বাংলার মুখ

বাংলার মুখ

রাজীব নূরঃ সাত ভাই চম্পা পাখির পেছনে ছুটতে ছুটতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলে তুমি। ওরা তোমার পায়ে পায়ে হেঁটে ঠিক বুঝে গিয়েছিল ধরা পড়ে গেলেও ভয় নেই, একটু আদর করে ছেড়ে দেবে তুমি। সেই ছোটবেলা থেকে আমরা দেখে এসেছি মানুষের অস্তিত্ব টের পাওয়া মাত্রই কেমন মুহূর্তেই ছুটে পালায় সাত ভাই চম্পারা। সাত জন করে একটা দলে থাকে বলে ওদের এমন নামকরণ হয়েছে। ওদের সাতজনের মধ্যে ছয়জন নারী, অথচ লোকশ্রুতিতে এই পাখিদের দলে কোনো পারুল বোনের স্বীকৃতি পাওয়া যায় না। আমরা অবশ্য পাখিগুলো সম্পর্কে ঠিক কিছু জানি না। একবার আমাদের এই এলাকায় যখন পাখি বিশেষজ্ঞ ইনাম-আল হক এসেছিলেন তখন আমরা তাঁকে দেখাব বলে সাত ভাই চম্পাদের খুঁজে ক্লান্ত হয়েছি, অথচ একটা দলকেও খুঁজে পাইনি।

‘একটা পাখি মরলে ছয়টা পাখি জীবন দেয়’-এ কথার মধ্য দিয়ে ক্ষুধিরামের মা কিন্তু তোমাকে সাত ভাই চম্পা পাখি নিয়ে প্রচলিত একটা উপাখ্যান শোনাতে চেয়েছিলেন। আমরা এর আগে অনেকবার প্রীতিলতা দেবীর কাছে গেলেও টেলিভিশনের বদান্যতায় তুমি তাঁর কাছে আমাদের চেয়ে বেশি পরিচিত হয়ে গেলে, অবশ্য মেয়ে বলেও অধিকতর গুরুত্ব পেয়ে থাকতে পার। হতে পারে টেলিভিশনের কোনো নাটকই প্রীতিলতা দেবী দেখেননি, কিন্তু তোমার মুখে যে মায়ামাখা রয়েছে, যে মায়ায় আমরাও আটকে যাই, তা দেখেও তিনি তোমার কাছে সব কথা বলতে আগ্রহী হলেন। আমরা তাঁর কাছে উপেক্ষিত হয়ে গেলাম।

সুতপা, কেমন করে ভুলবে প্রীতিলতা দেবীর হাহাকার? অকাল বৈধব্য আর নদী সিকস্তিকে নিয়তি বলে মেনে নিলেও মানুষের রূঢ়তাকে মানতে পারেননি তিনি। সত্তরোর্ধ্ব এই নারী তারপরেও মানুষকেই বিশ্বাস করতে চেয়েছেন, নইলে মানুষ কেন মানুষকে খুন করে এমন হৃদয়ছেঁড়া প্রশ্ন তিনি করতে পারতেন না। আসলে মানুষকে ভালোবাসার এ শিক্ষা তিনি পেয়েছেন তাঁর বাবার কাছ থেকে।

মানস কি তোমাকে প্রীতিলতা দেবীর বাবা উদিত নারায়ণ রায়ের কথা বলেছে? লালপ্রসাদ থানার চর অন্নদাপ্রসাদ নামে যে গ্রামটিতে তোমরা ইতিমধ্যে ঘুরে এসেছ ওই গ্রামের সন্তান উদিত নারায়ণ রায় ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে পরিচালিত আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন। সেই অনেক কাল আগে আজকের ভোলা জেলার লালমোহন ছিল সমৃদ্ধতর অঞ্চল। চর অন্নদাপ্রসাদ, জাহাজমারা, ফাতেমাবাদসহ কয়েকটি গ্রাম নিয়ে যে ইউনিয়ন তার নাম যে লর্ডহার্ডিঞ্জ এ নিশ্চয়ই তুমি ঘুরতে যাওয়ার আগেই জেনে নিয়েছ। হার্ডিঞ্জ ব্রিজের হার্ডিঞ্জ আর লর্ডহার্ডিঞ্জ ইউনিয়নের হার্ডিঞ্জ যে অভিন্ন ব্যক্তি নন-মানস নিশ্চয়ই তোমাকে শুনিয়েছে। লর্ডহার্ডিঞ্জদ্বয়ের একজন ছিলেন গভর্নর অন্যজন নীলকুঠির কর্তা। মানস তোমাকে লর্ড হার্ডিঞ্জের কথা বলেছে এ কথা এমন নিশ্চিত করে অনুমান করার কারণ নতুন কাউকে নিয়ে লর্ডহার্ডিঞ্জ ইউনিয়নে বেড়াতে গিয়ে আমাদের কারো পক্ষে উদিত নারায়ণ আর লর্ড হার্ডিঞ্জের মল্লযুদ্ধ নিয়ে প্রচলিত গল্প না শুনিয়ে থাকা অসম্ভব। মল্লযুদ্ধ নিয়ে প্রচলিত ওই গল্পটির অবশ্য ঐতিহাসিক কোনো ভিত্তি নেই। এমন কী, উদিত নারায়ণের কন্যা প্রীতিলতার কাছে এ নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি নিজেও গল্পটি লোকমুখে শুনেছেন বলে জানিয়েছিলেন আমাদের। ঐতিহাসিক ভিত্তি না থাকলেও লর্ডহার্ডিঞ্জের আবালবৃদ্ধবণিতা এ গল্পটিকে সত্যের চেয়ে বেশি বলে বিশ্বাস করে। একই কারণে আমরাও কাউকে দ্বীপে নিয়ে আসতে পারলে অবশ্যই লর্ডহার্ডিঞ্জে নিয়ে যাই এবং যেতে যেতে শোনাই প্রায় ইতিহাসে পরিগণিত এ গল্প।

