ডিমের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধিঃ প্রয়োজনে ডিম আমদানির চিন্তা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের

ডিমের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধিঃ প্রয়োজনে ডিম আমদানির চিন্তা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের

সুনিত বড়ুয়া,এসবিডি নিউজ24 ডট কমঃ দাম না কমলে আমদানির মাধ্যমে ডিমের বাজার নিয়ন্ত্রণ করা হবে। ধারাবাহিকভাবে উৎপাদন বৃদ্ধি সত্ত্বেও গুটিকয়েক ব্যবসায়ী বাজারে ডিমের কৃত্রিম সংকট তৈরি করছে। বাজার স্বাভাবিক রাখতে বিদেশ থেকে ডিম আমদানির চিন্তা করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। আগামী মঙ্গলবার শীর্ষ ডিম ব্যবসায়ী এবং প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠকে এই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। ২০১০ সালেও আমদানির মাধ্যমে এ ধরনের সংকট মোকাবিলা করা হয়েছিল।
মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্য উপকরণের মধ্যে ডিমের স্থান শীর্ষপর্যায়ে। পুষ্টি চাহিদা পূরণে এই পণ্য গ্রহণের প্রবণতা ছোট-বড় সব পরিবারেই আছে। তবে এই ডিমই এখন দুষ্প্রাপ্য পণ্যে পরিণত হয়েছে। দাম বাড়ছে লাফিয়ে। প্রায় এক মাস ধরে ডিমের দাম বেড়ে যাওয়ায় বিকল্প উৎস থেকে ডিম সংগ্রহের চিন্তা করছে সরকার। এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাবনা পশু ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ওই প্রতিবেদন এলে ডিম বিষয়ে সার্বিক তথ্য-উপাত্ত পাওয়া যাবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, মঙ্গলবার শীর্ষ ডিম ব্যবসায়ী এবং অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করে ডিম আমদানির সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তিনি বলেন, পশু ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ডিসেম্বর মাসে ডিমের উৎপাদন ছিল ৫২ কোটি পিস। জানুয়ারি মাসে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৬৩ কোটি। আর ফেব্রুয়ারিতে ডিমের উৎপাদন হয়েছে ৬৬ কোটি পিস। অন্যদিকে ডিমের মাসিক চাহিদা ১১২ কোটি পিস। দেখা যায় উৎপাদন বাড়লেও ডিমের সংকট তৈরি করা হচ্ছে। প্রতিদিন প্রতি ঘরে ডিমের চাহিদা নেই। সরকারি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ বা টিসিবির বাজার তথ্যে দেখা গেছে, রাজধানীর খোলাবাজারে প্রতি হালি ডিম বিক্রি হচ্ছে ৩৪-৩৬ টাকায়। এক মাস আগে দাম ছিল ২৮-৩০ টাকা। মাসিক দাম বৃদ্ধির হার প্রায় ২১ শতাংশ। এক বছর পূর্বে ডিমের হালি ছিল ২২-২৩ টাকা। এক বছর আগ থেকে এখন দাম বৃদ্ধির হার প্রায় ৫৬ শতাংশ। রাজধানীর মিরপুরের শেওড়াপাড়া বাজারে প্রতি হালি ডিম বিক্রি হচ্ছে ৩৫-৩৮ টাকা হালি দরে। ডিমের উৎপাদকরা বলছেন, আগামী ৬-৭ মাস ডিমের দাম আরো বাড়বে। উৎপাদন কমে অর্ধেকে নামায় ডিমের দাম বাড়ছে বলে ব্যবসায়ীদের দাবি। তবে সরকারের কাছে উৎপাদন কমার কোন তথ্য নেই। তাই দাম বাড়ার কোনো যৌক্তিক কারণও খুঁজে পাচ্ছে না পশু ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। ২৯ মার্চ এক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় কয়েকমাস ধরে ডিমের উচ্চমূল্যে অসন্তোষ প্রকাশ করে উৎপাদন ও চাহিদা সম্পর্কে জানতে চান বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, ডিমের চাহিদা নতুন করে বাড়েনি। অথচ উৎপাদন বেড়েছে। আর এ বছর বার্ড ফ্লুতে খামার বন্ধের ভয়াবহ কোনো ঘটনাও ঘটেনি। তাই কিছুদিন ধরে যে ডিমের দাম বাড়ছে, তার পেছনে যৌক্তিক কোনো কারণ নেই। ডিমের উৎপাদকরাই কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে এমনটি করছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট ওই কর্মকর্তা আরো জানান, ডিমের দাম নামিয়ে আনতে শক্ত অবস্থান নিচ্ছেন তারা। ডিম ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠকের সময় বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধিরাও উপস্থিত থাকবেন। মুরগির বাচ্চা ও মুরগি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন ব্রিডার্স অ্যাসোসিয়েশনের এক কর্মকর্তা জানান, বার্ড ফ্লুতে এ বছর লেয়ার মুরগির প্রায় অর্ধেকই মরে গেছে। যেসব খামার মুরগির বাচ্চা উৎপাদন করে সেসব খামারও ধ্বংস হয়ে গেছে। এখন যে নতুন বাচ্চা ফুটছে তা বড় হয়ে ডিম দিতে ৬-৭ মাস সময় লাগবে। ততদিন ডিমের দাম না কমে বরং বাড়তেই থাকবে। ২০১০ সালেও এ ধরনের সংকট দেখা দিয়েছিল। তখনও ডিম আমদানির উদ্যোগ নেওয়া হয়। তখন ডিম আমদানিতে আগ্রহী আমদানিকারকরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট ডেস্কে আবেদনপত্র জমা দেন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ডিমের বাজারে অস্থিরতা ঠেকাতে সরকার তখন ২০ কোটি ডিম আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এতে ৩২ টাকা দরের ডিম ২৫ টাকায় নেমে আসে।

নিজস্ব প্রতিনিধি

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না।