সেতু তৈরি হোক দু’নেত্রীর অর্থায়নে

সেতু তৈরি হোক দু’নেত্রীর অর্থায়নে

মোমিন মেহেদীঃ ‘পদ্মা সেতু আমাদের স্বপ্ন সেতু। এই সেতু তৈরি হলে দÿÿণাঞ্চলের মানুষের সময় ব্যায় কমবে; কমবে বসে বসে সময় নষ্ট করার রাসত্মাও। আর এ কারনেই যখন বিশ্বব্যাংক দূর্নীতিবাজ বলে দূর দূর করে জাহান্নামের দিকে ঠেলে দিলো; তখন আমাদের দেশরত্ন জননেত্রী  সংসদে দাঁড়িয়ে সগর্বে ঘোষনা করলেন যে নিজেদের অর্থায়নে পদ্মাসেতু তৈরী করা কোন ব্যপারই না, আর এতে করে আমাদের রঙ্গভরা বঙ্গদেশে দেশপ্রেম দারম্ননভাবে জেগে উঠলো। বঙ্গবন্ধুর যার যা কিছু আছে তা নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করার ডাকে বাংলাদেশের আপামর জনতা সাড়া দিয়েছিলো। এবার দেশরত্নের ডাকে তেমন সাড়াই পড়লো। আমার বুকের ছাতি কয়েক ইঞ্চি বেড়ে গেলো। আমাদের মহাপরাক্রমশালী দুদক তড়িঘড়ি দেশের অর্থে পদ্মাসেতু নির্মানের অর্থ জমা দেয়ার জন্য ব্যাঙ্ক এ্যাকাউন্টও খুলে ফেললো, একটি নয় দু’টি। কে সাড়া দেয়নি দেশরত্নের ডাকে? স্কুলবালকের টিফিনের পয়সা বাঁচিয়ে ৬৫ টাকা দেয়া থেকে, ইন্স্যুরেন্স একাডেমী সব ইন্স্যুরেন্স কোম্পানীর প্রিমিয়াম রিজার্ভ ঝেঁটিয়ে দেশীয় অর্থায়নে পদ্মাসেতু নির্মানকল্পে ঢেলে দেয়ার পরিকল্পনা পেশ করে বিশ্ববাসীকে তাক লাগিয়ে দিল। যদিও কিছু কিছু হতাশাবাদী পেশাদার একাউন্টেন্টরা মিঁউ মিঁউ করে বলেছিলো, ইন্স্যুরেন্স একাডেমী কোন ইন্স্যুরেন্স কোম্পানীর মালিক নয়, পরিচালনা পর্ষদ নয়, দেশে প্রচলিত কোম্পানী আইন বা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানী এ্যাক্ট ইন্স্যুরেন্স একাডেমীকে এ সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা দেয়নি। তাছাড়া, প্রিমিয়ার রিজার্ভ রাখা যে কোন ইন্স্যুরেন্স কোম্পানীর জন্য আইনগতভাবে এবং এ্যাকাউন্টিং প্র‍¨vকটিসের ক্ষেত্রে GAAP ev IFRS এর শর্ত পুরণ করার জন্য বাধ্যতামূলক। সে কাগজেপত্রে আইনে যা লিখা থাকুক, চাচা যখন বলেছেন, তা হতোই। এর বাইরে, আমাদের ইউনিভার্সিটি গ্র‍¨vন্ট কমিশনের মসনবদার কোথা থেকে যেন এক কোটি টাকা দান করার ঘোষনা দিয়েছিলেন। আর কতো বলবো, এ যেন ওই সোয়াতীর মানি ইজ নো প্রবলেম থিয়োরি…’ কথাগুলো রসগল্পের মত মনে হলেও আমাদের দেশের প্রেÿাপটে বাসত্মবতার রঙিন উদাহরণ। যেখানে ৩৫০ কোটি মার্কিন ডলারে পদ্মা সেতু নির্মাণ করা যায়; সেখানে নতুন নতুন ঘটনার জন্ম দেয়ার কি প্রয়োজন? প্রশ্নটি