আইএসআই বনাম বিএনপি : সংশোধনের সময়

আইএসআই বনাম বিএনপি : সংশোধনের সময়

মোমিন মেহেদীঃ

মিছিল মানেই মানুষের অধিকার আর মঙ্গল নয়/ মিছিল মানেই বিএনপি বা আওয়ামী লীগের ক্ষমতাসীন আগামী/ মিছিল মানেই ‘ মেনন’ আচ্ছন্ন দূর্নীতির খসড়া/ মিছিল মানেই ‘মওদুদ’দের আজন্মকালের ক্ষমতার লোভ… কোন এক কবির এই কবিতার মত করেই ক্ষমতার লোভে রাজপথে মুখোমুখি হতে যাচ্ছে দেশের বৃহৎ দুটি দল। একপক্ষ আরেক পক্ষকে ঘায়েল করার প্রসত্মতি নিচ্ছে। বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বহালের দাবিতে এবং নির্বাচন কমিশন ইস্যুতে অনড়। বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া এই কমিশনের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ নেবেন না বলে স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফিরিয়ে আনা এবং বর্তমান ইসির অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার হুমকি দিয়েছেন বিরোধীদলীয় নেতা। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, বিরোধী দল যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষ নিয়েছে, তাই জনগণকে সতর্ক ও সজাগ করতে আওয়ামী লীগ মাঠেই থাকবে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এর মধ্যেই ১২ মার্চ রাজপথ দখলে রাখার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। বিএনপির জনসভা আয়োজনের বিপরীতে আওয়ামী লীগের জনসভার আয়োজন কোনো শুভবুদ্ধির পরিচায়ক নয়। সরকারি দল থেকে বলা হয়েছে, অমত্মর্বর্তী সরকারের আইন হচ্ছে। অমত্মর্বর্তী সরকার ব্যবস্থা নিয়ে কোনো ফর্মুলা বিএনপি জাতীয় সংসদে এসে উত্থাপন করলে তা বিবেচনা করা হবে। এই খবর সত্য হলে উচিত হবে সরকারের পক্ষ থেকে সমঝোতার পথে এগিয়ে যাওয়া। অমত্মর্বর্তী সরকারের কথা বলে খালেদা জিয়াও ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছেন। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ বিরোধী নেতার অমত্মর্বর্তীকালীন সরকারের প্রসত্মাবকে স্বাগত জানিয়েছেন। স্বাগত জানানোই যথেষ্ট নয়; বিরোধী দলকে সংসদে আনতে সরকারি দলকেই অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে। সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে গণতন্ত্রকে চলমান রাখতে সব ধরনের বিতর্ক এবং বিরোধের অবসান ঘটিয়ে সংসদেই দুদলকে আসতে হবে। দেশের সমস্যা, জনগণের সুখ-দুঃখ নিরসনে উভয় দলকে গঠনমূলক আলোচনায় সংসদকে কার্যকর করতে হবে। সাধারণ মানুষের উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার বিষয়টি বিবেচনায় এনে রাজপথে নয়, সংসদেই দুদলকে দেখতে চায় দেশবাসী। এক্ষেত্রে সরকারি দলের উদ্যোগ ও আমত্মরিকতা বেশি প্রয়োজন। পাশাপাশি একটি বিষয় না বললেই নয়, তা হলো-১৯৯১ সালের নির্বাচনে খালেদাকে পাঁচ কোটি রম্নপি দেয় আইএসআই। কথাটি সত্যিকার্থেই আমাদের জন্য ভয়ংকর। পাকিসত্মানের  