জগন্নাথ-নজরুল ছাত্র সংঘর্ষ ।। আহত অর্ধশতাধিক

জগন্নাথ-নজরুল ছাত্র সংঘর্ষ ।। আহত অর্ধশতাধিক

সৌরভ চৌধুরী,এসবিডি নিউজ24 ডট কমঃ সাধারণ ঘটনাকে কেন্দ্র করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ও কবি নজরুল সরকারি কলেজের ছাত্রদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় ৫টি প্রাইভেটকার এবং ৬টি মোটরসাইকেলে অগি্নসংযোগ করা হয়। ২১ নভেম্বর (বুধবার) রাজধানীর বাহাদুর শাহ পার্ক এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষে পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এতে পুলিশ, শিক্ষক, ছাত্রছাত্রীসহ অর্ধশতাধিক আহত হয়েছেন। আহতদের ঢাকা মেডিকেল কলেজসহ স্থানীয় বিভিন্ন ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে। এদিকে ঘটনা তদন্তে ছয় সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং তিন সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করেছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। উভয় প্রতিষ্ঠানের তদন্ত রিপোর্টের প্রতিবেদন সাত কর্মদিবসের মধ্যে দিতে উল্লেখ করা হয়েছে। সংঘর্ষের ঘটনায় দুই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। পুনরায় এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে ঘটনাস্থলে মোতায়েন করা হয়েছে বিপুলসংখ্যক পুলিশ ও র‌্যাব। অন্যদিকে ঘটনার পেছনে জামায়াত-শিবিরকে দায়ী করেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ এবং পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, কয়েকদিন ধরে যারা পুলিশের ওপর হামলা চালিয়ে আসছেন তারাই উস্কানি দিয়ে ঘটনাকে বড় আকার দিয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ছাত্ররা জানায়, বুধবার বেলা সোয়া ১২টায় কবি নজরুল কলেজের জনতা ব্যাংকের শাখায় টাকা জমা দেয়াকে কেন্দ্র করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্রের সঙ্গে নজরুল কলেজের শিক্ষার্থীদের কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে কবি নজরুলের ছাত্ররা জবির ছাত্র মাহীসহ অপর দুই ছাত্রকে ব্যাপক মারধর ও এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করে। মারধরের খবর জবি ক্যাম্পাসে দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে কয়েকশ শিক্ষার্থী বাহাদুর শাহ পার্কের গেটে অবস্থান নেয়। এ সময় দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রদের মধ্যে ব্যাপক ইটপাটকেল নিক্ষেপ এবং দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। ছাত্রদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ শুরু হলে বাহাদুর শাহ পার্ক এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এ সময় পথচারীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তারা নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে দিগ্বিদিক ছোটাছুটি করে। এ সময় সংশ্লিষ্ট এলাকার সকল স্কুল ছুটি হলেও নিরাপত্তার স্বার্থে প্রায় দুই ঘণ্টা প্রধান ফটক আটকে রাখা হয়। বন্ধ হয়ে যায় ওই এলাকায় সকল প্রকার যানচলাচল।
অবস্থা বেগতিক হতে থাকলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কোতোয়ালি ও সূত্রাপুর থানা পুলিশ কয়েক রাউন্ড টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। একসময় সূত্রাপুর থানা পুলিশ কবি নজরুল কলেজের গেট ও কোতোয়ালি থানা পুলিশ জবি গেটের সামনে অবস্থান নেয়। এরপরও নজরুল কলেজের ছাত্ররা পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে বেরিয়ে আসে। অপর প্রান্ত থেকে জগন্নাথের ছাত্ররা ক্যাস্পাস থেকে বেড়িয়ে এলে দ্বিতীয় দফায় দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ছড়িযে পড়ে। এ সময় পুলিশ ব্যাপক লাঠিচার্জ করে ছাত্রদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে। সংঘর্ষ থামাতে পুলিশ ২৪ রাউন্ড টিয়ারশেল (কাঁদানে গ্যাস) ও কয়েক রাউন্ড রাবার বুলেট ছোড়ে। এ সময় পুলিশের লাঠিচার্জে জবির ছাত্র শাওন, ইমরানসহ কমপক্ষে ১০/১২ জন ছাত্র আহত হয়। একপর্যায়ে কবি নজরুল কলেজের ছাত্ররা কলেজের প্রধান ফটক আটকে দিয়ে ভেতরে অবস্থান করে। বেলা দেড়টার দিকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা সংগঠিত হয়ে কবি নজরুল কলেজের প্রধান ফটক ভেঙে স্রোতের বেগে ভেতরে ঢুকে যায়। এ সময় তারা কলেজের ভেতরে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। প্রশাসনিক ভবনের সামনে থাকা পাঁচটি প্রাইভেটকার ও তিনটি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। বেলা ২টার দিকে দমকল বাহিনীর কর্মীরা কবি নজরুল কলেজে গিয়ে আগুন নিভিয়ে ফেলে। একসময় জলন্ত গাড়ির সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হলে চারদিকে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। শিক্ষক ও ছাত্ররা দিগ্বিদিক ছোটাছুটি শুরু করেন নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে। এ সময় জীবন রক্ষার জন্য দুই ছাত্রী দোতলা থেকে লাফ দিয়ে আহত হয়। কলেজের চার শিক্ষক গুরুতর আহত হয়েছেন বলে জানায় কলেজ কর্তৃপক্ষ।
সংঘর্ষে নাদিম, সোহেল, পারভেজ, মাহী, রুম্মন, জাহিদ মাসুম, পারভেজ, শফি, নাইম, দিনা, রুমা, লিপি, মিনা, সামাদ, মেহেদী, শায়লা, ওয়াহিদ, ইমন, আলম, জয়নাল, সজল, সানি, রাজনসহ উভয় প্রতিষ্ঠানের বেশ কয়েকজন গুরতর আহত হয়েছে। আহতদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ স্থানীয় বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এছাড়া সংর্ঘষে আহত পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) শাহআলম, রবিউল, সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) ফারুক খন্দকার, কনস্টেবল জোনায়েদ, হাবিলদার তাজুল ইসলামকে রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
বেলা আড়াইটায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার হারুন-উর-রশিদের নেতৃত্বে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। হারুন-উর-রশিদ সাংবাদিকদের বলেন, কয়েকদিন ধরে জামায়াত-শিবির পুলিশকে লক্ষ্য করে হামলা ও গাড়ি পোড়ানোর তান্ডব চালাচ্ছে। হঠাৎ করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনা তারই আলামত। জামায়াত-শিবির পূর্ব পরিকল্পিতভাবে ছাত্রদের সঙ্গে মিশে গিয়ে নাশকতা চালাতেই এই ঘটনা ঘটিয়েছে। এরাই সাধারণ ঘটনাকে উস্কানি দিয়ে বড় আকার দিয়েছে_ বলেন তিনি।
কবি নজরুল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক শফিক আহমেদ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি দাবি করেন। তিনি জানান, দুষ্কৃতকারীরা ৫টি প্রাইভেটকার এবং ৬টি মোটরসাকেলে অগি্নসংযোগ করেছে। কলেজের উপাধ্যক্ষ অ্যধাপক মো. রফিকুল ইসলামকে প্রধান করে তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দেয়ার কথা বলা হয়েছে।
ঘটনা সম্পর্কে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অশোক কুমার শাহা বলেন, কবি নজরুল কলেজে কতিপয় উচ্ছৃঙ্খল, দুষ্কৃতকারী ও বহিরাগত ছাত্ররা সুপরিকল্পিতভাবে ধ্বংসযজ্ঞ ও অগি্নকান্ডের ঘটনা ঘটিয়েছে। এ সময় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়েও দুষ্কৃতকারীরা আক্রমণ করে এবং এতে সাধারণ ছাত্রছাত্রীরাও আহত হয়। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ করছে এবং ঘটনার সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছে। তিনি জানান, ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য লাইফ অ্যান্ড আর্থ সায়েন্স অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আবু জাফর মোহাম্মদ রুহুল মোমেনকে সদস্য সচিব করে ৫ সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে এ অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত করার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন_ পরিচালক (ছাত্র-কল্যাণ) অধ্যাপক ড. অরুণ কুমার গোস্বামী, সহকারী প্রক্টর মো. আব্দুস সালাম এবং সহকারী প্রক্টর ড. নূর মোহাম্মাদ।

বিশেষ প্রতিনিধি