এখন আমার মত অনেকের-ই। কেননা, আমরা এই ছাপ্পান্ন হাজার বর্গ মাইলের এই স্বাধীন দেশে পদ্মা সেতুর স্বপ্ন বুনেছি বুকের ভালোবাসায়। আর এই স্বপ্ন বাসত্মবায়ন হলে আমাদের দেশ সোনার বাংলাদেশে পরিণত না হলেও এগিয়ে যাবে অনেকদূর। এই যাওয়ার সূত্র ধরে আমরা রাত থেকে অমত্মত আলোর কাছাকাছি ভোরের দিকে এগিয়ে যাবো। এই পদ্মা সেতুর স্বপ্ন দেখতে দেখতে ২০০৪ সাল-এ আমরা দেখেছি বিসত্মারিত সমীক্ষার পর মাওয়া-জাজিরা প্রামেত্ম পদ্মা সেতু নির্মাণের পরামর্শ দেয় জাপানি সংস্থা জাইকার; ২০০৭ সাল-এ ১০ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প প্রসত্মাব একনেকে অনুমোদন হয়; ২০০৯ সাল-এর ৯ জানুয়ারি বিসত্মারিত নকশা প্রণয়নে পরামর্শক নিয়োগের প্রক্রিয়া ক্রয়সংক্রামত্ম মন্ত্রিসভা কমিটির অনুমোদন; ২ ফেব্রুয়ারি: নকশা প্রণয়নের কাজ শুরম্ন হয়; ২০১০ সাল-এর ১১ এপ্রিল: মূল সেতুর দরপত্র আহবান; ১১ অক্টোবর: বিশ্বব্যাংকের আপত্তিতে পুনরায় দরপত্র আহবান; ২০১১ সাল-এ ১১ জানুয়ারি: সংশোধিত প্রকল্প প্রসত্মাব মন্ত্রিসভায় অনুমোদন হয়; ২৪ ফেব্রুয়ারি: বিশ্বব্যাংকের বোর্ডসভায় ১২০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ সহায়তা অনুমোদন । ২৮ এপ্রিল: বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে ঋণচুক্তি সই হয়; ১৮ মে: জাইকার সঙ্গে চুক্তি সই হয়; ২৪ মে: আইডিবির সঙ্গে চুক্তি সই হয়; ৬ জুন: এডিবির সঙ্গে ঋণচুক্তি সই হয়; আর  ৯ সেপ্টেম্বর এসে ‘আবুল হোসেনের সততার ঘাটতি আছে’ আলোচিত ওয়েবসাইট উইকিলিকসে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মরিয়ার্টির তারবার্তায় প্রকাশিত হয়; ২১ সেপ্টেম্বর: মূল সেতু ও তদারকি পরামর্শক নিয়োগ বিষয়ে দুর্নীতির অভিযোগ এনে বিশ্বব্যাংক প্রথম অর্থমন্ত্রীর কাছে তদমত্ম প্রতিবেদন জমা দেয়; ৯ অক্টোবর: প্রকল্প পরিচালক রফিকুল ইসলামকে অপসারণ করা হয়; ১৩ অক্টোবর: সেতু বিভাগের সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়াকে বদলি করা হয়; ১৮ অক্টোবর: দুদকের অনুসন্ধান দল গঠন এবং অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে বিশ্বব্যাংকসহ দাতাদের ঋণসহায়তা স্থগিত ঘোষণা করা হয়; ২০১২ সাল-এ এসে আমাদের স্বপ্ন সেতু পদ্মার আগামী অন্ধকারে ঢেকে যায়। বিশেষ করে ৫ জানুয়ারি যোগাযোগমন্ত্রীর পদ থেকে সৈয়দ আবুল হোসেনকে সরিয়ে ওবায়দুল কাদেরকে নিয়োগ দেওয়া