টাকার বিপরীতে ডলারের দাম কমছে

টাকার বিপরীতে ডলারের দাম কমছে

বিশেষ প্রতিনিধি,এসবিডি নিউজ24 ডট কমঃ রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়, বিদেশি সাহায্য ও ঋণপ্রাপ্তিসহ সব উৎসের প্রবৃদ্ধিতে ডলারের সরবরাহ বাড়ায় ডলারের বিপরীতে টাকা শক্তিশালী হচ্ছে। আর এর ফলে প্রায় এক বছর পর ডলারের দাম আবারও ৮১ টাকার নিচে নেমে এসেছে। এ সময়ে ডলারের দাম স্থিতিশীল রাখতে বাজার থেকে প্রচুর ডলার কিনে নিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতে বাজারে টাকার সরবরাহ বাড়বে। ফলে সামগ্রিকভাবে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যেতে পারে। তবে ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স যে হারে বাড়ছে, সেই হারে ঋণপত্র খোলা বা নিষ্পত্তি হচ্ছে না। ফলে ব্যাংকগুলোর কাছে প্রচুর ডলার জমা হচ্ছে। এদিকে কার্ব মার্কেটেও ডলারের দাম কিছুটা পড়ে গেছে। গতকাল কার্ব মার্কেটে ৮১ টাকা ৮০ পয়সায় ডলার বিক্রি ও ৮১ টাকা ৭০ পয়সায় ক্রয় করতে দেখা গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রায় এক বছর পর গত ৯ ডিসেম্বর স্পট মার্কেটে ডলারের দাম ৮০ টাকায় নেমে আসে। ওই দিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার কিনেছে ৮০ টাকা ৯৫ পয়সা করে। ১০ ডিসেম্বর এর দাম আরো কিছুটা কমে ৮০ টাকা ৯০ পয়সা হয়। ১১ ডিসেম্বর হয় ৮০ টাকা ৮০ পয়সা। এভাবে গত চার দিন একটু একটু করে ডলারের দাম কমছে। সর্বশেষ ডলারের দাম ৮০ টাকার ঘরে ছিল গত বছরের ডিসেম্বরে। ২০১১ সালের ২১ ডিসেম্বর ডলারের দাম ৮০ থেকে বেড়ে ৮১ টাকা হয়। এরপর ডলারের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়ে ৮৫ টাকা পর্যন্ত পৌঁছে যায়। এর আগে ২০১১ সালের মার্চের তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত ডলারের বিনিময় হার ছিল ৭১ টাকার মধ্যে। ২১ মার্চের পর থেকে ক্রমাগতভাবে ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন ঘটতে থাকে। এপ্রিলে ৭২ টাকা, মে মাসে ৭৩ টাকা, জুন-জুলাই ৭৪ টাকায় পৌঁছে। আগস্টে কিছুটা কমলেও সেপ্টেম্বরে তা ৭৫ টাকা এবং অক্টোবর-নভেম্বরে তা ৭৬ টাকা হয়। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ডলারের বিপরীতে টাকার চরম অবমূল্যায়ন ঘটে। জানুয়ারিতে পৌঁছে ৮৫ টাকায়। ফেব্রুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহ থেকে ডলারের দাম কিছুটা কমতে শুরু করে এবং এর পর থেকে গত ১০ মাসে ডলারের দাম ৮১ থেকে ৮২ টাকার ঘরে ওঠা-নামা করছে। এদিকে দাম স্থিতিশীল রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজার থেকে ডলার তুলে নিচ্ছে। গত মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংক বাজার থেকে পাঁচ কোটি ৫০ লাখ ডলার (৫০ মিলিয়ন) কিনে নেয়। ফলে দিনশেষে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ আবারও এক হাজার ২০০ কোটি (১২ বিলিয়ন) ডলার ছাড়িয়ে যায়। ওই দিন সকালে রিজার্ভ ছিল এক হাজার ১৯৯ কোটি বা ১১ দশমিক ৯৯ বিলিয়ন ডলার।
দেশ স্বাধীনের পর গত ১৮ অক্টোবর প্রথমবারের মতো বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ এক হাজার ২০০ কোটি ডলার ছাড়ায়। তবে এর কয়েক দিনের মধ্যে এশিয়ান কিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) দেনা পরিশোধের পর রিজার্ভ কিছুটা কমে যায়। