এক যুগেও বিচার হয়নি সাংবাদিক শামসুর রহমান কেবল হত্যার
শুভাশিস ব্যানার্জি শুভঃ কয়েকদিন আগে বৈশাখী টেলিভিশনে একটি ‘টক শো’ দেখছি। প্রযুক্তির এই যুগে টিভি চ্যানেল গুলোতে ‘টক শো’ বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। যাই হোক। ইদানিং টিভি খুব বেশি দেখা হয় না। একদিকে টিভি’র চ্যানেল বদল, অন্যদিকে কম্পিউটার নামের যন্ত্রের দিকে মনযোগ। একাধারে যেন চলতে থাকে একাধিক কাজ। কম্পিউটার তো এখন মানুষের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে জানা যাচ্ছে দেশ-বিদেশে তাৎক্ষণিক সংবাদ। ফেসবুকের মাধ্যমে নতুন-পুরানো বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ, আরো কতো কী। প্রযুক্তির কথা লিখতে গিয়ে আমি আমার মূল লেখার বিষয় থেকে সরে যাচ্ছি। সত্যি কথা বলতে কী, আমি যা লিখতে চাচ্ছি, সেটা কতোটা স্বচ্ছ ভাবে লিখতে পারবো, সে সম্পর্কে আমি নিজেই দ্বিধাগ্রস্থ। সেদিন যে ‘টক শো’ অনুষ্ঠানটি আমি দেখছিলাম, সেখানে হঠাৎ একটি নাম দেখে আমার বুকের কোথায় যেন বড় ধরণের একটি ধাক্কা খেলাম। নামটি হচ্ছে, সেঁজুতি রহমান। সে এখন বৈশাখী টেলিভিশনের ষ্টাফ রিপোর্টার। চমৎকার ভাবে সে কথা বলছে। আমি বিস্ময়করভাবে তার দিকে তাকিয়ে আছি। তার কথা শুনছি। প্রকৃতির অশেষ কৃপায় সেঁজুতি আজ উদীয়মান সাংবাদিক। বৈশাখী টেলিভিশন কর্তৃপক্ষের কাছে আমি ব্যক্তিগতভাবে কৃতজ্ঞ। তারা সেঁজুতি রহমানকে তার প্রতিভা বিকাশের সুযোগ দিয়েছে। এখন যোগ্যতা থাকলেও তদ্বির ছাড়া চাকরি পাওয়া যথেষ্ঠ কঠিন। আমি জানি না সেঁজুতির জন্য কেউ সুপারিশ করেছে কি না! তবে আমার বিশ্বাস সেঁজুতি রহমান একদিন বড় সাংবাদিক হবে। কারণ, তার শরীরে রয়েছে নির্ভীক সাংবাদিক শামছুর রহমান কেবলের রক্ত। সততা আর নিষ্ঠার খেসারতে ২০০০ সালে তাকে ঘাতকের বুলেটের আঘাতে নিহত হতে হয়। তাঁর দুই কন্যা সেঁজুতি ও প্রণতি। পিতার মৃত্যুর সময় সেঁজুতি নবম শ্রেণীর ছাত্রী। পরিস্কার ভাবেই তার মনে থাকার কথা, সেই নির্মম দিনটির কথা…! প্রণতির বয়স তখন মাত্র দুই বছর। তার হয়তো পিতার কথা সেভাবে মনেই নেই। সাংবাদিক শামছুর রহমান কেবল সম্পর্কে আমি একটু বেশিই জানি, কারণ তিনি ছিলেন আমার পিতা প্রয়াত সুনীল ব্যানার্জির শিষ্য। বাবাকে তিনি পায়ে হাত দিয়ে সালাম করতেন। অশেষ সম্মান করতেন। গুরু-শিষ্যের সম্পর্কের যে অটুট বন্ধন সেটি এখন আর দেখা যায় না। কিন্তু সুনীল ব্যানার্জি আর শামছুর রহমান কেবলের সম্পর্কটি যেন ছিলো আত্মিক।
