ভাষা সৈনিক শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত পাঠাগারটি এখন মিনিসিনেমা হল!

ভাষা সৈনিক শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত পাঠাগারটি এখন মিনিসিনেমা হল!

মাহমুদুর রহমান বাবুঃ কোনো সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে লেখার সময় একবারও ভাবি না। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের সাবেক সচিব মিজানুর রহমানের ‘ভূতুড়ে সম্পত্তি’ নিয়ে লেখার সময় একবার ভেবেছিলাম।  ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর ৩ আসনের সাংসদের বিরুদ্ধে যায় এমন লেখা লিখতে দুবার ভেবেছিলাম। এখন যে বিষয়ে লিখতে যাচ্ছি তা নিয়ে গতকাল রাত থেকেই ভাবছি। সব সত্য বলা যায় না। ক্যারিয়ার বলে মানুষের জীবনে একটা বিষয় আছে। ইদানীং পাগলও ক্যারিয়ারের চিন্তা করে। আমি যখন লেখাটি লিখতে বসেছি তখন ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সাংবাদিকতা করতে পারবনা জেনে এবং মেনে লিখছি। সব কিছুতে আপোষ চলে না। যে মানুষটির সামনে তাঁর প্রাণপ্রিয় ছেলেকে বেয়োনেট দিয়ে খুঁচিয়ে মারার পরও মুক্তিযোদ্ধাদের সম্পর্কে কোন তথ্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন এবং নিজেও কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টে নির্মম মৃত্যুকে বরণ করে নেন দেশের জন্য সেই শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের নামে তৈরি পাঠাগারকে বিনোদনের জায়গায় রূপান্তর করেন কিছু অগ্রজ সাংবাদিক তখন আমি বলি- আপনাদের কাছ থেকে আমার কিছু শেখার নেই । আপনাদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আমি সাংবাদিকতায় প্রতিষ্ঠিত হতে চাই না । আমি না হয় আলু পটল বেচবো । ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলষ্টশন নেমে বলবেন- ইন্ড্রাষ্ট্রিয়াল স্কুলে যাবো । ১৫-২০ টাকা রিক্সা ভাড়ায় পুরাতন আদালত পাড়ায় অবস্থিত সেই স্কুলের গেটের ভেতর ঢুকলেই দেখবেন একটি মঞ্চ । নাম শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ভাষা মঞ্চ । তার ডান পাশেই একটি লম্বাকৃতির বিল্ডিং এ কয়েকটি সাংস্কৃতিক দলকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দেয়া হয়েছে । সেসব বরাদ্দ পাওয়া কক্ষগুলোর একটিতে বেশ কয়েক বছর আগে স্থাপিত হয় শহীদ ধীরেন্দ্র নাথ দত্ত স্মৃতি পাঠাগার । আপনি বিকেলের আগে যাবেন না । এই পাঠাগার খুলবে বিকেল তিনটা কী চারটায়। বিকেলে এক এক করে সেখানে আসবেন দৈনিক সমকালের ষ্টাফরিপোর্টার, দৈনিক যায় যায় দিন এর জেলা প্রতিনিধি, দৈনিক কালেরকন্ঠের জেলা প্রতিনিধি, দৈনিক প্রথমআলোর জেলা প্রতিনিধি এবং দৈনিক মানবকন্ঠের জেলা প্রতিনিধি । পাঠাগারে রাখা কম্পিউটারে তাঁরা ঢাকায় সংবাদ পাঠান । সন্ধ্যা হতে চললো এমন এসময় জেলার কিছু বাম নেতাসহ বেশ কিছু রাজনৈতিক কর্মী ভিড় করেন পাঠাগারে । চলে আড্ডা । সর্ব শেষ ঐ ‘সাইবার ক্যাফে’তে যোগ হয়েছে বিশালাকার রঙ্গিন টিভি, সাথে ক্যাবল সংযোগ । নাচ, গান, সিনেমা কী নেই তাতে ? বিনোদনে টইটুম্বুর। পাঠাগারটিতে রয়েছে দুটো ষ্টিলের বুক শেলফ, একটি ষ্টিলের দেরাজ । দশ বারোজন বসা যায় এমন একটি টেবিল এবং ২০-২৫টির মতো প্লাষ্টিক চেয়ার । কখনো কোনো পাঠককে এই পাঠাগার থেকে বই নিতে দেখিনি । দেখিনি বসে বই পড়তে । এটি এখন কয়েকজন সাংবাদিকের অফিসে পরিণত হয়েছে । তাদের সংবাদ পাঠানোর জায়গা । তাদের সাথে দেখা করতে চাইলে তাঁরা এই পাঠাগারের ঠিকানাই দেন ।

সাংবাদিক বলে কথা । এই পাঠাগারকে ঘিরে যে স্বেচ্ছাচারিতা চলছে তার বিরুদ্ধে বলার কেউ নেই । পাঠাগারে টিভি এনে নৃত্য গীতি দেখা, শোনা যে অশোভন আর পাঠাগারটি যদি হয় ভাষা সৈনিক শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের নামে তখন হয় তা মহাপাপ তা বুঝবার মতো বুদ্ধিসুদ্ধি কী ঐসব নামি দামি জাতীয় পত্রিকার প্রতিনিধিদের নেই ?

করজোড় অনুরোধ করছি- শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্মৃতি পাঠাগারে টিভি চালানো বন্ধ করুন । বিবেকের তাড়নায় না হোক, ফেব্রুয়ারি মাসটায় অন্তত চক্ষুলজ্জায় হলেও বন্ধ করুন ।

মাহমুদুর রহমান বাবুঃ সাংবাদিক।।

অতিথি লেখক