বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস: বাংলাদেশে সাংবাদিক হত্যা-নির্যাতন এবং দায়মুক্তি

বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস: বাংলাদেশে সাংবাদিক হত্যা-নির্যাতন এবং দায়মুক্তি
জাহাঙ্গীর আলম আকাশ ।। গণতন্ত্র আর গণমাধ্যম একটি আরেকটির পরিপূরক। যেখানে গণমাধ্যম যতবেশি শক্তিশালী সেখানে গণতন্ত্রও ততবেশি শক্তিশালী। পরমত সহিষ্ণুতাই গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় কথা। আলোচনা, মতপ্রকাশ, ঐক্য, সংহতি হলো গণতন্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ সিঁড়ি। অন্যের মতের প্রতি শ্রদ্ধাশীলতা গণতন্ত্রের একটি পূর্ব শর্ত। মৌলিক অধিকার হলো মতপ্রকাশের স্বাধীনতা। যে সমাজ বা রাষ্ট্রে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নেই সেই সমাজ কিংবা রাষ্ট্রকে গণতান্ত্রিক বলা যায় না। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ছাড়া গণতন্ত্র কল্পনাও করা যায় না। পৃথিবীর সব সভ্য সমাজ বা রাষ্ট্রে গণমাধ্যম স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশ করতে পারে।
গণতন্ত্রিক সমাজে নগ্নভাবে, কুরুচিপূর্ণ ভাষায় পরস্পরের বিরুদ্ধে কোন বিষোদগার করা হয় না। সভ্য, ভব্য, ভদ্র ও শালীনভাবে কঠিন থেকে কঠিনতর সমালোচনাও করা হয়। কিন্তু সংস্কৃতি, সমাজ, স্বকীয়তা, জাতীয়তাবোধ, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, দেশ, গণতন্ত্র রক্ষার প্রশ্নে রাষ্ট্র পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত রাজনৈতিক দল ও বিরোধী দল উভয়ের মধ্যে একটা সংহতি, ঐক্য ও বোঝাপড়া সবসময়ই লক্ষ্যণীয়। এধরণের সংস্কৃতি কেবল গণতান্ত্রিক সমাজেই দেখা যায়।
গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি চর্চার অভাবেই দেশে গণমাধ্যম সত্যিকারের জনমাধ্যম হতে পারছে না। দলীয়করণ, পরিবারতন্ত্র, সর্বগ্রাসী দুর্নীতি গণতন্ত্র আর গণমাধ্যম কোনটাকেই শক্তিশালী হতে দেয়নি বাংলাদেশে। কী সংসদ, কী বিচারালয়, কী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কী সুশিল, কী বুদ্ধিজীবি, কী সাংবাদিক, কী আইনজীবী সবখানেই দলীয়করণ আর ব্যবসায়িক মানসিকতা! দেশের রাজনীতি আর কোন জনসেবামূলক পেশা নয় বরং লাভজনক একটি ব্যবসায় (ব্যতিক্রম, পরিবর্তনের সহায়ক শক্তির ভূমিকায় পৌঁছাতে পারছে না) পরিণত হয়েছে!
