অপহরণ ও গুম-খুন রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া আবশ্যক

অপহরণ ও গুম-খুন রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া আবশ্যক

শুভাশিস ব্যানার্জি শুভঃ দেশে অপহরণ, হত্যা ও গুমের ঘটনা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। অতি তুচ্ছ ঘটনা থেকে শুরু করে নানা কারণে মানুষ যেভাবে ঘাতকের লক্ষ্যবস্ত্ততে পরিণত হচ্ছে, তা সত্যিই উদ্বেগজনক। সম্প্রতি খুলনা শহরের বাসিন্দা এক কলেজছাত্রকে হত্যার পর তার লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে বুকে ভারি বস্ত্ত বেঁধে নদীতে ফেলে দেয় দুর্বৃত্তরা। তারপর নিহতের পরিবারের কাছে দাবি করে বিশাল অংকের টাকা। সংঘবদ্ধ অপহরণকারী চক্র, প্রতারক, প্রবঞ্চক ও দুর্বৃত্ত দলের নির্মম হত্যাযজ্ঞের শিকার হওয়া ছাড়াও সুযোগসন্ধানী বন্ধু ও প্রতিবেশীর রোষানলে পড়ে দেশে মানুষ হত্যার যেসব ঘটনা ঘটছে, খুলনার ঘটনা এর ব্যতিক্রম কিছু নয়। এমনিতেই দেশে স্বাভাবিক মৃত্যুর কোন গ্যারান্টি নেই। প্রতিদিন অনেক মানুষ বিভিন্নভাবে অপমৃত্যুর শিকার হচ্ছে। এর পাশাপাশি পরিকল্পিতভাবে কাউকে যদি খুন করা হয়, তাহলে তা মেনে নেয়া সত্যিই কঠিন। খুনের ঘটনায় জড়িতদের অপরাধ ক্ষমাহীন- এটি যেমন সত্য, তেমনি এক্ষেত্রে বাবা-মা ও পরিবারের সচেতন হওয়ারও প্রয়োজন রয়েছে। জানা যায়, খুন হওয়া কলেজছাত্রের সঙ্গে দুর্বৃত্তদের বন্ধুত্বের সম্পর্ক ছিল। খুনিরা পারিবারিকভাবেও পরস্পর পরস্পরের পরিচিত ছিল। কাজেই সন্তানের ব্যাপারে বাবা-মা তথা পরিবারের কী ভূমিকা হওয়া উচিত- এ ঘটনায় সে প্রসঙ্গ অবধারিতভাবে চলে আসে। অসৎ সঙ্গ বর্জন করাসহ যে কোন প্রকার লোভ বা অনৈতিক কাজ থেকে দূরে থাকার নৈতিক শিক্ষা জীবনের প্রারম্ভেই কোন শিশু যদি তার পরিবার থেকে পায়, তাহলে অনেক অনভিপ্রেত দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। তবে এ ধরনের ঘটনা রোধে সরকারের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ। হত্যাকারীরা কোন অনুকম্পার যোগ্য নয়- এ বার্তাটি সবার কাছে পৌঁছে দেয়ার জন্য খুনিদের বিচার ও শাস্তি প্রদানের বিষয়টি নিশ্চিত করা জরুরি।

সাম্প্রতিক সময়ে হত্যা, অপহরণ ও গুম দেশে একটি বহুল আলোচিত বিষয়ে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের জরিপ রিপোর্টে বলা হয়েছে, কেবল মে মাসেই সারাদেশে ৩৯৮টি হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়েছে। অপহরণের বিষয়টি সংসদের আলোচনায়ও এসেছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রকৃত পরিসংখ্যান না দিয়ে গত এক বছরে অপহরণ ও গুমের ঘটনায় ক’টি মামলা হয়েছে, সংসদে কেবল সে তথ্য উপস্থাপন করলেও দেশে সংঘটিত অপহরণ, গুম ও হত্যার প্রকৃত ঘটনা যে এর চেয়ে অনেক বেশি, তা বোধকরি বলার অপেক্ষা রাখে না। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার কিছুদিন পর পুরান ঢাকার বিএনপি সমর্থিত ওয়ার্ড কমিশনার চৌধুরী আলম নিখোঁজ হয়ে যান। আজও তার সন্ধান মেলেনি। এরপর গত দু’বছর ধরে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে নিখোঁজ ও গুম-খুনের ঘটনার খবর আসতে থাকে। একটি মানবাধিকার সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, ২০১০ সালের জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত অর্থাৎ সাড়ে ২৭ মাসে আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে অপহরণের শিকার হয়েছে ১০০ জন। পরে এদের মধ্যে ২১ জনের লাশ উদ্ধার হলেও ৭৬ জনের কোন খোঁজ মেলেনি। যাদের লাশের সন্ধান মিলেছে, দেখা গেছে তাদের অনেকে স্থানীয় পর্যায়ের বিরোধীদলীয় নেতাকর্মী। এসব কারণে গুম-খুনের ঘটনাগুলো রাজনৈতিক হওয়ার অভিযোগ বেশ জোরালো। বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলী নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় এ অভিযোগ আরও জোরালো হয়েছে। গুম-খুনের সব ঘটনার পেছনেই যে রাজনীতি কাজ করেছে, তা হয়তো নয়। নিছক মুক্তিপণ আদায়ের জন্যও কাউকে ধরে নিয়ে গিয়ে খুন করা হতে পারে। আবার এমনও হতে পারে, কেউ কেউ ব্যক্তিগত বা পারিবারিক শত্রুতাবশত পরিস্থিতির সুযোগ নিয়েছে। তবে এটি স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, অনেক ঘটনার পেছনেই কাজ করেছে রাজনীতি বা রাজনৈতিক শত্রুতা। সরকারকে অবশ্যই অপহরণ ও গুম-খুন রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।

শুভাশিস ব্যানার্জি শুভঃ সম্পাদক,এসবিডি নিউজ24 ডট কম

jsb.shuvo@gmail.com

প্রধান সম্পাদক