উল্লেখ্য, যশোরের সাংবাদিক শামছুর রহমান কেবলের ১২তম মৃত্যুবার্ষিকী ১৬ জুলাই। ২০০০ সালের ১৬ জুলাই রাতে জনকন্ঠ যশোর অফিসে সাংবাদিক শামছুর রহমান সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন। নির্মম এ হত্যাকান্ডের ১২ বছর পার হলেও আজো বিচার হয়নি, বরং গত পাঁচ বছর ধরে মামলার কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে। ২০০০ সালের ১৬ জুলাই রাতে সাংবাদিক শামছুর রহমান খুন হবার পর ২০০১ সালে সিআইডি পুলিশ এই মামলায় ১৬ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশীট দাখিল করে। বিগত জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর মামলার বর্ধিত তদন্ত করে সাংবাদিক ফারাজী আজমল হোসেনকে নতুন করে আসামী করা হয়। বাদ দেয়া হয় মামলার গুরুতপূর্ণ সাক্ষীকে। নতুন সাক্ষী করা হয় আসামিদের ঘনিষ্ঠজনদের। ২০০৫ সালের জুন মাসে এই মামলার সকল আসামীর বিরুদ্ধে যশোরের ষেশাল জজ আদালতে চার্জ গঠণ হয়। এরপর ২০০৫ সালের জুলাই মাসে বাদীকে না জানিয়ে মামলাটি খুলনার দ্রুত বিচার আদালতে স্থানান্তর করা হয়। এই মামলার অন্যতম আসামী খুলনার সন্ত্রাসী মুশফিকুর রহমান হিরক ঘটনার পর থেকে জামিন নিয়ে পলাতক রয়েছে। খুলনার আদালতে যাওয়ার পর মামলার বাদীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা কয়েক সাক্ষীর বিরুদ্ধেও। সে সময় আসামিদের সঙ্গে যোগসাজসে পুলিশ মামলার বাদি এবং কয়েক সাক্ষীর বাড়িতে অভিযান চালায় বলে অভিযোগ ওঠে। এ অবস্থায় বাদি শামছুর রহমানের সহধর্মীনি সেলিনা আক্তার লাকি ২০০৫ সালের সেপেম্বরে হাইকোর্টে আপিল করে বলেন, মামলার অন্যতম আসামি হিরক পলাতক রয়েছে। এই মামলার অন্যান্য আসামীর সঙ্গে খুলনার সন্ত্রাসীদের সম্পর্ক রয়েছে। ফলে তাঁর পক্ষে খুলনায় গিয়ে সাক্ষী দেয়া সম্ভব নয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ‘মামলাটি বিচারের জন্য কেনো যশোরের আদালতে ফেরত পাঠানোর নির্দেশ দেয়া হবে না’ তার কারণ জানতে চেয়ে সরকারের ওপর রুলনিশি জারি করেন আদালত। বর্তমান মামলাটি সে অবস্থাতেই রয়েছে। এ মামলার এক আসামী খুলনার ওয়ার্ড কমিশনার আসাদুজ্জামান লিটু র্যাব এর ক্রসফায়ারে এবং অপরজন কোটচাঁদপুর উপজেলা চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন কালু দুই বছর আগে মস্তিস্কে রক্তক্ষরণে মৃত্যুবরণ করেন। বাকি আসামিরা জামিনে রয়েছেন।
এক নজরে শামসুর রহমান কেবল এর জীবনীঃ সাংবাদিক শামসুর রহমান কেবল ১৯৫৭ সালের ৫ মে শার্শা থানার শালকোনা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মরহুম সোহরাব উদ্দিন, মাতা মোছাঃ খাইরুন্নেছা বেগম। শামসুর রহমান কেবল ১৯৭২ সালে এস. এস. সি ও ১৯৭৪ সালে এইচ. এস. সি পাশ করেন। ১৯৭৭ সালে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে বি. এ অনার্স এবং ১৯৭৮ সালে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে এম. এ. পাশ করেন। সাংবাদিকতা জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে তিনি দৈনিক ঠিকানা, দৈনিক বাংলা, সাপ্তাহিক বিচিত্রা, দৈনিক গণশক্তি পত্রিকায় কাজ করেছেন। এছাড়া তাঁর বিভিন্ন উপ-সম্পাদকীয় ও রাজনৈতিক বিষয়ক লেখা দেশের বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। ১৯৮০-১৯৮১ সালে দৈনিক ঠিকানার (যশোর) স্টাফ রিপোর্টার, ১৯৮২-১৯৮৩ সালে দৈনিক বাংলার নওয়াপাড়া নিজস্ব সাংবাদিকতা, ১৯৮৪-১৯৮৬ সালে তিনি দৈনিক বাংলার যশোর এর নিজস্ব সংবাদদাতা, ১৯৮৬ (নভেম্বর) ১৯৯৩ সালে দৈনিক বাংলার স্টাফ রিপোর্টার ও সিনিয়ার রিপোর্টার, ১৯৯৩ (নভেম্বর) দৈনিক বাংলার জেলা ব্যুরো প্রধান হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। জানুয়ারী ১৯৯৭ ইং সাল থেকে তিনি জনকন্ঠের বিশেষ প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি দৈনিক বাংলায় নিয়মিত রাজনীতি, সমাজ অর্থনীতি, ও আন্তর্জাতিক বিষয়ে উপ-সম্পাদকীয় লিখতেন। সাপ্তাহিক বিচিত্রায় নিয়মিত রিপোর্ট ও বিভিন্ন বিষয়ে নিবন্ধ লিখতেন। সাপ্তাহিক বিচিত্রায় আন্তর্জাতিক বিভাগে ভারতীয় রাজনীতির উপর তাঁর প্রায় পাঁচ শতাধিক লেখা প্রকাশিত হয়। কলকাতা থেকে প্রকাশিত দৈনিক গণশক্তি পত্রিকায় বিভিন্ন বিভাগে তিনি নিয়মিত লিখতেন।
জীবনের শেষ দিন (১৬ জুলাই’২০০০)ঃ প্রতিদিনের মতই অফিসে আসেন শামছুর রহমান। টেলিফোনে কথা বলেন বড় মেয়ে সেজুতি রহমানের সাথে। খবর নেন টিভির রিমোটটি ঠিকমত কাজ করছে কিনা। তারপর কথা বলার চেষ্টা করেন দু’বছর বয়সী ছোট মেয়ের সাথে। স্ত্রীকে বলেন ‘শরীর ভাল লাগছে না, খুব তাড়াতাড়ি চলে আসবো ’বলে তিনি ফোন রেখে দেন। এটিই ছিল তাঁর ঘোপস্থ বাসায় করা সর্বশেষ টেলিফোন। এরপর তিনি রিপোর্ট লিখেছেন। টেলিফোনে কথাও বলেন সহকর্মী কয়েকজন সাংবাদিকের সাথে। প্রত্যেককেই বলেন, আপনার সাথে কথা আছে পরে আবার ফোন করবো। রাত সোয়া ৮টার পর তিনি অফিসের কর্মচারী জাকিরকে বাসায় পাঠান পারিবারিক কাজে। আর ছোট ভাই সাজেদুর রহমান বকুলকে পাঠান অফিসের সামনে অবস্থিত পত্রিকা এজেনির মেসার্স এজাহার আলী থেকে গত জুন মাসের পত্রিকার রশিদ আনতে। বকুর চলে যাওয়ারপর শামছুর রহমান পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক বরাবর একটি চিঠি লিখতে শুরু করেন। কিন্তু তিনি ঐ চিঠিটি আর শেষ করতে পারেননি। চিঠির ওপরে বিষয় জুন ২০০০ মাসের অসমাপ্ত এ বাক্যটি লেখা। সম্ভবত এ সময়েই ঘাতকরা শামছুর রহমানের কক্ষে প্রবেশ করে তাঁকে গুলি করে। রশিদ আনতে যাওয়ার মিনিট তিনেক পর বকুল দেখতে পান মর্মান্তিক দৃশ্য। তার বড় ভাইয়ের রক্তাক্ত দেহটি পড়ে রয়েছে। রক্তে ভেসে ঘরের মেঝে। ঘটনার আকস্মিকতায় হতভম্ভ বকুলের আর্ত চিৎকারে এগিয়ে আসেন অন্যান্যরা। তারা ধরাধরি তরে নিয়ে যান অফিসের সম্মুখস্থ যশোর জেনারেল হাসপাতালে। কিন্তু তাদের সব চেষ্টা বিফল হয়ে যায়। পেশাদার খুনি চক্রের ছোঁড়া বুলেট অনেক আগেই তাঁর প্রাণ প্রদীপ নিভিয়ে দেয়। ১৯৯৮ সালে দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের অভিসপ্ত জনপদ একজন কলম সৈনিকের রক্তে রক্তাক্ত হল। হতভাগ্য এই সাংবাদিক শামসুর