বৈদেশিক আয় বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে বাংলাদেশের সবজি

বৈদেশিক আয় বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে বাংলাদেশের সবজি

জসীম মজুমদার, এসবিডি নিউজ২৪ ডট কমঃ বাংলাদেশের বিভিন্ন ধরনের তাজা সবজি ও সুস্বাদু ফলের কদর বাড়ছে দেশের বাইরে। বিশেষ করে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাসরত বাংলাদেশিদের কাছে চাহিদা থাকায় এসব তরিতরকারি ও ফল রপ্তানির পরিমাণও বাড়ছে দ্রুত। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবির) তথ্য অনুযায়ী, ২০১০-১১ অর্থবছরে তাজা সবজি ও ফল রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ১০ কোটি ৯৪ লাখ ডলার। এর মধ্যে তরিতরকারি রপ্তানি হয়েছে সাত কোটি ১৭ লাখ ডলার এবং ফল রপ্তানি হয়েছে তিন কোটি ৭৬ লাখ ডলার। আর চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে (জুলাই-ডিসেম্বর, ২০১১) সবজি ও ফল রপ্তানি হয়েছে ছয় কোটি ৪০ লাখ ডলারের। এর মধ্যে ফল রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে তিন কোটি পাঁচ লাখ ডলার, যা আগের বছরের চেয়ে প্রায় ৬১ শতাংশ বেশি। ২০১০-১১ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে ফল রপ্তানি থেকে আয়ের পরিমাণ ছিল এক কোটি ৮৯ লাখ ডলার।

রপ্তানিকারকেরা বলছেন, সবজি ও ফল রপ্তানির যে প্রবণতা চলছে, তাতে চলতি অর্থবছরে ফল রপ্তানির পরিমাণ আগের যেকোনো বছরের চেয়ে বাড়তে পারে। আর যদিও সবজি রপ্তানির পরিমাণ আগের চেয়ে বেড়েছে, কিন্তু তা চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধের রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম। তবে রপ্তানিকারকেরা ধারণা করছেন, বছর শেষে সবজির রপ্তানিও লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে। রপ্তানিকারকদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, ১৯৭৫ সাল থেকেই এ দেশ থেকে ব্যক্তিগত উদ্যোগে সবজি ও ফল রপ্তানি হয়ে আসছে। তবে সে সময় রপ্তানির পরিমাণ ছিল খুব কম। ১০ বছর ধরে বেশি পরিমাণে সবজি ও ফল রপ্তানি হচ্ছে। সরকারও সবজি ও ফল রপ্তানিকারকদের কিছু সহায়তা দিচ্ছে। বর্তমানে রপ্তানিকারকেরা সরকারের কাছ থেকে ২০ শতাংশ নগদ সহায়তা পাচ্ছেন। পরিবহন ব্যয় বাদ দিয়ে পণ্যের মূল দামের ওপর এ সহায়তা পান তাঁরা। বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে সরকার ব্যবসায়ীদের এ সহায়তা দিচ্ছে। তবে ব্যবসায়ীরা নগদ সহায়তার পরিমাণ ৩০ শতাংশ করার দাবি করে আসছেন।
বর্তমানে দেশের সবজি ও ফলের বাজার মূলত ইউরোপ, আমেরিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো। এসব দেশে অভিবাসী বাঙালির সংখ্যা বেশি হওয়ায় সেসব দেশে সবজি ও ফল রপ্তানির পরিমাণ বেশি।
বাংলাদেশ থেকে সবজি ও ফল রপ্তানি হচ্ছে যুক্তরাজ্য, ইতালি, ফ্রান্স, জার্মানি, গ্রিস, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, সৌদি আরব, কুয়েত, কাতার, বাহরাইন, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ওমানে। এ ছাড়া সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়াতেও সাম্প্রতিক সময়ে রপ্তানি শুরু হয়েছে।