গোয়েন্দা সংস্থা ইন্টার সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স (আইএসআই) বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে পাঁচ কোটি রম্নুপি দিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ১৯৯১ সালে সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী  লীগকে পরাজিত করতে আইএসআই খালেদা জিয়াকে এই অর্থ দেয়। দুবাই থেকে প্রকাশিত খালিজ টাইমস-এর এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উলেস্নখ করা হয়েছে। পাকিসত্মানের বিমানবাহিনীর সাবেক প্রধান এয়ার মার্শাল আসগর খানের দায়ের করা একটি মামলায় অভিযোগ করা হয়, ১৯৯০ সালে পাকিসত্মানের পার্লামেন্ট নির্বাচনে বর্তমান ক্ষমতাসীন দল পাকিসত্মান পিপলস পার্টিকে (পিপিপি) পরাজিত করতে বিরোধী দলগুলোকে আইএসআই ১৪ কোটি রম্নপি দেয়। খালিজ টাইমস এ-সংক্রামত্ম একটি প্রতিবেদনে খালেদাকে আইএসআইয়ের পাঁচ  কোটি রম্নপি দেওয়ার কথা উলেস্নখ করেছে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, পাকিসত্মানের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে ‘ভারতপন্থী’ আওয়ামী লীগ তথা শেখ হাসিনাকে ঠেকাতে ১৯৯১ সালের নির্বাচনে খালেদাকে পাঁচ কোটি রম্নপি দেয় আইএসআই। তবে পাকিসত্মানের দ্যা নিউজ ও প্রধান বিজনেস ডেইলি বিজনেস রেকর্ডার-এর প্রতিবেদনে খালেদাকে অর্থ দেওয়া হয়েছে এমন কোনো তথ্য নেই। যদিও এই অভিযোগ প্রসঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরম্নল ইসলাম আলমগীর সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন, ‘এটা মহা মিথ্যা। বিএনপি বিদেশিদের টাকায় চলা রাজনৈতিক দল নয়। এ খবর সম্পূর্ণ বানোয়াট, ভিত্তিহীন ও অপপ্রচার।’ তিনি বলেন, দি ইকোনমিস্ট-এ আওয়ামী লীগের বিরম্নদ্ধে প্রতিবেদন হয়েছিল, তার পাল্টা হিসেবে টাকা দিয়ে বিএনপির বিরম্নদ্ধে এই অভিযোগ তোলা হয়েছে।’ ১৯৯৬ সালে করা আসগর খানের ওই মামলার শুনানি সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হয়। পাকিসত্মানের প্রধান বিচারপতি ইফতিখার মোহাম্মদ  চৌধুরীসহ তিনজন বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ প্রথম দিনের শুনানি শেষে ৮ মার্চ শুনানির পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ করে। একই সঙ্গে আইএসআইয়ের তৎকালীন প্রধান জেনারেল আসাদ দুররানি ও মেহরান ব্যাংকের প্রধান ইউনুস হাবিবকে আগামী শুনানিতে হাজির করতে নোটিশ দেওয়ার নির্দেশ দেন। মেহরান ব্যাংকের মাধ্যমে এই অর্থ দেওয়া হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। সম্প্রতি তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল মির্জা আসলাম বেগ ও আসাদ দুররানি পিপিপিকে ঠেকাতে বিরোধী দলগুলোকে অর্থ দেওয়ার কথা স্বীকার করেন। তাঁরা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক হলফনামাও দিয়েছেন। আদালতে