মাদকাসক্তের সংখ্যা বাড়লেও বাড়ছে না নিরাময় কেন্দ্র

মাদকাসক্তের সংখ্যা বাড়লেও বাড়ছে না নিরাময় কেন্দ্র

শুভাশিস ব্যানার্জি শুভ:

সারাদেশে মাদকাসক্তের সংখ্যা প্রায় ৫০ লাখ। কিন্তু এদের চিকিৎসার জন্য সরকারি নিরাময় কেন্দ্র আছে মাত্র চারটি। এগুলোতে মোট শয্যাসংখ্যা ৫৫টি। এর মধ্যে চিকিৎসক সংকটে পাঁচ শয্যাবিশিষ্ট খুলনার ময়লাপোতার নিরাময় কেন্দ্র প্রায় তিন বছর ধরে বন্ধ। ঢাকার তেজগাঁওয়ে ৪০ শয্যার কেন্দ্রীয় মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে চিকিৎসক আছেন সাতজন। রাজশাহীর উপশহর ও চট্টগ্রামের পাঁচলাইশের নিরাময় কেন্দ্রে শয্যা আছে পাঁচটি করে, চিকিৎসক আছেন একজন করে। নেই আধুনিক কোনো যন্ত্রপাতি। এসব থেকেই বোঝা যায়, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর পরিচালিত সরকারি কেন্দ্রগুলোর মাদকাসক্ত চিকিরসার করুণ অবস্থা।

