উৎসে করের নতুন সিদ্ধান্ত স্পষ্ট নয় ।। ব্যাংকের তারল্য সংকট বাড়ার আশঙ্কা

উৎসে করের নতুন সিদ্ধান্ত স্পষ্ট নয় ।। ব্যাংকের তারল্য সংকট বাড়ার আশঙ্কা

জাহিদ হোসেন,এসবিডি নিউজ24 ডট কমঃ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন সিদ্ধান্তে ব্যাংকিং খাতে তারল্য সংকট বাড়বে। ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নম্বর বা টিআইএনধারী যে কোনো ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের মুনাফা থেকে ১০ শতাংশ ও টিআইএন না থাকলে ১৫ শতাংশ উৎসে কর নেয়ার সরকারি সিদ্ধান্তে ব্যাংকিং খাতে তারল্য সংকট সৃষ্টি হবে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদ ও সাবেক ব্যাংকাররা। তারা বলছেন, এটা খুবই অযৌক্তিক ও নেতিবাচক সিদ্ধান্ত। এতে এক ধরনের বৈষম্য তৈরি হবে। এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে কিছু নতুন প্রশাসনিক জটিলতার সৃষ্টি হবে। সাধারণ মানুষের সঞ্চয়মুখী হওয়ার ক্ষেত্রে এ সিদ্ধান্ত বাধা হয়ে দাঁড়াবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, চলতি অর্থবছরের বাজেটে সরকার কোনো টিআইএনধারী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নামে ব্যাংক হিসাবে মুনাফাযোগ্য অর্থ থাকলে ১০ শতাংশ ও টিআইএন না থাকলে ১৫ শতাংশ হারে উৎসে কর কেটে নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। সরকারের এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড আয়কর অধ্যাদেশ-১৯৮৪ এর কিছু ধারা পরিবর্তন করেছে। গত ১৯ জুলাই (বৃহস্পতিবার) জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের তাগিদ দিয়ে একটি প্রজ্ঞাপণ জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলা হয়েছে এ প্রজ্ঞাপনে। এছাড়াও সংশোধিত আয়কর অনুযায়ী যেসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের টিআইএন নেই তাদের সঞ্চয়ী ব্যাংক হিসাবে অর্থবছরের যে কোনো সময়ে মোট স্থিতির পরিমাণ এক লাখ টাকার বেশি হলে ওই হিসাবের সুদ বা মুনাফার ওপর ১০ শতাংশ হারে উৎসে কর প্রযোজ্য হবে। সিদ্ধান্তটিকে নেতিবাচক সিদ্ধান্ত উল্লেখ করে কৃষি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, এটা খুবই অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত। টিআইএন থাকলে এক ধরনের কর আর না থাকলে আরেক ধরনের কর এটা বৈষম্য তৈরি করবে। তিনি বলেন, এ সিদ্ধান্ত ব্যাংকের তারল্য সংকট বাড়াবে। এটা অর্থনীতি ও ব্যাংক ব্যবস্থার জন্য খারাপ হবে। এছাড়া এ সিদ্বান্ত সাধারণ মানুষের সঞ্চয়মুখী প্রবণতাকে বাধাগ্রস্ত করবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। এদিকে তারল্য সংকটের সঙ্গে সঙ্গে এ সিদ্বান্ত প্রশাসনিক জটিলতা বাড়াবে বলে মনে করেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও অর্থনীতিবিদ ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম। তিনি বলেন, সরকারের এ সিদ্ধান্তে তারল্য সংকটের চেয়ে বড় কথা প্রশাসনিক জটিলতা তৈরি করবে। বিশেষ করে যৌথ হিসাবধারীদের মধ্যে একজনের টিআইএন না থাকলে সে ক্ষেত্রে কর নেয়ার পদ্ধতি কি হবে তা স্পষ্ট নয়। এছাড়া সঞ্চয় এক লাখ টাকার কথা বলা হলেও সেটা বছরের কোন সময়ে থাকলে কর কাটা হবে সেটা বলা হয়নি। সুতরাং এ সিদ্ধান্তে কর আদায়ে জটিলতা তৈরি হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, গ্রাহকের আমানতের উপর নতুন করে আরো পাঁচ শতাংশ কর আরোপ মোটেই সঠিক হয়নি। এর ফলে আমানতকারীরা ব্যাংকের প্রতি আগ্রহ হারাবে। এতে ব্যাংক আমানত কমবে। তিনি বলেন, সরকারের অনেক খাত ছিল যেখানে রাজস্ব আদায় করা সম্ভব ছিল। এ প্রক্রিয়ায় রাজস্ব আদায়ে ব্যাংকের তারল্য সংকট বাড়াবে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সংশোধিত অধ্যাদেশের উদ্বৃতি দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রজ্ঞাপনে আরো বলা হয়েছে, সংশোধিত এ বিধান অনুযায়ী নীটওয়্যার এবং ওভেন গার্মেন্ট, টেরি টাওয়েল, গার্মেন্ট শিল্পের কার্টন এক্সেসরিজ, পাটজাত দ্রব্য, হিমায়িত মৎস্য, শাক-সবজি, চামড়াজাত দ্রব্য, মোড়কজাত রফতানি দ্রব্যের ক্ষেত্রে শূন্য দশমিক ৮ শতাংশ হারে উৎসে কর প্রযোজ্য হবে। রফতানি মূল্যের উপরেও একই হারে উৎসে কর প্রযোজ্য হবে। রফতানি সহায়তা হিসেবে সরকারের দেয়া নগদ সুবিধার উপর ৫ শতাংশ হারে উৎসে কর প্রযোজ্য হবে।

নিজস্ব প্রতিনিধি