তোষামদ, সুবিধাবাদিতা আর মিথ্যাচার সুবিধাভোগী সমাজকে স্বৈরতান্ত্রিক মানসিকতার শিখরে নিয়ে যাচ্ছে। দেশের সিংহভাগ খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ নি:স্ব হয়ে যাচ্ছেন দিনকে দিন। আঙুল ফুলে কলাগাছ বনে যাচ্ছেন কালোটাকার মালিক, অসৎ ব্যবসায়ী আর মুনাফালোভী ব্যবসায়ি রাজনীতিকরা। সৎ ও জনদরদী রাজনীতিক বাধ্য হয়ে রাজনীতি থেকে সরে যাচ্ছেন কিংবা ঝড়ে পড়ছেন। নির্বাচিত গণতন্ত্রের নামে স্বৈরাচারি, ফ্যাসিষ্টদের কবলে পড়ে জনগণ অসহায়। মিডিয়া জনগণের মুখপাত্র না হয়ে সুবিধাবাদি-তল্পিবাহক দুর্বৃত্ত রাজনৈতিক গোষ্ঠীর ক্ষমতারোহন কিংবা ক্ষমতাকে পাকাপোক্তকরণের হাতিয়ারে পরিণত হচ্ছে।
শোষণ, নির্যাতন, বঞ্চনা, হত্যা, খুন, গুম, অপহরণ, বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ড কেবলমাত্র একটা আইনের শাসনহীন সমাজ ও রাষ্ট্রেই চলতে পারে। গণতন্ত্রহীন সমাজে মিডিয়াও তাই আইনের শাসনের পক্ষে কিংবা বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ডের বিরুদ্ধে জোরালো ভূমিকা নিতে পারে না। কোন সংবাদমাধ্যম বা সাংবাদিক সমাজে ন্যায়বিচার, আইনের শাসন ও মানবাধিকার রক্ষার আন্দোলনকে এগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করলেই হয় খুন, নাহয় নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। এর বাইরেও আছে দুর্নীতিবাজ শাসনযন্ত্র, ধর্মান্ধ, মৌলবাদি সশস্ত্র জঙ্গিগোষ্ঠীসহ নানান অপশক্তি। এসব উপসর্গ গণতন্ত্রের বিপক্ষে কাজ করে চলেছে অবিরামভাবে। প্রকৃতঅর্থে গণতন্ত্রহীন সমাজে গণমাধ্যমের স্বাধীনতাহরণ একটা স্বাভাবিক মামুলি ব্যাপার।
বিশ্বজুড়ে গণমাধ্যম ও সাংবাদিক, ফটো সাংবাদিকরা চরম ঝুঁকির মধ্য দিয়ে পেশাগত দায়িত্ব পালন করে চলেছেন। বিশেষ করে আরব, আফ্রিকা ও এশিয়ায় সাংবাদিকতার ঝুঁকি বা বিপদটা সবচেয়ে ভয়াবহ। রিপোটার্স উইথআউট বর্ডার এর হিসাব মতে চলতি বছর অর্থাৎ ২০১২ সালে এ পর্যন্ত ২১ জন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। এরমধ্যে দুইজন মার্ডার হয়েছেন বাংলাদেশে।
প্রতিবছর ৩ মে পৃথিবীজুড়ে পালিত হয় বিশ্বমুক্ত গণমাধ্যম দিবস। ১৯৯১ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের প্রস্তাব অনুসারে ইউনেসকোর সাধারণ পরিষদের ২৬ তম অধিবেশনে গৃহীত সুপারিশের আলোকে দিবসটি পালিত হচ্ছে ১৯৯৩ সাল থেকে। সারাবিশ্বের ন্যায় বাংলাদেশেও দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। এবছরও দিনটি পালন করবে বিভিন্ন সংগঠন ও সংস্থা।
২০০৭ সালের ২ মে রাজশাহীতে এলিটফোর্স বাড়িতে ঢুকে স্ত্রী ও শিশুকন্যার সামনে নিজ বিছানায় গুলি করে আহত করে একসময়ের সন্ত্রাসী মোহাম্মদ বেনজিরকে। তখন আমি বাংলাদেশের প্রথম ২৪ ঘন্টার  বেসরকারি নিউজ টিভি চ্যানেল সিএসবিনিউজ এর রাজশাহী ব্যুরোপ্রধান হিসেবে কর্মরত। একইসঙ্গে কাজ করি দৈনিক সংবাদের স্টাফ রিপোর্টার ও রেডিও জার্মান ডয়েচেভেলের ফ্রিল্যান্স সংবাদদাতা হিসেবে।
