নিপাত যাক দাসপ্রথা

নিপাত যাক দাসপ্রথা

শুভাশিস ব্যানার্জি শুভঃ ১৯৪৯ সালের ২ ডিসেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে ব্যক্তি কেনা-বেচা এবং শোষণ দমনের বিষয়ে কনভেনশন গৃহীত হয় (সিদ্ধান্ত ৩১৭/৪)। উক্ত কনভেনশন গৃহীত হওয়ার দিনটি স্মরণে প্রতি বছর ২ ডিসেম্বর পালিত হয় ‘আর্ন্তজাতিক দাসত্ব বিলোপ দিবস’। একটা সময় ছিলো যখন মানুষ সম্পদের শামিল হয়ে বিক্রয় যোগ্য বস্তু হিসেবে বিবেচিত হতো। একজন মানুষ অন্য একজনের মালিকানা ধারণ ছিলো বৈধ চর্চা। ক্রীতদাসকে একভাবে যেমন মজুরী ছাড়া কাজ করানো হতো একই ভাবে তাকে শাস্তি দেওয়াও হতো কর্তা মালিকের মর্জি মতো। বিভিন্ন সময় নানাবিধ কারণে মারাতœকভাবে ক্রীতদাস প্রথার বিস্তার ঘটেছিলো যা মানব সভ্যতার ইতিহাসে কলঙ্ককর। ক্রীতদাস প্রথার চরম বিস্তার ঘটে প্রাচীন রোমে খ্রিষ্টপূর্ব ১ম ও ২য় শতাব্দিতে। রোম সাম্রাজ্যের শেষ লগ্নে এই প্রথা ক্রমান্বয়ে সংকুচিত হয়ে আসে। খামার কর্মী হিসেবে শ্রমিক বেচা-কেনার মাধ্যমে দাস প্রথা ছড়িয়ে পড়ে জার্মানে ৮ম এবং ৯ম শতাব্দিতে। ১৩ শতাব্দিতে ইউরোপে দাস প্রথার আঙ্গিক পরিবর্তন হয়। খিষ্টান ও মুসলিম সমাজে আধুনিক কালেও ক্রীতদাস প্রথা বহাল থাকার নিদারুন দৃষ্টান্ত পাওয়া যায়। বৃটেন ও যুক্তরাষ্ট্রের মতো উন্নত দেশ গুলোও এই চর্চার ঊর্ধ্বে নয়। অধিকিন্তু ক্রীতদাস প্রথা বিলুপ্তির আন্দোলন প্রথম শুরু হয় ব্রিটেনে। ১৯ শতাব্দিতে বৃটিশ নেভী আফ্রিকার দাস বাণিজ্য দমন করে। ১৮০৮ সালে যুক্তরাষ্ট্র আইনগতভাবে দাস প্রথা বিলোপ করে। উত্তর-দক্ষিণ যুদ্ধের (১৮৬১-১৮৬৫) পর আমেরিকায় বরণকারী সকল বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হয় সংবিধানের ১৩তম সংশোধনীর প্রেক্ষিতে। ২০ শতাব্দিতেও নাজি জার্মান ও সোভিয়েত ইউনিয়নে ব্যাপকভাবে জোর পূর্বক শ্রম আদায় বিদ্যমান থাকে। ঔপনিবেশিক আফ্রিকা ও এশিয়ার দেশগুলোতেও এধরণের উদাহরণ পাওয়া যায়। আই, এলও কনভেনশন অনুযায়ী শিশু দাসত্ব, জবরদস্তি শ্রম আদায়, পাচার, বন্দক, পতিতাবৃত্তি, পর্ণোগ্রাফি, ভূমি দাস এবং অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বিভিন্ন ধরণের ঝুঁকিপূর্ণ ও শোষণ কাজ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। তারপরও সম্প্রতি জাতিসংঘের এক জরিপ অনুযায়ী বাংলাদেশে ১৪ বছর বয়সী শিশু শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় ৯৫ লাখ এবং ১৭ বছরের নীচে শিশু শ্রমিকের সংখ্যা ১ কোটির বেশি। দাস প্রথা বিলুপ্তির পথে শিশু শ্রমিকের দাসত্ব অবসানের প্রয়েজনীয়তা অপরিসীম।

শুভাশিস ব্যানার্জি শুভঃ সম্পাদক,এসবিডি নিউজ24 ডট কম।।

প্রধান সম্পাদক