সাংবাদিক দম্পতি খুনঃ পুলিশের সন্দেহের লম্বা তালিকা।। কারো নাম প্রকাশ এবং গ্রেফতারে অসাড়তা

সাংবাদিক দম্পতি খুনঃ পুলিশের সন্দেহের লম্বা তালিকা।। কারো নাম প্রকাশ এবং গ্রেফতারে অসাড়তা

বিশেষ প্রতিনিধি, এসবিডি নিউজ 24 ডট কমঃ সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার-মেহেরুন রুনি হত্যাকান্ডের তদন্তে পুলিশ অনেককেই সন্দেহ করছে। তবে পুরোপুরি নিশ্চিত না হয়ে কাউকে গ্রেফতার করা হবে না। নৃশংস ওই হত্যাকান্ডের চারদিন পর নগর পুলিশের মুখপাত্র এবং ডিসি ডিবি (দক্ষিণ) মনিরুল ইসলাম গতকাল বুধবার এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে এ কথা বলেছেন। ডিএমপির মুখপাত্র মনিরুল ইসলাম আরো বলেন, সাধারণত কোনো মামলার তদন্তে পুলিশের একটি দল কাজ করলেও এই ক্ষেত্রে কাজ করছে কয়েকটি দল। বলা যায় গোয়েন্দা পুলিশের শক্তিশালী একাধিক দল সর্বাধিক গুরুত্বের সঙ্গে বিষয়টি দেখছে। মামলাটিই এখন সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ মামলা হিসেবে অগ্রাধিকার দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, গত শনিবার ভোররাতে নিজ বাসায় নৃশংসভাবে খুন হন মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সরওয়ার ও তার স্ত্রী এটিএন বাংলার সিনিয়র রিপোর্টার মেহেরুন রুনি। ঘটনার দিন ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে খুনিদের গ্রেফতারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশ থাকলেও পুলিশ ওই সময়ের মধ্যে কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। এর মধ্যে চারদিন পার হলেও তদন্তকারীদের পক্ষ থেকে কোনো অগ্রগতির তথ্য জানানো হচ্ছে না। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইজিপি, ডিসি তেজগাঁওয়ের পর ডিএমপির মুখপাত্র মনিরুল ইসলামও বললেন অভিন্ন কথা। সবাই বলছেন, তদন্তে পর্যাপ্ত অগ্রগতি হয়েছে, যা তদন্তের স্বার্থে জানানো যাচ্ছে না। কী এমন অগ্রগতি হচ্ছে যা সংবাদকর্মীদের জানানো যাচ্ছে না? আবার পুলিশের পক্ষ থেকে একটি মোবাইল নম্বর সরবরাহ করে তথ্য আহ্বান করা হচ্ছে, যাতে বলা হচ্ছে এই হত্যারহস্য উদঘাটনে সহায়ক তথ্য কারো জানা থাকলে তা সরবরাহের জন্য। ডিএমপির মুখপাত্র

১৫ ফেব্রুয়ারী ব্রিফিংয়ে বলেন, তারা সর্বশক্তি নিয়ে তদন্ত কাজ করছেন। হত্যাকান্ডের উদ্দেশ্য সম্পর্কে তিনি বলেন, শতভাগ নিশ্চিত না হয়ে ‘মোটিভ ডিসক্লোজ’ করা যাচ্ছে না। তিনি আরো বলেন, ঘটনার পর আমরা নিহতদের আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব, প্রতিবেশীসহ অনেকের সঙ্গে কথা বলেছি। অনেকের জবানবন্দি রেকর্ডও করেছি। এগুলোকে জিজ্ঞাসাবাদ বলা ঠিক হবে না। ৩ জন নিরাপত্তাকর্মী ও ভবন কেয়ারটেকারকে গ্রেফতার করা হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখনো গ্রেফতার করা হয়নি। তবে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। কোনো গণমাধ্যমকর্মীকে আটক, জিজ্ঞাসাবাদ কিংবা গ্রেফতার করা হচ্ছে কি না অথবা এই হত্যাকান্ডে সংশ্লিষ্ট ছিলেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, না এখনো কাউকে আটক কিংবা গ্রেফতার করা হয়নি। সন্দেহের তালিকায় রয়েছে কি না জানতে চাইলে বলেন, সন্দেহের তালিকায় শুধু গণমাধ্যম নয়, বিভিন্ন মাধ্যমের লোকজনই রয়েছেন। তবে পুলিশ সবাইকে নজরে রাখছে না। শতভাগ নিশ্চিত হওয়ার পরই সন্দেহভাজনকে নজরদারি কিংবা গ্রেফতার করা হবে।