বেনজিরকে গুলি করার ঘটনাটির রিপোর্ট সম্প্রচারিত হয় সিএসবিতে। এরই প্রেক্ষিতে জামায়াতসমর্থক এক আর্মি অফিসার এলিটফোর্স রাজশাহী-৫ এর তৎকালিন সিপিসি মেজর রাশীদ (বর্তমানে লে.কর্ণেল) মোবাইলে ফোন করে আমাকে হত্যার হুমকি দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে রাজশাহীতে ওয়ার্কাস পার্টির নেতা মজনু শেখকে এলিটফোর্স পিটিয়ে হত্যা করে। এছাড়া কারারক্ষা সাহেবুলকে অমানুষিকভাবে নির্যাতন চালিয়ে হাত-পা ভেঙ্গে দেয়। এসব ঘটনার প্রতিবেদন করায় এবং রাজশাহীর মেয়র লিটনদের সন্ত্রাস ও দুর্নীতির রিপোর্ট করায় পরবর্তীতে ২০০৭ সালেরই অক্টোবর মাসে আমাকে গ্রেফতার করে চোখ বেধে উপরে ঝুলিয়ে ১৫ ঘন্টা ধরে বর্বর নির্যাতন চালায়। ২৮ দিনের অন্ধকার কারাজীবন কাটাতে হয়। আজও আমি সেই ঘটনার বিচার পাইনি। আজ আমি মাতৃভূমিহারা।
আজকের প্রসঙ্গ এটা নয়। বিশ্বমুক্ত গণমাধ্যম দিবসের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের সাংবাদিক বন্ধুরা কেমন আছেন? সেখানে সাংবাদিক হত্যা নির্যাতন ওবং গণমাধ্যমের ওপর দলন-পীড়নের একটা চালচিত্র তুলে ধরার চেষ্টা করবো আজকের লেখায়। আজ ৩ মে। রাজশাহীর একটি বেসরকারি সংস্থা সিসিডি বিশ্বমুক্ত গণমাধ্যম দিবস উপলক্ষে আলোচনার আয়োজন করেছে। অথচ এই সংগঠনটি সেদিন আমার পাশে দাঁড়ায়নি। আমি নিশ্চিত যে আলোচনায় বক্তারা মুক্তগণমাধ্যম এবং সাংবাদিকদের নিরাপত্তার বিষয়ে বহু জ্ঞানগর্ভ কথা বলা হবে। কিন্তু সত্যিকারের বিপদে বিদেশি ফান্ডের টাকায় পরিচালিত এসব সংগঠনকে পাশে পাওয়া যায় না। এটাই হলো বাস্তবতা!
এবার দেশে সাংবাদিক হত্যা-নির্যাতন এবং গণমাধ্যম দলন-পীড়নের ওপর একটা ছবি আঁকতে চাই। আগেকার হাসিনার সরকারের আমলে খুন হয়েছেন সাংবাদিক শামছুর রহমান কেবল, সাইফুল আলম মুকুলসহ অনেকে। খালেদা-নিজামীর আমলে মার্ডার হন সাংবাদিক মানিক সাহা, হুমায়ুন কবির বালুসহ আরও অনেকে। মোটা দাগে খালেদা-হাসিনার আমলে সাংবাদিক হত্যার উদাহরণ তুলে ধরলাম একারণে যে হাসিনা খালেদা সাংবাদিক হত্যা-নির্যাতনের দায় পরস্পরের বিরুদ্ধে চাপাতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। ব্যাপারটা এমন নয় যে শুধু হাসিনার আমলেই সাংবাদিক হত্যা-নির্যাতন হয়েছে, খালেদার আমলে হয়নি।
বিগত হাসিনার সরকারের আমলে সংবাদপত্র অফিসে গুলি করে হত্যা করা হয়েয়েছ সাংবাদিককে। খালেদা-নিজামির আমলে সাংবাদিককে রাস্তায় বোমা মেরে হত্যা করা হয়। আর হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান মহাজোটের আমলে একজোড়া সাংবাদিককে বাসায় গিয়ে হত্যা করা হলো। কাজেই দেশে সাংবাদিক হত্যা-নির্যাতন কোন বিশেষ আমলে নয়, সব সরকারের আমলেই চলেছে, সমানতালে।
এখন জানা যাক স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশে সাংবাদিক হত্যা-নির্যাতন ও গণমাধ্যমের ওপর সহিংসতার একটা চিত্র। ১৯৭৪ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর আমলে চারটি পত্রিকা ব্যতিত সকল সংবাদপত্র বন্ধ ঘোষণা করা হয়। গণকণ্ঠ সম্পাদক আল মাহমুদ এবং সাপ্তাহিক হককথা সম্পাদক মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানিকে গ্রেফতার করা হয় সেই আমলে। এরশাদের আমলে শফিক রেহমান দেশ ছাড়েন। ১৯৮৪ সালে স্বৈরাচারী এরশাদ আমলে দফায় দফায় কারাবরণ ও র্নিযাতনে মারা যান দৈনিক রানারের প্রতিষ্ঠাতা গোলাম মাজেদ।
