গুমঃ সাম্প্রতিক সময়ে আতঙ্কিত একটি শব্দ

গুমঃ সাম্প্রতিক সময়ে আতঙ্কিত একটি শব্দ

শুভাশিস ব্যানার্জি শুভঃ  বাংলাদেশে রাজনীতিতে একটি শব্দ আমরা খুব শুনতে পাই। গুম । আমরা কিছু দিন আগে একজন নেতার নিখোঁজ হওয়ার কথা শুনেছি। বিএনপি সমর্থক ইলিয়াস আলী গুম হওয়ার খবর পাওয়া যায় ১৯ এপ্রিল রাতে।  সরকার তাকে খোঁজার চেষ্টা করছে জানালেও অদ্যাবধি তার খোঁজ পাওয়া যায়নি। বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে গুম হ্ত্যা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে গেছে বলে দাবি করছে বিভিন্ন গণমাধ্যম,মানবাধিকার সংস্থা ও বিরোধীদলগুলো। কিন্তু সরকারি দলের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে দেশের আইনশৃঙ্খলা, অর্থনীতি সবকিছুই স্বাভাবিক আছে। গত ১৯ এপ্রিল রাতে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ইলিয়াস আলী নিখোজ হওয়ার পর দেশের বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, কেবল সিলেট জেলায় গত এপ্রিল মাসে ব্যবসায়ী রাজনীতিবিদসহ নিখোঁজ হয়েছে ছয়জন। আর বেসরকারি সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, গত আড়াই বছরে নিখোঁজ হয়েছে অন্তত ১০০ জন। এদের সবাই সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে নিখোঁজ হয়েছে। এদের মধ্যে ২১ জনের লাশ পাওয়া গেলেও বাকি ৭৬ জনের লাশ এখনো পাওয়া যায়নি। আর বিরোধীদলগুলো দাবি করছে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর বিভিন্ন দলের কয়েক হাজার কর্মী নিখোঁজ হয়েছে। তবে সবশেষে সাবেক রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের এপিএসের গাড়ি চালক আজম ও বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীর নিখোঁজের খবর সারাদেশে ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে।

সম্প্রতি গুম নিয়ে জনমনে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। এই নিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতির মাঠ গরম হয়ে উঠেছে। জানা যায়, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার কিছুদিন পর নিখোঁজ হন জহির রায়হান । বলা যেতে পারে সেটিই শুরু। ১৯৭১ থেকে ১৯৭৫ এ নিখোঁজ এর সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি। ১৯৭৫-১৯৯১ এই সময়টাতে অনেক সেনা কর্মকর্তা গুম হোন। তার তালিকাও কেউ দিতে পারেনি। তবে গুম বড় আকার ধারণ করে ১৯৯১ সালের পরে। তবে আতঙ্ক হিসেবে সামনে আসে ২০০১ সাল থেকে । ২০০১ থেকে এ পর্যন্ত ৮৫৯৯ জন মানুষ নিখোঁজ হয়েছেন বলে পুলিশের নথিতে আছে। অলোচিত একটি হচ্ছে ২০০১ সালের ব্রিটিশ এক পর্যটককে অপহরন করা হয়। ২০০১ থেকে ২০০৫ এর মধ্যে আলোচনায় আসে অপহরনের পর খুনের ব্যাপারটি। খুন করে লাশ টুকরো করে ফেলার মত ঘটনাও ঘটছে। তবে গত ২৭ মাসে ১২৫ জন মানুষ কে অপহরন বা গুম করা হয় যার মধ্যে অধিকাংশ ব্যক্তি রাজনীতির সাথে জড়িত,যার মধ্যে ৩ জনকে ছেড়ে দেয়া হয়,লাশ পাওয়া যায় ২১ জনের আর বাকিদের কোন খবর নেই ।

