যাত্রীসেবার মান না বাড়লেও,বিমানের ভাড়া বাড়ছে

যাত্রীসেবার মান না বাড়লেও,বিমানের ভাড়া বাড়ছে

মোক্তার হোসেন,এসবিডি নিউজ24 ডট কমঃ জ্বালানি তেলের দামের সাথে সামঞ্জস্য রেখে বিভিন্ন রুটে যাত্রীভাড়া বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ বিমান। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নীতিগত সিদ্ধান্ত নিলেও কবে থেকে এবং কি হারে ভাড়া বাড়ানো হবে সে ব্যাপারে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। বিমান কর্তৃপক্ষের অভিমত, জ্বালানি তেলের দাম কয়েক দফা বাড়লেও বিমান ভাড়া বাড়ানো হয়নি। এ পরিস্থিতিতে বিমান কুলিয়ে উঠতে পারছে না। পরিস্থিতি বিবেচনা করে বিমান বিভিন্ন রুটে অন্যান্য এয়ারলাইন্সের ভাড়া খতিয়ে দেখে ভাড়া বাড়ানোর উদ্যোগ নিচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বিভিন্ন রুটে বিমানের যাত্রী ভাড়া বাড়ানো জরুরি হয়ে পড়েছে। জ্বালানির দাম বাড়লে বিমান ভাড়া স্বাভাবিকভাবেই বাড়ার কথা। কিন্তু এক্ষেত্রে তা হয়নি। ফলে বিমানকে লোকসান গুনতে হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে যে হারে জ্বালানির দাম বাড়বে সে অনুপাতে বিমানের যে পরিমাণ খরচ বাড়বে সে অনুযায়ী ভাড়া বাড়ানো জরুরি। যদিও ইতিপূর্বে বিমানের ভাড়া বাড়ানোর পর বিভিন্ন স্থান থেকেই যাত্রীদের আপত্তি আসে। ফলে বিমান ভাড়া কমাতে বাধ্য হয়। গতবার যখন জ্বালানির দাম বাড়ে তখনো বিমান ভাড়া বাড়ায়নি। ফলে ভাড়া না বাড়ানোর কারণে বিমানের সমস্যা হচ্ছে। তবে বিমান কর্তৃপক্ষ এখনো পরিকল্পনা মাফিক কোন কোন রুটে ভাড়া বাড়াবে, কতখানি বাড়াবে সে সিদ্ধান্ত নেয়নি। বিবেচনা করা হচ্ছে একবারে বেশি ভাড়া বাড়ালে যাত্রীরা তা মেনে নিতে রাজি নাও হতে পারে। এ পরিস্থিতিতে সবদিক বিবেচনায় নিয়েই বিমান ভাড়া বাড়াবে। ইতিমধ্যে যাত্রী ভাড়া বাড়ানোর লক্ষ্যে বিমানে রুটগুলো পর্যালোচনা করে দেখা হচ্ছে।

সূত্র জানায়, প্রতি বছরই লোকসানের দেয়ার কারণে স্বাধীনতার ৪০ বছরেও লাভের মুখ দেখেনি বিমান। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে জ্বালানি তেলের উচ্চমূল্য এবং বিমানের কম যাত্রীভাড়া। ফলে বিমানের লোকসানের বোঝা কেবল বাড়ছে। কারণ জ্বালানি দাম বাড়ার সাথে পাল্লা দিয়ে যাত্রী ভাড়া বাড়াতে পারছে না বিমান। অথচ বেশি ভাড়া দিয়ে এদেশের যাত্রীরা বিদেশী এয়ারলাইন্সে ঠিকই ভ্রমণ করছে। লোকসানের কারণে কোনো বছরই বাংলাদেশ বিমান জ্বালানি তেলের পুরো টাকা পরিশোধ করতে পারছে না। ফলে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের কারণে বিমানের দেনা দিন দিন বেড়েই চলেছে। যদিও বিদেশে স্টেশন থেকে জ্বালানি তেল কেনার ক্ষেত্রে তার দাম নগদে পরিশোধ করতে হয়। কিন্তু বিপিসির কাছ থেকে বিমান যে জ্বালানি তেল সংগ্রহ করে তার বড় অংশই দীর্ঘদিন ধরে পরিশোধ করছে না বিমান। ফলে বিপিসির কাছে বিমানের দেনা বেড়েই চলেছে। বর্তমানে বিপিসির কাছে বিমানের দেয়ার পরিমাণ প্রায় ৩শ’ কোটি টাকা। এ টাকা পরিশোধে বিমানকে বার বার তাগিদ দিচ্ছে বিপিসি। কিন্তু বিমান তাতে সাড়া দিচ্ছে না। অভিযোগ রয়েছে, প্রতি বছর বিমানের জ্বালানি তেল কেনার নামে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে অসাধু চক্র।