রপ্তানিকারকেরা জানান, বাংলাদেশের সবজি ও ফল রপ্তানির ৪৫ শতাংশের বেশি যায় ইউরোপের দেশগুলোতে। এরপর মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোয়। কিছু তাজা তরিতরকারি ও ফলমূল সারা বছরই রপ্তানি হয়। আর কিছু তরিতরকারি ও ফলমূল রপ্তানি হয় বিভিন্ন মৌসুমে। তবে প্রবাসী বাংলাদেশিদের কাছে মৌসুমি ফল ও সবজির কদর বেশি।
সবজির মধ্যে লাউ, কুমড়া, পটোল, বেগুন, ঢ্যাঁড়স, আলু, পেঁপে, চিচিঙ্গা, কাঁকরোল, কাঁচামরিচ, বরবটি, শিম, টমেটো, বিভিন্ন ধরনের শাক রয়েছে। আর রপ্তানি হওয়া ফলের তালিকায় আছে: কাঁঠাল, আম, লিচু, জলপাই, কলা, আনারস, পেয়ারা, পাকা পেঁপে। ইউরোপের দেশগুলোতে কাঁঠালের চাহিদা সবচেয়ে বেশি।
রপ্তানির ভবিষ্যৎ কেমন: বাংলাদেশ ফল ও সবজিপণ্য রপ্তানিকারকদের সমিতির সভাপতি এস এম জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘সবজি ও ফল রপ্তানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের বড় প্রতিযোগী হচ্ছে ভারত ও আফ্রিকার দেশগুলো। এ ছাড়া পাকিস্তানও বাংলাদেশের প্রতিযোগী। এ দেশগুলোও আমাদের চেয়ে কম দামে পণ্য বিক্রি করে। সে দিক থেকে আমরা কিছুটা পিছিয়ে পড়ছি।’ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমরা এখনো বিদেশের মানুষকে আমাদের পণ্যের ক্রেতা বানাতে পারিনি। মূলত এখনো এ দেশের লোকেরাই এসব সবজি ও ফলমূল কিনছে। আমরা যদি সুপার মার্কেটে (বিদেশি ক্রেতা বানানো) ঢুকতে পারতাম, তাহলে রপ্তানি এখনকার চেয়ে দ্বিগুণ কিংবা তিনগুণও করা সম্ভব। তবে এ জন্য সরকারি সহায়তা প্রয়োজন।’

কিছু সীমাবদ্ধতা: রপ্তানিকারকেরা জানান, সবজি ও ফল রপ্তানির বড় সমস্যা হচ্ছে পণ্য পরিবহনের বিমান ভাড়া অনেক বেশি। উদাহরণ দিয়ে তাঁরা বলেন, ভারত থেকে লন্ডনে প্রতি কেজি সবজি কিংবা ফল পাঠাতে ভাড়া পড়ে ১০০ থেকে ১০৫ টাকা, সেখানে এ দেশ থেকে লন্ডনে পাঠানোর ক্ষেত্রে এ দেশের বিমানগুলো ভাড়া নেয় ১৩০ থেকে ১৫৬ টাকা। জানতে চাইলে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘বেশি ভাড়া নেয় বাংলাদেশ বিমান। বিদেশি এয়ারলাইনগুলো যেখানে লন্ডনে পণ্য পরিবহন করতে প্রতি কেজির জন্য ১২০ থেকে ১৩০ টাকা নেয়, সেখানে বাংলাদেশ বিমান নেয় ১৫৬ টাকা। এটি বড় একটি বাধা।’ সবজি ও ফল রপ্তানিতে আরেকটি বড় সমস্যা হচ্ছে, কুল চেইন ব্যবস্থার (শীতাতপনিয়ন্ত্রিত পণ্য রাখার জায়গা) অভাব। সুপার মার্কেট ধরতে হলে বিদেশি ক্রেতাদের শর্ত পূরণ করতে হয়। তাদের শর্ত হচ্ছে, প্রতিষ্ঠান থেকে পণ্যের বাজার পর্যন্ত আসতে কুল চেইন ব্যবস্থা থাকতে হবে। বিদেশি ক্রেতাদের আগ্রহ তৈরি করতে হলে কুল চেইন ব্যবস্থা চালুর বিষয়ে সরকারকে সহায়তা করতে হবে বলে তাঁরা জানান।

নিজস্ব প্রতিনিধি

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না।