স্মরণঃ কুমিল্লার অধ্যক্ষ মিহির কুমার দত্ত

স্মরণঃ কুমিল্লার অধ্যক্ষ মিহির কুমার দত্ত

মমিনুল ইসলাম মোল্লাঃ বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ বাংলার আলো নামে খ্যাত মিহির কুমার দত্ত ২১ মার্চ ২০০৬ দেহত্যাগ করেন। তিনি দেবিদ্বার এসএকলেজ এবং নিমসার জুনাব আলী কলেজ এর অধ্যক্ষ হিসেবে দাযিত্ব পালন করেছেন। তিনি বাংলা সাহিত্য পড়াতেন। বাংলা এত সহজ ও সুন্দরভাবে পড়াতেন যা সমসাময়িক শিক্ষকদের মধ্যে ছিলেন বিরল, তাই তিনি তার প্রিয় ছাত্রদের নিকট বাংলার আলো নামে খ্যাত ছিলেন। অধ্যক্ষ মিহির কুমার দত্ত ২০০৬ সালে দেবিদ্বারের ছোটাালমপুরস্থ বাসভবনে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর স্থায়ী বাড়ি ছিল মুরাদনগর থানার বাঙ্গরায়। তিনি চুনটা ( সরাইল)হাইস্কুল থেকে এসএসসি, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা বিষয়ে মাস্টার্স ডিগ্রি লাভ করেন। তখন বাংলা পড়ানোর জন্য উচ্চ শিক্ষিত শিক্ষকের যথেষ্ট অভাব ছিল।  তাই তিনি ছাত্র থাকা অবস্থায়ই শিক্ষকতা শুরু করেন। মুরাদরনগরের বাঙ্গরা উমালোচন উচ্চ বিদ্যালয় ও চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ পাইলট হাইস্কুলে তিনি কয়েক বছর শিক্ষকতা করেন। বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন সুজাত আলীর উদ্যোগে ১৯৬৮ সালে দেবিদ্বার সদরে একটি বেসরকারি কলেজ স্থাপিত হয়। এটি ১৯৮৬ সালে জাকতীয়করন করা হয়। মিহির বাবু নবপ্রতিষ্ঠিত মহাবিদ্যালয়টির বাংলা বিভাগের দায়িত্ব নিলেন। তখন অধ্যক্ষ ছিলেন জনাব মহিউদ্দিন। অন্য পেশায় যাওয়ার প্রচুর সুযোগ থাকা সত্বেও তিনি শিক্ষকতাকে ভিশন ও মিশন হিসেবে গ্রহণ করায় এ পেশা পেিবির্তন করেন নি। মিহির অল্প কিছুদিনের মধ্যেই অধ্যক্ষের ( ভারপ্রাপ্ত) দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত এ পদে আসীন ছিলেন। সদ্য প্রতিষ্ঠিত কলেজটিকে ভালোভাবে দাঁড় করােনোর জন্য তিনি দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। তারপরও তার বিরুদ্ধে এক দল লোক ষড়যন্ত্র করলো। এসময় নিমসার জুনাব আলী কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদানের আহবান পেলেন। ১৯৮৪ সালে তিনি অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করে কলেজের সার্বিক উন্নয়নে মনোনিবেশ করেন। তিনি যখন যোগদান করেন তখন কলেজে ছাত্র সংখ্যা ছিল মাত্র ৮৫ জন তার চেষ্টায় মাত্র ১ বছরেই তা ২০০ তে উন্নীত হয়।২০০২ সাল পর্যন্ত তিনি সেখানে অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তারপর অবসরে চলে আসেন।  অবসর জীবন কাটান দেবিদ্বারের নিজস্ব বাসভবনে। তার ছেলে পার্থ প্রতীম দত্ত মুরাদনগরের চাপিতায় অবস্থিত ফরিদ উদ্দিন সরকার ডিগ্রি কলেজে অধ্যাপনা করছেন। অন্যান্য ছেলে মেয়েরাও স্ব স্ব পেশায় প্রতিষ্ঠিত ১৯৮১-৮২ সালের ছাত্র ছিলেন- ভিপি হেলাল উদ্দিন, তিনি বলেন স্যারকে একদিন বলেছিলাম “ অভাব যখন দরজায় আসে ভালভাসা তখন জানালা দিয়ে পালায়, একথাটির অর্থ কি ? স্যার তার ব্যক্তি জীবনের কাহিনী এবং বাস্তবতার আলোকে বিষয়টি এত সুন্দর করে বুঝিয়েছিলেন যা জীবনে কখনও ভুলে যাবার নয়। সেদিন কখন নির্ধারিত ঘন্টা শেষ হয়ে গিয়েছিল তা কারও খেয়াল ছিলনা। ৯০ মিনিট শেষ হয়ে টিফিনের ঘন্টা বাজায় ওনার খেয়াল হয়েছিল। টিচার্স রুমে গিয়ে জানলেন ম্যানেজম্যান্টের তাজুল ইসলাম স্যার কিছুক্ষণ বানরান্দায় হাঁটাহাঁটি করে আবার অফিসরুমে চলে এসেছেন। সেজন্য অবশ্য তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন।  কোম্পানীগঞ্জ বদিউল আলম ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ বিমল বিকাশ ভৌমিক বলেন, আমি স্যারের ছাত্র ছিলাম। পরবর্তীতে একসাথে শিক্ষকতাও করেছি। তিনি শুধু বাংলা নয় অন্যান্য বিষয়েও অগাধ জ্ঞানের অধিকারী ছিলেন। মিহির বাবুর ছেলে অধ্যাপক পার্থ বলেন, বাবার একটা কথাই বারবার মনে পড়ে, তিনি বলতেন, কাজ করে যাও, প্রতিদানের আশা করো না। তিনি নিজেও কখনো প্রতিদান চান নি। তাইতো কমার্শিয়াল টিচার না হয়ে সবসময় ছাত্র-ছাত্রীদের বৃহত্তর কল্যাণের কথা  সবসময় ভাবতেন।

লেখকঃ মমিনুল ইসলাম মোল্লা।।
প্রভাষক, ক্যাম্পেনার সিডিএলজি এবং সহকারী সম্পাদক(দৃষ্টান্ত ডট কম), কুমিল্লা।।

অতিথি লেখক