প্রাকৃতিক আঁধার মানুষের জীবনের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ

প্রাকৃতিক আঁধার মানুষের জীবনের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ

এসবিডি নিউজ24 ডট কম,ডেক্সঃ শহরের জীবন! রাত নামলেই যেখানে কৃত্রিম আলোর বন্যা। আলো আর আলো। ফুটবল-ক্রিকেটের মাঠ থেকে শুরু করে শহরের আনাচকানাচে আলোর মিছিল। এখানে রাত-দিনের পার্থক্য ধরা কঠিন। মানুষ এখন প্রকৃতির আলো-আঁধারির সৌন্দর্য ভুলে প্রযুক্তি আর কৃত্রিম আলোয় ভাসিয়ে দিয়েছে শহুরে জীবনকে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের চিকিৎসকেরা বলছেন, প্রকৃতির নিয়মে যে আঁধার নামে, ওই আঁধার মানুষের জীবনের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ। তাই শহুরে জীবনে শুধুই কৃত্রিম এ আলোর পথযাত্রী হলে চলবে না, অন্ধকারকেও ভালোবাসতে শিখতে হবে, রাতের আঁধারের অস্তিত্বে নিজেকে মেশাতে হবে।
শহুরে জীবনে বৈদ্যুতিক বাতির আধিক্যের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে টেলিভিশন, কম্পিউটার, ট্যাবলেট, মোবাইল ফোনসহ অসংখ্য প্রযুক্তিপণ্য থেকে নির্গত কৃত্রিম আলো। মানুষ প্রতিনিয়তই এ আলোর মধ্যে নিজেকে সঁপে দিচ্ছে। চিকিৎসকেরা আশঙ্কা করছেন, অন্ধকারের অনুপস্থিতি আর আলোর আধিক্য মানুষের দেহঘড়ির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ইতিমধ্যেই ফেলতে শুরু করেছে।
মার্কিন চিকিৎসকদের সংগঠন ‘আমেরিকান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন’ (এএমএ) এ বছরের জুন মাসে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, আলো-আঁধারির স্বাভাবিক প্রক্রিয়া ব্যাহত হওয়ার কারণে মানুষের শরীরে প্রভাব পড়ছে। মানুষের ঘুমের সমস্যা তৈরি হচ্ছে, এখন মানুষ নিয়ম মেনে ঘুমায় না, সঠিক সময়ে সঠিক কাজ করে না। গবেষকদের মতে, মানুষের দেহঘড়ি সচল রাখতে ঘুম অতি প্রয়োজনীয়। এ ছাড়া মানুষের স্মৃতি গুছিয়ে রাখাসহ জৈবিক প্রক্রিয়া রাতের আঁধার পেলে তবে সক্রিয় হয়ে ওঠে। কিন্তু শহুরে জীবনের আলোর আধিক্য মানুষের শরীরবৃত্তীয় কাজে বাধা সৃষ্টি করছে। এর ফলে সৃষ্টি হচ্ছে মরণব্যাধি। স্থূলতা, ডায়াবেটিস থেকে শুরু করে ক্যানসারেরও কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে কৃত্রিম আলোর অতি ব্যবহার।
প্রকৃতির নিয়মেই দিন গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়। এরপর নামে রাত। মানুষের কাজকর্ম গুছিয়ে রাতের আঁধারে বিশ্রাম নেওয়ার পালা। কিন্তু এখন সন্ধ্যা হতে না হতেই শহরের প্রতিটি বাড়ি, রাস্তাঘাট আর আনাচকানাচে জ্বলে ওঠে অসংখ্য বাতি। নীরব-নিস্তব্ধ কোনো দূরের এলাকা থেকে চোখে পড়ে না-ঘুমানো শহরের ব্যস্ত কোলাহলমুখর মানুষের কর্মচাঞ্চল্য। সভ্যতার অগ্রগতির সঙ্গে মানুষ জয় করেছে অন্ধকারও। বিদ্যুতের আবিষ্কারের ফলে মানুষ হার মানিয়েছে রাতের আঁধারকে। এখন রাত হলেও আঁধারে ঘুমায় না শহরের মানুষ। আলোর ফোয়ারা তাদের চোখ থেকে ঘুমের রেশ টেনে ধরে। এখন সূর্য অস্তাচলে গেলেও পৃথিবীর শত শত শহরে অন্ধকার নামে না। মানুষ এখন কৃত্রিম আলোর মধ্যেই তার ২৪ ঘণ্টা সময় পার করছে। এর প্রভাব পড়ছে পুরো সমাজব্যবস্থার ওপর, বাদ পড়ছে না সদ্যভূমিষ্ঠ শিশুও।
যুক্তরাষ্ট্রের কানেকটিকাট বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যানসার-গবেষক রিচার্ড স্টিভেন্স জানিয়েছেন, ‘আলো-দূষণের বিষয়টি অন্যতম প্রধান স্বাস্থ্যসমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছে এএমএ। পাশাপাশি এটা পরিবেশদূষণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট, যা আমাদের সমাজে স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলছে। আমরা বিষয়টি নিয়ে গভীরভাবে ভাবছি। সবাইকে বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়া উচিত।’
স্টিভেন্স জানিয়েছেন, শরীরের ওপর কৃত্রিম আলোর ব্যবহারে প্রভাব পড়ার বিষয়টি ইতিমধ্যে প্রাণীর ওপর পরীক্ষা করে দেখা হয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, সারাক্ষণ কৃত্রিম আলোয় থাকলে আঁধারের অভাবে শরীরবৃত্তীয় কাজে বাধার সৃষ্টি হয়। শরীরের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ মেলাটোনিন নামের হরমোন উত্পন্ন হতে বাধা দেয় কৃত্রিম আলোর অতি ব্যবহার।
শহরের কৃত্রিমতায় পরিবেশদূষণের মধ্যে এখন যোগ হয়েছে ‘আলোদূষণ। পানিদূষণ, শব্দদূষণের মতোই আধুনিক নগরজীবনে এখন রাতের আঁধার নামে না, নামে দূষিত কৃত্রিম আলোর এক মরণফাঁদ। ‘লাইট পলিউশন: অ্যাডভার্স হেলথ এফেক্টস অব নাইট-টাইম লাইটিং’ নামে এএমএর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাতে উজ্জ্বল কৃত্রিম আলোয় বেশিক্ষণ থাকলে ঘুমোতে অসুবিধা তো হয়ই, পাশাপাশি মানসিক চাপ, হতাশা ও দুশ্চিন্তার কারণ হতে পারে। হতে পারে স্থূলতা, হূদরোগ, ডায়াবেটিস। হতে পারে মরণব্যাধি ক্যানসারও।

সূত্রঃ ইন্টারনেট।

আন্তর্জাতিক ডেস্ক