ইন্টারনেট নিয়ন্ত্রণে জাতিসংঘ!

ইন্টারনেট নিয়ন্ত্রণে জাতিসংঘ!

রুমপ হালদার,এসবিডি নিউজ24 ডট কমঃ ইন্টারনেটের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিতর্ক এখন তুঙ্গে। গত দুই বছরে আরব দেশগুলোর বিদ্রোহে ইন্টারনেটের ব্যবহার বেশ লক্ষণীয়। এ সাইবার ব্যবস্থাটি যে বিভিন্ন সময়ে মোক্ষম অস্ত্র হিসেবে কাজ করতে সক্ষম, তা আর কারও জানার বাকি নেই। তাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মতো বিশাল সামরিক বপুর দেশগুলো বারবার ইন্টারনেট নিয়ন্ত্রণের দাবি জানাচ্ছে। কিন্তু নিয়ন্ত্রণ কৌশলটি ঠিক কী ধরনের হবে, বা কে নিয়ন্ত্রণ করবে, তা বিতর্কের ঊর্ধ্বে উঠে যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে, নিয়ন্ত্রণের নাটাইটি থাকবে জাতিসংঘের হাতে। গত বছরের ডিসেম্বরে দুবাইয়ে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং বিভিন্ন আরব দেশের প্রতিনিধিদের নিয়ে এক বৈঠক হয়। এনডিটিভির এক খবরে ২৯ অক্টোবর (সোমবার) বলা হয়, ওই বৈঠকের মূল লক্ষ্য ছিল বৈশ্বিক টেলিকম আইন সংস্কার করে ইন্টারনেট নিয়ন্ত্রণের সব দায়িত্ব জাতিসংঘের হাতে তুলে দেয়া। রাশিয়া, চীনসহ অনেক দেশের প্রতিনিধিরা চান ইন্টারনেট নিয়ন্ত্রণের কর্তৃত্ব থাকুক আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ইউনিয়নের (আইটিইউ) হাতে। জাতিসংঘের এই সংস্থা বৈশ্বিক টেলিফোন যোগাযোগের প্রযুক্তিগত মান নির্ধারণ করে থাকে। কিন্তু মার্কিন প্রতিনিধিরা সেটি করতে নারাজ। তাঁদের বক্তব্য ছিল, নতুন নিয়ম চালু হলে সাইবার স্পেস বা ইন্টারনেটের স্বচ্ছন্দ গতি বাধা পাবে; ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বাণিজ্য ও বাকস্বাধীনতা। অনেক স্বেচ্ছাচারী রাষ্ট্র এর মাধ্যমে ভিন্নমতাবলম্বীদের ওপর নিপীড়নের সুযোগ পাবে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, অনেক দেশ নতুন নিয়মের পক্ষে সোচ্চার হলেও ক্ষমতাধর পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলো এর বিরোধিতা করবে। এতে উন্নয়নশীল দেশগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। ওয়াশিংটনভিত্তিক সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের প্রযুক্তি ও জননীতি কার্যক্রমের পরিচালক জেমস লুইস বলেন, ‘এসব আলোচনা খুব বেশি দূর এগোবে বলে মনে হয় না। নাটকীয় কোনো পরিবর্তনও আসবে না। তবে উন্নয়নশীল দেশগুলো চাপাচাপি করলে কিছু একটা হতে পারে। কিন্তু ইন্টারনেট কীভাবে চলবে, তা নিয়ে মতপার্থক্য রয়েই যাচ্ছে এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রকে এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করতেই হবে।’