চর অন্নদাপ্রসাদে যাওয়ার পথে তুমি যে গার্লস স্কুলটি দেখেছ, সেটিরই প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন উদিত নারায়ণ রায়। তিনি নিজেও ওই স্কুলে শিক্ষকতা করতেন। স্কুল মাস্টার ছিলেন বলে তুমি আবার মনে কর না যে তিনি নিতান্ত দরিদ্র ছিলেন। সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্মগ্রহণ করা যাকে বলে উদিত নারায়ণের ব্যাপারে তাই সত্য ছিল।

লর্ডহার্ডিঞ্জের পথেপ্রান্তরে উদিত নারায়ণের পূর্বপুরুষ সীতারাম,রাজারাম আর রামানাথ রায়কে নিয়ে তুমি এখনো পাবে অজস্র উপকথার সন্ধান। অবশ্য যমজ এই তিন ভাইয়ের জন্মের বহু আগে সান্ন্যালরা এখান থেকে প্রায় বিশ-কিলোমিটার দূরের এক গ্রামে এসে বসতি গড়েছিলেন। একসঙ্গে তিন পুত্রের জন্ম দেওয়ার ঘটনাটা যেমন তেমনি সান্ন্যালদের প্রথম বসতি নদীতে বিলীন হওয়ার ঘটনাও উপকথার অংশ। তবে ওই বসতি বিলীন হয়ে যাওয়ার পর যে সীতারাম, রাজারাম আর রামানাথ রায় এসে বসতি গড়েন চর অন্নদাপ্রসাদে তার চিহ্ন এখনো রয়ে গেছে। তাদের পৈতৃক উপাধি সান্ন্যাল হলেও ব্রিটিশ সরকার সীতারাম সান্ন্যালকে রায়বাহাদুর উপাধিতে ভূষিত করলে তাঁর দুই সহোদরও এটিকে নিজেদের উপাধি হিসেবে ভেবে নিয়ে নামের শেষে রায়বাহাদুর লেখা শুরু করে দিয়েছিলেন বলে জানা যায়।

প্রচলিত আছে মাত্র কয়েক মিনিটের ব্যবধানে তিন পুত্রের জন্ম দিয়ে ইহলোক ছেড়ে গিয়েছিলেন সীতারাম, রাজারাম আর রামানাথের মা। তারপর থেকে হাত ধরাধরি করেই বড় হয়েছেন তাঁরা তিন ভাই। তাঁদের মধ্যে বন্ধুত্ব এতটাই গভীর যে মদ্যপান এবং বাঈজীগমন কোনোটাই কেউ কাউকে ফেলে করতেন না। উদিত নারায়ণ ছিলেন এমনই এক বাঈজীর গর্ভজাত সন্তান। সাধারণত বাঈজীদের পুত্র কন্যারা উপেক্ষা আর অনাদরের মধ্যে বড় হলেও উদিত নারায়ণের ক্ষেত্রে এর ব্যত্যয় ঘটেছিল। তিন রায়বাহাদুরের কে তাঁর পিতা এটি নিশ্চিত হতে না পারার কারণে তিনজনের সমান আদরে বড় হয়েছিলেন তিনি। তবে কাগজপত্রে তাঁর পিতা হিসেবে সীতারাম রায়ের নামই ব্যবহৃত হয়ে থাকে। কলকাতার সংস্কৃত কলেজের পুরনো দলিল-দস্তাবেজে রায়কাহাদুর সীতারামের পুত্র উদিত নারায়ণের অসাধারণ কৃতিত্বের সাক্ষ্য পাওয়া সম্ভব। হিন্দু কূলীন ঘরের সন্তান হলেও তিনি দুবারের মতো কালাপানি পাড়ি দিয়েছিলেন। প্রথমবার উচ্চশিক্ষার্থে গ্রেট বিটেনে যাওয়ার জন্য আর দ্বিতীয়বার ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে কলকাতার রাজপথে বোমা হামলায় ক্ষুধিরামকে মদত দেওয়ার অপরাধে আন্দামান নির্বাসিত হওয়ার সময়ে চর অন্নদাপ্রসাদের বয়োবৃদ্ধ থেকে সবে কথা-বলতে-শেখা শিশুটি পর্যন্ত তোমাকে শোনাবে এই সব গল্প।

