পীরগঞ্জের ইকোপার্ক এখন বিরাণভূমি!
ছাদেকুল ইসলাম রুবেল, গাইবান্ধা প্রতিনিধি,এসবিডি নিউজ24 ডট কমঃ রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলায় বিগত ২০০৫ খ্রীস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত আকর্ষণীয় পিকনিক স্পট ইকোপার্ক নিয়ে নানা জটিলতার অবসান হয়নি এখনও। পীরগঞ্জ ও পার্শ্ববর্তী মিঠাপুকুর উপজেলার সীমানায় চৈত্রকোল ইউনিয়নের চতরা বিলের ৭৭ একর জলাশয় এবং পার্শ্ববর্তী বিল সংলগ্ন ১’শ ৪৩ একর উঁচু জমিসহ সর্বমোট ২’শ ২০ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত ইকোপার্কে বিভিন্ন জাতের হাজারো ফলদ ও বনজ বাড়ন্ত বৃক্ষের চোখ জুড়ানো সারির পার্শ্বে অগাধ জলাধারে রয়েছে মাছের জলকেলী। বিগত জোট সরকারের সাবেক মন্ত্রী শিল্পপতি সালাহউদ্দিন আলমগীর ক্ষমতার দাপটে বিভিন্ন কৌশলে জমি হাতিয়ে নিয়ে ‘রাবেয়া এন্ড রাইদা এগ্রো কমপে¬ক্স লিঃ’ নামে ‘ইকোপার্ক’ নাম দিয়ে এখানে আকর্ষনীয় নয়নাভিরাম পার্ক গড়ে তোলেন। বিলের পাড়ের জমিতে আম লিচুসহ বিভিন্ন জাতের ফলদ ও বনজ বৃক্ষ রোপনের পর গোটা বিলে মাছের চাষ করা হয়েছে। প্রতি বছর এ বিল থেকে প্রায় অর্ধ কোটি টাকার মাছ বিক্রি হয়। বিশাল এই বিলের এক সময়ের মালিক জমিদার হরিবালা মজুমদার গত হবার দীর্ঘদিন পর এলাকার ভূমিদস্যু ও বিত্তবানরা স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে স্থানীয় ভূমি অফিসে কর্মরত এক শ্রেণীর অসৎ কর্মকর্তা-কর্মচারির সহযোগিতায় এসব জমি এলাকার প্রতাবশালী ব্যক্তি নিজেদের নামে বে-নামে রেকর্ড করে নেন। সেই সময় চৈত্রকোল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হবার সুবাদে নবাব আলী মন্ডল একাই ৬০ বিঘা জমি নিজ নামে রেকর্ড করে নেন। অন্যান্যরাও অনেকেই অভিন্ন কৌশলে বিলের জমি রেকর্ড করে নেন নিজেদের নামে। নিজ নামে জমি নিয়ে দীর্ঘ দিনেও ভোগ দখল করতে পারেননি নবাব আলী মন্ডলসহ অন্যান্যরা। এসব জমি এলাকার নিম্নবিত্তরা নিয়মিত এক ফসলী হিসেবে শুধুমাত্র বোরো ধানের আবাদ করতো। বিগত আশির দশকের পর হতে দীর্ঘ বিশ বছরেরও বেশি সময় বিলের চারপাশের জমিতে রোরো আবাদ করে এলাকার শত শত নিম্ন আয়ের ভূমিহীন মানুষ সারা বছরের অন্নের সংস্থান করতো। ভূমিহীনদের ভোগদখলকৃত জমি কৌশলে রেকর্ড করে নিয়ে মালিক সেজে বসেন নবাব আলী মন্ডলসহ চৈত্রকোল ইউিনিয়নের বেশ কযেকজন ভূমিদস্যু। বিলের উপর দিয়ে আখিরা নদী বয়ে যওয়ায় প্রতি বছর প্রাকৃতিক মাছে বিলটি ভরপুর থাকতো। এলাকার জেলে পরিবারগুলো বিলের মাছ আহরণ করে স্থানীয় হাটে-বাজারে বিক্রির মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করতো। প্রকৃতির