১৯৯১ সালে অনুষ্ঠিত হয় জাতীয় নির্বাচন। রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্টিত হয় জেনারেল জিয়াউর রহমানের গড়া দল বিএনপি। ক্ষমতায় এসেই বিএনপি সাংবাদিক সংগঠনগুলোকে ভেঙ্গে চুরমার করে দেয়। সরকারি মালিকানাধীন সংবাদপত্র ও সংবাদ সংস্থা, গণমাধ্যম থেকে বিএনপির কাছে ‘অপছন্দনীয়’ সাংবাদিকরা গণছাঁটাইয়ের শিকার হন। কোন রকমের টার্মিনেশন বেনিফিট ছাড়াই বিএনপি সরকার ছাঁটাই করে দৈনিক বাংলার তৎকালীন সম্পাদক তোয়াব খান, তৎকালীন সাপ্তাহিক বিচিত্রার নির্বাহী সম্পাদক শাহরিয়ার কবিরসহ ১৪ জন সিনিয়র সাংবাদিককে। ২০০২ সালের নভেম্বর মাসের কথা। বিবিসি চ্যানেল ফোরের জন্য একটি প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়। এজন্য বাংলাদেশে এসেছিলেন বিদেশী সাংবাদিক জাইবা মালিক ও ব্র“নো সরেনটিনো। এই ’অপরাধে’ বিএনপি সরকার সাংবাদিকদের ওপর নির্যাতন করে। ব্রিটিশ ও ইতালীয় এই দুই সাংবাদিকসহ বাংলাদেশের শাহরিয়ার কবির, সালিম সামাদ ও পিসিলা রাজকে গ্রেফতার করা হয়। ময়মনসিংহের সিনেমা হলে বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। এর সাথে জড়িত করে গ্রেফতার করা হয় বাসস’র সাংবাদিক এনামুল হক চৌধুরী ও বিশিষ্ট কলামিষ্ট ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মুনতাসির মামুনকে। আটকাবস্থায় বিএনপি সরকার সাংবাদিকদের ওপর বর্বর নির্যাতন চালিয়েছিল বলে অভিযোগ।
২০০৬ সালের ১৬ এপ্রিল মাস। চট্রগ্রামে বাংলাদেশ ও অষ্ট্রেলিয়ার মধ্যে ক্রিকেট ম্যাচ চলছিল। খেলার মাঠের তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে পুলিশ চালায় নির্মমতা। পুলিশ বাহিনী সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালায়। পুলিশের তৎকালীন ডিসি আলী আকবরের নেতৃত্বে অন্ত:ত ৩০ জন সাংবাদিক আহত হন। প্রায় অর্ধশত বছর ধরে সাংবাদিকতা পেশায় নিযুক্ত প্রবীণ আলহাজ্ব জহিরুল হক। তাকেও সেদিন পুলিশ যেভাবে আক্রমণ করেছিল তা কোন সভ্য সমাজে ভাবাই যায় না। পুলিশ রাইফেলের বাঁট দিয়ে সাংবাদিকদের পিটিয়েছে। সাংবাদিক সমাজের আন্দোলন তুঙ্গে এই ঘটনার প্রতিবাদে। তখন তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ঘটনা তদন্তে বিচার বিভাগীয় কমিটি গঠন করেছিল। সেই রিপোর্ট আজও আলোর মুখ দেখেনি। হামলাকারী পুলিশ কর্মকর্তাসহ অন্যান্যরা কেউই শাস্তি পাননি আজও।
২০০৬ সালের ২৯ মে। কুষ্টিয়ায় তৎকালীন সরকার দলীয় সেখানকার সংসদ সদস্য সাংবাদিকদের ওপর লেলিয়ে দেয় সন্ত্রাসী। সেই ক্যাডার বাহিনী হামলা করে সাংবাদিকদের সমাবেশে। নির্যাতনবিরোধী ওই সমাবেশে হামলায় গুরুতর আহত হন বিশিষ্ট সাংবাদিক বাংলাদেশ অবজারভার সম্পাদক জনাব ইকবাল সোবহান চৌধুরী। তিনি বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি। আমাদের স্মৃতিতে আজও সেই রক্তাক্ত ইকবাল সোবহান চৌধুরীর ছবি ভেসে ওঠে। সন্ত্রাসী ক্যাডারদের কোন শাস্তি হয়েছে বলে আমাদের জানা নেই।
ফরিদপুরে প্রবীর শিকদারের ওপর স্বাধীনতাবিরোধীদের হামলার ঘটনারও কোন বিচার হয়নি। ফেনীতে সাংবাদিক টিপু সুলতানের ওরপর আক্রমণের ঘটনায়তো সারাবিশ্বেই হৈ-চৈ হয়েছিল। সাপ্তাহিক বিচিন্তার সাড়া জাগানো সম্পাদক মিনার মাহমুদ সম্প্রতি আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছেন। এই মেধাবি সাংবাদিককে কেউ চাকরি দেয়নি।