প্রাপ্ত তথ্যঃ গত তিন বছরে গুম হয়েছেন ৭২ জন । ২০১০ সালে ১৮ জন,২০১১ সালে ৩০ জন এবং চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ২৪ জন গুম হয়েছেন বলে মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকার’ তথ্য প্রকাশ করেছেন। সম্প্রতি চট্টগ্রাম নগরের একটি হোটেলের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত ‘গুম হওয়া থেকে সকল ব্যক্তির সুরক্ষার জন্য আন্তর্জাতিক সনদ অনুমোদনের প্রচারাভিযান’ শীর্ষক আলোচনা সভায় অধিকার এ তথ্য প্রকাশ করে।
সভায় জানানো হয়,বাংলাদেশ ১৯৯৮ সালে কনভেনশন অ্যাগেইনস্ট টর্চার অনুস্বাক্ষর করেছে, কিন্তু এখনো গুমবিরোধী আন্তর্জাতিক কনভেনশন অনুমোদন করেনি। ২০০৬ সালের ২০ ডিসেম্বর গুম হওয়া থেকে সকল ব্যক্তির সুরক্ষার জন্য আন্তর্জাতিক সনদটি জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে গৃহীত হয়। মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্রের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে,অর্থনৈতিক,সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকারসংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সনদ,নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারসংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সনদ,মানবাধিকার ও জনহিতকর আইন,আন্তর্জাতিক অপরাধ আইন ও অন্যান্য প্রাসঙ্গিক দলিলগুলো বিবেচনায় রেখে এ কনভেনশনটি প্রণয়ন করা হয়েছে। ২০১২ সালের আগস্ট পর্যন্ত ৯১টি দেশ গুম হওয়া বিরোধী সনদে স্বাক্ষর করেছে এবং ৩৪টি দেশ এ আন্তর্জাতিক সনদ অনুসমর্থন বা গ্রহণ করেছে। কনভেনশনের ৩৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ২০টি দেশ এ চুক্তির পক্ষরাষ্ট্র হওয়ার ৩০ দিন পর ২০১০ সালের ২৩ ডিসেম্বর এটি কার্যকর হয়েছে।

গুম বলতে যা বোঝানো হচ্ছেঃ সহজ কথায় প্রকাশ্যে মানুষকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। তারা আর ফিরে আসে না। বলা হয় বিভিন্ন সংস্থার নাম। আটককৃতদের স্বজনরা সম্ভাব্য সব স্থানে ধরনা দেন। কোথাও তাদের সন্ধান মেলে না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও তাদের গ্রেফতারের বিষয়টি অস্বীকার করে। এরপর সময় গড়িয়ে যায়। দুই-একজন নিখোঁজ ব্যক্তির স্বজন সংবাদ সম্মেলন ডেকে অন্তত লাশ পাওয়ার দাবি করেন। সরকারের উচ্চমহলে কেউ কেউ যোগাযোগ করেন। কোনো কোনো ঘটনা খতিয়ে দেখার চেষ্টা হলেও তা মাঝপথে থেমে যায়। বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি বা নিখোঁজ ব্যক্তির সন্ধান না করতে স্পষ্ট হুমকি দেয়া হয়। ফলে স্বজন হারিয়ে কেউ কথা বলতেও সাহস পান না। এরপরও একজন স্বজন মামলা করেছিলেন। কিন্তু তার পরিণতি হয়েছে একই। মামলার বাদীকেও একইভাবে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সম্প্রতি দেশে এভাবেই লোকজনের গুম হওয়ার প্রবণতা দেখা দিয়েছে। এ তালিকায় শীর্ষসন্ত্রাসী থেকে শুরু করে নিরীহ লোকজন রয়েছে। যত দিন যাচ্ছে তালিকায় বেড়ে যাচ্ছে নিখোঁজ ব্যক্তিদের নাম। র‌্যাব গঠনের পর শুরু হয় ক্রসফায়ার। সব ক্রসফায়ারের গল্প ছিল একই ধরনের। পরে ক্রসফায়ার শব্দের বদলে এনকাউন্টার শব্দটি প্রয়োগ করা হতো। এরপর বর্তমান সরকারের আমলে এর নাম হয় বন্দুকযুদ্ধ। কিন্তু উচ্চ আদালত বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড বন্ধে সোচ্চার ভূমিকা নেন। তবে চূড়ান্ত শুনানির আগেই সংশ্লিষ্ট বেঞ্চ ভেঙে দেয়া হয়। আদালতের এ অবস্থানের কারণে দৃশ্যত ক্রসফায়ার কমলেও শুরু হয় গুপ্তহত্যা আর অন্তর্ধান। দেখা গেছে, পরিবারের কেউ একজন চোখের সামনে গুম হয়ে গেলে বাকি সদস্যদের জীবনধারণও দুর্বিষহ হয়ে পড়ে। অপেক্ষার পালা যেন কোনো দিনও শেষ হয় না। তারাও জীবন্মৃত হয়ে বেঁচে থাকার কষ্ট ভোগ করেন। গুম প্রবণতা চালু হওয়ার আগে বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ডের শিকার লোকজনের লাশ ফেরত পেতেন স্বজনরা। এখন আর তাও পাওয়া যায় না।