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার আবারও রির্জাভ এক হাজার ২০০ কোটি ছাড়ায়। গতকাল পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ ছিল এক হাজার ২০৮ কোটি ৯৪ লাখ ডলার। চলতি বছরের শুরুর দিকে বাজারে ডলারের আকাল পড়েছিল। ব্যাংকে না পেয়ে কার্ব মার্কেট থেকে ডলার কিনে জরুরি প্রয়োজন মেটাতে হয়েছিল ব্যবসায়ী ও ভ্রমণকারীদের। তবে বর্তমান সময়ে ব্যাংকের কাছে উদ্বৃত্ত ডলার রয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, চলতি ডিসেম্বর মাসের গত মঙ্গলবার পর্যন্ত ১০৭ মিলিয়ন ডলার কিনেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর মধ্যে মঙ্গলবার কিনেছে ৫৫ মিলিয়ন ডলার। জুলাই থেকে ডিসেম্বরের ১১ তারিখ পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যাংক থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এক হাজার ৬৬২ মিলিয়ন ডলার কিনেছে। ডলার সরবরাহের অন্যতম প্রধান উৎস প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স। চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে এ খাতে ২৫ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে। চলতি বছরের জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ৬১১ কোটি পাঁচ লাখ ডলার, যা এর আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১১৮ কোটি ৯১ লাখ ডলার বেশি। তা ছাড়া গত অর্থবছরের পুরো সময়ে রেমিট্যান্স এসেছিল এক হাজার ২৮৪ কোটি ৩৪ লাখ ডলার। অন্যান্য বছরের একই সময়ের তুলনায় বিদেশি সাহায্যও বেশি এসেছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) বিদেশি সাহায্য এসেছে ৭৫ কোটি ডলার। গত অর্থবছরের (২০১১-১২) পুরো সময়ে বিদেশি সাহায্য এসেছিল ২০৬ কোটি ডলার। এছাড়া আমদানি ব্যয় ৪৬ কোটি ডলার কমেছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) আমদানি ব্যয় ৫.২১ শতাংশ কমেছে। এ সময়ে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) আমদানির পেছনে ব্যয় হয়েছে ৮৩৩ কোটি ২৩ লাখ ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় যা ৪৫ কোটি ৮০ লাখ ডলার কম। তা ছাড়া সম্প্রতি ঋণপত্র (এলসি) নিষ্পত্তিও ৪৫ কোটি ডলার কমে এসেছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে ৮১০ কোটি ৪২ লাখ ডলার মূল্যের ঋণপত্র নিষ্পত্তি হয়েছে। অন্যদিকে রপ্তানি আয়ও বেড়েছে প্রায় ৫ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে এক হাজার ১৩ কোটি ৩৬ লাখ ডলার রপ্তানি আয় হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪.৩৬ শতাংশ বেশি। ডলারের দাম কমে যাওয়ায় বাজারের তেমন কোনো তি হবে না বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. হাসান জামান বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে ডলারের দাম কিছুটা কমে এসেছে, যা বাজারে নেতিবাচক কোনো প্রভাব ফেলবে না। তবে ১০ মাস আগে ডলারের দাম যেভাবে বেড়ে গিয়েছিল, সেটাকে আমি অতিরিক্ত ওঠা-নামা বলব। এ ধরনের অতিরিক্ত ওঠা-নামা ঠেকাতে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রয়োজনীয় সকল পদপে নিচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে আমরা বাজার থেকে ডলার কিনছি। এতে রিজার্ভও শক্তিশালী হচ্ছে। এ বিষয়ে হাসান জামান আরো বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্য নিয়েই পরপর দুই মেয়াদে সংযত মুদ্রানীতি নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সাম্প্রতিক সময়ে এর কিছু প্রভাবও দেখা যাচ্ছে। তবে বাজারে টাকার সরবরাহ বাড়ায় পরবর্তীতে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যেতে পারে। এক্ষেত্র আগামী মুদ্রানীতি কেমন হবে, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হলে অবশ্যই ডিসেম্বর মাসের তথ্য-উপাত্ত দেখতে হবে।

বিশেষ প্রতিনিধি

Related articles