প্রভাবশালী কোনো ব্যক্তি এই হত্যাকান্ডে জড়িত কি না, কিংবা ঘটনাটি ভিন্নখাতে প্রবাহিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে কি না_ এই প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যদি কেউ জড়িত থাকে তবে তাকে অবশ্যই গ্রেফতার হতেই হবে। আইনে প্রভাবশালীর কোনো সংজ্ঞা নেই। জড়িত যেই হোক তাকে আমরা বিবেচনা করব আসামি হিসেবেই। এ পর্যন্ত যাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে তাদের হাতের ছাপের সঙ্গে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধারকৃত রক্তমাখা বঁটিসহ অন্যান্য মালামালের ছাপের সঙ্গে মিল পাওয়া গেছে কি না জানতে চাইলে তিনি কৌশলে এড়িয়ে যান এই প্রশ্নের উত্তর। হত্যাকান্ড সাগর-রুনির ব্যক্তিগত বা পারিবারিক বিরোধ, পেশাগত বিরোধ এবং লেনদেন ও সম্পত্তি বিষয়ক বিরোধ এবং তাদের ওপর কোনো ব্যক্তি বা মহল ক্ষুব্ধ ছিল কি না, এই ধরনের ৬টি বিষয়কে সামনে রেখে চলছে তদন্ত কাজ। হত্যাকান্ডের ঘটনার সঙ্গে ডাকাতি বা চুরির মতো ঘটনা সংশ্লিষ্ট কি না তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে তিনি যোগ করেন। নিহত দম্পতির একমাত্র শিশুপুত্র মেঘকে কোনো ছবি বা ভিডিও ফুটেজ দেখিয়ে হত্যাকারী সম্পর্কে ধারণা নেয়া হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা সব ধরনের কলাকৌশল প্রয়োগ করেছি। হত্যারহস্য উদঘাটনে গঠিত তদন্তকারীরা অন্তত একটি সংস্থার সঙ্গে সমন্বয়হীনতা রয়েছে কি না প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, এই ধরনের কোনো তথ্য তাদের জানা নেই। তবে গোয়েন্দা পুলিশকে র‌্যাব ও সিআইডিসহ স্থানীয় পুলিশ যথেষ্ট সহযোগিতা করছে। তিনি আরো জানান, কাউকে গ্রেফতারের এখতিয়ার একমাত্র তদন্তকারী কর্মকর্তার। কোনো ধরনের সাহায্য দরকার হলে তিনি সংশ্লিষ্ট যেকোনো সংস্থার কাছে চাইতে পারেন। এর বাইরে অন্য কারো পক্ষে সন্দেহভাজন কাউকে গ্রেফতার করার সুযোগ নেই। মহানগর পুলিশের পক্ষে মনিরুল ইসলাম চাঞ্চল্যকর এই হত্যাযজ্ঞ মামলার তদন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হয় এমন কিছু প্রকাশে গণমাধ্যমকে বিরত থাকার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, নিহত সাংবাদিক দম্পতির প্রতি নূ্যনতম অসম্মানবোধ ও শ্রদ্ধাহীনতা প্রদর্শিত হয়, এমন কিছু যেন কাগজে প্রকাশ কিংবা কোনো টিভি চ্যানেল কিংবা রেডিওতে যাতে সম্প্রচার না করা হয় সেদিকে সবাইর সতর্ক থাকা উচিত।

বিশেষ প্রতিনিধি

Related articles

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না।