মানবাধিকার সংস্থাগুলোর ব্যাখ্যা দাবিঃ ১১ মে আইন ও সালিশ কেন্দ্র দেশব্যাপী গুপ্তহত্যা বেড়ে যাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করে। এক বিবৃতিতে তারা বলে, সম্প্রতি পুলিশ ও র‌্যাব পরিচয়ে লোকজনকে বাসা ও রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এ ধরনের গুপ্তহত্যা ফ্যাসিস্ট দেশগুলোতে হয়ে থাকে। গণতান্ত্রিক সমাজে এ ধরনের কর্মকান্ড কোনোক্রমেই গ্রহণযোগ্য নয়। তারা এ ধরনের হত্যা বন্ধে এবং তদন্ত করে অপরাধীদের বিরুদ্ধে দ্রুত কার্যকর আইনি ব্যবস্থা নিতে সরকারের কাছে আহবান জানায়।
মানবাধিকার সংস্থা ‘অধিকার’ এক বিবৃতিতে বলেছে, সম্প্রতি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয় দিয়ে আটকের পর অনেকের কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না এবং পরে কারো কারো লাশ উদ্ধার হচ্ছে। ভিকটিমদের পরিবারগুলো দাবি করেছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাই তাঁদের আটক করে নিয়ে গেছেন এবং এরপর অনেকের লাশ উদ্ধার হয়েছে। অধিকার এ ধরনের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে এবং দ্রুত নিখোঁজ ব্যক্তিদের উদ্ধার ও গুপ্তহত্যার বিষয়ে সরকারের কাছে প্রকাশ্য ব্যাখ্যা দাবি করছে।