গল্প বলা থামিয়ে না দিলে তারা তোমাকে উদিত নারায়ণের পূর্বপুরুষদের ঘোড়া এখনো রাতের অন্ধকারে কেমন করে চরঅন্নদাপ্রসাদের ঘাস খেয়ে চলে যায় সেই গল্পও শোনাবে। তুমি শুনতে পাবে সেই ঘাসের নিচে শুয়ে আছে রায় ভ্রাতাদের প্রেয়সী কঙ্কাবতী। তারা তোমাকে শোনাবে রায়দের স্ত্রী শশীলেখা, শঙ্খমালা আর চন্দ্রবালা মিলে হত্যা করেছে কঙ্কাবতীকে। উদিত নারায়ণকে জন্ম দিতে গিয়ে ক্লান্ত-শ্রান্ত কঙ্কাবতী জল খেতে চাইলে ওরা তার মুখে জল নয়, বিষ তুলে দিয়েছিল। আসলে রায়দের তিন স্ত্রী অন্দরমহলে বাঈজীর প্রবেশাধিকারে ক্ষুব্ধ হয়েছিল। তবে তাদের ষড়যন্ত্রের কথা গোপন থাকেনি। তাই রায় ভ্রাতাদের প্রেয়সী কঙ্কাবতীর সঙ্গে শশীলেখা, শঙ্খমালা আর চন্দ্রবালাও শুয়ে আছে সেই ঘাসের নিচেই। চাঁপাফুলের গন্ধমাখা তাদের চুলের বিন্যাস আজও ঢাকা আছে সেই ঘাসে। হেমন্তে হিজলের পাতা ঝরে পড়তে শুরু করলে ঘাসের দেওয়াল ফুঁড়ে বেরিয়ে আসে কঙ্কাবতী, শশীলেখা, শঙ্খমালা আর চন্দ্রবালা, তারা হাত ধরাধরি করে হেঁটে বেড়ায় চরঅন্নদাপ্রসাদে। তারপর ভোর হলে চরের সবচেয়ে প্রাচীন পুকুরের ক্লান্তজলে কতগুলো স্বপ্নপোড়া রাজহাঁস ছেড়ে দিয়ে চলে যায় ঘাসের নিচে।

সুতপা, প্রীতিলতা দেবীর চোখ বেদনায় কেমন নীল হয়ে এসেছে তা কী তুমি দেখেছ, দেখতে পেয়েছ অপরাজিতার মতো নীল ওই বিবর্ণ চোখজোড়ায় কী গভীর বিষণ্নতা মূর্ত হয়ে আছে। প্রীতিলতা দেবীর চোখের তাপে একদিন ধানসিঁড়ি নদীটিও শুকিয়ে যাবে। তারপর তিনি নদীটিকে সাথী করে চলে যাবেন শ্মশানের দিকে আর নদী নির্জনে তাঁকে শোনাবে ভাসানের গান। ক্ষুধিরামের স্ত্রী কাঁদতে কাঁদতে ভাসান যাত্রার কথা বললে তোমার কি মনে হয়নি মনসার কালসাপ কেমন করে বারবার প্রাণসংহার করে চাঁদ সওদাগরের পুত্রদের? এখন এই মধ্যরাতে বৃষ্টিবাদলের অকালবোধনে তোমার কি চাঁদ সওদাগরের মধুকর ডিঙ্গাটির কথা মনে আসেনি? মনে পড়েনি কালীদহে কবে তারা একদিন পড়েছিল ঝড়ের কবলে? দেখনি সেদিনও অসংখ্য পাখি উড়েছিল কালো বাতাসের গায়ে? মনে হয়নি, এখনো নদী তীরে ফনীমনসার বনে কালনাগিনীদের সঙ্গে নিয়ে মনসা রয়ে গেছে।