হয়; ২ ফেব্রুয়ারি মূল সেতুর ঠিকাদার নিয়োগে দুর্নীতির তথ্য মেলেনি বলে দুদকের প্রতিবেদন দাখিল; ২০ ফেব্রুয়ারি রমেশ শাহ ও মো. ইসমাইল নামের এসএনসি-লাভালিনের দুই কর্মকর্তা আটক; ২৬ মার্চ দুর্নীতির অভিযোগে এসএনসি-লাভালিনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা পিয়েরে ডুহাইমের পদত্যাগ; এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে বিশবব্যাংকের দ্বিতীয় দফা দুর্নীতির তদনমত্ম প্রতিবেদন জমা; এতে সরকারের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের নাম রয়েছে; ২ এপ্রিল কানাডাভিত্তিক প্রতিষ্ঠান এসএনসি-লাভালিনকে কালো তালিকাভুক্ত। ৩০ জুন দুর্নীতির অভিযোগে ঋণচুক্তি বাতিলের ঘোষণা  দেয় বিশ্বব্যাংক। আর এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে পদ্মা সেতুর ভবিষ্যৎ যখন পুরোপুরি অনিশ্চিত তখন অনেকেই অনেক রকম কথা উপহার দিয়েছেন ষোলকোটি অসহায়ের এই বাংলাদেশে। প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরম্ন করে বিরোধী দলীয় নেত্রী পর্যমত্ম কেউ-ই বাদ যাননি এই উল্টাপাল্টা বক্তব্য থেকে। ১৩ অক্টোবর, ২০১১-এ ’অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, ‘পদ্মা সেতু প্রকল্পে কোনো দুর্নীতি হয়নি। এখন পর্যন্ত ভূমি অধিগ্রহণ ও পুনর্বাসনের কাজ হয়েছে। যমুনা সেতুর সময় এ দুই কাজে দুর্নীতি হলেও পদ্মা সেতুর বেলায় তা হয়নি। ১৩ অক্টোবর, ২০১১-এ সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন বলেছেন ‘ভিত্তিহীন তথ্য নিয়ে বিশ্বব্যাংক প্রতিবেদন তৈরি করেছে। বিশ্বব্যাংক আমাকে নয়, টার্গেট করেছে সরকারকে। আমি না হয়ে এই মন্ত্রণালয়ে ‘জয়নাল’ থাকলে তাঁকেও টার্গেট করা হতো।’ ২৭ জানুয়ারি, ২০১২- তে প্রধানমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণ করতে হবে। যদি প্রমাণ করতে না পারে, তাহলে দাতাদের কাছ থেকে আমরা পদ্মা সেতুর জন্য কোনো অর্থ নেব না।’ ৩০ জুন, ২০১২- তে বর্তমান যোগাযোগ ও রেলমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেও বলেছেন, ‘এটা দুঃখজনক, দুর্ভাগ্যজনক ও রহস্যজনক। তদন্ত চলা অবস্থায় বিশ্বব্যাংক এটা করে একটা দেশকে দুর্নীতিবাজ করতে পারে না। এর পরও আগামী আট মাসের মধ্যে পদ্মা সেতুর কাজ শুরম্ন হবে।’ ২৪ জুলাই ২০১২ বিরোধী দলীয় নেত্রী বেগম জিয়া বলেছেন, বর্তমান সরকার দূর্নীতিবাজ; এর প্রমাণ বিশ্বব্যাংকের বক্তব্য।

