লাল-সবুজের দরজায় ট্রয় এর ঘোড়া

লাল-সবুজের দরজায় ট্রয় এর ঘোড়া

মুনীব রেজওয়ানঃ

বিএনপি রাজনৈতিকভাবে শেষ– বলেছিলাম যেদিন খালেদা জিয়া সিঙ্গাপুর থেকে ফিরে বিমান বন্দর থেকেই সরাসরি তাঁর কার্যালয়ে এসে জামাতকে ব্যাক আপ টা দিলেন, সেদিনই জামাতের পেটে বিএনপি ঢুকে গেছে এখন জামাত পরিপাক প্রক্রিয়ায় বিএনপি কে হজম করার শেষ ঢেকুরটি তুলে জৈবসার হিসেবে বের করে দেবার অপেক্ষায় আছে।

এই মাসের মধ্যেই সম্ভবত সেই বিভীষিকাময় কাজটি (১৮+১) দলীয় জোট শুরু করবে। একটু খেয়াল করলেই বোঝা যায়–হেফাজতিদের সমাবেশে যারা আসেন তারা মূলত জামাতি+ মাদ্রাসার গরীব ছাত্র-শিক্ষক যাদেরকে টাকা দিয়ে কিনে আনা হয় মূলত।-হেফাজতিরা সমাবেশ ডাকলেই এর বিপক্ষে একটা হরতাল দেবে ২৭ সংগঠন আর হেফাজতিরা পাবে না পরিবহন, ফলে এপ্রিলের ২৮ তারিখে বিএনপি মহাসমাবেশ ডাকবে এবং এখানেই উপস্থিত করা হবে এদের সম্মিলিত জনতা—যার উপস্থিতি আগের বারের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ করবে এবং একটা চরম অসহযোগের মাধ্যমে তারা সরকার হটাবে—এই হল মোটামুটি জামাত-হেফাজতি-বিএনপি পরিকল্পনা। আরো কিছু গোপন বিষয় নিশ্চয় আছে–যে কারনে বিএনপি সেদিন স্থায়ী কমিটির নেতাদের মোবাইলফোন নজিরবিহীন ভাবে ম্যাডাম জমা নিয়েছিলেন।

এখন সরকার ভাবছে যাক বাবা! হেফাজতকে ঝুলিয়ে রাখি–বিএনপির তো সব নেতাই ভিতরে ! বিএনপি’র সব নেতা বাইরে থাকলেও বিএনপির এখন আর সেই শক্তি নেই নিজের কিছু করার–তারা এখন জামাতের পেটে। আর সকল গুটি চালাচ্ছে জামাত। হেফাজতিরা হরতাল করেছিল জামাতিদের স্বার্থেই-কারণ ওরাই জামাত, সারা দেশে পিকেটিং এ নাশকতাও করেছে জামাত। বিএনপি এই হরতাল থেকে সমর্থন তুলে নেবার কারন ছিল –দেশের মুসুল্লী এবং সাধারণ মানুষের কাছে হেফাজতের অরাজনৈতিক চরিত্র হেফাজত করার জন্যই। এটা ছিল বিএনপির-জামাতের সম্পূর্ণই একটা রাজনৈতিক কৌশল। অথচ আমাদের সরকারের লোকজন বুঝল বিএনপি’র সাথে হেফাজতের পিরীত তারা ভেঙ্গে দিতে সক্ষম হয়েছেন।

এই খুশীতে ডগমগ আওয়ামিলীগ এখনো ভাবছে হেফাজতকে তারা আলাদা করে রাখতে পারবে। বাস্তবতা হল হেফাজতকে অরাজনৈতিক লেবেল দিয়ে পুরো জামাতের রাজনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালনা করছে জামাত, জামাতিরা নিশ্চিত তারা নিষিদ্ধ হচ্ছে তাই এই বিকল্প ব্যাবস্থা–এটা হেফাজতিদের উত্থান প্রক্রিয়াতেই প্রমাণিত। হেফাজত অরাজনৈতিক চরিত্র পেলে তারা দেশের আরো কোটি ধর্মপ্রাণ মানুষের অন্ধ সমর্থন আদায় করতে পারবে। আওয়ামিলীগের মত এতো পুরনো একটা দল এসব কি না বোঝার কথা? হুম–দলের প্রধাণ যখন চাটুকারদের চোখ দিয়ে দেশের অবস্থা দেখেন, এবং দল যখন শুধুই একজনের উপরেই সকল সিদ্ধান্তের ক্ষমতা দিয়ে রাখে তখন এমনই হয়। তাছাড়া দলের ত্যাগী নেতারা বাইরে থাকলে অপরীক্ষিত / অনভিজ্ঞ/ তরুণ/ টেকনো মন্ত্রীরা অতো দায়িত্ব নিয়ে কখনোই কিছু করেন না–স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে দেখতে পাই খুব কায়দা করে বাণী ছাড়েন কিন্তু কাজের বেলায় তার পুলিশ শুধু মার খায়। অর্থমন্ত্রী তার রুটিন কাজের বাইরে দল বা দেশের জন্য নিজের পরিধীর বাইরে গিয়ে কিছু করবেন না সেটি তিনি আকার ইঙ্গিতে প্রকাশ করেছেন। মতিয়া চৌধুরীর মত কজন আছেন নিবেদিত? আমরা সেরকম টিম স্পিরিট সরকারের মন্ত্রীদের মধ্যে খুব একটা দেখিনা বলেই হেফাজত যখন পুলিশ/দলের লোকও মারে–তেমন প্রতিক্রিয়া দেখতে পাই না।

আশা করছি এই বৈশাখী মেলা থেকেই বেরিয়ে আসবে জনতার পরিপূর্ণ জাগরণ যার শুরু নতুন প্রজন্মের শাহবাগ। এই মোর্চাই হবে সত্যিকারের দেশপ্রেমিক মানুষের প্লাটফর্ম। সরকার যদি ইতোমধ্যে ভুল স্বপ্ন থেকে বের হয়ে এসে হেফাজতে জামাতিকে আসল শত্রু হিসেবে চিনতে পারে এবং প্রয়োজনে দেশের সকল শক্তি দিয়ে মোকাবেলা করে শক্ত হাতে— তাহলেই ওরা লেজ গুটাতে বাধ্য হবে–নইলে বিএনপি’র মতো আওয়ামিলীগও শেষ হয়ে যাবে। একটা দীর্ঘ প্রক্রিয়ায় আবারো আমাদেরকে যুদ্ধ করে যেতে হবে এদের নিশ্চিহ্ন করতে একটা অনিশ্চিত সময় পর্যন্ত এবং এই ফাঁকে যদি ক্ষমতায় দ্বিতীয় কোনো এরশাদ এসে হাজির হয়—তাহলে তো কথা ই নেই! দূর্ভোগের ষোলকলা পূর্ণ হবে।

মুনীব রেজওয়ানঃ গবেষক ও প্রাবন্ধিক।।

অতিথি লেখক