মঈন উ আহমদ ও ফখরুদ্দীনের আমলে জনকণ্ঠ সম্পাদক আতিকউল্যাহ খান মাসুদ, সিলেটে আহমেদ নূর, ঢাকায় তাসনীম খলিল, রাজশাহীতে জাহাঙ্গীর আলম আকাশ (এই লেখক), প্রথাবিরোধী বিশিষ্ট নাট্যকার-অভিনেতা, কলামিষ্ট মলয় ভৌমিক, কার্টুনিষ্ট আরিফুর রহমান নির্যাতনের শিকার হন। আজ পর্যন্ত নির্যাতনকারি কারও শাস্তি হয়নি। বর্তমান সরকারের আমলে খুলনায় এএফএম রাজ্জাক, ঢাকায় এফএম মাসুমের ওপর নির্যাতন করা হয়। রাজধানীতে ঢাকাতেই দেশটিভির সাংবাদিক গিয়াস আহমদ এর ওপর পুলিশ নির্যাতন করে। দোষিদের শাস্তি হয়নি।
রাজনৈতিক মদদপুষ্ট সন্ত্রাসীদের হামলায় নিহত হয়েছেন বিবিসি, নিউ এইজ ও দৈনিক সংবাদের খুলনা প্রতিনিধি বিশিষ্ট সাংবাদিক দেশপ্রেমিক মানিক সাহা (বোমা হামলায়, ১৫ জানুয়ারি ২০০৪), একই শহরে দৈনিক জন্মভূমির সম্পাদক হুমায়ুন কবির বালু (বোমা হামলায় ২৭ জুন ২০০৫), খুলনাতেই দৈনিক সংগ্রামের শেখ বেলালউদ্দিন (বোমা হামলায় ১১ ফেব্রুয়ারি ২০০৫), দৈনিক অনির্বাণের নহর আলী (২০০১ সালের ২১ এপ্রিল), দৈনিক পূর্বাঞ্চলের হারুন অর রশিদ খোকন (২ মার্চ ২০০২)।
তথ্য ভান্ডার বলে পরিচিত খ্যাতিমান সাংবাদিক দৈনিক জনকন্ঠের বিশেষ প্রতিনিধি শামছুর রহমান কেবল (১৬ জুলাই ২০০০) নিজ অফিসে গুলিতে মারা যান। নিহত অন্য সাংবাদিকরা হলেন দৈনিক রানারের সম্পাদক সাইফুল আলম মুকুল (৩০ আগস্ট ১৯৯৮), খুলনার দৈনিক লোকসমাজের রফিকুল ইসলাম, বগুড়ার দৈনিক দুর্জয় বাংলার র্নিবাহী সম্পাদক দীপঙ্কর চক্রবর্তী (২ অক্টোবর ২০০৪), দৈনিক সমকালের ফরিদপুর সংবাদদাতা গৌতম দাস (১৭ নভেম্বর ২০০৫), সাতক্ষীরার স.ম. আলাউদ্দিন (১৯ জুন ১৯৯৬), ১৯৯৫ সালে ময়মনসিংহের সারওয়ারুল আলম নোমান, যশোরের দৈনিক রানার রিপোর্টার ফারুক হোসেন (১৯৯৪), ঝিনাইদহের দৈনিক বীরদর্পণ পত্রিকার সম্পাদক মীর ইলিয়াস হোসেন দিলীপ (১৫ জানুয়ারি ২০০০), খুলনার দৈনিক অনির্বাণের শুকুর হুসেন (৫ জুলাই ২০০২)।
২০০৫ সালের ২৯ মে দিবাগত মধ্য রাতে কুমিল্লায় দৈনিক কুমিল্লা মুক্তকন্ঠ পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক মুহাম্মদ গোলাম মাহফুজ (৩৮) নিহত হন। তাকে জবাই করে হত্যা করে সন্ত্রাসী-দুর্বৃত্তরা। আরও নিহত হয়েছেন নারায়ণগঞ্জের আহসান আলী (২০ জুলাই ২০০১), নীলফামারীর সাপ্তাহিক নীল সাগরের মোহাম্মদ কামরুজ্জামান (১৯ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৬), দৈনিক পূবালীবার্তার মৌলভীবাজার প্রতিনিধি সৈয়দ ফারুক আহম্মদ (৩ আগস্ট ২০০৩), চুয়াডাঙ্গার নিখোঁজ সাংবাদিক বজলুর রহমান, খাগড়াছড়ির আজকের কাগজ প্রতিনিধি কামাল হোসেন (২১ আগস্ট ২০০৪), রাঙামাটির জামালউদ্দীন (৫ মার্চ ২০০৭), নাবিল আবদুল লতিফ, আনোয়ার অ্যাপোলো, ঢাকার উত্তরার কমিউনিটি সাংবাদিক নুরুল ইসলাম রানা (৩ জুলাই ২০০৯), এমএম আহসান বারী (২৬ আগস্ট ২০০৯), ও রেজাউল করিম রেজা, যশোরের আবদুল গফফার চৌধুরী, ডেমরার আবদুল হান্নান, সাপ্তাহিক ২০০০-এর সিলেট প্রতিনিধি ফতেহ ওসমানি ও দৈনিক জনতার যুগ্ম-সম্পাদক ফরহাদ খাঁ (তিনি তার স্ত্রীসহ নিহত হন সন্ত্রাসীদের হাতে)। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রথাবিরোধী লেখক অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদ ছুরিকাহত হন সন্ত্রাসীদের হাতে। পরবর্তীতে তিনি জার্মানিতে থাকাকালে মারা যান।