লুইস বলেন, একটি প্রচলিত ভুল ধারণা হলো, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইন্টারনেটের স্বত্বাধিকারী ও নিয়ন্ত্রক। বিরোধীদের একটি ‘শক্ত যুক্তি’ হলো, ইন্টারনেট নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি বিশ্ব সংস্থা প্রয়োজন। কিন্তু নতুন আইনটি যেন মানবাধিকার রক্ষার প্রশ্নে দেশীয় আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক না হয়, তা আমাদের লক্ষ রাখতে হবে।’ দুবাই বৈঠকে বিশেষ মার্কিন প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন টেরি ক্রামের। সম্প্রতি এক সভায় তিনি বলেন, ‘কোনো ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠান, সরকার বা বহুজাতিক কোম্পানি ইন্টারনেটের স্বত্বাধিকারী নয় বলেই যথাযথভাবে এর বিকাশ সম্ভব হয়েছে। ইন্টারনেটের কোনো কেন্দ্রীয় কার্যালয় নেই। এর উন্মুক্ততা ও বিকেন্দ্রীকরণই এর শক্তি।’
আইটিইউর প্রধান হামাদোন তোরে বলেন, বিশ্বের সবচেয়ে পুরোনো আন্তরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠান হিসেবে তাঁর সংস্থাটি অনেক অভিজ্ঞ। ‘দ্য গার্ডিয়ান’-এর এক কলামে তিনি লিখেছেন, প্রচলিত আইনটি এমনভাবে সংস্কার করতে হবে যাতে আইটিইউর প্রধান অংশীদারদের স্বার্থ অক্ষুণ্ন থাকে। কিন্তু, মার্কিন বেসরকারি সংস্থা পাবলিক নলেজের কর্মকর্তা হ্যারল্ড ফেল্ড বলছেন, এ ক্ষেত্রে যেকোনো নতুন আইন বিপজ্জনক হতে পারে। কিছুদিন আগে ফেল্ড তাঁর ব্লগে লিখেছেন, রুশ ফেডারেশন এবং কিছু আরব রাষ্ট্রের এসব প্রস্তাব থেকে এই প্রথমবারের মতো অনলাইন যোগাযোগ ও ইন্টারনেট সেবায় বাধা দেওয়ার সরকারি অভিসন্ধি বোঝা গেল। স্টিভেনস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির সাইবার নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত পল রোমেয়ার বলেন, ওই বৈঠকে স্বচ্ছতার অভাবের কারণে অনেক বিভ্রান্তি রয়ে গেছে। তিনি বলেন, ইন্টারনেট নিয়ন্ত্রণের জন্য কেন আইটিইউকে বেছে নেয়া হচ্ছে, সেটি এখনো অজানা।

কিছু পর্যবেক্ষক বলছেন, সাইবার স্পেসের নিরাপত্তার জন্য হুমকি তৈরি করেছে এমন একটি ভাইরাস হলো ফ্লেম। আইটিইউ নিজের নিরাপত্তায় শঙ্কিত হয়ে ভাইরাসটি পর্যবেক্ষণের জন্য একটি রুশ প্রতিষ্ঠানকে ভাড়া করেছে। রোমেয়ার বলেন, ‘এর পেছনে কোনো চক্রান্ত চলছে কি না বোঝা মুশকিল। বলা হচ্ছে, ইন্টারনেট একটি বিপজ্জনক স্থান এবং এর সুবাদে আরও নিয়ন্ত্রণ আরোপের চেষ্টা চলছে।’ যুক্তরাষ্ট্রের সাইরাকাস বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যপ্রযুক্তিবিদ্যার অধ্যাপক মিলটন ম্যুলার বলেন, যেসব বিষয় নিয়ে এত কথা হচ্ছে, সেগুলোর বেশির ভাগই অপ্রাসঙ্গিক। আইটিইউ এরই মধ্যে সব রাষ্ট্রকে নিজেদের যোগাযোগব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণের কর্তৃত্ব দিয়ে দিয়েছে। ম্যুলার বলেন, টেলিযোগাযোগ উন্মুক্ত করার ফলে সৃষ্ট অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতায় নিজেদের রক্ষার জন্য প্রতিক্রিয়াশীল সরকারগুলো যে নিয়মগুলো আরোপ করতে যাচ্ছে, সেগুলো নানা বিতর্কের ডামাডোলে হারিয়ে যাচ্ছে। মনে রাখতে হবে, এসব নিয়ন্ত্রণের মাত্র একটি হলো ইন্টারনেট।

আন্তর্জাতিক ডেস্ক