আমাদের এই নদী অবশ্য কালীদহ নয়, তবে এই নদী তীরে এখনো সনকার মতো বিষণ্ন মুখে প্রীতিলতা দাঁড়িয়ে কাঁদেন, কাঁদেন মেঘনা তাঁর ভিটেবাড়ি নিয়ে ক্ষান্ত হয়নি বলে। মেঘনা নদী তীরে ছিল ক্ষুধিরামদের ঘরবাড়ি আর চাষের জমি। গোলাভরা ধান, গোয়ালভরা গরু আর পুকুরভরা মাছ আছে যাদের এমন এক পরিবারে উদিত নারায়ণ বিয়ে দিয়েছিলেন তাঁর কন্যা প্রীতিলতার। মেঘনা তীরে অবশ্য গোলাভরা ধান, গোয়ালভরা গরু আর পুকুরভরা মাছ বিলীন হয়ে যেতে বেশি সময় লাগে না। বহুকাল পরে সেই সবের কিছু কিছু পয়স্তি হতে শুরু হলেও মধ্যবর্তী সময়ে জলের নিচ থেকে সব জমি খাসজমি হয়ে গেছে। খাসজমির দখল পাওয়ার জন্য দরকার পেশীশক্তির। চরফ্যাশনের রিকসা গ্যারেজে ক্ষুধিরাম খুন হওয়ার পেছনে নদীগর্ভ থেকে জেগে-ওঠা জমির রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।

জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে রাজনৈতিক ক্ষমতা অর্পিত হলে ক্ষুধিরাম ভেবেছিল, নদীগর্ভ থেকে জাগা জমিগুলোর স্বত্ব দাবি করা সম্ভব, তাই সে ভীষণরকমের তৎপরতা শুরু করে দিয়েছিল। তোমাকে তো বলা হয়নি, প্রায় তিন দশক আগে নদীগর্ভে সব হারিয়ে ক্ষুধিরামদের সবাই এসে আশ্রয় নিয়েছিল চরফ্যাশনের দাসপাড়ায়। অভিরাম ও ক্ষুধিরাম প্রীতিলতার পুত্র-দুজনের মধ্যে বয়সে ছোট হলেও তুলনামূলক খারাপ ছাত্র হওয়ায় ক্ষুধিরাম সংসার চালানোর দায় নিজের কাঁধে নিয়ে বড় ভাইকে পড়শুনা চালিয়ে যেতে দিয়েছিল। অভিরাম পড়শুনা করে সত্যি সত্যিই বড় হয়েছে, এখন জয়পুরহাটে এক সরকারি হাসপাতালে আবাসিক চিকিৎসকের দায়িত্ব পালন করছে সে। জয়পুরহাট কিনা তা নিশ্চিত করে বলতে পারছি না, অভিরাম বাগেরহাট হাসপাতালে থাকতে পারে। তবে ছোট ভাইয়ের জন্য যতখানি করা উচিত তা অভিরাম করেও যাচ্ছে, আর এ কারণেই একদা ক্ষুধিরাম যে রিকসা গ্যারেজে কর্মচারী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেছিল এখন সেটি তার নিজের গ্যারেজে রূপান্তরিত হয়েছে। তারপরেও ক্ষুধিরাম যথেষ্ট নিশ্চিত হতে পারেনি, তিন কন্যাকে সুপাত্রস্থ করার উৎকণ্ঠা রয়েছে বলেই নদীগর্ভে জাগা পৈতৃক সম্পত্তি উদ্ধারে সচেষ্ট হয়েছিল সে। অভিরাম অবশ্য বরাবরই তাকে সতর্ক করেছিল, ভাই যা গেছে তা চিরতরেই গেছে, এই সব ফিরে পাওয়ার ধান্ধা ছাড়ান দে।

ক্ষুধিরামের মা প্রীতিলতা দেবী  ও স্ত্রী শান্তিবালাও এ কথা বলেছিলেন। তবু ক্ষুধিরাম নিরস্ত হয়নি,  বরং সবার কাছে গোপন রেখে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল। সে জানত পরস্পর বিবদমান রাজনৈতিক দলগুলোর কয়েকজন নেতাও নির্বাচনটি শেষ হয়ে যাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে। তবে নির্বাচনের ফল প্রকাশ হতে না হতেই আঘাতটা আসবে তা সে বুঝতে পারেনি। নির্বাচনের দিন রাতে ফলাফল অনুমান করতে পারার পরেই ওই ছেলেগুলো এসে উপস্থিত হয়েছিল ক্ষুধিরামের গ্যারেজে, মোটা অঙ্কের চাঁদা চেয়ে আসলে জমিজমার জন্য ওর ছোটাছুটি বন্ধ করার চেষ্টা করছিল। তবে চাঁদা দাবি করতে এসেছিল যারা তাদেরও কিন্তু অজানা ছিল মূল উদ্দেশ্যটি। তারা কেবল নেতার নির্দেশ পালন করতেই জানে, কোনো প্রশ্নই করে না, নেতা বললে চাঁদা চায় এবং নেতা বললেই চাঁদা না নিয়ে সরে যায়। বোধ হয়, ক্ষুধিরামও টের পায়নি যে চাঁদা দাবিদারদের পেছনে আর-কারোর অস্তিত্ব রয়েছে। তাই সে গ্যারেজ বন্ধ করে জমি উদ্ধারের চেষ্টায় আগের চেয়ে সক্রিয় হয়ে পড়েছিল। পুরো এক সপ্তাহ দোকান বন্ধ থাকলে নেপথ্যের লোকটি তার দল সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার আগেই ক্ষুধিরাম জেগে-ওঠা চরের দখল নিয়ে নেয় কিনা এ চিন্তায় আতঙ্ক বোধ করে এবং নিজেই উদ্যোগী হয়,  ক্ষুধিরামের বাড়িতে গিয়ে বলে ভয় নেই আমরা রয়েছি না তুমি কাল সকালেই গ্যারেজ খুলে বস।

