সাকার বিচার শুরুঃ ২৯ এপ্রিল সাক্ষ্যগ্রহণ

সাকার বিচার শুরুঃ ২৯ এপ্রিল সাক্ষ্যগ্রহণ

বিশেষ প্রতিনিধি,এসবিডি নিউজ24 ডট কমঃ একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর বিচার শুরু হয়েছে। ৪ এপ্রিল (বুধবার) তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। ট্রাইব্যুনাল-১-এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. নিজামুল হকের নেতৃত্বে গঠিত তিন সদস্যের বেঞ্চে সাকা চৌধুরীর বিরুদ্ধে ২৩টি অপরাধের দায়ে অভিযোগ গঠনের কথা বলা হয়েছে। যার মধ্যে হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণ, দেশান্তরে বাধ্য করা, লুটপাট, অগি্নসংযোগ ও অপহরণ করে চট্টগ্রামে তার বাসভবন গুডস হিলে নির্যাতনের ঘটনা অন্যতম। একইসঙ্গে আদালত সাকার বিরুদ্ধে আগামী ২৯ এপ্রিল সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য দিন ঠিক করেছে। এছাড়া সাকা চৌধুরীর জামিনের আবেদন উত্থাপিত হয়নি মর্মে খারিজ করেছে আদালত। পাশাপাশি সাকা চৌধুরীকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি চেয়ে অভিযোগ গঠনের আদেশ রিভিউ (পুনর্বিবেচনা) আবেদনসহ আরো বেশ কয়েকটি আবেদনের ওপর শুনানি ১২ এপ্রিল পর্যন্ত মুলতবি করা হয়েছে।
এর মধ্যে দিয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধে দ্বিতীয় ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হল। এর আগে এ বিষয়ে বিচার কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর সর্বপ্রথম জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে ট্রাইব্যুনাল। বর্তমানে সাঈদীর বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। আগামী ৮ এপ্রিল মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরার জন্য তারিখ নির্ধারিত রয়েছে।
আদেশে আদালত বলেছে, প্রসিকিউশন সালাউদ্দিন কাদেরের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগে যেসব তথ্য উপাত্ত উপস্থাপন করেছে, তাতে এটা মনে করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে যে তিনি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের ৩.২, ৪.১ ও ৪.২ ধারা অনুযায়ী অপরাধ করেছেন। বিচারপতি নিজামুল হক সাকা চৌধুরীকে ২৩টি অভিযোগ পড়ে শোনান। পরে আদালত জানতে চান তিনি অভিযোগগুলো শুনতে এবং বুঝতে পেরেছেন কি না। জবাবে সাকা চৌধুরী বলেন, তিনি শুনতেও পাননি, বুঝতেও পারেননি।
এ পর্যায়ে আদালত বলেন, যেহেতু আসামির উপস্থিতিতে অভিযোগ পড়ে শোনানো হয়েছে, সেহেতু তিনি এ বিষয়ে অবগত বলে ধরে নেয়া হল। বিচারপতি নিজামুল হক এরপর সাকা চৌধুরীর কাছে জানতে চান_ তিনি দোষী না নির্দোষ। জবাবে সাকা চৌধুরী পাল্টা প্রশ্ন করে বলেন_ কেন? কোন অপরাধে? এ নিয়ে কথোপকথনের এক পর্যায়ে সাকা চৌধুরী বলেন, যেহেতু তিনি কোনো লিখিত অভিযোগ পাননি, সেহেতু এ বিষয়ে তিনি কিছু বলবেন না। পরে সাকা চৌধুরীর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের আদেশ দেয়া হয়।