অমোঘ নিয়মে এক সময় বিল ভরাট হয়ে যায়। ইতোমধ্যে উপজেলার দরিয়ার বিল লীজ নিয়ে মাছের চাষ শুরু করেন জোট সরকারের সাবেক ওই মন্ত্রী। সুযোগ বুঝে ভূমি দস্যুরা তাঁকে বাগিয়ে এনে চতরা বিলের অর্ধ শতাধিক একর জমি বিক্রি করে দেন। জোট সরকারের ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে ওই মন্ত্রী পুরনো রেকর্ডপত্রকে পুঁজি করে গোটা বিল এলাকা থেকে ভূমিহীনদের তাড়িয়ে দিয়ে নামমাত্র সংস্কারের পর বিলের বিশ একর খাস জমিসহ গোটা এলাকা দখল করে নিয়ে এতে মাছের চাষ করেন। পরবর্তীতে বিলের চারপাশের আরও অর্ধ শতাধিক একর জমি নামমাত্র মূল্যে ক্রয় করে নতুন করে আকর্ষনীয় পার্ক গড়ে তোলার পরিকল্পনা গ্রহন করেন। পুরো এলাকায় নিরাপত্তা বেষ্টনী দিয়ে বিশাল গেট নির্মাণের পর সেখানে সশস্ত্র আনসারের নিয়মিত পাহারা নিযুক্ত করেন। মূলকথা: সবকিছুতেই ধুম্রজালের সৃষ্টির মাধ্যমে আরও কিছু আকর্ষনীয় প্রকল্পের পরিকল্পনা প্রকাশ করে এলাকাবাসীকে সম্মোহীত করেন। কতিপয় মাথাভারী চাকুরীজীবি যুবককে ইকোপার্কে চাকুরী দিয়ে প্রভাব খাটানো শুরু করেন। যাতে করে অবৈধভাবে হাতিয়ে নেয়া জমি নিয়ে এলাকাবাসী কোন ধরনের প্রতিবাদ করতে না পারে। এছাড়াও অবৈধ দখলকৃত জমি যাতে হাতছাড়া হয়ে না যায় এজন্য এলাকার নেতৃস্থানীয় কতিপয় ব্যক্তিকে নিয়মিত বখরা দেয়া হতো মর্মেও একটি সূত্র দাবি করেছে। গত বছর সেই বখরা নিয়ে পীরগঞ্জ ও মিঠাপুকুর এলাকার শীর্ষ দু’নেতার মধ্যে পেশীশক্তি প্রদর্শনের মহড়া শুরু হয়। যার জের ধরেই মিঠাপুকুরের খিয়ারপাড়া গ্রামবাসীর সাথে ইকোপার্কের কর্মচারিদের মধ্যে চলতি বছর কয়েকদফা সংঘর্ষ হয়। ইকোপার্কে প্রহরারত আনসারদের গুলিতে ৬ গ্রামবাসী আহত হবার পর সশস্ত্র আনসারদের প্রত্যাহার করে নেয় সরকার। আনসার ক্যাম্প প্রত্যাহারের পেছনে দুটি কারণ দেখানো হয়। একটি হলো ইকোপার্কটি জনকল্যানমুখী নয়, এটি ব্যক্তি স্বার্থে প্রতিষ্ঠিত, অন্যটি হচ্ছে-এই আনসার ক্যাস্প জোট সরকারের শাসনামলে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে চালু করা হয়েছে। বর্তমানে এলাকার সাধারণ মানুষ ইকোপার্ক থেকে অবশ্য নিজেদের দৃষ্টি সরিয়ে নেয়ায় এটি এখন অরক্ষিত হয়ে পড়েছে। সুযোগ বুঝে এলাকার কতিপয় স্বার্থান্ধ প্রকৃতির লোক সংঘবদ্ধ হয়ে মাঝে-মধ্যেই সংরক্ষিত জলাশয়ে মাছ লুটপাটে মেতে উঠে। যে কারণে গত বছর থেকে গোটা বিলটি মাছশূন্য হয়ে পড়েছে। এসব কারণে সংশি¬ষ্ট কর্তৃপক্ষও শুরুতেই ইকোপার্কের উপর যে আগ্রহ ছিল তা হারিয়ে ফেলেছেন। ফলে দিনের পর দিন বিরাণ ভূমিতে পরিণত হচ্ছে এক সময়ের আকর্ষনীয় নয়নাভীরাম দৃশ্যপট ইকোপার্ক !