সর্বস্তরে বাংলা ভাষার প্রচলন এবং ভাষা সৈনিকদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি সময়ের দাবী

মানিক লাল ঘোষঃ

বাঙালি জাতি এক গর্বিত জাতির নাম। এক অহংকারী জাতির নাম। যারা বুকভরা অহংকার নিয়ে বলতে পারে আমরা সেই বীরের জাতি, যে জাতি মায়ের ভাষার মান রাখতে রক্ত দিয়েছে। ভাষার জন্য রক্তদান এ এক বিরল ঘটনা। বাঙালি জাতির জীবনে অনেক ঘাত-প্রতিঘাত এসেছে। সব বাধা বিপত্তিকে উৎরিয়ে অসীম সহাসিকতায় এগিয়ে চলে বাংলা মায়ের দামাল ছেলেরা। সব প্রতিকূলতা পরাভূত করে ছিনিয়ে এনেছে বিজয়। যে বিজয় আনন্দ আর গৌরবের। বাঙালি জাতির এ গৌরবময় অর্জনের একটি দিবস ২১ ফেব্রুয়ারী আজ আন্তর্জাতিকভাবে পালিত হচ্ছে। আর তাহলো আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে। আমাদের জাতীয় জীবনের একটি স্মরণীয় দিন। আমাদের মা, মাটি আর মানুষকে ভালবাসার দিনটিকে বিশ্ববাসী আজ শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছে। এর চেয়ে আনন্দের এবং গর্বের বিষয় একটি জাতির কাছে আর কি হতে পারে?

বাঙালি জাতির এ গৌরবময় অর্জনের জন্য একটি তারিখ আমাদের জীবনের স্মরণীয় দিন। সেদিনটিকেও আমাদের ঘটা করে পালন করা উচিত। কেননা তরুণ প্রজন্ম যেন এ তারিখটি ভুলে না যায়। ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর এঐতিহাসিক দিন জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও  সংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কো প্যারিস বাঙালির অমর একুশে ফেব্রুয়ারিকে    আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। সাধারণ পরিষদে প্রস্তাবটি পেশ করার আগে ইউনেস্কো ২৮টি সদস্য রাষ্ট্র এ প্রস্তাব অনুমোদন ও সমর্থন করে। অবাক হওয়ার মতো ব্যাপার হচ্ছে, এককালে বাঙালির মাতৃভাষার অধিকার হননকারী ও বাঙালির মহান মুক্তিযুদ্ধে ত্রিশ লাখ বাঙালি নিধনকারী পাকিস্তানও এ ২৮টি সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে এ প্রস্তাবের অন্যতম সমর্থক ছিল।

মহান একুশে ফেব্রুয়ারি আজ আর শুধু বাঙালির একার গর্বের বিষয় নয়। একুশে ফেব্রুয়ারি এখন বিশ্বের সব মানুষের সকল ভাষাভাষির শ্রদ্ধা ও ভালবাসায় মন্ডিত একটি দিন। ২১ ফেব্রুয়ারি আজ আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে। মাতৃভাষা দিবসের প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে, বিশ্বের বহু ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠির নিজ নিজ মাতৃভাষাকে সম্মান জানানো এবং তাদের ভাষা ও সংস্কৃতির অধিকার এবং বিকাশকে স্বীকৃতি ও সম্মান প্রদান। আমাদের গর্বের দিন আজ আন্তর্জাতিক দিন হিসেবে পালিত হচ্ছে। আমার ভাইয়ের রক্তে রঞ্জিত ভাষা দিবস আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। বিশ্বের সকল ভাষাপ্রেমী এদিনটিকে তাদের ভাষার প্রসার, প্রচার ও কল্যাণে শ্রদ্ধাভরে পালন করছে। অথচ আমাদের অর্জনকে আমরা সেভাবে পালন করতে ব্যর্থ হচ্ছি। বাংলা ভাষার প্রচলন, ব্যবহার, বাংলা ভাষার আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা এখনো আমরা কাঙ্খিত পর্যায়ে উন্নীত করতে পারিনি। আমাদের কোন জাতীয় ভাষানীতি নেই। প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা কোথাও বাংলা, কোথাও ইংরেজী আবার কোথাও আরবি শিক্ষার মাধ্যমে জগাখিচুড়ি শিক্ষা ব্যবস্থায় পরিণত হয়েছে। দেশের অনেক গ্রাজুয়েট না ভালোভাবে লিখতে পারে বাংলায় একটি আবেদনপত্র না পারে ইংরেজীতে।

 

সর্বস্তরে বাংলা ভাষা প্রচলনে আমাদের আন্তরিকতার যথেষ্ট ঘাটটি রয়েছে। ভাষার জন্য জীবনদান ও ভাষার জন্য যারা লড়াই করেছেন তাদেরকে আমরা সঠিকভাবে সম্মান প্রদর্শনে ব্যর্থ হয়েছি। ভাষা সৈনিকদের রাষ্ট্রীয় কোন তালিকা নেই। তাদের অনেকেই আজ মানবেতর জীবনযাপন করেছেন। তাদের প্রতি আমাদের সঠিক সম্মান প্রদর্শন করতে হবে। মুক্তিযোদ্ধাদের মতো তাদেরকেও রাষ্ট্রীয় সম্মান প্রদর্শনের মাধ্যমে দাফনের ব্যবস্থা করা উচিত। এ ব্যাপারে অনেক জেলায় একুশ উদযাপনের সভায় ভাষা সৈনিকরা দাবিও তুলেছেন। তাদের এ দাবির প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা জানানো কর্তব্য।

 

(মানিক লাল ঘোষঃ সাংবাদিক, কলামিস্ট)

মোবা- ০১১৯৮০২৫০৪২

maniklalgosh@ymail.com

 

 

প্রধান সম্পাদক

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না।