সুতপা, তুমি ভাবছ, এত কথা অনুমানের ওপরেই মেরে দিচ্ছি, মোটেই তা নয়। তোমার মনে আছে, প্রীতিলতা দেবী আমাদের বলেছিলেন, বাজার কমিটির সভাপতি অভয় দেওয়াতেই ক্ষুধিরাম গ্যারেজ খুলেছিল। বাজার কমিটির ওই লোকটিই হচ্ছে নবনির্বাচিত সাংসদের দক্ষিণহস্ত। আমরা এই চরে পৌঁছবার আগেই তিনি নদীপয়স্তিতে জেগে-ওঠা ওই জমিগুলো নিজের নামে নিয়ে নিয়েছেন। চাঁদ সওদাগর চেংমুড়ি কানিকে পুজো দেওয়ার সময় কান্না করেছিলেন কিনা তা কি লিখে গেছেন কোনো কবি। নিশ্চয়ই কেঁদেছিলেন বিশ্বাস হারালে মানুষের কান্না ছাড়া কী করার থাকে আর?

এ দেশে থাকা যাবে না আর-প্রীতিলতা দেবীর মতো একদা শিখার বাবার কণ্ঠেও এমনই হাহাকার ধ্বনিত হয়েছিল। সেই কথা মনে হয়েছিল বলেই সেদিন সন্ধ্যায় চোখের সামনে নীল মৃত্যু অবলোকন করেছিল মানস, পরে বলেছে তখন ওর মনে হয়েছিল, কালীদহে কখন যে ঝড় কমলের নাল ভাঙে-ছিঁড়ে আকাশের নীলাভ নরম বুক ছেড়ে নক্ষত্রেরা হিমের ভেতরে ডুবে মরে।সন্ধ্যায় কী খুব হিম পড়ছিল আজ? অঘ্রাণের সন্ধ্যায় হিম পড়ারই কথা। নইলে হিমেভেজা মানুষের মতো মানস হঠাৎ কেঁপে কেঁপে উঠছিল কেন?

তোমার মনে আছে সুতপা, রামশীল যেন আরেক শরণার্থী শিরি-এই খবর পড়র সময়ও মানস কেঁপে উঠেছিল।। আসলে ও একা নয়,  আমরা দুজনই ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। বোধ হয় ওরও মনে পড়েছিল ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বরের কথা। ভারতে বাবরি মসজিদ ভাঙার প্রতিবাদে চরঅন্নদাপ্রাসাদে সীতারাম, রাজারাম আর রামানাথ রায়ের স্মৃতিবিজড়িত মন্দিরের অস্তিত্ব বিপণ্ন হয়েছিল সেদিন। এখন ওই প্রাচীন মন্দিরের ছায়া হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ভাঙা একটি মঠ।

জান ব্রিটিশ সরকারের দেওয়া রায়বাহাদুর উপাধিতে ধন্য এই রায় ভ্রাতৃত্রয় নাকি এই মন্দিরে প্রথম মনসা দেবীর পুজো করেছিলেন। প্রচলিত আছে চাঁদ সওদাগরের উত্তরপুরুষ এ তিন ভাই নাকি নদীভাঙনের শিকার হয়ে এসে বসত গড়েছিলেন চরঅন্নদাপ্রসাদে। মেঘনার উত্তাল স্রোতের কাছে পারিবারিক ঐতিহ্য ও সমৃদ্ধির সবকিছু বিসর্জন দিয়ে আসতে বাধ্য হলেও তাঁরা এই মন্দিরটিকে সমূলে উৎপাটন করে এনে স্থাপন করেছিলেন এখানে। এই অসম্ভব কাজের লোকপূরাণ অন্নদাপ্রসাদের মন্দিরটিকে আরো আকর্ষণীয় করেছে।

শ্যাওলায় সবুজ হয়ে আসা ওই মঠের কাছে তোমাকে নিয়ে যায়নি মানস। তুমি যখন সাত ভাই চম্পা পাখির পেছনে ছুটছিলে সে বলছিল, আশিক, তুই জানিস না, সেখানে আর মানুষ যায় না।  এখন ওই মন্দিরের কাছে বেতবনে দেখা যায় বাঘের ডোরা দাগ আর জারুলের ডালে বসে রৌদ্র পোহায় বাঘেরা।

