প্রেম নিয়ে প্রতারণা : আর না আর না…

প্রেম নিয়ে প্রতারণা : আর না আর না…

মোমিন মেহেদীঃ আমাদের দেশে সংগঠিত হচ্ছে প্রতিদিন কমপক্ষে শতাধিক নারী নির্যাতন-অপহরন-খুন এবং ধর্ষণের ঘটনা। যার অধিকাংশই পত্রিকার পাতার অন্তরালে; আড়ালে থেকে যায় টিভি ক্যামেরারও। পাশাপাশি সচরাচর-ই প্রেম-পরিণয়ের ক্ষেত্রেও ঘটছে প্রতারণা-নির্যাতনের ঘটনা। বর্তমানে নতুন প্রজন্ম নষ্টতার রঙে রঙিন হচ্ছে কেবলমাত্র আকাশ সংস্কৃতির অপচর্চাও কারনে; সাথে সাথে সরকার ও প্রশাসনের আইন নিয়ে দূর্নীতিও এর জন্য সমানভাবে দায়ি বলে মন্তব্য করেছেন দেশের বেশ কয়েকজন সমাজ গবেষক ও লেখক। তবে বাংলাদেশের রাজনীতি ও ধর্ম অজ্ঞতা এর জন্য দায়ি বলেও মনে করছেন বিভিন্ন ধর্মের পন্ডিতগণ। তাদের মতে, ইসলাম-খিস্টান-সনাতন- বৌদ্ধ বা অন্য যে কোন ধর্মের অনুসারী যে কেন নারী-পুরুষ যদি নিজস্ব ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলে তাহলেই সম্ভব নারী নির্যাতন-নারী সহিংসতা বন্ধ করা।  দীর্ঘ দিন একটি মেয়ের সাথে প্রেম করলেও বিয়ে করে অন্য একটি মেয়েকে। এমন ঘটনা অহরহ ঘটার কারনে বাড়ছে আত্মহত্যার প্রবণতাও। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, যার সাথে প্রেম করছে; তার সাথে দৈহিক সম্পর্ক স্থাপনের পরেও বিয়ে করতে অসম্মতি প্রকাশ করছে ছেলেটি। আর এভাবেই অনেক মেয়ে চলে যাচ্ছে অন্ধকার জগতে, হচ্ছে পারিবারিক ও সামাজিকভাবে বয়কটের শিকার। অনেক ক্ষেত্রে তা রুপ নিচ্ছে আত্মহননেও। উদহরণ স্বরুপ কয়েকটি ঘটনা বলছি-

ঘটনা-১
মেয়েটির নাম রাইমা। বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জের রুকুন্দীতে বাড়ি। বাবা-মায়ের চোখ ফাঁকি দিয়ে সম্পর্ক গড়ে তোলে স্থানিয় একটি ছেলের সাথে। একই বয়সের হওয়ার কারনে ভালোবাসা জমে উঠেছিলো মেঘনা নদীর ঢেউয়ের মত। চলছিলো এভাবেই। দীর্ঘদিন প্রেম চলেছে। এক পর্যায়ে আরো গভীরতর রুপ নেয় তাদের প্রেম। দীর্ঘতর সম্পর্কের রেশ ধরে ঘটে দৈহিক সম্পর্কের মত ঘটনাও। এরই মধ্যে জানাজানি হয়ে যায় তাদের সম্পর্কের বিষয়টি। মেয়েটির বাবা মা আত্মীয় স্বজন সবাই ছেলেটির পারিবারিক ও ব্যাক্তিগত বিভিন্ন যোগ্যতার কারনে রাজী হয়ে যায়। ঘটনা মোড় অন্যদিকে, যখন মেয়েটি ছেলেটিকে বিয়ের কথা বলে; তখন ছেলেটি বলে, আমার পক্ষে এখন বিয়ে করা অসম্ভব। কেন? মেয়েটি জানতে চাইলে ছেলেটি জানায়- সে আরো পড়ালেখা করবে, প্রতিষ্ঠিত হবে তারপর বিয়ে করবে। মেয়েটি রাগে- ক্ষোভে অভিমানে বিষপান করে। পরে যদিও মেয়েটি বেঁচে যায়। কিন্তু জীবনে নেমে আসে সামাজিক ও পারিবারিকভাবে অঘোষিত সাজা।

