বাংলাদেশের সাহসী সন্তান নির্মল সেন-এর প্রতি জানাই গভীর শ্রদ্ধা

বাংলাদেশের সাহসী সন্তান নির্মল সেন-এর প্রতি জানাই গভীর শ্রদ্ধা
সৈকত রুশদীঃ অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে অকুতোভয় এক ব্যক্তিত্ব, বাংলাদেশের সাহসী সন্তান নির্মল সেন-এর প্রতি জানাই গভীর শ্রদ্ধা l মানুষের বাক স্বাধীনতা ও নিরাপদে বেঁচে থাকার অধিকারসহ সকল মৌলিক অধিকার, সত্য প্রকাশে সাংবাদিকের অধিকার এবং কাজের জন্য যোগ্য মজুরী আদায়ের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে আজীবন নিরলস কাজ করে যাওয়া এই অগ্রজ সাংবাদিকের সান্নিধ্যে আসতে পারা আমার জীবনের এক বড় সম্পদ l তাঁর স্নেহময়, শিক্ষামূলক কথাগুলো সব সময়ই মনে পড়ে l

খেলাধুলা, বিশেষ করে ফুটবল ও ক্রিকেট-এর প্রতি তাঁর আগ্রহের কারণে সেই ১৯৭৯ সালে যখন আমি দৈনিক দেশ-এ ক্রীড়া সাংবাদিক হিসেবে কাজ শুরু করি, তখন থেকেই পরিচয় l পরে দৈনিক বাংলা-র ক্রীড়া সম্পাদক মুহম্মদ কামরুজ্জামানের কাছে গেলে মাঝে মধ্যে দেখা ও কথা হতো l কিন্তু নিকটবর্তী হওয়ার সুযোগ হলো লন্ডনে l ১৯৮৪ সালে, এক শনিবারে ব্রিক লেন-এ গাজিউল হাসান খানের সাপ্তাহিক দেশবার্তা অফিসে গেছি আড্ডা দিতে l দেখি, নির্মল দা l কথা হলো অনেক l প্রশ্ন করলেন আমার আদি বৃত্তান্ত নিয়ে l ব্রিটেন প্রবাস, বিবিসি-তে খন্ডকালীন কাজ, সহকর্মী সিরাজুর রহমান, শ্যামল লোধ, আব্দুল গাফফার চৌধুরী, শফিক রেহমান, তালেয়া রেহমান, নাজির আহমেদ, ফেরদৌস কোরেশী, আফতাব আহমেদ এবং আরও অনেককে নিয়ে l আলাপের এক পর্যায়ে কথা বললেন আমার বন্ধু ও সতীর্থদের নিয়ে l আবিদ রহমান, আলী রিয়াজ, রীনা সুলতানা (তাঁর সাবেক সহকর্মীর মেয়ে), রাশিদা মহিউদ্দিন, মির্জা তারেকুল কাদের, খায়রুল আনোয়ার মুকুল, শওকত মাহমুদ এবং আরো অনেক প্রসঙ্গ l গাজী ভাই তাঁকে অনুরোধ করছিলেন একটি লেখা দিতে l আমাকে দেখেই নির্মল দা বললেন শ্রুতিলিপি নিতে l সানন্দে রাজি হয়ে গেলাম l জীবনে আর কখনো কারো জন্য শ্রুতিলিপি লিখে দেই নি l কিন্তু নির্মল সেন-এর জন্য লিখতে পেরে গর্বিত বোধ করেছিলাম l

১৯৮৫ সালে ঢাকায় ফেরার পর দেখা ও কথা হতো জাতীয় প্রেস ক্লাবে l টেলিভিশনে একসাথে বসে খেলা দেখার সময় l সেই সোনালি সময়গুলো আজ অতীত l ১৯৯২ সালে সংবাদপত্র ছেড়ে কূটনৈতিক মিশনে কাজ করতে শুরু করার পর কমে এসেছিল দেখা সাক্ষাত l কানাডায় পাড়ি দেওয়ার পর, গত নয় বছরে আর দেখা হয়নি l কিন্তু সব সময়ই তিনি এক জ্যোতিষ্কের মতো উজ্জ্বল অবস্থানে রয়ে গেছেন আমার হৃদয়ে, মননে l

আজ শাসক গোষ্ঠীর কাছে সেই ১৯৭৪ সালে, যুদ্ধ বিধ্বস্ত বাংলাদেশে, নাগরিকদের পক্ষ থেকে ‘স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি চাই’ দাবিদার নির্মল সেন চলে গেলেন, উপর্যুক্ত চিকিত্সার অভাবে, খানিকটা অস্বাভাবিকতার মধ্য দিয়ে l কিন্তু বাংলাদেশের মানুষের স্বাভাবিক মৃত্যুর দাবি এখন আরও বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে আরও চার দশক পরে l বাংলাদেশের শাসক গোষ্ঠীর কারণে সাধারণ মানুষের জীবনের নিরাপত্তা এখন আরও অনিশ্চিত l

নির্মল সেন-এর প্রতি আমাদের প্রকৃত শ্রদ্ধা জ্ঞাপন হবে, শুধু ভিআইপি নামক একটি বিশেষ শ্রেণী নয়, বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিকের স্বাভাবিক জীবন নিয়ে বেঁচে থাকার অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম আরও জোরদার করে l প্রতিটি নাগরিকের জীবনের নিরাপত্তা বিধান করে l আর সেজন্য প্রয়োজন এমন রাজনীতিকদের ক্ষমতায় অধিষ্টিত করা, যাঁরা ট্রাক চাপা বা গুলিবিদ্ধ করে মিছিলকারীদের হত্যা করবেনা, অপারেশন ক্লিন হার্ট বা ক্রস ফায়ারের নামে বিনা বিচারে কোনো মানুষকে হত্যায় সাহসী হবে না, বিচারের নামে প্রহসন করে কাউকে ফাঁসিতে ঝোলাবে না এবং দুর্ঘটনা বলে কর্মস্থলে শ্রমিকদের পুড়িয়ে হত্যা করাকে প্রশ্রয় দেবে না l যাঁরা প্রতিটি নাগরিককে মানুষ হিসেবে মর্যাদা করতে পারবে l

অগ্রজ নির্মল সেন-এর আত্মার কল্যাণ কামনা করি l

সৈকত রুশদীঃ প্রবাসী সাংবাদিক।।

অতিথি লেখক