বর্তমান মহাজোট সরকারের আমলে ২০১১ সালের ২৮ জানুয়ারী পল্টনের নিজ বাসায় খুন হন প্রবীণ সাংবাদিক দৈনিক জনতার সহ-সম্পাদক ফরহাঁদ খাঁ ও তার স্ত্রী রহিমা খাতুন। একই সালের ৭ ডিসেম্বর গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ কুকরাইল এলাকায় গলা কেটে হত্যা করা হয় দৈনিক ভোরের ডাকের গোবিন্দগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি ফরিদুল ইসলাম রঞ্জুকে।
২০১১ সালের ৭ এপ্রিল চট্টগ্রামের পোর্টকলোনি এলাকায় দৈনিক আজকের প্রত্যাশা, সাপ্তাহিক সংবাদচিত্র ও আজকের সূর্যোদোয় পত্রিকার সাংবাদিক মাহবুব টুটুলকে এবং উত্তরার ৪ নম্বর সেক্টরের ১১ নম্বর সড়কে ১০ নম্বর বাসার বাসিন্দা সাপ্তাহিক বজ্রকন্ঠের সাংবাদিক আলতাফ হোসেনকে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।
২০১০ সালের ৯ মে গুপ্তহত্যার শিকার হন বেসরকারী টেলিভিশন চ্যানেল এটিএন বাংলার সিনিয়র ক্যামেরাম্যান শফিকুল ইসলাম টুটুল। একই সালের ২৮ এপ্রিল খুন হন বিশিষ্ট সাংবাদিক সাপ্তাহিক ২০০০ এর সিলেট প্রতিনিধি ফতেহ ওসমানী। ২০১০ সালের ২৩ ডিসেম্বর প্রকাশ্যে দিবালোকে খুন হন বরিশালের মুলাদী প্রেসক্লাবের সভাপতি মনির হোসেন রাঢ়ী।
২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে ঢাকায় খুন হন এনটিভির ভিডিও এডিটর আতিকুল ইসলাম আতিক, একই সালের ৩ জুলাই  ঢাকার পাক্ষিক মুক্তমনের স্টাফ রিপোর্টার নুরুল ইসলাম ওরফে রানা খুন হন। ২০০৯ সালের আগস্ট মাসে গাজীপুরে ঢাকার সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক সময় এর নির্বাহী সম্পাদক এমএম আহসান হাবিব বারি ও একই সালের ডিসেম্বরে রূপগঞ্জে দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকার সংবাদদাতা ও রূপগঞ্জ প্রেসক্লাবের সহসভাপতি আবুল হাসান আসিফ মার্ডার হন।
২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি নিজ বাসায় নৃশংসভাবে খুন হন এটিএন বাংলার সিনিয়র রিপোর্টার মেহেরুন রুনি ও মাছরাঙ্গা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সরওয়ার। নিহত এই সাংবাদিকযুগল স্বামী-স্ত্রী। ছয়বছর বয়সী একমাত্র শিশুপুত্র মাহির সরোয়ার মেঘের সম্মুখে এই সাংবাদিক দম্পত্তি খুন হয়েছেন।
কিন্তু আজও খুনিদের ধরেনি সরকার। পুলিশ, এলিট ফোর্স ও সরকার এই চাঞ্চল্যকর খুনের ঘটনার পর থেকেই বিতর্কিত পদক্ষেপ ও কথাবার্তা বলে আসছে। বিশেষ করে স্বয়ং সরকারপ্রধান প্রধানমন্ত্রি শেখ হাসিনা সাংবাদিকদের আন্দোলনের মুখে বলেন, “সরকারের পক্ষে কারও বেডরুম পাহারা দেয়া সম্ভব নয়”। মূলত: এই বক্তব্যের পরই সাগর-রুনি হত্যার খুনিদের বিরুদ্ধে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর তৎপরতা সন্দেহজনক অবস্থায় চলে আসে। এমনকি হাইকোর্টও সাগর-রুনি হত্যা সংক্রান্ত কোন রিপোর্ট প্রকাশ-প্রচারে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। সবমিলিয়ে খুনিদের সঙ্গে সরকারের কোন না কোন মহলের যোগসূত্র স্পষ্ট হয়ে ওঠে!