মামলা করার পর বাদীও নিখোঁজঃ নিখোঁজ ভাইয়ের সন্ধান করতে গিয়ে রোষানলে পড়েছেন আরেক ভাই। এ ঘটনায় দুই ভাইয়ের সঙ্গে আরো একজনসহ মোট তিনজন নিখোঁজ হয়েছেন। এদের কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। অধিকার জানিয়েছে, ১৯ মার্চ বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে র‌্যাবের নাম করে ঠাকুরগাঁও সালেন্দার নওলাপাড়ার চান মিয়ার বাড়ির ভাড়াটিয়া কাঠ ব্যবসায়ী মো. আকবর আলী সরদার এবং একই গ্রামের বিপিনচন্দ্র সরকারকে সালেন্দার বিশ্ব ইসলামী মিশন মসজিদের সামনের রাস্তা থেকে আটক করে নিয়ে যাওয়া হয়। ২০ মার্চ সকাল ১০টার দিকে বিপিন সরকারকে র‌্যাব ছেড়ে দিলেও আকবরের কোনো খোঁজ এখনো পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। বিপিন সরকার বলেছেন, তাকে র‌্যাব সদস্যরাই ছেড়ে দিয়েছেন। আকবরের পরিবারের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে ঠাকুরগাঁও থানায় জিডি বা মামলা করতে চাইলে থানা পুলিশ এর কোনোটাই গ্রহণ করেনি। পরে আকবরের পরিবার ঠাকুরগাঁও পুলিশ সুপারের মাধ্যমে র‌্যাবের কাছে আকবরের খোঁজ করলে তারা আকবরের আটকের বিষয়টি অস্বীকার করে। আকবরের ভাই আইয়ুব আলী ভাইয়ের এ অন্তর্ধানের বিষয়টি মেনে নিতে পারেননি। তিনি ২৯ মার্চ আদালতে একটি মামলা করেন। তিনি সাংবাদিকদের কাছে র‌্যাব তার ভাইকে অপহরণ করেছেন বলে অভিযোগ করেন। আইয়ুব আলী ওই সময় জানান, সাংবাদিকদের কাছে র‌্যাবের বিরুদ্ধে তার ভাইকে অপহরণের অভিযোগ করায় হিরু শেখ পরিচয় দিয়ে এক ব্যক্তি তার মোবাইল ফোনে হুমকি দেয়। আকবরের বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে তারও একই পরিণতি হবে বলে জানায় সে। হুমকি পেয়ে আইয়ুব আলী রাজধানীর খিলগাঁও থানায় একটি জিডি করেন। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। ১৭ মে রাত ১০টার দিকে আইয়ুব আলীও নিখোঁজ হন। খিলগাঁও বনশ্রী প্রজেক্ট এলাকায় আইয়ুব আলী খিলগাঁও থানা নির্মাণ শ্রমিক লীগের প্রচার সম্পাদক আবদুর রহমানের সঙ্গে কথা বলার সময় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা তাদের আটক করে নিয়ে যায়। এরপর থেকে আইয়ুব আলী ও আবদুর রহমানের হদিস মিলছে না বলে তাদের পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে। ১৩৪ মেরাদিয়া মধ্যপাড়ার বাসিন্দা আইয়ুব আলীর স্ত্রী হালিমা বলেন, ‘তারে মোবাইলে হুমকি দিছে। বলছে, মামলার বাদী হইছো। তোরেও তোর ভাইর মতন মাইরা ফালামু।’

ব্যর্থ মানবাধিকার কমিশনঃ ২০০৭ সালের ১ ডিসেম্বর বরিশালের ছাত্রলীগ নেতা শফিকউল্লাহ মোনায়েমকে র‌্যাব পরিচয়ে তার কাউনিয়ার বাসা থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় বলে তার পরিবারের অভিযোগ। এখন পর্যন্ত তার পরিবার জানতে পারেনি মোনায়েম বেঁচে আছেন নাকি তাকে মেরে ফেলা হয়েছে। তিনি এনকাউন্টার বা ক্রসফায়ারে নিহত হয়েছেন কি না তারও কোনো প্রমাণ নেই। ২০০৮ সালের ১ ডিসেম্বর মোনায়েমের ভাই মানবাধিকার কমিশনের কাছে অভিযোগ করেন। ওই সময় প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশে পুলিশ তদন্ত করে ঘটনার নেপথ্যে একজন পৌর কমিশনারের ভূমিকাও খুঁজে পেয়েছিল। এ ঘটনায় মানবাধিকার কমিশন ২০০৯ সালের ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে মোনায়েমের অবস্থান জানাতে পুলিশ ও র‌্যাবকে সময়সীমা বেঁধে দেয়। জানা গেছে, র‌্যাব দায়সারাগোছের একটি রিপোর্ট ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে পাঠালেও পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো প্রতিবেদন দেয়া হয়নি। ৩ সেপ্টেম্বর গণমাধ্যমকে মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান আমিরুল কবীর চৌধুরী জানিয়েছিলেন, একজন নাগরিককে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়ার পর তার কোনো হদিসও পাব না এটা তো হয় না। তিনি অভিযোগ করেছিলেন, ৩০ আগস্টের মধ্যে আমাদের কাছে একটি প্রতিবেদন পাঠানোর জন্য আইজিপি ও র‌্যাবের ডিজিকে অনুরোধ করেছিলাম। সেই প্রতিবেদন তারা দেননি। কমিশনের এ তৎপরতা কোনো কাজে আসেনি।

