রিয়াজ: বাজেট বিষয়ক আলোচনায় যেভাবে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতকে সমালোচনা করা হচ্ছে তা দেখা আমি খানিকটা বিস্মিত। আলোচনা দেখে মনে হয় যে এই বাজেট ‘অর্থমন্ত্রীর বাজেট’। কেউ কেউ এর জন্যে আমলাদের দায়ী করছেন, কেউ কেউ অত্যন্ত অশোভনভাবে তাঁর বয়স নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। এ সব কথা শুনলে মনে হয় যেন একজন বয়স্ক লোক একা একা বসে দিনরাত খেটেখুটে এই বাজেট তৈরি করে সংসদে হাজির করেছেন বা কয়েক জন আমলা তাঁদের ইচ্ছে অনুযায়ী তৈরি করা একটা হিসেবের খাতা অর্থমন্ত্রীকে উপহার দিয়েছেন যা অর্থমন্ত্রী বাজেট বলে পেশ করেছেন। প্রেসিডেন্সিয়াল ব্যবস্থায় প্রেসিডেন্টের পক্ষ থেকে তাঁর বাজেট অফিস আইন-প্রনেতাদের কাছে বাজেট পাঠান (সংসদ/কংগ্রেস), সে কারনে এটাকে ‘প্রেসিডেন্টের বাজেট’ বলা হয়। আইন-প্রনেতারা তা ইচ্ছে মতো কেটেকুটে পাশ করেন, প্রেসিডেন্ট তাতে রাজী হন, কিংবা ভেটো দিয়ে ফেরত পাঠান।


কিন্ত এই বাজেট নিয়ে আলোচনা হয়, সমালোচনা হয় প্রেসিডেন্টের কেননা এতে থাকে তাঁর প্রায়োরিটি, তাঁর এজেন্ডা, তাঁর রাজনৈতিক লক্ষ। সংসদীয় ব্যবস্থায় বাজেট সরকারের। যে কোন বাজেট মানে হচ্ছে সরকারের প্রায়োরিটি। এ কথা মনে করা ভুল যে, বাজেট মানে টাকার হিসেব; বাজেট মানে রাজনৈতিক লক্ষ এবং উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন পরিকল্পনার আর্থিক দিক। ফলে এই বাজেট, যে কোনো বাজেটের মতোই, সরকারের – অর্থাৎ ক্ষমতাসীন দলের দিক-নির্দেশনা। উদাহরন দেয়ার দরকার নেই, তারপরেও দেই। এবার বাজেটে সরকারি কর্মচারীদের বেতন ভাতা বাড়ানোর প্রস্তাব কী রাজনীতিক বিবেচনার বাইরে থেকে করা হয়েছে?

অবকাঠামো খাতে বড় বড় প্রকল্পে বরাদ্দ কী সরকারের কথিত উন্নয়নের ধারার বাইরে? যে হারে এবং যে ধরনের মানুষের ওপরে কর আরোপ করা হয়েছে সেটা কি রাজনৈতিক বিবেচনা ছাড়াই করা হয়েছে? সরকারি ব্যাংকগুলোয় পুনঃমূলধন দিতে ২ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে যখন ব্যাংকিং খাতের অবস্থা ত্রিশঙ্কু বললেও কম বলা হয়। কারা এতে করে লাভবান হবেন সেটা না জেনেই সরকার এই খাতে এত টাকা বরাদ্দ দিচ্ছে বলে মনে হয়? অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে ও দ্রুততম সময়ে বাস্তবায়নের জন্য ১০ বড় প্রকল্পের জন্য আলাদা বাজেট করার কথা বলা হয়েছে ।


প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে ব্যয় হবে পৌনে তিন লাখ কোটি টাকা। এগুলো যদি সরকারের সাফল্য হয়, তবে বাজেটে আরোপিত করের দায়-দায়িত্ব কেবল অর্থমন্ত্রী কেন নেবেন? ফলে রাজনৈতিক বিবেচনা ছাড়াই, দিক-নির্দেশনা ছাড়াই এই বাজেট তৈরি হয়েছে, মুহিত সাহেব একাই এই কাজটি করে ফেলেছেন বলে মনে করার অর্থ হচ্ছে এই প্রক্রিয়া বিষয়ে অজ্ঞতার প্রকাশ নতুবা রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতাসীন দলের আদর্শিক অবস্থান বিষয়ে ভিন্নমত প্রকাশে অনীহা।


বাজেটের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যের দিকে নজর না দিয়ে অর্থমন্ত্রীর সমালোচনা করা নিরর্থক, তাঁর দায় ততটুকুই যতটুকু সরকার প্রধানের। এই বাজটের যৎকিঞ্চিত অদল বদলের সম্ভাবনা অবশ্যই আছে, কিন্ত তাতে মূল দিক –নির্দেশনার পরিবর্তন ঘটবে না। প্রশ্ন হচ্ছে আপনি এই দিক নির্দেশনার সঙ্গে এক মত কিনা।

অতিথি লেখক