পাখির পেছনে ছোটা বন্ধ করে তুমি এসে দাঁড়ালে আমাদের সামনে। তুমি না এলে মানস হয়তো এমন অসংলগ্ন আরো কথা শোনাত। তুমি এলে অশ্বত্থের শুকনো পাতা হাতে, ম্লান সাদা ধুলোর ভেতর থেকে তোমার খুঁজে বের করে আনা পাতাগুলোতে যেন বেদনার গন্ধ লেগেছিল। বিবর্ণ হলুদ পাতাগুলোর সোঁদা-গন্ধে দম বন্ধ হয়ে আসছিল আমাদের। তোমার পেছনে রক্তবসনা, সর্পবিভূষিতা, হংসবাহনা. পদ্মোদ্ভবা মনসাকেই দেখেছিলাম আমরা। দেখছিলাম তাঁর মাথায় সপ্তনাগের ছত্র কেমন করে ঢেকে দিয়েছে বাংলার আকাশ। সে সব কিছুই দেখতে পাওনি তুমি। চারদিকে নেমে আসা সন্ধ্যার নীরবতার মধ্যে তুমি দেখেছিলে খড়মুখে নিয়ে এক শালিক যাচ্ছে উড়ে। গরুর গাড়িটিকে মেঠোপথ ধরে এগিয়ে যেতে দেখতে দেখতে শুনছিলে ঘুঘু ডাকছে হিজলের বনে।

প্রীতিলতা দেবীর বাড়ি থেকে ফেরার পথে যে বিষণ্নতা তোমাকে ঘিরে ধরেছিল তার আগ্রাসন থেকে মুক্ত হতে পারায় সন্ধ্যায় নদীজলে নামে যে আলোক তারই প্রতিসরণ দেখা গিয়েছিল। সেই আলোকের ঝর্নাধারায় স্নাত হয়ে মানস জিজ্ঞেস করেছিল কোন গল্প শুনতে চাও তুমি? তুমি শুনতে চাইলে ওর শৈশবের গল্প আর তোমাকে গল্প শোনাবার ছলে মানস দূর আকাশে লাল-নীল শিখার সন্ধানে চলে গেল। শিখার কথা সহজে কাউকে বলে না মানস। সুতপা, শিখার কথা ভাবতে ভাবতেই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। স্বপ্ন দেখে ঘুম ভেঙে গেল ভোর রাতে। দেখলাম মানস আর তুমি বিশাল এক রেলব্রিজের মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছ, দুদিক থেকে দুটি ট্রেন আসছে আর তোমরা দাঁড়িয়ে আছ নির্বিকারভাবে। স্বপ্ন থেকে জাগার পর বহুবার ভেবেছি ব্রিজের ওপর দাঁড়ানো ছেলেমেয়ে দুটির বয়স বড়জোর বার-তের বছর, অথচ ওই বয়সে তোমাদের কাউকেই চিনতাম না আমি। আর শিখাকে তো কোনো কালেই দেখিনি। যদিও শিখাকে সঙ্গে করে একটি রেলব্রিজ পারাপারের গল্প বারবার শুনেছি মানসের কাছে, তবু আজ সারাদিন স্বপ্নে দেখা মেয়েটির সঙ্গে বারবার তোমাকে মিলিয়ে ফেলেছি, আর এ মিলিয়ে ফেলার কারণে নিজের মনেই প্রশ্ন জেগেছে তোমাকে কেন আগে শিখার কথা বলেনি মানস? বিশাল ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের কোনো এক গ্রামে আটপৌরে গেরস্থালি করছে যে শিখা, সে তো এখন এক শঙ্খবালিকার ধূসর রূপ ছাড়া আর কিছুই মনে করাতে পারে না। মানস যখন তোমাকে শিখার কথা বলছিল তোমারও কি মনে হয়নি এই আম জামের ছায়াতে কবে যেন তারে দেখেছ-কবে যেন সে তোমার হাতেও রেখেছিল হাত। তোমার কি আরো মনে হয়নি সন্ধ্যায় গৃহে ফেরার কাতর আবেগে উড়ে আসে যে পাখি, তেমনি আবেগ নিয়ে মানস বারবার শিখার কাছে ফিরে যেতে চায়।

রাতের অন্ধকার কাটতে না কাটতেই গিয়ে মানসদের বাড়িতে উপস্থিত হয়েছিলাম, স্বপ্ন থেকে পাওয়া বিপণ্নবোধ তাড়াতে। তখনো তোমাদের কারোর ঘুম ভাঙেনি। মাসীমা নিত্যদিনের মতো পূজার ফুল তুলছিলেন বাগান থেকে। ফুল তুলতে তুলতেই তিনি জানতে চাইলেন, আশিক সুতপার বাবা কি পুজোটুজো করেন? হঠাৎ এমন প্রশ্নে বিব্রত হয়ে পড়ি, তাঁকে এড়িয়ে যাওয়ার জন্য বলি, আপনি তপারে জিগাইলে পারেন?

