নওগাঁয় ভয়াবহ লোডশেডিং: ইরি-বোরো ধান ক্ষেত হুমকির মুখে

নওগাঁয় ভয়াবহ লোডশেডিং: ইরি-বোরো ধান ক্ষেত হুমকির মুখে

আব্বাস আলী,নওগাঁ প্রতিনিধি,এসবিডি নিউজ24 ডট কমঃ নওগাঁর সাপাহার, পোরশা ও নিয়ামতপুর উপজেলায় পল্লী বিদ্যূতের অব্যাহত লোডশেডিং আর অনিশ্চিত বিদ্যূত সরবরাহের কারনে চলতি মৌসুমের বোরো ধান চাষ হুমকির মুখে পড়েছে কৃষক। পানি সেচের অভাবে অধিকাংশ এলাকায় ধানের জমির পানি শুকিয়ে গেছে। কোন কোন এলাকায় জমিতে ফাটল ধরেছে। পানির অভাবে সেচ কাজ ব্যহত হওয়ায় এবারের মৌসুমে ধানের আশাতিত ফলন না পাওয়ার আশংকা করছে কৃষকরা। নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সুত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে সাপাহার, পোরশা ও নিয়ামপুর উপজেলায় ২৭ হাজার ৮৬০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ করা হয়েছে। ধান চাষের পর কৃষকরা পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় কাটালেও মৌসুমের শুরুতেই এই তিন উপজেলায় দেখা দিয়েছে বিদ্যূত বিপর্যয়। অধিকাংশ সময় চলছে পল্লী বিদ্যূতের লোডশেডিং, লো-ভোল্টেজ। নিয়ামতপুর উপজেলার বাহাদুরপুর গ্রামের কৃষক আব্দুর রহমান জানান, এখন ধানের গাছ থেকে ধানের থোর বের হওয়ায় সময়। বোরো ধান চাষের এই ভরা মৌসুমে যেখানে ২৪ ঘন্টায় যেখানে কমপক্ষে ১২ ঘন্টা সেচ সরবরাহ নিশ্চিত করা প্রয়োজন সেখানে লোডশেডিংয়ের কারনে দিনরাতে মিলে কৃষকরা বিদ্যুত সরবরাহ পাচ্ছে মাত্র ৫/৬ ঘন্টা।
উপজেলার গুলোর মধ্যে বাহাদুরপুর, খড়িবাড়ী, সাদাপুর, আদমপুর, ঝলঝলিয়া, লংপুর, বালাতৈড়, রুপনারায়নপুর, তেঘড়িয়া, কাপাষ্টিয়া, হাজীনগর, চন্দননগর, নিতপুর, সাপাহার সদর, তিলনা, আইহাই এলাকার ধানের মাঠের অবস্থা খুবই নাজুক। নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যূত সরবরাহ না থাকায় যার ফলে অধিকাংশ এলাকায় ধান ক্ষেতের পানি  শুকিয়ে গেছে। কোন কোন এলাকায় জমি ধরেছে ফাটল। পোরশা উপজেলার হাজীনগর গ্রামের কৃষক লুৎফর রহমান জানান, ধান চাষের এই সময়ে জমিতে কমপক্ষে ৪ ইঞ্চি পানি থাকা প্রয়োজন হলেও অব্যাহত লোডশেডিংয়ের কারনে বিদ্যূতের চালিত সেচ প্রকল্পের গভীর-অগভীর নলকুপ অধিকাংশ সময় থাকছে বন্ধ। দিনের বেলায় কৃষকরা জমিতে কোন প্রকার সেচ দিতেই পারছেন না। সেচের অভাবে ধানের ফলন আশাতিত না হওয়ার আশংকায় দিশেহারা হয়ে পড়েছে চাষীরা।  মঙ্গলবার এ ব্যাপারে নওগাঁ পল্লী বিদ্যূত সমিতির জেনারেল ম্যানেজার মোঃ নুরুর রহমানের সাথে কথা বলা হলে তিনি বিদ্যূত সরবরাহ ব্যবস্থা নিয়ে খোদ অসন্তোষ প্রকাশ করে জানান, গত বছর বোরো ধান চাষের মৌসুমে সাহাপার, পোরশা ও নিয়ামতপুর উপজেলার স্বাভাবিক বিদ্যূত সরবরাহের পর অতিরিক্ত ১৫ মেগাওয়াট বিদ্যূত বরাদ্দ এবং সরবরাহ করা হয়েছিল। যার ফলে গত বছর বোরো চাষে বিদ্যূত সমস্যা ছিল না। কিন্তু এবারে বোরো চাষের ভরা মৗেসুম শুরু হলেও উধ্বতন কর্তৃপক্ষ বিদ্যূতের বরাদ্দ বৃদ্ধি না করায় কৃষকরা বিপাকে পড়েছেন। বর্তমানে ওই তিন উপজেলার জন্য সর্বোচ্চ ৩৬ মেগাওয়াট বিদ্যূত সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে, যা কমপক্ষে ৫০/৫১ মেগাওয়াটে উন্নীত করা প্রয়োজন বলে তিনি বলেন, ইতিমধ্যে পল্লী বিদ্যূতায়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান, পিডিবির প্রধান প্রকৌশলী, পাওয়ার সেলে ডিজিসহ বিদ্যূত বিভাগের উধ্বতন কমকর্তাবৃন্দ বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে। নওগাঁ পল্লী বিদ্যূত সমিতির জেনারেল ম্যানেজার নুরুর রহমান জানান, বিগত বছরের মতো এবারে যদি সাপাহার পোরশা ও নিয়ামতপুর উপজেলার জন্য অতিরিক্ত বিদ্যূত বরাদ্দ এবং সরবরাহ না করা হয় তাহলে পানির অভাবে বাড়ন্ত ধানের ক্ষতি হওয়ার আশংকা করা হচ্ছে। এদিকে, উদ্বৃত্ত ধান উৎপাদনের জেলা নওগাঁর সাপাহার, পোরশা ও নিয়ামতপুর উপজেলায় অবিলম্বে পল্লী বিদ্যূতের অতিরিক্ত বিদ্যূত সরবরাহ নিশ্চিত করতে না পারায় ইরি-বোরো ধান চাষ ব্যহত হলে দেশে খাদ্য সংকট সৃষ্টির ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য প্রভাব পড়ার আশংকা করছেন সচেতন মহল।

এসবিডি নিউজ ডেস্ক