মহাজোট সরকারের আমলে জ্বালানি তেলের দাম বাড়লো ৫ বারঃ জীবনযাত্রার ব্যয় বহনে মানুষের কষ্ট বাড়বে

মহাজোট সরকারের আমলে জ্বালানি তেলের দাম বাড়লো ৫ বারঃ জীবনযাত্রার ব্যয় বহনে মানুষের কষ্ট বাড়বে

নিজস্ব প্রতিনিধি,এসবিডি নিউজ24 ডট কমঃ আরেক দফা জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে কৃষি উৎপাদন, পরিবহন ভাড়া, বিদ্যুতের মূল্য বেড়ে যাবে। সাবির্কভাবে মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতির কারণে জীবনযাত্রার ব্যয় বহনে মানুষের কষ্ট বাড়বে। পাশাপাশি সরকারের পক্ষে সামষ্টিক অর্থনীতির ব্যবস্থাপনাও কঠিন হয়ে পড়বে_ এমনই আশঙ্কা করছেন দেশের অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা। ৩ জানুয়ারী (বৃহস্পতিবার) রাতে সরকারি এক আদেশে ডিজেল, অকটেন, পেট্রোল ও কেরোসিনের দাম আরেক দফা বাড়ানো হয়। এ নিয়ে বর্তমান মহাজোট সরকারের আমলে জ্বালানি তেলের দাম বাড়লো ৫ বার। এবার পেট্রোল ও অকটেন লিটারে ৫ টাকা এবং ডিজেল ও কেরোসিন লিটারে ৭ টাকা বাড়ানো হয়েছে। দাম বৃদ্ধির ফলে প্রতি লিটার পেট্রোল ৯৬ টাকা, অকটেন ৯৯ টাকা এবং ডিজেল ও কেরোসিন কিনতে হবে ৬৮ টাকায়। দাম বৃদ্ধির প্রভাব সম্পর্কে জানতে চাইলে অর্থনীতিবিদ ও তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে চাল, ডাল, তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্য ও অন্যান্য পণ্য এবং পরিবহন ভাড়া বাড়বে। এই ব্যয়ভার বহন করতে গিয়ে সাধারণ মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হবে। মানুষের নিত্যদিনের খরচ বাড়ার ফলে দেশের সঞ্চয়ও কমে যাবে। এতে করে সার্বিকভাবে চাপে পড়বে অর্থনীতি। তেল-গ্যাস ও বিদ্যুৎ নিয়ে আন্দোলনে থাকা এই শিক্ষাবিদ আরো বলেন, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে পরিবহন খাতে চরম অরাজকতা সৃষ্টি হবে। তেলচালিত সকল পরিবহনের ভাড়া তো বাড়াবেই, এছাড়া যেসব পরিবহনে সিএনজিচালিত (সংকুচিত প্রাকৃতিক গ্যাস) ব্যবহার করা হয় সেসব পরিবহনের মালিকরা এই অজুহাতে তাদের পরিবহনের ভাড়া বাড়িয়ে দেবে। আর বরাবরের মতোই এই খাতে সৃষ্ট অস্থিরতাকে সামাল দিতে পারবে না সরকার। নীরবেই বাড়তি ভাড়া হজম করতে হবে সাধারণ মানুষকে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে দেশের রফতানি আয়ের শীর্ষ খাত তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফ্যাকচারাস অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) সভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, জ্বালানি তেলসহ বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদ আমরা বরাবরই করে আসছি। জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির ফলে আমাদের পোশাক শিল্পের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। তিনি জানান, এই শিল্পের বাজার আমাদের দেশের মধ্যে নয়। বহির্বিশ্বই হলো এই খাতের প্রধান বাজার। এখন আমাদের উৎপাদন ও পরিবহন খরচ বেড়ে গেলেও আমরা চাইলেই বিক্রয়মূল্য বাড়াতে পারবো না। ফলে ধাক্কা আমাদের একটু বেশিই সামলাতে হবে। গার্মেন্ট খাতকে এই ধাক্কার হাত থেকে বাঁচাতে তিনি সরকারের দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করতেও অনুরোধ জানান। ইতিমধ্যে তেলের দাম বৃদ্ধির ফলে পরিবহন ভাড়া ও খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ানোর আভাসও পাওয়া যাচ্ছে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে হানিফ পরিবহনের ম্যানেজার মাহবুব হোসেন বলেন, ডিজেলের দাম বৃদ্ধির ফলে দূরপাল্লার সব পরিবহনে ভাড়া বাড়বে। তবে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। পরিবহন মালিক সমিতি দুই-একদিনের মধ্যে সরকারের সঙ্গে বৈঠক করে ভাড়া বৃদ্ধির দাবি জানাবে বলেও তিনি জানান। এদিকে চালের দাম বৃদ্ধির আশঙ্কা প্রকাশ করছেন ব্যবসায়ীরা। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে রাজধানীর মিরপুরের চাল আড়ত ব্যবসায়ী বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতি আবদুর রহিম বলেন, তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় চালের পরিবহন খরচ বেড়ে যাবে বলে জানাচ্ছেন রাইসমিল মালিকরা। এখন কুষ্টিয়া থেকে যে চাল ঢাকায় আসছে সেগুলো পরিবহন খরচ ট্রাকপ্রতি ৩ হাজার টাকা বেড়ে যাবে। আবার উত্তরবঙ্গের ক্ষেত্রে তা ৪ হাজার টাকাও হতে পারে। এই হিসাবে খুচরা পর্যায়ে চালের দাম কেজিতে ১ থেকে ২ টাকা বাড়তে পারে। তবে এখন পর্যন্ত আগের দামেই চাল বিক্রি হচ্ছে বলে তিনি জানান।

নিজস্ব প্রতিনিধি

Related articles