মাসীমা স্বগতোক্তির মতোই বললেন, মানসটা আর মানুষ হবে না। একটু থেমে আবার বললেন, আশিক তুই বল তো এমন একটা বিপদের সময় এত বিখ্যাত এক হিন্দু মেয়েকে নিয়ে বেড়াতে এসেছে কেন?

তোমাকে হিন্দু মেয়ে হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ায় ভেতরে ভেতরে বোধ হয় একটু আশ্বস্ত বোধ করছিলাম, নইলে প্রতিবাদ করে বলতাম, জেলার পুলিশ সুপারের বাড়িতে হামলা করার সাহস কার আছে? হয়তো বলতাম, হামলা হলেই সুতপার কি? ওর মা তো মুসলমান। ও নিজেও কোরান শরিফ পড়তে জানে। অবশ্য রামায়ণ-মহাভারত যে পড়েনি তা নয়। তারপর হয়তো বলতাম, আসলে ওরা সবাই মানুষ হওয়ার সাধনা করছে। আমি যখন এই সব ভাবছিলাম ঠিক তখনই তুমি বাগানে এলে। কালো শাড়ির সঙ্গে কালো টিপে কালো মেয়েকে কত সুন্দর দেখায় এমন একটা ভাবালুতায় তলিয়ে যেতে যেতে ভাবছিলাম মানসের বাবার জায়গায় যদি আমার বাবা পুলিশ সুপার হতেন আর মানসের বাবা হতেন আমার বাবার মতো জেলাপ্রশাসক তাহলেও সমুদ্রপাড়ের এ জেলাটিতে সংখ্যালঘু হিন্দুদের একটু কম নির্যাতনের শিকার হতে হতো। পঙ্গু শেফালিকে ধর্ষণের শিকার হতে হতো না। মালতীর মাকে বলা লাগত না বাবারা তোমরা একজন একজন করে আস, আমার মেয়েটা ছোট। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর জন্ম হয়েছিল বলে যার নাম রাখা হয়েছিল জয়ন্তী, সেই জয়ন্তী ধানক্ষেতের মাঝখানে সন্তানের জন্ম দিতে বাধ্য হতো না এবং জয়ন্তীর সন্তানের নাম হতো না সংগ্রাম।

মানসের বাবার তো ধর্মকর্মে একটুও মতি নেই। তবু জন্মসূত্রে নিজে হিন্দু হওয়ায় সংকোচের কারণে পুলিশ নিয়ে যেমনটা রুখে দাঁড়ানো উচিত ছিল, তেমনটা দাঁড়াতে পারেননি তিনি। এই সব আলটপকা ভাবনার মাঝেই শুনতে পেলাম, মাসীমা জানতে চাইছেন, মানসকে বিয়ে করার আগে তুমি প্রায়শ্চিত্ত করবে কিনা? খুব চেষ্টা করছিলাম তোমাকে ইশারা করে বলি যে আপাতত হ্যাঁ বলে দাও। তুমি এতই উত্তেজিত হয়ে পড়েছিলে যে চারপাশের কিছু দেখতে পাচ্ছিলে না। তবু তুমি মাসীমাকে আশ্বস্ত করার জন্য জানতে চেয়েছিলে প্রায়শ্চিত্ত কিভাবে করতে হয়? প্রায়শ্চিত্ত করাটা জরুরি কিনা? মাসীমা বললেন, তুমি জরুরি না ভাবলেও সমাজ জরুরি ভাববে। তোমার কালো মুখে সকালের রোদ পড়ে যে লাবণ্য খেলা করছিল তা মুহূর্তেই হারিয়ে গেল। নিস্প্রাণ কণ্ঠে বললে, মা, এ সিদ্ধান্তটা যে আমার মা-বাবাকে না জানিয়ে নিতে পারব না। মাসীমা তোমার কথা শুনে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, তুমি তো সব কিছুই তোমার মা-বাবাকে জানিয়ে করছ, আমাদের ছেলে কিন্তু তার প্রয়োজন আছে বলে মনেই করে না।