বিশেষজ্ঞদের অভিমতঃ নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী এনামুল হক দানু বলেন,‘গুম হচ্ছে একটি অদৃশ্য বিষয়,যে বা যিনি গুম হয়েছেন তিনি ছাড়া আর কেউ জানেন না। আমাদের মানবাধিকার সংগঠনগুলোকে রিমান্ডের নামে কথা আদায়ের যে অমানবিক প্রক্রিয়া ‍তার বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে।’ গুমের ঘটনা বৃদ্ধির পেছনে রাজনৈতিক অবক্ষয়কে দায়ী করে চবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি মোজাফফর আহমদ চৌধুরী বলেন, ‘জীবন, সম্পত্তি ও স্বাধীনতা রক্ষায় রাষ্ট্রের সৃষ্টি। রাষ্ট্র পরিচালনা করেন রাজনীতিবিদেরা। আজকের রাজনীতি হচ্ছে একধরনের ব্যবসা। দেশপ্রেমী, ত্যাগী ও সত্যিকারের রাজনীতিকদের হাতে রাজনীতি নেই। আগে ভালো মেধাবী আদর্শবান ছাত্ররা রাজনীতি করতো, এখন পেশিশক্তির অধিকারী ও চাঁদাবাজরাই রাজনীতি করছে।’ বিএনপির নেতা আবু সুফিয়ান বলেন, ‘গুম আমার দল করলে ভালো, প্রতিপক্ষ দল করলে খারাপ, এ সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। খারাপ সব সময়ের জন্যই খারাপ। অনেক ইলিয়াস আলী গুম হয়েছে। আমরা ‍চাই আইনের শাসন, যার যার মর্যাদা, অধিকার নিয়ে আমরা বাঁচতে চাই।’ কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি রাজা মিয়া বলেন,‘গণতান্ত্রিক দেশে গুমের ঘটনা মেনে নেয়া যায় না। এ ঘটনা প্রতিরোধের জন্য প্রতিটি রাজনৈতিক দলেই গণতান্ত্রিক চর্চা,অনুশীলন দরকার।’

শেষ কথাঃ বর্তমানে যেভাবে লোকজন নিখোঁজ হয়ে যাচ্ছেন তা উদ্বেগজনক। পরিস্থিতি এমন দিকে যাচ্ছে যে, এখন ব্যক্তিগত শত্রুতাও এর মাধ্যমে নিবারণ করা হচ্ছে। এটা গণতান্ত্রিক সমাজ গঠনে বড় বাধা। এর আগে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এভাবে নিখোঁজ হয়ে যেত লোকজন। ওইসব দেশের সরকার ফ্যাসিস্ট হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। এ কারণেই সমাজ ও রাষ্ট্রে গণতন্ত্রের বিকাশের জন্য এ ধরনের পন্থা ত্যাগ করা উচিত। গণতন্ত্র ও সরকারের ভাবমূর্তি রক্ষার স্বার্থেই অবিলম্বে মানবাধিকার কমিশন পুনর্গঠন, আইন সংশোধনসহ এ ব্যাপারে আরো শক্ত ভূমিকা নেয়া দরকার।

শুভাশিস ব্যানার্জি শুভঃ সম্পাদক,এসবিডি নিউজ24 ডট কম।

প্রধান সম্পাদক