ঘটনা-২
ফেনীর দাগনভূইয়ার মেয়ে অলকা। ঢাকায় পড়ালেখার জন্য ভর্তি হয় সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজে। সেখানে আসা-যাওয়ার পথে পরিচয় হয় নিশাতের সাথে। দেখতে দারুণ বলে প্রেমে পড়ে যায় অলকা। এগিয়ে চলে সম্পর্কের পথ। এক পর্যায়ে আরো গভীর হলে জড়িয়ে যায় দৈহিক সম্পর্কে। তারও প্রায় তিন মাস পরের কথা। ছেলেটির ফোন বন্ধ। অলকা ভাবে, হয়তো সেটটা হারিয়ে গেছে বা অন্য কোন সমস্যার কারনে বন্ধ। এভাবে এক সপ্তাহ পার হওয়ার পরও যখন কোন খোঁজ নেই; তখন অলকা সোজা গিয়ে ছেলেটির বাসায় ওঠে। ছেলেটির মা জানায়- তার ছেলে উচ্চ শিক্ষার জন্য কানাডা গেছে। অলকা সেখান থেকে সোজা রেল স্টেশনে যায়। তার পরের ঘটনা আরো নির্মম…

ঘটনা-৩
মামাতো ভাই সাজ্জাদকে ভালোবাসতো লালমনিরহাটের জান্নাত। গভীর সে ভালোবাসা। সাজ্জাদও ভালোবেসে সবসময় এগিয়ে থাকতো জান্নাতের দিকে। কিন্তু বাঁধ সাধে বাবা-মা। তাদের কথা হলো- সাজ্জাদ অনেক শিক্ষিত একটা ছেলে। তার ছেলের কাছের কাছে মেয়ে দিতে হলে যৌতুক দিতে হবে। বাঁধ সাধে জান্নাত নিজেই। গর্ভে সাজ্জাদের সন্তান থাকা সত্বেও হার মানে না জান্নাত। বিয়ে না করায় সে বেছে নেয় মৃত্যুর মত নির্মম পথ। সেই পথ ধরে প্রতিনিয়ত তৈরি হচ্ছে অনেক নারীর সমাধি।

