আমি দেখেছিলাম আমার পিতামাতার ‘পিতা’কে

আমি দেখেছিলাম আমার পিতামাতার ‘পিতা’কে
ছবি: শাওন মাহমুদ।

শাওন মাহমুদ: আমি সেই পিতার কথাই বলছি, যে পিতা শহীদদের জন্য, বীরাঙ্গনাদের জন্য, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য, জ্বলেপুড়ে ছারখার হয়ে যাওয়া বাংলার গ্রামগঞ্জের জন্য অশ্রু বিসর্জন করতেন। তিনি জানতেন তাঁকে তাঁর দেশের মানুষ উপহার দিয়েছে স্বাধীন সার্বভৌম এক সোনার দেশ।


তিনি জানতেন আমরা কী হারিয়েছি আর কারা তাঁর ডাকে এগিয়ে এসেছে। এমনকি তিনি তাও জানতেন কার জন্য আমরা মেনে নিয়েছি সব হারানোর বেদনা। সেই প্রথম আমার মায়ের মাথায় হাত রেখে আশীর্বাদ করেছিলেন আর সারাজীবন দেখে রাখবেন বলে কথা দিয়েছিলেন। কঠিন গলার স্বর ভেদ করা তাঁর উচ্চারিত প্রতিটা শব্দ ছিল বেদনাময়। ঠিক সেই মুহূর্ত থেকে আমাদের মতো কিছু উৎভ্রান্ত শহীদ পরিবার টিকে গিয়েছিলো বাংলাদেশে, নাহলে খড়কুটো হয়ে ভেসে যেতাম কোথায় কে জানে! তখন থেকেই চিনে নিয়েছিলাম আমার পিতামাতার ‘পিতা’কে।


‘৭৫-এ আমাদের ছেড়ে চলে যাবার পর মাথার ওপর ‘বঙ্গবন্ধু’ নামের সেই বটবৃক্ষ না থাকার কারণে একের পর এক ঝঞ্ঝা আর ঝড় এসে পড়েছিল এই শহীদ পরিবারগুলোর ওপরে। যে মানুষটির কথায় বাবার মতো লাখো বাঙালি যুদ্ধে গিয়েছিলো, নিজেদের উৎসর্গ করে দিয়েছিলো, সেই মানুষটি অসহায় পরিবারগুলোকে কখনও ‘না’ বলেননি, খালি হাতে ফিরিয়ে দেননি। তাঁর শূন্যস্থান পূরণ সম্ভব ছিল না, হয়ওনি, তাই কাউকে জানানোও হয়নি আমাদের কষ্টের কথা। তাঁর চলে যাওয়ার পর আজও খুঁজে ফিরছি আমার পিতামাতার ‘পিতা’কে।


আমি সেই পিতার কথাই বলছি, যে পিতা শহীদদের জন্য, বীরাঙ্গনাদের জন্য, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য, জ্বলেপুড়ে ছারখার হয়ে যাওয়া বাংলার গ্রামগঞ্জের জন্য অশ্রু বিসর্জন করতেন। তিনি জানতেন তাঁকে তাঁর দেশের মানুষ উপহার দিয়েছে স্বাধীন সার্বভৌম এক সোনার দেশ। ততোধিক ভালবাসার হাত তিনি বাড়িয়ে দিয়েছিলেন এদেশের মানুষের দিকে।


যেসব কীটের দল বঙ্গবন্ধুকে জাতির পিতা বলতে এবং মানতে দ্বিধা বোধ করে তাদেরকে বলছি- জেনে নিন, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক উপায়ে আমরা যেক’জন নেতা অথবা নেত্রীকে পেয়েছি তারা প্রত্যেকেই নিজেদের অবস্থানে মহিমাময় হলেও এদেশে বঙ্গবন্ধুর মতো আর একজন নেতারও জন্ম হয়নি। ‘৭৫ এর পর থেকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পটভূমিতে প্রহসন সৃষ্টিকারীরা একটু খেয়াল করুন, তাঁর মতো নেতাকে হত্যা করেও কি ভোলাতে পেরেছেন তাঁকে?


ধিক্, সেই কীটদের–যারা এদেশের ইতিহাস বিকৃত করার চেষ্টা করে আর বলে বেড়ায় মুক্তিযুদ্ধ এক অবান্তর অধ্যায়।


ধিক্, সেই কীটদের–যারা বলে বেড়ায় শহীদ পরিবারগুলো শুধু সুবিধাই নেয় তাদের আবার ত্যাগ কিসের?


ধিক্, সেই কীটদের–যারা বিভিন্ন কৌশলে আমাদের মধ্যে ভেদাভেদ সৃষ্টির চেষ্টা করে।

ধিক্, সেই কীটদের–যারা মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান দিতে অস্বীকার করে।


ধিক্, সেই কীটদের–যারা বীরাঙ্গনাদের বেশ্যা বলে।


ধিক্, সেই কীটদের–যারা আমার পিতামাতার ‘পিতা’কে ‘পিতা’ ডাকতে দ্বিধাবোধ করে।



অতিথি লেখক