আদেশের পর প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম সাংবাদিকদের বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল অ্যাক্টের ৩২(২) এর এ, সি, জি এবং এইচের ধারাগুলো অনুসারে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে অপরাধ সংঘটনের সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে অভিযোগ গঠন করে ট্রাইব্যুনাল। কতটা হত্যা ও গণহত্যার অভিযোগ সাকা চৌধুরীর বিরুদ্ধে রয়েছে তা জানতে চাইলে তিনি জানান, হত্যার অভিযোগ রয়েছে ৩০০-এরও বেশি। আর চট্টগ্রামের রাউজান থানার জগৎমল্লপাড়া, উনসত্তরপাড়া, মধ্য গহিরাসহ ৪-৫টি গণহত্যার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। জেয়াদ আল মালুম জানান, ১৩ এপ্রিল ১৯৭১ ভোর সাড়ে ৬টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এ সব গণহত্যা সাকা চৌধুরীর সহায়তা ও নেতৃত্বে পাকিস্তানি বাহিনী সংঘটিত করেছিল।
একাত্তর সালের ১৩ এপ্রিল চট্টগ্রামের রাউজান থানার কু-েশ্বরী ঔষধালয়ের প্রতিষ্ঠাতা নতুন চন্দ্র সিংহের হত্যাকা-ের বিবরণ তুলে ধরে জেয়াদ আল মালুম আরো জানান, পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে নিয়ে ওইদিন ভোর সাড়ে ৬টায় কু-েশ্বরী ঔষধালয়ে প্রবেশ করেন সাকা চৌধুরী। তখন নতুন চন্দ্র সিংহ তার মন্দিরে প্রার্থনারত ছিলেন। সেখান থেকে তাকে টেনেহিঁচড়ে মন্দিরের বাইরে এনে পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে সাকা চৌধুরী বলেন, ‘একে হত্যা করার জন্য বাবার (ফজলুল কাদের চৌধুরী) নির্দেশ আছে।’ এ কথা বলার পর পাকিস্তানি বাহিনী গুলি করে। এ গুলিতে মারা না গেলে সাকা চৌধুরী নিজে গুলি করে নতুন চন্দ্র সিংহকে হত্যা করেন। নতুন চন্দ্র সিংহ হত্যায় তাই সাকা চৌধুরীর বিরুদ্ধে সরাসরি জড়িত বলেও জানান জেয়াদ আল মালুম। অন্যদিকে সাকা চৌধুরীর আইনজীবী ব্যারিস্টার ফখরুল ইসলাম বলেন, যে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে তা অবৈধ এবং এই ট্রাইব্যুনালের এখতিয়ারবহির্ভূত।
একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে সাকা চৌধুরীকে গ্রেফতার করতে নির্দেশনা চেয়ে ২০১০ সালের ১৫ ডিসেম্বর ট্রাইব্যুনালে আবেদন করে তদন্ত সংস্থা। এর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গাড়ি পুড়িয়ে মানুষ হত্যা মামলায় তাকে গ্রেফতার করা হয়। ১৯ ডিসেম্বর তাকে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে গ্রেফতার দেখানো হয়। পরে ৩০ ডিসেম্বর তাকে প্রথমবারের মতো ট্রাইব্যুনালে হাজির করানো হয়। এক পর্যায়ে গত বছরের ৪ অক্টোবর সাকা চৌধুরীর বিরুদ্ধে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়। ৩২টি অভিযোগ সংবলিত ৫৫ পৃষ্ঠার আনুষ্ঠানিক অভিযোগের সঙ্গে ১ হাজার ২৭৫ পৃষ্ঠার আনুষঙ্গিক নথিপত্র এবং ১৮টি সিডি ট্রাইব্যুনালে জমা দেয়া হয়। এরপর ১৪ নভেম্বর তার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ উত্থাপনের আবেদন করা হয়। অভিযোগ উপস্থাপন শেষে গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর অভিযোগ আমলে নিয়ে অভিযোগ গঠনের জন্য শুনানির দিন ধার্য করে। শুনানি শেষে গতকাল সাকা চৌধুরীর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হল।

বিশেষ প্রতিনিধি

Related articles