রহমান যিনি দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের সাংবাদিকতার জগতে চলমান কম্পিউটার হিসাবে পরিচিত ছিলেন। তিনি তাঁর মেধার পরিচয় দিয়ে একটি মফস্বলের জেলা শহরে থেকেও সাংবাদিকতায় সাফল্য অর্জন করেছিলেন। অন্যায়, অনাচার, দূর্নীতি ও সমাজবিরোধীদের বিরুদ্ধে তাঁর কলম ছিল সর্বদা সোচ্ছার। সেই কলম আর চলবে না, চিরদিনের জন্য তার কলম থেমে গেছে। ঘাতকের তপ্ত বুলেট অকুতভয় সাংবাদিক শামসুর রহমান কেবলের কলম স্তব্ধ করে দিল।
অনুসন্ধানঃ প্রথিতযশা সাংবাদিক শামছুর রহমানকে কারা হত্যা করেছে, তা বলা কষ্ঠসাধ্য। কারণ শুধুমাত্র লেখা-লেখির কারণে তাঁর শত্রু সংখ্যা এতো বেড়ে গিয়েছিল যে, এখন এই হত্যাকান্ডের জন্যে কোনো মহলকে সন্দেহ করাও কঠিন হয়ে পড়েছে। পুলিশ, বিডিআর থেকে শুরু করে সব ধরণের সন্ত্রাসী দুর্বৃত্তরা তাঁর ওপর ক্ষিপ্ত ছিল। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে তৎপর চরমপন্থি ও সন্ত্রাসী চক্রগুলোর বর্তমান ও অতীত কর্মকান্ড লিখে এবং তাদের সমর্থনে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে লেখা তার বিশ্লেষণাত্নক রিপোর্ট পুলিশের গায়ে জ্বালা ধরিয়ে দিত। ঠিক তেমনি চোরাচালান দমনের নামে সীমান্ত এলাকায় বি. ডি. আর যে লুটপাট চালাতো তাঁর ক্ষুরধার লেখনীর কারণে বি. ডি. আর তা সহ্য করতে পারতো না। এ সমস্ত কারণে ক্ষমতাসীন দলের এ অঞ্চলের অনেক নেতারাও তাঁর ওপর রুষ্ট ছিলো। অর্থাৎ তিরি বহুমুখী ষড়যন্ত্র ও চাপের মধ্যে ছিলেন। কিন্তু শামছুর রহমান তাতে দমেননি। হাজারো ভয়ভীতি ও জীবননাশের পরও তিনি কলম চালিয়ে গেছেন সমানতালে। এই অবস্থায় গত ২৫ জুন ঘটে এক রহস্যময় ঘটনা। বি. ডি. আরের সোর্স পরিচয় দানকারী সেলিম রেজা নামে এক যুবক জনকন্ঠ অফিসে এসে যশোরস্থ ৩২ রাইফেল ব্যাটালিয়নের পক্ষে একটি রিপোর্ট লিখতে দেন। এরপরেই তার দাবি বর্তমান সি. ও চোরাচালান দমনে কঠোরতা অবলম্বন করায় এ সীমান্তে চোরাচালান দমন অনেকাংশে কমে গেছে। যে কারণে বিশেষ মহল তাকে যশোর থেকে সরিয়ে দেয়ার জন্য জোর তৎপরতা চালাচ্ছে। সেলিম রেজা বলেন, এ ব্যাপারে যদি তিনি জনকন্ঠে একটি রিপোর্ট করেন তাহলে ভাল হয়। শামছুর রহমান কথিত সোর্সকে বলেন, তাঁকে তথ্য দিলে তিনি রিপোর্ট করে দেবেন। এরপর ঐ যুবক চলে যায় এবং বিকালে পুনরায় আসে। এসে শামছুর রহমানের হাতে একটি খাম ধরিয়ে দেয়। খাম খুলে শামছুর রহমান তার মধ্যে বি. ডি. আর কর্তৃক মালামাল আটকের কিছু পরিসংখ্যান, কঙ্কাল পাচারের ছবি ও ৫ হাজার টাকা দেখতে পান। খামের ভিতর টাকা কেন জানতে চাইলে সেলিম রেজা জানায়, অধিনায়ক স্যারের দিকে একটু খেয়াল দেবেন। ক্যাপেন আমিনুল স্যার এ টাকা দিয়েছেন। এরপর তিনি টাকাসহ সেলিম রেজাকে পুলিশে সোপর্দ করতে চাইলে সেলিম রেজা মুচলেকা দিয়ে রেহাই পায়। বিষয়টি যশোরস্থ ৩২ রাইফেল ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেঃ কর্নেল আব্দুস সালামকে জানালে তিনি টাকাসহ সেলিম রেজাকে পাঠানোর কথা অস্বীকার করেন। বিষয়টি অনেক দুর গড়ায় এবং বি. ডি. আরের সাঙ্গে শাসছুর রহমানের সম্পর্কের অবনতি ঘটে। কোট চাঁদপুরের কাজলের হুন্ডি ব্যবসা সংক্রান্ত বিষয়েও শামছুর রহমান অসংখ্য রিপোর্ট লেখেন। কাজল গংরা তাঁকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করে। কাজলের লোকজন কয়েকবার টাকাসহ তাঁর বাড়ি ও অফিসে যায়। কিন্তু শামছুর রহমান বিক্রি হননি। কাজল গংয়ের প্রস্তাব তিনি ঘৃণাভরে প্রত্যাক্ষান করেন এবং লেখনী অব্যাহত রাখেন। সেই সময়ে খুলনার সন্ত্রাসীদের ওপর জনকন্ঠে সিরিজ রিপোর্ট ছাপা হয়। কয়েকটি রিপোর্ট ছাপা হওয়ায় খুলনার একজন সাংবাদিক সঙ্গে নিয়ে সেখানকার টপ টেররদের অন্যতম একজন (হীরক) শামছুর রহমানের কাছে আসেন। জানা যায় ঐ সন্ত্রাসীদের আচরণের কারণে শামছুর রহমান তাঁর সঙ্গে দুর্ব্যবহার করতে বাধ্য হন। এরপর সে চলে যায়। সাম্প্রতিক এ সমস্ত ঘটনাবলী ছাড়াও শামছুর রহমানের ওপর ক্ষিপ্ত ছিল এ অঞ্চলে তৎপর গোপন চরমপন্থি দলগুলো। তথাকথিত সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার নামে এ অঞ্চলের মানুষের ওপর যে অবর্ণনীয় জুলুম অত্যাচার চালিয়ে আসছে শামছুর রহমানের কলম তার বিরুদ্ধে সব সময় সোচ্ছার ছিল। সিন্ডিকেটগুলোর গড ফাদাররা। তাদের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো ছিল না। পুলিশের উচ্চপদস্থ কয়েকজন কর্মকর্তার সাথেও সম্পর্ক ভালো ছিল না। চোরাচালান ও চরমপন্থিদের বিরুদ্ধে লিখতে যেয়েই তিনি তাদের রোষানলে পড়েন। অজ্ঞাত পরিচয় দুর্বৃত্তরা তাঁকে বারবার জীবননাশের হুমকিও দিয়েছে বহুবার।
আমাদের প্রশ্ন এবং উপলদ্ধিঃ ‘স্মৃতিই এখন বড় সত্যি’ শিরোনামে একটি লেখা গত বছর শামছুর রহমানের স্মরণে লিখেছিলেন তাঁর সহধর্মীনি সেলিনা আক্তার। লেখাটি পড়ে চোখে জল এসে যায়। দুই কন্যা কে নিয়ে কতোটা মানবেতর জীবন যাপন করতে হয়েছে এই বিধবা নারীকে, সেই খবর রেখেছেন ক’জন? গত ১২ বছরে দফায় দফায় সরকারের পরিবর্তন হলেও শামছুর রহমানের হত্যার বিচার হয়নি আজো। কেন হয়নি? কারা সাংবাদিকদের সত্য লেখনী বন্ধ করতে চান? এই উত্তর সরকারকে দিতে হবে। শামছুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকীতে শোক সভার আয়োজন করা হবে, সেখানে অনেকে তাঁর স্মৃতি চর্চা করবেন! এই প্রহসনের মানে কী? যারা এসব প্রহসনের সঞ্চালক তাদের মাঝেই হয়তো লুকিয়ে আছে শামছুর রহমানের প্রকৃত খুনি। তাদের খুঁজে বের করার দায়িত্ব আমাদের। আর এই কাজটি যদি করতে আমরা বারবার ব্যর্থতার পরিচয় দেই, তাহলে একদিন আমাদেরকেও এই ভাবে খুন হতে হবে। সত্যের পরাজয় ঘটিয়ে অশুভ শক্তির বিজয়ের ধারাই কী অটুট থাকবে…?
শুভাশিস ব্যানার্জি শুভঃ সাংবাদিক ও কলামিস্ট।।
jsb.shuvo@gmail.com