সূত্র আরো জানায়, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স প্রতি বছর দেড় হাজার কোটি টাকার জ্বালানি তেল কিনে। তবে খাতাপত্রে এ টাকার জ্বালানি কেনার কথা বলা হলেও বিমানের ঘরে জ্বালানি আসে তার অনেক কম। বরং কম তেল কিনে বেশি পরিমাণের বিল-ভাউচারের মাধ্যমে অবাধেই বাড়তি টাকা আÍসাতের ঘটনা ঘটছে। এককথায় নকল বিল-ভাউচারই বিমানের বিপুল জ্বালানি তেল খেয়ে ফেলছে। পাশাপাশি যথাযথভাবে ব্যবহৃতও হচ্ছে না বিমানের তেল। তাছাড়া অনেক ক্ষেত্রেই কারিগরি ত্র“টির কারণে বিমানকে গন্তব্য পরিবর্তন করতে হয়। এ কারণেও বিপুল জ্বালানির অপব্যবহার ও অপচয় হচ্ছে। আবার অনেক ক্ষেত্রে জ্বালানিপূর্ণ অবস্থায় উড়োজাহাজে কারিগরি ত্র“টি দেখা দিলে জরুরি অবতরণের জন্য তেলের ট্যাংক খালি করে ফেলতে হয়। তাতেও অনেক জ্বালানির অপচয় হয়। তাছাড়া ডিসি-১০ উড়োজাহাজে অন্য যে কোনো উড়োজাহাজের চেয়ে বেশি তেল লাগে। এসব কারণে বিমানকে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি জ্বালানি তেল কিনতে হচ্ছে। আর দিনের পর দিন অতিরিক্ত জ্বালানি তেল কিনতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে বিমান।

এদিকে অভিযোগ রয়েছে যে, ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ দেশের অন্যান্য বিমানবন্দরে এবং বিদেশের বিভিন্ন বিমানবন্দরে বিমানের স্টেশনগুলোতে জ্বালানি তেল খাতে চলছে লুটপাটের মহোৎসব। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের যোগসাজশেই এ লুটপাটের ঘটনা ঘটছে। মূলত জ্বালানি তেল সংগ্রহ করার পাম্পের ম্যানেজার, হ্যান্ডলিং প্রতিষ্ঠান, বিমানের জিএসই শাখা, নিরাপত্তা শাখায় সংঘবদ্ধ একটি চক্রের মাধ্যমে কিছু অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশেই জ্বালানি তেলের টাকা চুরি হচ্ছে। এজন্য তৈরি করা হচ্ছে ভুয়া বিল-ভাউচার। চক্রটি বিমানের জন্য যে পরিমাণ টাকার জ্বালানি কেনে খাতাপত্রে তার হিসাব দেখানো হয় অনেক বেশি। তাছাড়া একটি স্টেশন থেকে যে পরিমাণ তেল কেনা হয় ঠিক ওই পরিমাণ টাকার বিল পরিশোধ করা হয় বিক্রেতার কাছে। তবে লেখার সময় তেলের পরিমাণ ও টাকার পরিমাণ বাড়িয়ে লেখা হয়। সমঝোতার মাধ্যমেই চলছে এ চুরির ঘটনা। এ টাকা বিমানের বিভিন্ন স্তরে ভাগ-বাটোয়ারা হয়ে থাকে। ফলে বিমানের অসাধু চক্র আর্থিকভাবে লাভবান হলেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বিমান। তাকে বইতে হচ্ছে লোকসানের বোঝা।

এ প্রসঙ্গে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা সাংবাদিকদের জানান, বিমানের যাত্রীভাড়া বাড়ানো জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু চাইলেও জ্বালানি তেলের দামের সাথে পাল্লা দিয়ে যাত্রীভাড়া বাড়ানো সম্ভব নয়। তবে লোকসান কমাতে এ ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।

নিজস্ব প্রতিনিধি

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না।