জিয়া ও এরশাদ আমলের বাতিল মার্শল ল’ অর্ডিন্যান্স’র কার্যকারিতা বহাল রাখতে বিল পাস

জিয়া ও এরশাদ আমলের বাতিল মার্শল ল’ অর্ডিন্যান্স’র কার্যকারিতা বহাল রাখতে বিল পাস

সংসদ রিপোর্টার,এসবিডি নিউজ24 ডট কমঃ সংবিধানের ১৫তম সংশোধনীর ফলে জেনারেল জিয়াউর রহমান ও হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের সামরিক আইনের সময়ে জারি করা অধ্যাদেশগুলো অকার্যকর হয়ে যাওয়ায় সেগুলো আবার আইনে পরিণত করতে সংসদে উত্থাপিত বিশেষ দুটি বিল গতকাল সংসদে পাস হয়েছে। আইনমন্ত্রী বিল দুটি পাসের প্রস্তাব করলে কণ্ঠভোটে পাস হয়। তার আগে স্বতন্ত্র সদস্য ফজলুল আজিমের জনমত যাচাই, বাছাই কমিটিতে প্রেরণ এবং সংশোধনী প্রস্তাব কণ্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়। বিল দুটি হলো- ‘১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট হইতে ১৯৭৯ সালের ৯ এপ্রিল তারিখ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে জারিকৃত কতিপয় অধ্যাদেশ কার্যকরণ (বিশেষ বিধান) বিল-২০১৩ এবং ‘১৯৮২ সালের ২৫ মার্চ হইতে ১১ নভেম্বর তারিখ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে জারিকৃত কতিপয় অধ্যাদেশ কার্যকরকরণ (বিশেষ বিধান) বিল-২০১৩।
ফজলুল আজিম বিল পাসের আগে যাছাই বাছাই করে পাস করার পক্ষে যুক্তি দিতে গিয়ে বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল বিলের সংশোধনী আনার সময় তড়িগড়ি করার কারণে অনেক ক্রুুটি রয়ে গেছে। যেমন, সরকারের আপীলের সুযোগ ছিলনা। পরে আবার সংশোধনী আনতে হয়েছে। এসব অর্ডিন্যানন্সের ক্ষেত্রেও তড়িগড়ি করে পাস করা ঠিক হবেনা। জবাবে আইন মন্ত্রী বলেন, সেটা ১৯৭৩ সলের আইন ছিল। ফলে সেটাতে ক্রুটি ছিল। সেগুলো সংশোধন করে যুগোপযোগি করা হয়েছে।  প্রসঙ্গক্রমে ফজলুল আজিম তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলে সমালোচনা করলে আইনমন্ত্রী বলেন, ওই ব্যবস্থা সংবিধান সম্মত নয়। গণতন্ত্রের সাথে সাংঘর্ষিক তাই উচ্চা আদালতের রায় সেটি বাদ দেয়া হয়েছে। গণতন্ত্র সমর্থন করেনা এমন বিধান ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। তাই সেটা ফিরিয়ে আনার হন্য আন্দোলন বা হরতাল করলে গ্রহনযোগ্য হবেনা। দু’দফা সামরিক আইনের সময়ের ১৬৬টি অধ্যাদেশ কার্যকর করতে এ বিল দুটি আনা হয়। এর আগে এ অধ্যাদেশগুলো কার্যকর রাখতে দুটি অধ্যাদেশ জারি করা হয়। গত ২৭ জানুয়ারি সংবিধানের ৯৩ (২) অনুচ্ছেদের বিধান অনুযায়ী অধ্যাদেশগুলো সংসদে উপস্থাপন করা হয়। সংবিধানের ১৫তম সংশোধনীর আগে আপিল বিভাগের দুটি রায়ের মাধ্যমে সংবিধানের চতুর্থ তফসিলে ১৯ অনুচ্ছেদ বাতিল ঘোষণা করা হয়। পরে সরকারে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর এবং পরে ২০১৩ সালের জুন মাস পর্যন্ত মার্জনা করা হয়। বিলে শর্ত জুড়ে  দেয়া হয়েছে, এই ধারার অধীন ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট থেকে ১৯৭৯ সালের ৯ এপ্রিল পর্যন্ত সময়ের মধ্যে জারি করা অধ্যাদেশ কার্যকর করা হলেও যতটুকু তাদের বিষয়বস্তুর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শুধুমাত্র ততটুকু গ্রহণ করা হয়েছে বলে গণ্য করা হবে। ওই সময়েল অবৈধ ও অসাংবিধানিকভাবে রাষ্ট্রক্ষমতায় আসীন সামরিক শাসন আমলের কৃতকর্মের অনুমোদন ও সমর্থন করা হয়েছে বলে কোনোভাবেই বিবেচিত হবে না। সামরিক সরকারের সময়ে জারি করা কার্যকর কিছু অধ্যাদেশ আইনী ভিত্তি দিতে গত ১৪ জানুয়ারি দুটি বিলের নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। দুটি বিলেরই উদ্দেশ্য ও কারণ সম্পর্কে বলা হয়েছে, ওই অধ্যাদেশগুলো ও তার অধীন প্রণীত বিধি, প্রবিধান বা আদেশবলে কৃত কাজ-কর্ম, ব্যবস্থা বা কার্যধারাগুলো চলমান রাখাসহ উক্ত সময়ে জারিকৃত কতিপয় সংশোধনী অধ্যাদেশ দ্বারা প্রচলিত কতিপয় আইন সংশোধন করা হয়েছে বিধায় আইনের শাসন, জনগণের অর্জিত অধিকার সংরক্ষণ এবং প্রজাতন্ত্রের কর্মের ধারাবাহিকতা বহাল ও অক্ষুন্ন রাখার নিমিত্ত, জনস্বার্থে, উহাদের কার্যকারিতা প্রদান করা প্রয়োজন।
আরো বলা হয়েছে, ওই অধ্যাদেশগুলোর অধীন সূচিত কার্যধারাগুলো বা গৃহীত ব্যবস্থা বা কাজ-কর্ম বর্তমানে অনিষ্পণ বা চলমান থাকলে, জনস্বার্থে ওই কার্যধারাগুলো বা গৃহীত ব্যবস্থা বা কাজ-কর্ম চলমান রাখা এবং জনজীবনে শান্তি-শৃঙ্খলা, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ও জন সাধারণের অধিকার সুরক্ষণার স্বার্থে ওই অধ্যাদেশগুলো কার্যকর করা এবং এদের কার্যকারিতা হারাবার ফলে সৃষ্ট আইনি শূণ্যতা পূরণ করা আবশ্যক।

নিজস্ব প্রতিনিধি