এখন কথা হলো- আসলেই কি এই দেশে তথাকথিত রাজনীতিকগণ পদ্মা সেতু বাসত্মবায়ন চান? আমারতো মনে হয় না। যদি চাইতেন তাহলে উন্নয়নশীল এই দেশে দূর্নীতির অভিযোগ আসার সাথে সাথে কোথায় দূর্নীতি হয়েছে তা উদঘাটন করে দেখানো হতো যে, এখানে দূর্নীতি হতে যাচ্ছিল; আমরা তা প্রতিহত করেছি। সরকারের সাথে সাথে বিরোধী দল সেই কাজকে সাধুবাদ জানাতো এবং কন্ঠ মিলিয়ে বলতো- না কোন রকম দূর্নীতি হচ্ছে নাতো…

কিন্তু তা না করে প্রধানমন্ত্রী বলছেন নিজস্ব অর্থায়নে হবে বাংলাদেশের স্বপ্ন সেতু পদ্মা সেতু। বিরোধী দল নেত্রী বলছেন, না কোনদিনও এভাবে পদ্মা সেতু বাসত্মবায়ন হবে না। এমবতস্থায় আমরা একটি নয় দু’টি সেতু পেতে পারি দুনেত্রীর ব্যাক্তিগত অর্থায়নে। একটি পদ্মা সেতু আরেকটি হোক বৃহত্তর দÿÿণাঞ্চলের মানুষের আজন্মকালের ভোগামিত্ম থেকে রেহাইর পথ লক্ষ্মীপুরের সাথে বরিশালের সড়ক যোগাযোগ সহজতর করার জন্য মধ্যবর্তি মেঘনা নদীতে একটি সেতু( সেই সেতুর নাম হতে পারে শেরে বাংলা সেতু)। এÿÿত্রে পদ্মা সেতু’র ব্যায় নির্বাহ করতে পারেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া; তাতে করে জনগন তার উদারতার প্রমাণও পেলো; পাশাপাশি সুযোগ তৈরি হলো আরেকবার ÿমতায় আসার। ব্যাক্তিগত অর্থায়নে আমাদের দেশে না হলেও বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রধানমন্ত্রী-রাষ্ট্রপতিগণ দেশের উন্নয়ন কর্মকান্ড করে থাকেন; যার :ধারাবাহিকতা আমাদের দেশেও অব্যহত থাকতে পারে খালেদা জিয়ার এই উদ্যোগের মধ্যদিয়ে। তাছাড়া হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশের মাটিতে ফেলে না রেখে সেই টাকায় আমাদের দেশের একটি স্বপ্ন যদি অমত্মত বাসত্মবায়ন হয়; মন্দ কি? একই কথা আমাদের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেলায়ও। তিনি তাহলে শেরেবাংলা সেতুটি বাসত্মবায়ন করে দেবেন দেশের কথা ভেবে। কোন রকম ফরিদপুর- গোপালগঞ্জ বা  কোটালিপাড়া নিয়ে ভাবনা নয়; ভাবনা হবে বাংলাদেশ। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক কোটালিপাড়া বা গোপালগঞ্জের সমত্মান নন; তিনি বাংলাদেশের সমত্মান। অতএব উন্নয়ন কর্মকান্ড ঘুরেফিরে গোপালগঞ্জ বা কোটালিপাড়ায় আর নয়; এবার দু’নেত্রীর ব্যাক্তিগত অর্থায়নে আমরা দু’টি সেতু পাবো। যা বাংলাদেশের মানুষের কাছে এখন স্বপ্নজ চাহিদা। মানুষের হাতের নাগালের বাইরে দ্রব্যমূল্য; লোডশেডিংময় আমাদের রাতদিন; নিরাপত্তাহীনতায় আমাদের মানচিত্র; তারপরও এই সেতু দু’টি দু’নেত্রী বাসত্মবায়ন করলে তারা শুধু সমালোচনার উর্ধেবই উঠবেন না; সারাদেশের মানুষ সকালের সূর্যের মত করে সম্মান আর শ্রদ্ধা ঢেলে দেবে আপনাদের পদতলে। তাহলে আর দেরী কেন? নতুন মত নতুন পথ- তৈরির এই কার্যক্রমে এগিয়ে আসুন প্রাণের আনন্দে। কেননা, আপনাদের দু’জনের কাছেই আছে পর্যাপ্ত পরিমান অর্থ। যা দিয়ে আমাদের স্বপ্ন বাসত্মবায়ন সম্ভব। আর তাই কোন দান-খয়রাত-চাঁদাবাজি বা অনুদান ভিÿÿ না করে দু’নেত্রীকে চাই হাসিমুখে জনতার পাশে; সেতু বাসত্মদবায়নের জন্য…

মোমিন মেহেদী : মেয়র প্রার্থী, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন ও কলামিস্ট

www.mominmahadi.com

অতিথি লেখক