অন্যদিকে ঢাকাসহ সারা দেশে বেসরকারিভাবে মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র রয়েছে তিন শতাধিক। এগুলোর মধ্যে ঢাকার ছয়টিসহ মোট ৫৪টির মতো কেন্দ্রের অনুমোদন (লাইসেন্স) রয়েছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সূত্র মতে, ঢাকার ৪৪১ তেজগাঁওয়ের কেন্দ্রীয় নিরাময় কেন্দ্রের সাতজন চিকিৎসকের মধ্যে মনোরোগবিশেষজ্ঞ তিনজন। চট্টগ্রাম ও রাজশাহী কেন্দ্রের চিকিরৎসকগণ মনোরোগবিশেষজ্ঞ নন।
জানা যায়, ২০০৯ সালে কেন্দ্রীয় নিরাময় কেন্দ্রে এক হাজার ৮৮৪ জন, রাজশাহীতে ৩৫ ও চট্টগ্রাম কেন্দ্রে ১৫০ জনকে চিকিৎসা দেয়া হয়। এসব কেন্দ্রে নারী ও শিশু মাদকাসক্তদের রেখে চিকিৎসা দেয়ার ব্যবস্থা নেই। কেন্দ্রগুলোতে আসা মাদকাসক্তদের মধ্যে ৭০ শতাংশের বয়স ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। তাদের বেশির ভাগই হেরোইন, গাঁজা, ফেনসিডিলে আসক্ত। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিচালক (চিকিৎসা ও পুনর্বাসন) আখতারুজ্জামান মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল জানান, সরকারি বা বেসরকারি পর্যায়ে মাদকসেবীদের সঠিক পরিসংখ্যান নেই।
প্রসঙ্গত, ২০০৮ সালে অধিদপ্তরের আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বেসরকারি সংস্থার জরিপ অনুযায়ী সারা দেশে মাদকাসক্তের সংখ্যা ৪৬ লাখ। বিভিন্ন সংস্থার জরিপ অনুযায়ী গত পাঁচ বছরে মাদকাসক্তের সংখ্যা বেড়েছে আরও সাত লাখ। কিন্তু সেই অনুপাতে চিকিৎসার সুবিধা বাড়েনি। ঢাকার কেন্দ্রীয় মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্র ঘুরে জানা যায়, এখানে বহির্বিভাগ ও অন্তর্বিভাগ থাকলেও জরুরি বিভাগ নেই। বহির্বিভাগে দৈনিক গড়ে ২০ জন মাদকাসক্তকে  চিকিৎসা দেয়া হয়। শয্যা অপ্রতুল থাকায় শয্যা খালি হলে অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে রোগী ভর্তি করা হয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে প্রেষণে নিয়োগ পাওয়া চিকিৎসক, নার্স ও কর্মচারী দিয়ে চিকিৎসা কার্যক্রম চলছে। এক্স-রে ও ইসিজি যন্ত্রসহ আধুনিক যন্ত্রপাতিও নেই। ফলে রোগীদের বাইরে পাঠিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে হয়।
বিশেষজ্ঞদের অভিমত অনুযায়ী, নিরাময় কেন্দ্রে চিকিৎসার পর তিন মাস পুনর্বাসন কেন্দ্রে রেখে চিকিৎসা দেয়া হলে রোগী ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠবে। মাদকাসক্তকে পুরোপুরি মাদকমুক্ত করতে দীর্ঘমেয়াদি পুনবার্সন ব্যবস্থা করা জরুরি। পুনর্বাসন কেন্দ্র চালু না হওয়ায় এখান থেকে চিকিৎসা নেয়া অনেককে দ্বিতীয়বার ভর্তি হতেও দেখা গেছে।
জানা যায়, ঢাকার নিরাময় কেন্দ্রটি ৪০ থেকে ১০০ শয্যায় উন্নীত করার অবকাঠামো ২০০৭ সালে নির্মাণ হয়েছে। একই সঙ্গে ১৫০ শয্যার পুনর্বাসন কেন্দ্রও নির্মিত হয়েছে। তবে লোকবল ও আনুষঙ্গিক সুবিধা না থাকায় এগুলো চালু করা যাচ্ছে না।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক এ প্রসঙ্গে বলেন, লোকবলের পাশাপাশি আসবাবপত্রসহ আনুষঙ্গিক সুবিধাদি পাওয়া গেলে বর্ধিত শয্যা ও পুনর্বাসন কেন্দ্র চালু করা যাবে। সচিব কমিটিতে অনুমোদন পাওয়া গেলে নিয়োগ-প্রক্রিয়া শুরু হবে। তিনি বলেন, মাদকবিরোধী গণসচেতনতা বাড়াতে প্রচারের জন্য অধিদপ্তরের তহবিল নেই। এরপরও অধিদপ্তর এনজিওদের সহায়তায় গণসচেতনতা বাড়াতে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আলোচনা অনুষ্ঠানের পাশাপাশি পোস্টার ও প্রচারপত্র বিতরণ করছে। অধিদপ্তরের পরিচালক (চিকিৎসা ও পুনর্বাসন) জানান, চারটি নিরাময় কেন্দ্রে চিকিৎসকসহ ১১টি পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য। বারবার আবেদন সত্ত্বেও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এসব শূন্য পদ পূরণ করেনি।
জানা যায়, ঢাকায় অনুমোদনপ্রাপ্ত ছয়টি বেসরকারি নিরাময় কেন্দ্র হলো মধ্য বাড্ডায় সেতু, এলিফ্যান্ট রোডের সেবা মাদকাসক্তি ও মানসিক রোগ চিকিৎসা কেন্দ্র, মোহাম্মদপুরের ইকবাল রোডের ক্রিয়া, মিরপুর ১ নম্বরের ঘরে ফেরা, উত্তরার ১১ নম্বর সেক্টরের লাইট হাউস ক্লিনিক, খিলক্ষেতে দিশা মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র।
ঢাকার বেসরকারি নিরাময় কেন্দ্র আপনকে অনুমোদন না দেয়া প্রসঙ্গে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিচালক বলেন, আপনের ভবনে লিফট না থাকায় লাইসেন্স দেয়া হয়নি। এমন কিছু ছোটখাটো সমস্যা থাকায় কয়েকটি কেন্দ্র লাইসেন্স পায়নি। আরও ৮৯টি কেন্দ্র লাইসেন্স পাওয়ার জন্য আবেদন করেছে।
সূত্র জানায়, বেসরকারি কেন্দ্রগুলোতে চিকিৎসা খরচও বিভিন্ন রকম। এগুলোতে চিকিৎসায় ১০ হাজার টাকা থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত খরচ পড়ে।

শুভাশিস ব্যানার্জি শুভ: প্রধান সম্পাদক,এসবিডি নিউজ24 ডট কম।।

প্রধান সম্পাদক