দেওয়া দুররানির হলফনামা অনুযায়ী ওই সময় আইএসআই পাকিসত্মানের বর্তমান বিরোধী দল নওয়াজ শরিফের পাকিসত্মান মুসলিম লীগকে (পিএমএল-এন) ৩৫ লাখ, তৎকালীন প্রেসিডেন্ট গুলাম ইসহাক খানের নির্বাচন সেলের প্রধান  লেফটেন্যান্ট জেনারেল রাফাকাতকে ৫৬ লাখ, প্রয়াত সাবেক প্রধানমন্ত্রী গুলাম মোসত্মফা জাতোয়িকে ৫০ লাখ, সিন্ধু প্রদেশের সাবেক গভর্নর ইউসুফ হারম্ননকে ৫০ লাখ, সাংবাদিক আলতাফ হুসেইন কোরেশি ও মুসত্মাফা সাদিককে পাঁচ লাখ রম্নপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের মোট ১৪ কোটি রম্নপি দেওয়া হয়। ৯১ বছর বয়সী আসগর খানের পক্ষে হাবিব ওয়াহাবুল খারিরি সম্প্রতি এ মামলা শুনানির জন্য আবেদন করেন। বর্তমানে আল জিহাদ ট্রাস্টের চেয়ারম্যান খারিরি ১৯৯৬ সালে মামলা করার সময় আসগর খানের পরামর্শক ছিলেন।খারিরি বলেন, রাজনীতিতে আইএসআইয়ের হসত্মক্ষেপের ইতি টানতেই তিনি এ মামলা শুনানির জন্য আদালতে আবেদন করেছেন। খালিজ টাইমস, দি এক্সপ্রেস ট্রিবিউন ও দ্য নিউজ-এ প্রকাশিত এই তথ্য থেকেই বোঝা যায় যে, মেজর জিয়াউর রহমান মানুষের জন্য, মঙ্গলের জন্য জীবন উৎসর্গ করলেও তার প্রতিষ্ঠিত সংগঠন বিএনপির বর্তমান চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া কেবলই ক্ষমতার জন্য রাজনীতি করছেন। তাঁর মধ্যে মানষের জন্য ভালোবাসা নেই, নেই দেশের জন্য নূন্যতম মায়া-মমতাও। আর এ কারনেই দু’দিন পরপর বিভিন্ন কর্মসূচী দিয়ে মানুষের সর্বনাশ ডেকে আনছেন। না, সংসদে যাচ্ছেন, না, দেশের মানুষের কল্যাণে কারছেন। যা করছেন তিনি, তাকে কেবলই কষ্ট নির্মাণ বলা যায়। এই বর্তমানে আছেন বলেই বারবার মনে হচ্ছে যে, ওয়ান ইলেভেন আসছে। আমার যদি স্মৃতিভ্রষ্টতা না ঘটে; তাহলে গত ওয়ান ইলেভেনের সূত্র যে বিএনপি তা-ই মনে পড়ছে। যতদূর মনে পড়ে বিএনপির এলোমেলো কর্মসূচী-ই সেবার ওয়ান ইলেভেন আসার পথকে সুগম করেছিল। এবার যেমন করছে। কথায় কথায় আন্দোলন, কথায় কথায় কর্মসূচী; কেবলমাত্র বাংলাদেশেই সম্ভব। পৃথবীর আর কোন রাষ্ট্রে এমন কঠিনতর বিরোধ দল আছে বলে আমার মনে হয় না। তাছাড়া সবাই-ই সংসদে যায়, উন্নয়ন কর্মকান্ডের সাথে জড়িত থাকে। আর বাংলাদেশে- কেবলই ক্ষমতার রাজনীতি। ক্ষমতার জন্য যত যুদ্ধ। এই বর্তমানের বাইরে বেরিয়ে আসতে হবে বিএনপিকে। মানুষের জন্য জীবন উৎসর্গের রাজনীতির দীক্ষা নেয়ার দিন এসেছে। এখন যদি আগের সেই সন্ধ্যাকে দূর করার জন্য কাজ না করে, তাহলে বিএনপি’র কপালে এমন দিন অপেক্ষা করছে- যেদিন পতাকা উত্তোলন করার জন্যও একজন কর্মী পাওয়া যাবে না। আর এই কথা, এই সংশোধনের আহবান শুধু বিএনপির জন্য্ নয়; আওয়ামী লীগের জন্যও। কেননা, ইতিহাস বলে, ক্ষমতা, অর্থ আর যৌবন সব সময় থাকে না…

 মোমিন মেহেদী : সম্পাদক, banglareport24.com; email: mominmahadi@gmail.com

বিভাগীয় প্রধান

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না।