চাঞ্চল্যকর সাংবাদিক সাগর-রুনি দম্পত্তি হত্যার ঘটনার পর থেকেই সন্দেহের তীর তিনদিকে ছুটেছে। এমনকি বিভিন্ন মাধ্যমে সোশ্যালমিডিয়াসহ এসব সন্দেহের ঘটনার ওপর ব্যাপক লেখালেখি হয়েছে। হয়েছে খুনিদের ধরা হয়নি। বিষয়গুলির সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য কোন তদন্তও পরিচালিত করেনি সরকার।
সরকারের একজন প্রভাবশালী মন্ত্রি, একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের মালিক ও তার ভাই এবং একজন সিনিয়র সাংবাদিকের নাম আছে এই সন্দেহের তালিকায়। সাগর-রুনির খুনি হিসেবে সন্দেহভাজন তিনটিপক্ষই খুবই শক্তিশালী। বিশেষ করে মিডিয়া সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের ঘনিষ্ঠতা আছে বলেও গুঞ্জন উঠেছে। ফলে সাগর-রুনির খুনিরা আদৌ গ্রেফতার হবে কিনা সেবিষয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে জনমনে।
দেশে সাংবাদিক হত্যা-নির্যাতনই নয় পাশাপাশি সংবাদপত্র ও গণমাধ্যমের টুটি চেপে ধরার ঘটনাও একটা সাধারণ ব্যাপার। খালেদা-নিজামির আমলে একুশে টিভি বন্ধ করে সরকার। বর্তমান হাসিনা সরকার যমুনা টিভির পরীক্ষামূলক সম্প্রচার বন্ধ করে দিয়েছে। চ্যানেল ওয়ান বন্ধ করেছে হাসিনার মহাজোট সরকারই। সরকারবিরোধী বাংলা দৈনিক আমার দেশের প্রকাশনাও বাতিল করেছিল তারা।
সংবাদপত্র ও সাংবাদিকদের মাথার ওপরে মানহানি, আদালত অবমাননার খড়ক নিত্যদিনের ঘটনা। এছাড়া হত্যার হুমকিও বাংলাদেশে কমন বিষয়। নিউএইজ পত্রিকার সম্পাদক নূরুল কবিরকে হত্যার হুমকি দেয়া হচ্ছে প্রায়শ:ই। দৈনিক প্রথম আলোর বিরুদ্ধে মৌলবাদি তৎপরতা আছেই। খ্যাতিমান কলামিষ্ট, আইনবিদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অীধ্যাপক আসিফ নজরুলকে হাইকোর্টে তলব করা হয়েছে। দৈনিক আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান ও প্রতিবেদক ওলিউল্যাহকে আদালত অবমাননার মামলায় কারাদন্ড ভোগ করতে হয়েছে এই সরকারের আমলেই। সম্প্রতি স্বাধীনতাবিরোধী জামাতের দৈনিক সংগ্রাম সম্পাদককেও আদালত অবমাননার দায়ে দন্ড দেয়া হয়েছে।
সংবিধানে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতার বিষয়টি স্পষ্ট করে উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু তারপরও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ ক্ষমতাসীনদের একটা ফ্যাশান হয়ে দাঁড়িয়েছে। জনপ্রিয় একুশে টিভির ওপর এখনও সরকারের পক্ষ থেকে নানামুখী চাপ অব্যাহত আছে। সমস্ত বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলিকে সরকারি খবর সম্প্রচারে বাধ্য করা হয়েছে। গোটা মিডিয়াপাড়া চাপের মুখে আছে। একদিকে সন্ত্রাসী হামলা, হত্যা-নির্যাতন আরেকদিকে দমন-পীড়নের খড়ক। এই দ্বিমুখী চাপে পড়ে গণমাধ্যম স্বাধীনতা হারাচ্ছে প্রতিনিয়ত।