মাসীমা চলে গেলে তুমি যখন জানতে চাইলে, আশিক আমি কি খুব অন্যায় করছি? আমি কোনো উত্তর দিতে পারিনি। উত্তর অবশ্য তুমিও চাওনি, প্রশ্নটা ছিল তোমার আত্মজিজ্ঞাসা। তাই আমরা কোনো কথা না বলে বাগানেই বসে থাকলাম অনেকক্ষণ। এরই মধ্যে মানসের ছোটবোন মিথিলা এল তার বান্ধবীদের নিয়ে। টেলিভিশনে অভিনয় করার কারণে তুমি তো বেশ তারকা হয়ে গেছ। ওরা তোমাকে হাতের কাছে পেয়ে সহজে যে ছাড়বে না তা তো বুঝতেই পারছিলাম। তাই আমি মানসের রুমে গিয়ে ওকে ঘুম থেকে জাগালাম। একটু আগে ওর মা তোমাকে যা বলে গেলেন তা ওকে জানাব কিনা যখন ভাবছিলাম, তখনই মাসীমা এলেন এবং আমাদের দিকে না তাকিয়ে জানতে চাইলেন, সুতপা হিন্দু না মুসলমান? মানস বিরক্ত হয় এবং বিরক্তি গোপন না করেই বলে, তা দিয়ে তোমার কি দরকার? মাসীমা যেন গুমোট পরিবেশটা হালকা করার জন্য বললেন, বাহরে যে মেয়ে দুদিন পরে আমার ছেলের বউ হবে সে হিন্দু না মুসলমান তা আমি জানতে চাইব না। মানস অধৈর্য্য হয়ে বলে, তার আগে তোমার ছেলের ধর্মটা কি তা জানাটা বেশি দরকার না মা?

মা-ছেলের বাকবিতণ্ডার মাঝখানে তোমার ডাক শুনে বেরিয়ে আসতে হলো। তুমি বাইরে কোথাও গিয়ে ঢাকায় ফোন করা যায় কিনা জানতে চাইলে আশ্চর্য হয়েছি, তবু কোনো প্রশ্ন না করে তোমার সঙ্গী হয়েছি। যেতে যেতে নিজে থেকেই তুমি জানালে যে, মায়ের কাছ থেকে প্রায়শ্চিত্ত করতে রাজি হবে কিনা তা জেনে নেবে। অথচ ফোন করার সময় তুমি তা জানতে চাইলে না। বরং তোমার মাকে জানালে মানসের মা-বাবা-ছোটবোন সবাই তোমাকে ভীষণ পছন্দ করেছে। তোমারও ওদেরকে দারুণ লাগছে। যেন মেয়ে মাকে নয়, মা মেয়েকে মজার গল্প শোনাচ্ছে, তেমন করেই তুমি বললে সাত ভাই চম্পা পাখির গল্প।

ফোন ছেড়ে তুমি যে অধমুখ হলে আর মুখ তুলে তাকালে না। বুঝতে পারছিলাম মিথ্যে কথা বলে গ্লানি হচ্ছে তোমার। তাই তুমি আমার দিকে তাকাতেই পারছ না। নতমুখে তুমি হাঁটছিলে। তোমার পায়ের তলে যেন পৃথিবীর ধুলো-মাটি আর কাঁকর নয় পিষ্ট হচ্ছিল তোমার হৃদয়, যেন তুমি হারিয়ে ফেলেছ পথচলার অর্থ। তবু তুমি একাই ফিরতে চেয়ে এগিয়ে গেলে পুলিশ সুপারের বাসার দিকে।

দুপুরে তোমাকে খুঁজতে মানস আমাদের বাসায় এলে আশ্চর্য হয়েছি। তুমি একাকী ঢাকায় ফিরে গিয়েছ এটা ভাবলাম আমরা। অথচ মানস তোমাকে খোঁজার জন্য চরঅন্নদাপ্রসাদে যেতে চেয়েছিল। আমরা তাকে যেতে না দেওয়ায় সে বারবার বলছিল, ওই মন্দিরের কাছে বেতবনে দেখা যায় বাঘের ডোরা দাগ আর জারুলের ডালে চড়ে রৌদ্র পোহায় বাঘেরা। রক্তজবার মতো বাঘের উষ্ণ চোখে ডুবে মরে পৃথিবীর সব রাঙা রাজকন্যারা।

আর দেখ কী বিস্ময়কর সত্যি এটি, তুমি সত্যি চরঅন্নদাপ্রসাদেই গেলে এবং ওই মন্দিরের কাছে বেতবনে রাতভর সইলে ধর্ষণের নির্মম যাতনা। সুতপা কেন এমন করলে? কেউ না জানুক, কেউ না বুঝুক, মানস তো নিরন্তর তোমাকে বুঝতে চেয়েছে? না পেরে এখন যাবতীয় বোঝাবুঝির উর্ধ্বে চলে গেছে। নইলে হাসপাতালের শয্যায় শায়িত তোমাকে দুঃস্বপ্নে দেখা ওই বাঘেদের কথা বলত না। কতটা মানসিক বিপর্যয়ের পর সে জানতে চাইতে পারে তোমার শীতল স্পর্শে ওদের কামনা জুড়িয়েছে কিনা? মানসিক রোগীদের ওয়ার্ডে এখন সে নিজেই রক্তজবার মতো লাল চোখ মেলে তোমার পথ চেয়ে আছে।

একবার অন্তত যেও তুমি। ওকে, আমাকে, আমাদেরকে ক্ষমা করে দিও সুতপা।

রাজীব নূরঃ সহকারী সম্পাদক,দৈনিক ইত্তেফাক।।

ফিচার সম্পাদক