এই সমাধি বন্ধের জন্য প্রথম যা করতে হবে তা হলো- সচেতনতা তৈরি করতে হবে যে, প্রেম মানেই-ভালোবাসা মানেই শারীরিক সম্পর্ক নয়। ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলার চর্চা শুরু করতে হবে শৈশব থেকেই। পাঠ্য বইতে প্রেম-ভালোবাসার সম্পর্ক নিয়ে পবিত্রতার রাস্তা দেখানোর বিষয়টি অর্ন্তভূক্ত করা এবং সবাইকে সচেতন করা যে, নারী মানেই মায়ের জাতি; তাদের প্রতি যথাযথ সম্মান-ভালোবাসা- ¯েœহ প্রদর্শন করা অত্যাবশ্যকিয়।
আর একটি কাজ করা যেতে পারে দৃঢ়তার সাথে। কাজটি হলো প্রতারণার শিকার হলে প্রতিরোধ করা-অধিকার আদায় করে নেয়া। আর সে ক্ষেত্রে তৈরি হওয়া যেতে পারে কালিয়াকৈর(গাজীপুর)-এর সুমির মত করে। এতে করে সমাজ সচেতন হবে, পুরুষ সমাজ সচেতন হবে, গড়ে উঠবে নারীর প্রতি শ্রদ্ধার সেই পুুরোনো প্রাসাদ, নতুন করে।
এইতো সেই দিনের কথা। বিয়ের দাবিতে গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার সুত্রাপুর ইউনিয়নের ফয়জুল্লাপুর গ্রামে গত ২ দিন ধরে প্রেমিক আলমগীরের বাড়িতে অবস্থান নিয়ে অনশন করছেন সুমি(১৯) নামে এক প্রেমিকা। মঙ্গলবার দুপুরে ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় প্রেমিকা সুমি আলমগীরের বাড়ির উত্তর ঘরে একটি খাটের ওপর না খেয়ে বসে রয়েছেন। প্রেমিকা সুমি ওই এলাকার জাবেদ আলীর মেয়ে ও আলমগীর একই এলাকার মনির হোসেনের ছেলে। এ বিষয়ে স্থানীয় মেম্বার জহির উদ্দিন জানান, আলমগীর ও সুমির মধ্যে  অনেকদিন ধরে প্রেমের সম্পর্ক চলে আসছিল। এ সম্পর্কের জের ধরে বিয়ে করার প্রলোভন দেখিয়ে আলমগীর সুমির সঙ্গে অবৈধ্য সম্পর্ক গড়ে তোলে। ১ বছর আগে সুমিকে বিয়ে করার শর্ত দিয়ে বিদেশে চলে যায় আলমগীর। চলতি মাসের ৮ তারিখে আলমগীর বিদেশ থেকে বাড়িতে ফিরে এলে বিয়ে করার চাপ দেয় সুমি। এ সময় আলমগীর সুমিকে বিয়ে করতে অস্বীকার করে।

সুমি বিয়ের দাবিতে প্রেমিক আলমগীরের বাড়িতে অবস্থান নিয়ে অনশন শুরু করেছেন। এদিকে, বাড়িতে প্রেমিকার উপস্থিতি দেখে কৌশলে বাড়ি থেকে পালিয়ে গেছে আলমগীর। এ বিষয়ে প্রেমিকা সুমি সাংবাদিকদেরকে বলেন, আলমগীর আমার সঙ্গে বিয়ের করার কথা বলে দৈহিক মেলামেশা করেছে। এখন আমাকে বিয়ে করার চাপ দিলে বিয়ে করবে না বলে জানিয়ে দেয় আলমগীর। পরে উপায় না পেয়ে বিয়ের দাবিতে আলমগীরের বাড়িতে অবস্থান করছি। তিনি আরও বলেন, আলমগীর যদি আমাকে বিয়ে না করে তাহলে আমি আত্মহত্যা করবো। এ বিষয়ে সুত্রাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সোলায়মান মিন্টু বলেন, বিষয়টি শুনে স্থানীয় ইউপি সদস্যকে ওই বাড়িতে পাঠিয়েছি। তাছাড়া সুমি ও আলমগীরের পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করে বিষয়টি মীমাংসা করা হবে। এ বিষয়ে কালিয়াকৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) মীর রাকিবুল হক বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে, এ বিষয়ে অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

পরে আলমগীর বিয়ে করেছে সুমিকে। অতএব, সারদেশে সচেতনতা তৈরি করতে হবে সবাইকে। যাতে করে নারীর প্রতি সবাই সম্মান-ভালোাবাসা ও ¯েœহ প্রদর্শন করে। নারী ও শিশু নির্যাতনমূলক অপরাধসমূহ কঠোরভাবে দমনের উদ্দেশ্যে প্রয়োজনীয় বিধান প্রণয়নকল্পে প্রণীত আইন বাস্তবায়নের জন্য সরকারের উদ্যেগ এবং গণ সচেতনতা তৈরি করা এখন সময়ের দাবী।

মোমিন মেহেদী : রাজনীতিক ও আহবায়ক নতুনধারা বাংলাদেশ।।

অতিথি লেখক