গণমাধ্যমকে নানা অভিথায় অভিহিত করা হয়ে থাকে। গণমাধ্যম হলো সমাজের চোখ, দর্পণ। গণমাধ্যম হলো জাতির বিবেক, জনতার কণ্ঠস্বর। গণমাধ্যম হলো রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ ইত্যাদি নানা নামে গণমাধ্যমকে অভিহিত করা হয়। কিন্তু সেই জাতির বিবেকের ওপর চলে নানান জুলুম-অন্যায় অত্যাচার। গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর করা হয় নির্যাতন, এমনকি তাদরকে হত্যা করা হচ্ছে। কিন্তু খুনি ও নির্যাতনকারিরা দায়মুক্ত পাচ্ছে সবসময়।
জনগণ, সরকার ও রাজনীতির মধ্যে একটা সেতুবন্ধ রচনাই হলো গণমাধ্যমের কাজ। সেই কাজটি করতে গিয়ে স্বার্থান্বেষী, দুর্নীতিবাজ, ক্ষমতালোভী, দুর্বৃত্তগোষ্ঠীর রোষানলে পড়ছে গণমাধ্যম ও গণমাধ্যমকর্মীরা।
দেশের প্রধানমন্ত্রি প্রায়শ:ই মিডিয়ার ওপর নাখোশ হচ্ছেন। তিনি বলছেন, মিডিয়া নাকি যা ইচ্ছে তাই লিখছে। বর্তমান সরকারের আমলে নাকি সাংবাদিক ও গণমাধ্যম অবাধ স্বাধীনতা ভোগ করছেন! সরকারের মন্ত্রি-এমপিরা প্রায়ই সাংবাদিকদের ওপর হুমকি-ধামকি দিচ্ছেন।
গণতন্ত্রের প্রতি বিশ্বাস, আস্থা ও চর্চা থাকলে গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় কেউ কখনও হস্তক্ষেপ করতে পারে না। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চাইলে সাংবাদিক সমাজকে রাজনৈতিক মত ও পথ ভুলে গিয়ে পেশাগত দৃঢ় ঐক্য গড়ে তোলার কোন বিকল্প নেই।
প্রবীণ ও শ্রদ্ধেয় সাংবাদিক নির্মল সেনের আহবানে সাড়া দিয়ে সাংবাদিক সমাজ ক্ষমতা, চেয়ার ও হালুয়া-রুটির লোভ ত্যাগ করে রাজনৈতিক বিশ্বাস ঝেড়ে ফেলে সকল সাংবাদিক সংগঠনকে একটি সাংবাদিক ইউনিয়ন বা সংগঠনের পতাকাতলে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। নইলে দেশে সাংবাদিক হত্যা-নির্যাতন বন্ধ হবে না, নির্যাতনকারিদের দায়মুক্তি অব্যাহত থাকবে। এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতেই হবে। পেশাগত মর্যাদা আর নিরাপত্তার চেয়ে রাজনৈতিক বিশ্বাস ও পদ-পদবির লোভ-লালসা বড় হতে পারে না। আর সাংবাদিক সমাজ একজায়গায় একতাবদ্ধ হতে পারলেই কেবল সাগর-রুনির খুনিদের সরকার ধরতে বাধ্য হবে। সব-সাংবাদিক হত্যা-নির্যাতনের বিচার আশা করা যাবে তখনই। আইনের শাসন ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় সাংবাদিকদের পেশাগত ঐক্যের কোন বিকল্প নেই। স্বদেশে মুক্ত হোক সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম।
লেখক: জাহাঙ্গীর আলম আকাশ ইউরোপপ্রবাসী এবং মানবাধিকারবিষয়ক অনলাইন সংবাদপত্র ইউরো বাংলা’র সম্পাদক (editor.eurobangla@yahoo.de)

প্রধান সম্পাদক